Breaking

Search Content

Follow Us

সোমবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২১

রমা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য -রমা একাদশী ব্রত- কি এবং কেনইবা পালন করা হয়‌ || রমা একাদশী ব্রতের গুরুত্ব?

নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।
 
আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল- 'রমা একাদশী' ব্রতের মাহাত্ম্য সম্পর্কে। 'রমা একাদশী ব্রত'- কি এবং কেনইবা পালন করা হয়  || রমা একাদশী- ব্রতের গুরুত্ব?


মহাভারতের যুধিষ্ঠির একসময় পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণর কাছে কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম ও তার মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানতে চান। তখন 'শ্রীকৃষ্ণ' যুধিষ্ঠির কে বলেন- কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম হল- 'রমা একাদশী'






অনেক আগে 'মচুকুন্দ' নামে এক রাজা ছিল। ধর্ম অনুসারে বা ধর্মের নীতি মেনে তিনি সঠিক ভাবে রাজ্য পরিচালনা করতেন। তিনি ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর পরম ভক্ত এবং সত্যপ্রতিজ্ঞ। বিভিন্ন দেবতা, তথা   -দেবরাজ ইন্দ্র, বরুণ, যম ও ধনদেবতা কুবের সাথে তার বন্ধুত্ব ছিল।


রাজা মচুকুন্দের-  'চন্দ্রভাগা' নামে একটি কন্যা ছিল। চন্দসেনের পুত্র 'শোভনের' সাথে সেই কন্যা 'চন্দ্রভাগার' বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহের কিছুদিন পর শোভন একদিন শ্বশুর বাড়ি অর্থাৎ রাজা মচুকুন্দের বাড়ি গিয়েছিল। দৈবক্রমে সেইদিন ছিল একাদশী তিথি।

স্বামীকে দেখে পতিপরায়ণা চন্দ্রভাগা মনে মনে চিন্তা করতে লাগল- হে ভগবান! আমার স্বামী অত্যন্ত দুর্বল, তিনি ক্ষুধা সহ্য করতে পারেন না। অথচ এখানে আমার পিতার শাসন খুবই কঠোর। দশমীর দিন তিনি নাগরা বাজিয়ে ঘোষণা করে দিয়েছেন যে, একাদশী দিনে আহার নিষিদ্ধ।  আমি এখন কি করি!

এরপর চন্দ্রভাগা তার স্বামী শোভনের কাছে গিয়ে চন্দ্রভাগা এই বিষয়টি নিয়ে কথোপকথন জারি রাখলেন। চন্দ্রভাগা তার স্বামীকে বললেন হে স্বামী এই পুরো রাজসভায় আজ একাদশীর দিনে আহার নিষিদ্ধ। মানুষ তো দূরে থাক পশু-পাখিরাও পর্যন্ত এই দিন এখানে আহার বা জল পান করতে পারবে না। তাই আপনি যদি মনে করেন তাহলে আপনি পুনরায় ফিরে আপনার গৃহে তে চলে যেতে পারেন। এই কথা বলে চন্দ্রভাগা তার স্বামীকে  ঠিক করতে বললেন। এবার তার স্বামী যা ঠিক বুঝবে সেই অনুযায়ী করবে।

তখন তার স্বামী শোভন বললেন- হ্যাঁ ঠিক করেছি। তার স্বামী তখন শ্বশুরবাড়িতে থাকার জন্য রাজি হলেন এবং সবার মত করে একইভাবে ব্রত পালনের জন্য বদ্ধপরিকর হলেন। সারাদিন কিছু আহার না করে ব্রত পালনে সক্ষম হলেন শোভন। কিন্তু রাত গড়াতেই তার ক্ষুধা এবং তৃষ্ণায় শরীর আরো দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে। রাত পার করে পরদিন সূর্য উদয়ের সময় মৃত্যু হয় শোভনের।

স্বামীর এরূপ অবস্থা দেখে দুঃখে-কষ্টে এবং কান্নায় ভেঙে পড়ে তার স্ত্রী চন্দ্রভাগা। মচুকুন্দ তখন শোভনের দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করেন। স্ত্রী চন্দ্রভাগা শেষ কৃতকার্য করে এবং তার বাবার কথা অনুযায়ী সে তার পিতৃগৃহেই থেকে যায়। এইভাবে কাটতে থাকে বহু বছর। 

কালক্রমে রমা ব্রতের প্রভাবে শোভনের অনুপম সৌন্দর্য বেষ্টিত একটি দেবপুরী প্রাপ্ত হলো মন্দরাচল পর্বত শিখরে। এক সময় মচুকুন্দপুরের এক ব্রাহ্মণ সোমশর্মা মন্দরাচল শিখরে তীর্থ ভ্রমণ করতে উপস্থিত হলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখলেন রত্নমন্ডিত সিংহাসনে বসে শোভন। শোভন ছিল রত্ন অলঙ্কারে ভূষিত। গন্ধর্ব ও অস্পরাগণ দ্বারা নানা উপচারে সেখানে তিনি পূজিত হচ্ছিলেন রাজা শোভন। রাজা মুচুকুন্দের জামাতারুপে  -ব্রাহ্মণ সোমশর্মা  তাকে চিনতে পেরে তার কাছে গেলেন। শোভনও সেই ব্রাহ্মণকে দেখে আসন থেকে উঠে এসে তাঁর চরণ স্পর্শ করে প্রণাম জানালেন। শ্বশুর মচুকুন্দ ও স্ত্রী চন্দ্রভাগাসহ নগরবাসী সকলের বার্তা জিজ্ঞাসা করলেন। ব্রাহ্মণ তখন সকলের কুশল সংবাদ শোভন কে জানালেন এবং তার থেকে এটাও জানতে চাইলেন যে তার এরূপ বিচিত্র স্থান প্রাপ্ত হলো কিভাবে?      


       -শোভন তখন বললেন কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের 'রমা একাদশী ব্রত' সকল ব্রতের মধ্যে সবথেকে শ্রেষ্ঠ। সে কারণেই তার আজকে এরকম বিচিত্রময় পরিস্থিতি, এমনকি তিনি স্বপ্নেও কল্পনা করেন নি যে তিনি এরকম একটি বিচিত্র মনোরম দেবপুরীর রাজা হিসেবে ভূষিত হবেন। এর সাথে সাথে শোভন ব্রাহ্মণকে এটাও বললেন যে রমা একাদশী যে ব্রত তিনি পালন করেছিলেন, তিনি ভাবতেই পারেননি যে এরকম আশ্চর্যজনক ফল তিনি পাবেন। সবশেষে শ্রবণ ব্রাহ্মণ কে এটি বলল যে আপনি চন্দ্রভাগাকে কৃপা করে সমস্ত ঘটনাটি জানাবেন।


সোমশর্ম্মা মচুকুন্দপুরে ফিরে এসে চন্দ্রাভাগার কাছে সমস্ত ঘটনার কথা জানালেন। ব্রাহ্মণের কথা শুনে অত্যন্ত আনন্দিত চন্দ্রভাগা বললেন- হে ব্রাহ্মণ! আপনার কথা আমার কাছে স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে। তখন সোমশর্ম্মা ব্রাহ্মণ বললেন সেখানে তোমার স্বামীকে আমি স্বয়ং সচক্ষে দেখেছি। অগ্নিদেবের মতো দীপ্তিমান তার নগরও দর্শন করেছি।

এসব কথা শুনে চন্দ্রভাগা বললেন, তাকে দেখতে আমার একান্ত ইচ্ছা হচ্ছে। আমাকে এখনই তার কাছে নিয়ে চলুন। ব্রাহ্মণ বললেন তার নগর স্থির নয়, তা যাতে স্থির হয় সেই মতো কোন উপায় কর। একথা শুনে চন্দ্রভাগা বললেন আমি ব্রত পালনের পুণ্য প্রভাবে এই নগরকে স্থির করে দেব।
তখন সোমশর্ম্মা চন্দ্রভাগাকে নিয়ে মন্দার পর্বতে বামদেবের আশ্রমে উপনীত হলেন। সেখানে ঋষির কৃপায় ও হরিবাসর ব্রত পালনের ফলে চন্দ্রভাগা দিব্য শরীর ধারণ করল এবং নিজ স্বামীর নিকট উপস্থিত হলেন। প্রিয় পত্নীকে দেখে শোভন খুবই আনন্দিত হলেন।

বহুদিন পর স্বামীর সঙ্গ লাভ করে চন্দ্রভাগা অকপটে নিজের মনের কথা জানালেন। হে প্রিয়, আজ থেকে আট বছর আগে আমি যখন পিতৃগৃহে ছিলাম তখন থেকেই এই রমা একাদশীর ব্রত নিষ্ঠাসহকারে পালন করতাম। ঐ পুণ্য প্রভাবে এই নগর স্থির হবে এবং মহাপ্রলয় পর্যন্ত থাকবে।

এরপর মন্দারাচল পর্বতের শিখরে শোভন 
ও তার স্ত্রী‌ চন্দ্রভাগা একত্রে সুখে বসবাস করতে লাগলেন।


ব্রত কথাটি এখানেই সমাপ্ত হল। আশা করি ব্রত কথাটি থেকে আপনি সমৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন অথবা আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলটিকে ফলো করতে পারেন।


ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
নমস্কার, ধন্যবাদ।।
 ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা