নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।
আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল- বাড়িতে কার্তিক পূজার সহজ সরল পদ্ধতি🔥 পূজা হয়ে যাবার পরেই একটি কাজ অবশ্যই করুন || কার্তিক পূজা 2021 সময়সূচী
বন্ধুরা আজ এই লেখাটির মাধ্যমে আপনাদের সাথে আলোচনা করব বাড়িতে সহজ সরল পদ্ধতিতে কিভাবে কার্তিক পূজা করা যায় এবং 2021 সালে অর্থাৎ ১৪২৮ বঙ্গাব্দে কার্তিক পূজা কোন দিনে কোন সময়ে পড়েছে এবং সর্বোপরি কার্তিক পূজা করার পর যে বিষয়টি অবশ্যই আমাদের করা প্রয়োজন সেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।
কার্তিক হলেন শিব-পার্বতীর সন্তান এবং যুদ্ধের দেবতা। তিনি হলেন স্বর্গের দেবসেনাপতি। তারকাসুরের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য দেবতারা একজন শৌর্যবীর্যে দক্ষ সেনাপতির খোঁজ করছিলেন। অবশেষে সকলের মিলিত হয়ে মহাদেবের শরণাপন্ন হন। মহাদেব এবং পার্বতীর মিলনে কার্তিকের জন্ম হয়।
কার্তিক ঠাকুর কেবলমাত্র সন্তান লাভের জন্য পূজিত হন না। এ কথা অনেকেই জানেন না- সন্তান লাভ যেমন একটি দিক ঠিক সেরকমই কার্তিক পূজার আরেকটি দিক রয়েছে। কার্তিক ঠাকুর হলো যুদ্ধের দেবতা, সেই কারণে আমাদের শত্রুকে পরাজিত করার জন্য অথবা শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্যও কার্তিক ঠাকুর কে পূজা করা হয়। এছাড়াও শুধুমাত্র যে বাইরে শত্রু হবে সেটা ঠিক নয়, হতে পারে সেই শত্রু মনের ভেতর কার শত্রু। আমাদের মনের ভিতরে যে স্বররিপু রয়েছে অর্থাৎ কাম, ক্রোধ,লোভ, মোহ, মায়া, মাৎসর্য এই ছয়টি রিপু মানুষের পতনের সবথেকে বড় কারণ হয়। এই ছয়টি রিপুর নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কার্তিক পূজা করা হয়ে থাকে।
কার্তিক পূজার সময় 2021
এই কার্তিক পূজা মূলত হয়ে থাকে বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী কার্তিক মাসের সংক্রান্তিতে অর্থাৎ কার্তিক মাসের শেষ দিনে। আর সেই রীতি অনুযায়ী 2021 সালে 17 ই নভেম্বর বুধবার দিন পড়েছে কার্তিক পূজা।
আরো পড়ুন-কার্তিক পূজার ফর্দ (click here)
বাড়িতে সহজ-সরল পদ্ধতিতে
কার্তিক পূজা
যদি পুরোহিত অথবা ব্রাহ্মণ সহযোগে কার্তিক পূজা সম্পন্ন করতে চান তাহলে নিশ্চিত ভাবে সেই পথই গ্রহণ করা শ্রেয়। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সেই পুরহিত বা ব্রাহ্মণ কে কিছু দক্ষিণা প্রেরন করবেন। তবে অনেক সময় দেখা যায় পুরহিত ব্রাহ্মণ পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে আপনি নিজে থেকেই বাড়িতে বসে এই কার্তিক পূজা সম্পন্ন করতে পারেন। খুবই সহজ সরল পদ্ধতিতে মন্ত্র উচ্চারণ এর মাধ্যমে অথবা মন্ত্র উচ্চারণ ছাড়াও আপনি এই পূজা করতে পারেন।
সবার প্রথমে একটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন স্থানে একটি জল চৌকি রাখুন অথবা একটি ঠাকুর প্রতিষ্ঠা করার বেদি তৈরি করুন। এরপর সেই জল চৌকি অথবা বেদীর উপর একটি লাল কাপড় পেতে দিন এবং তার উপর কিছু পরিমাণ আতপ চাল, দূর্বা এবং গঙ্গা জল ছিটিয়ে দিন। তারপর কার্তিক ঠাকুর কে সেই আসনের উপর প্রতিষ্ঠা করুন। এরপর কার্তিক ঠাকুরের সামনে আপনার পছন্দ অনুযায়ী একটি গোলাকার আলপনা আঁকুন। তারপর উক্ত আলপনাটির উপর একটি ঘট স্থাপন করুন। ঘটটি- পিতল, কাঁসা অথবা মাটির হওয়া বাঞ্ছনীয়। ঘটের উপর সিঁদুর দিয়ে স্বস্তিক চিহ্ন বা নারায়ন চিহ্ন এঁকে দিন এবং ঘটটিতে গঙ্গা জল বা বিশুদ্ধ জল ভরে দিন। এরপর ঘরটির উপর পাঁচটি পত্র বিশিষ্ট একটি আম পাতার শাখা বসান এবং প্রত্যেকটি পাতায় সিঁদুর ও চন্দনের ফোটা দিয়ে দেবেন। এরপর সেই পাতার উপরে একটি ফল দিয়ে দেবেন সেটি হতে পারে শীষযুক্ত ডাব দাম অথবা কলা এবং তাতে স্বস্তিক চিহ্ন বা নারায়ন চিহ্ন এঁকে দিন।
সর্বশেষে ওই ফলটির উপর একটি লাল বস্ত্র বা একটি লাল গামছা দেবেন। এরপর ধুপ, প্রদীপ, পুষ্প, নৈবেদ্য - যথা স্থানে রাখুন। এরপর হাতে সামান্য গঙ্গাজল নিয়ে আচমন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন এবং ভগবান বিষ্ণুকে স্মরণ করে বলবেন-
"ওম্ বিষ্ণুঃ ওম বিষ্ণুঃ ওম্ বিষ্ণুঃ"।
এরপর কার্তিকের ধ্যান মন্ত্র পাঠ করবেন-
"ওঁ কার্ত্তিকেয়ং মহাভাগং ময়ুরোপরিসংস্থিতম্।
তপ্তকাঞ্চনবর্ণাভং শক্তিহস্তং বরপ্রদম্।
দ্বিভুজং শক্রহন্তারং নানালঙ্কারভূষিতম্
প্রসন্নবদনং দেবং কুমারং পুত্রদায়কম্।"
অনুবাদঃ- কার্ত্তিক দেব মহাভাগ, ময়ূরের উপর তিনি উপবিষ্ট। তপ্ত স্বর্ণের মতো উজ্জ্বল তাঁর বর্ণ। তাঁর দুটি হাতে শক্তি নামক অস্ত্র। তিনি নানা অংলকারে ভূষিত। তিনি শত্রু হত্যাকারী। প্রসন্ন হাস্যোজ্জ্বল তাঁর মুখ।
যদি মন্ত্র উচ্চারণে সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে কার্তিক দেবের সামনে হাত জোড় করে নিবিষ্টচিত্তে ভক্তিভরে আপনি কার্তিক দেবের সহজ-সরল মুখটি স্মরণ করবেন এবং তাকে আহবান করবেন।
এরপর "ওম্ কার্তিকেয়ং নমঃ"- বলে একটি পুষ্প ঘটে প্রদান করবেন এবং এরপর সমস্ত দ্রব্য যা আপনি কার্তিক ঠাকুর কে নিবেদন করতে চান যেমন নৈবেদ্য ও অন্যান্য দ্রব্যাদি তা "ওম কার্তিকেয়ং নমঃ"- এই মন্ত্রটি বলে ঠাকুরের সামনে নিবেদন করুন।
আর এই পুষ্প ও নৈবেদ্য যখন আপনি কার্তিক ঠাকুর কে নিবেদন করবেন, তখন ঠাকুরকে মনে মনে স্মরণ করে বলবেন যেন আপনার পুষ্প ও নৈবেদ্য ঠাকুর গ্রহণ করেন।
এরপর ঠাকুরের উদ্দেশ্যে প্রদীপ এবং ধুপ দেখাবেন এবং সর্বশেষে কার্তিক ঠাকুরের উদ্দেশ্যে প্রণাম মন্ত্র পাঠ করবেন-
"কার্ত্তিকের মহাভাগ দৈত্যদর্পনিসূদন।
প্রণোতোহং মহাবাহো নমস্তে শিখিবাহন।
রুদ্রপুত্র নমস্ত্তভ্যং শক্তিহস্ত বরপ্রদ।
ষান্মাতুর মহাভাগ তারকান্তকর প্রভো।
মহাতপস্বী ভগবান্ পিতুর্মাতুঃ প্রিয় সদা।
দেবানাং যজ্ঞরক্ষার্থং জাতস্ত্বং গিরিশিখরে।
শৈলাত্মজায়াং ভবতে তুভ্যং নিত্যং নমো নমঃ।"
অনুবাদঃ- হে মহাভাগ, দৈত্যদলনকারী কার্ত্তিক দেব তোমায় প্রণাম করি। হে মহাবাহু, ময়ূর বাহন, তোমাকে নমস্কার। হে রুদ্রের (শিব) পুত্র, শক্তি নামক অস্ত্র তোমার হাতে। তুমি বর প্রদান কর। ছয়। কৃত্তিকা তোমার ধাত্রীমাতা। জনক-জননী প্রিয় হে মহাভাগ, হে ভগবান, তারকাসুর বিনাশক, হে মহাতপস্বী প্রভু তোমাকে প্রণাম। দেবতাদের যজ্ঞ রক্ষার জন্য পর্তবতের চূড়ায় তুমি জন্মগ্রহণ করেছ। হে পর্বতী দেবীর পুত্র তোমাকে সতত প্রণাম করি।
যদি প্রণাম মন্ত্র পাঠে সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে ঠাকুরের উদ্দেশ্যে ভক্তিপূর্ণ মনে শ্রদ্ধার সঙ্গে নিজে থেকেই প্রণাম জানাবেন।
আশাকরি লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে যারা কার্তিক পূজা করতে ইচ্ছুক তাদের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন অথবা আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলটাকে ফলো করতে পারেন।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
নমস্কার, ধন্যবাদ ।।
ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা