নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।
আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল- কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো ব্রতকথা। (Kojagari Lakshmi puja vrat katha)
আশ্বিন মাসের শরৎপূর্ণিমা তিথিতে এই কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো (Kojagari Lakshmi puja vrat katha)পালিত হয়। জেনে নেওয়া যাক এই ব্রতের পেছনে প্রচলিত কাহিনী।
এক দেশে রাজা ছিলেন। তিনি সৎ, ধর্মপরায়ণ ছিলেন। তার দেশে এক নিয়ম ছিল। হাটে প্রজাদের যে সব জিনিস বিক্রি হবে না,তিনি তা ঠিক দামে তার প্রজাদের কাছ থেকে কিনে নেবেন। এক কামার হাটে একটি লােহার নারীমূর্তি বিক্রি করতে এনেছিলেন কিন্তু সারাদিনেও তা বিক্রি হয়নি। সে রাজবাড়িতে সে কথা জানালে ধর্মপরায়ণ রাজা তা কিনে নেন। সেইদিনই রাত্রে রাজা তার বাড়িতে কান্নার আওয়াজ শুনতে পান, সারা বাড়ি ঘুরে শেষে ঠাকুর ঘরে দেখেন এক সুন্দরীনারী কাঁদছে। রাজা তার সামনে গিয়ে বলেন-“কে মা তুমি? কাঁদছাে কেন ?সে বলে “আমি রাজলক্ষ্মী, তাের বাড়িতে এতদিন ছিলাম, এখন আর থাকতে পারবাে না, চলে যেতে হবে তাই কাঁদছি। রাজা বিনয় সুরে হাতজোড় করে জিজ্ঞেস করলেন, “কেন মা আমি কি করলাম?সে বলল, “আমি যে আর থাকতে পারবাে না।বাড়িতে যে তুই অলক্ষ্মী এনেছিস।তারপর কাঁদতে কাঁদতে রাজলক্ষ্মী চলে গেলেন। খারাপ মন নিয়ে রাজা জানলার ধারে বসেছিলেন হঠাৎ দেখলেন একজনা বেরিয়ে যাচ্ছে অমনি দৌড়ে গিয়ে রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, “কে মা তুমি? চলে যাচ্ছ কেন ?সে বলল, “আমি তােমার ভাগ্যলক্ষ্মী তােমায় ছেড়ে চলে যাচ্ছি। ঘরে অলক্ষ্মী এনেছাে থাকতে আর দিলে কই?"রাজা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলেন। এমন সময় দেখেন আরও এক সুন্দরী নারী বেরিয়ে যাচ্ছে, রাজা তাড়াতাড়ি তার পথ আগলে বললেন “তুমি কে মা? চলে যাচ্ছ কেন?"সে বলে, “আমি যশলক্ষ্মী তােমায় ছেড়ে যাচ্ছি।”এই ভাবে একে একে রাজলক্ষ্মী,ভাগ্যলক্ষ্মী আর যশলক্ষ্মী তিনজনে রাজাকে ছেড়ে চলে গেলেন। রাজার চোখে ঘুম নেই,জানলা ধারে বসে থাকতে থাকতে দেখেন একজন পরম পুরুষ আর এক সুন্দরী নারী বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছে, রাজা দোর আগলে কে তারা জানতে চাইলে সুন্দরীনারী বলেন আমি কুললক্ষ্মী, ঘরে অলক্ষ্মী আছে তাই তার থাকা হবে না। পরম পুরুষটি জানালেন তিনি ধর্ম, কিন্তু অলক্ষ্মীর কারণে তাকে যেতে হচ্ছে। সে কথা শুনে রাজা জিজ্ঞেস করলেন, " আমার দোষ কি ?ধর্ম রক্ষা করতেই অলক্ষ্মীকে কিনেছি, ধর্মই আমার সম্বল। এই ধর্মবলে আমার রাজলক্ষ্মী,ভাগ্যলক্ষ্মী,যশলক্ষ্মী কুললক্ষ্মী সবাইকে যেতে দিয়েছি।আমি ধর্মপ্রাণ, ধর্মত্যাগ করিনি,আমি আপনাকে যেতে দেবো না।ধর্ম দেখলেন রাজার কথাই ঠিক তিনি রয়েগেলেন। কিন্তু রাজার অবস্থা দিনদিন খারাপ হতে থাকে, তার সব সুখ হারিয়ে যায়। রানী যে দিন যেমন হয় তাই যত্নকরে রাজাকে খাওয়াতে থাকেন। রাজা খেতে বসলেই পঙ্গপালের মত পিঁপড়ের থালার চারদিকে ঘিরে বসত। রাজা রানীকে তার খাবারে ঘি দিতে বারণ করলেন। তিনি খেতে বসেন খাবার থালার চারদিকে পিঁপড়ের দল এসে জড়ো হয় কিন্তু খাবারের তাদের রুচি হয় না। তাই দেখে এক পিঁপড়ে বলে ওই অলক্ষ্মীর জন্য রাজা এমন গরিব হয়েছে যে খাবারে ঘি জুটছে না। তা শুনে রাজা হা হা করে হেসে উঠেন।রানী দেখতে পেয়ে বললেন আপনি এমন হাসছেন কেন? রাজাও বলবেন না, রানীও ছাড়বেন না। রাজা তখন বলেন একথা বললেই আমার প্রাণ যাবে, তাও যদি তুমি শুনতে চাও তাে বলবাে। তাও রানী শুনতে চায় । রাজা তখন বলেন আমি মরলে যদি খুশি হও তাহলে ওই নদীর ধারে চলাে বলব। রানী ভাবে কথা বললে আবার মারা যায় নাকি? তাই তারা নদীর ধারে এসেছে,হঠাৎ এক শিয়ালিনী শিয়াল বলে ওই দেখাে জলে মরা ভেসে যাচ্ছে নিয়ে এসাে দুজনে খাওয়া যাবে।তাই শুনে শেয়াল বলে আমি কি রাজার মতাে বােকা নাকি যে রানীর কথায় প্রাণ দেব রাজামশাই সে কথা শুনতে পেয়ে রানীকে সেথায় রেখে সেই স্থান পরিত্যাগ করেন। রানী কাঁদতে কাঁদতে নদীর ধারেই থেকে যান। এই ভাবে অনেক দিন পার হয়ে যায় দেখতে দেখতে আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথি এল, রানী দেখলেন নদীর ঘাটে শঙ্খ, ঘন্টা ধুপ ধুনাে দিয়ে কারা কি সব করছে। রানী এগিয়ে এসে মেয়েদের জিজ্ঞাসা করলে তারা কি করছে, তখন তারা বলে আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো করছে এবং সঙ্গে এও জানায় এই পুজো করলে অলক্ষ্মী দূর হয়, মা লক্ষ্মীর কৃপাদৃষ্টি লাভ হয়। তাই শুনে রানী তাদের কাছ থেকে রং মাখানাে পিটুলি চেয়ে লক্ষ্মী গড়ে নারিকেল,চিড়ে, তালের ফোঁপর দিয়ে পুজো করলেন। তারপর গল্প গান করে সারারাত জেগে কাটালেন।ওই দিকে রাজবাড়িতে যে লােহার অলক্ষ্মী ছিল সকাল হতেই তা কোথায় গেল কেউ জানতে পারলাে না। ধর্ম এসে রাজাকে বললেন, “আপনার অমঙ্গল কেটে গেছে।অলক্ষ্মী দূর হয়েছে। আপনি রানীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসুন।"রাজা পালকি নিয়ে রানীকে ফিরিয়ে আনলেন। তারপর খুব ঘটা করে লক্ষ্মীপুজো করে আবার সব ফিরে পেলেন।এইভাবে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর মাহাত্য সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল।
আশাকরি লেখা টি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে শেয়ার করবেন অথবা আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলটিকে ফলো করতে পারেন।
ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।
নমস্কার, ধন্যবাদ।।
ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা