মোক্ষদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য || এই একাদশী কেন পালন করা হয় এবং কি ফল লাভ হয়?

নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।

আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল- মোক্ষদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য সম্পর্কে। এই একাদশী কেন পালন করা হয় এবং এই একাদশী পালন করলে কি ফল লাভ হয়?

{মোক্ষদা একাদশী ব্রতকথা}

একদা যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণ কে বললেন- হে বিশ্বেশ্বর,  আমার একটি সংশয় আছে! তারপর তিনি শ্রীকৃষ্ণ কে প্রশ্ন করলেন অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের যে একাদশী তার নাম কি? কোন দেবতা কে উদ্দেশ্য করে এই একাদশী পালন করা হয় এবং এই একাদশীর বিধি নিয়মই বা কি?

তার এই প্রশ্ন শুনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন তুমি একটি উত্তম প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছো। যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে বললেন অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের এই একাদশীর নাম হল মোক্ষদা একাদশী। সর্ব পাপ নাশিনী এই একাদশীর পূজনীয় দেবতা হলেন- শ্রী দামোদর। ধূপ, দীপ, তুলসী এবং তুলসী মঞ্জুরি সহযোগে শাস্ত্রবিধি মেনে এই একাদশীতে শ্রী দামোদরের পূজা করা মার্জনীয়। দশমীর দিন থেকে একাদশীর দিন উপবাস সহযোগে এবং উপবাসে একাদশীর দিন মোক্ষদা একাদশী ব্রত কথা পাঠ এবং শ্রী দামোদরের নৃত্যগীত সহযোগে ভক্তি-শদ্ধার মাধ্যমে ভজনা করা আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য।এরপর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যুধিষ্ঠির কে এই একাদশী ব্রত কথা পাঠ করে শোনালেন। 

একদা চম্পক নগর বলে একটি নগরী ছিল। চম্পক নগরে রাজা ছিলেন বৈখানস। তিনি ছিলেন একজন সৎ মানুষ এবং তার মধ্যে অনেক সদগুন ছিল। তিনি তার প্রজাদের খুবই ভালবাসতেন।

তার রাজ্যের প্রজাতির মধ্যে বেশিরভাগই ছিল ব্রাহ্মণ এবং বেদজ্ঞ অর্থাৎ বেদ বিষয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি। রাজা একদন রাত্রির বেলায় স্বপ্নে দেখলেন তার পিতা মৃত্যুর পর নরকে বাস করছেন। এই স্বপ্ন দেখার পর রাজা অত্যন্ত দুঃখ পেলেন পিতার কথা ভেবে।

পরদিন সকালে তিনি তাঁর নগরের ব্রাহ্মণদের ডেকে, তার স্বপ্নের কথা ব্রাহ্মণদের জানালেন। তিনি স্বপ্নে কি কি দেখেছেন সেই বিষয়ে তিনি ব্রাহ্মণদের বলতে লাগলেন- রাজার পিতা রাজা কে বলছেন- হে পুত্র, তুমি আমাকে নরকসমুদ্র থেকে উদ্ধার কর। পিতার সেই অবস্থা দেখে রাজার অন্তরে সুখ নেই।এরপরে রাজা ব্রাহ্মণদের কে বলতে লাগলেন- আমার এই বিশাল রাজ্য, স্ত্রী-পুত্র, কিছুতেই আমি শান্তি পাচ্ছি না। কি করি, কোথায় যাই কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। আমার পুর্বপুরুষেরা মুক্তিলাভ করতে পারেন এমন কোন পুণ্যব্রত, তপস্যা ও যোগের কথা আমাকে উপদেশ করুন। আমি তা ভক্তি ও শ্রদ্ধার মাধ্যমে পালন করব। ব্রাহ্মণগণ বললেন- হে মহারাজ! আপনার রাজ্যের কাছেই মহর্ষি পর্বত মুনির আশ্রম রয়েছে। তিনি ত্রিকালজ্ঞ। তাঁর কাছে আপনার মুক্তির উপায় জানতে পারবেন।এরপর ব্রাহ্মণদের উপদেশ মত রাজা সেই ব্রাহ্মণদের নিয়ে সেই পর্বত মুনির আশ্রম এ গেলেন।সেখানে যাবার পর রাজা সেই পর্বতের মুনির দেখা পেলেন। মুনি তখন রাজার সমস্যার কথা জানতে চাইলেন। রাজা মুনিকে তার সমস্যার কথা জানানোর পর মনি কিছুক্ষণ ধ্যানস্থ অবস্থায় রইলেন। তার কিছুক্ষণ পর মুনিরা যাকে বললেন হে মহারাজ পূর্বজন্মে তোমার পিতা অধিক পরিমাণে কামাচারী হওয়ার জন্য তার এরূপ অবস্থা হয়েছে। 

চিন্তামুণি তখন রাজাকে বললেন তোমাকে আমি এখন এই পাপ থেকে মুক্তি লাভের উপায় টি বলছি, এরপর মুনি-  রাজা কে অগ্রায়ন মাসের শুক্লপক্ষের মোক্ষদা একাদশী কথা বললেন। তিনি রাজাকে ওই একাদশী পালন করে ওই একাদশীর পূর্ণফল তার পিতাকে প্রদান করার কথা জানালেন। এর ফলে ওই পূর্ণফলএর মাধ্যমে তোমার পিতার মুক্তিলাভ হবে এবং সে নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি লাভ করবে। মুনির এই কথা শোনার পর রাজা তার নগরীতে ফিরে এলেন। তারপর সেই মোক্ষদা একাদশীর পবিত্র তিথিতে রাজা তার স্ত্রী, পুত্র ও নিজে মিলে ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে শাস্ত্রবিধি মেনে মোক্ষদা একাদশী ব্রত পালন করলেন। পালন করার পর সেই মোক্ষদা একাদশী পুণ্যফল পিতার উদ্দেশ্যে প্রদান করলেন।এই পুণ্যফল প্রধানের সঙ্গে সঙ্গে তার পিতা রাজাকে আশীর্বাদ দিলেন- হে পুত্র তোমার পূর্ণ হোক। এই বলতে বলতে বৈখানস রাজার পিতা নরক থেকে মুক্ত হয়ে স্বর্গে গমন করলেন।

এই ব্রত কথাটি পুরোটি শোনানোর পর শ্রীকৃষ্ণ এবার যুধিষ্ঠিরকে বলতে লাগলেন হে মহারাজ এই ব্রত হল মঙ্গলদায়িনি এবং সমস্ত পাপ নাশিনী।যে এই মোক্ষদা একাদশী ব্রত পালন করে, তার সমস্ত পাপ বিনষ্ট হয় এবং মৃত্যুর পর মুক্তি লাভ করে।

আরো পড়ুনঃ মোক্ষদা একাদশী সময়সূচী 2021 , তিথি এবং মোক্ষদা একাদশী ব্রতের সঠিক পূজা পদ্ধতি তথা নিয়ম বিধি।

আশাকরি ব্রত কথাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপন জনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন অথবা আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলটিকে ফলো করতে পারেন।

ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

 নমস্কার, ধন্যবাদ।।

 ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।