নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।
আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল- "গঙ্গার জল কে কেন পবিত্র জল বলা হয়" এবং কেনইবা কোনো মাঙ্গলিক কাজে বা পূজোর কাজে গঙ্গাজল আমরা ব্যবহার করে থাকি? সর্বোপরি কেনইবা বছরের বিশেষ বিশেষ দিনে গঙ্গাস্নানের কথা বলা হয়ে থাকে?
বন্ধুরা গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে যে গঙ্গার উৎপত্তি সেই গঙ্গা নদীর সঙ্গে ধর্মীয় মাহাত্ম্য জড়িয়ে রয়েছে অঙ্গাঅঙ্গিভবে। সনাতন ধর্মে এই নদীকে স্বর্গের নদী বলে গণ্য করা হয়ে থাকে। বর্তমানে এটি ভারত ও বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত। এটি পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বৃহত্তম নদী প্রণালী গুলির মধ্যে অন্য একটি নদী। কিন্তু প্রশ্ন হলো কেন এই গঙ্গা নদী মা বা দেবী রূপে পূজিতা হন? কেনইবা গঙ্গা জল এত পবিত্র- যে তার জল ছাড়া কোন পূজাই সম্পন্ন হয় না। এমনকি কোনো ব্যক্তি মৃত্যুর পর তখনই তার আত্মার শান্তি পায় যখন তার মুখে গঙ্গা জল দেওয়া হয় এবং তার অস্থি গঙ্গা জলে বিসর্জন দেয়া হয়। যাকে আমরা তর্পণ বলে থাকি। আজকের এই লেখাটির মাধ্যমে এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে জানবো আপনাদের।
বন্ধুরা গঙ্গার জল কি পবিত্র মনে করার দুটি কারণ রয়েছে প্রথমটি হলো আধ্যাত্বিক অর্থাৎ ধর্মীয় এবং দ্বিতীয়টি হলো বৈজ্ঞানিক। সবার প্রথমে আধ্যাত্বিক বিষয়টি আপনাদের সামনে তুলে ধরব। যার মাধ্যমে আমরা জানতে সক্ষম হব গঙ্গা নদীর এই পৃথিবীতে উৎপত্তি হলো কিভাবে। কারণ এই বিষয়টি যুগ যুগ ধরে গঙ্গা নদীকে পবিত্র করে রেখেছে।
বন্ধুরা পৌরাণিক মতে এই নদীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী গঙ্গা পর্বতরাজ হিমালয়ের কন্যা ছিলেন। তিনি অভিশাপ প্রাপ্ত হন যে তাকে নদী রূপে প্রবাহিত হতে হবে। প্রথমে গঙ্গা ভগবান বিষ্ণুর চরণ ধ্বৌত করে আকাশগঙ্গা মন্দাকিনী নামে স্বর্গে প্রবাহিত ছিল। যে কারণে তাকে স্বর্গের নদী গণ্য করা হতো।
আরো পড়ুনঃ- 2022 মকর সংক্রান্তির পূর্ণাঙ্গ সময়সূচী। মকর সংক্রান্তির দিন কেন গঙ্গা স্নান করা উচিত।
এই স্বর্গের নদী গঙ্গা কেনইবা মর্তে এলেন?
এর পেছনে যে পৌরাণিক ঘটনাটি রয়েছে তা হলো- সূর্যবংশীয় রাজা সগঢ় একবার এক বিরাট অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করলেন। তিনি যদি এই যজ্ঞে সফল হতে পারেন তাহলে তিনি দৈব শক্তি লাভে সক্ষম হবেন। এই জেনে দেবরাজ ইন্দ্র ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন। তিনি এই যঞ্জ বিফল হওয়ার জন্য যজ্ঞের অশ্ব চুরি করে কপিল মুনির আশ্রমে রেখে আসেন। তখন সূর্যবংশীয় রাজা সগঢ় তার পুত্রদের প্রেরণ করেন অশ্ব খুঁজে আনতে। সগঢ় পুত্ররা কপিল মুনির আশ্রমে খুঁজে পেয়ে কপিল মুনিকেই চোর ভাবতে শুরু করে। ধ্যানস্ত কপিলমুনি এই অপবাদে ক্রুদ্ধ হয়ে সগঢ় পুত্রদের ভষ্ম করে দেন। এর ফলে সগঢ় রাজার যঞ্জ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তার পুত্ররা নিখোঁজ জেনেই মৃত্যুবরণ করে সগঢ়রাজা। এই সডঢ় পুত্ররা মৃত্যুর পর অতৃপ্ত থেকে যায়। সগঢ়ের পৌত্র অংশুমান পরবর্তীতে পিতা ও পিত্বৃবের সমস্ত বিষয়ে জানতে পেরে কপিল মুনির আশ্রমে গিয়ে মুনির কাছে ক্ষমা চান এবং তাদের মুক্তির উপায় মুনির কাছ থেকে জানতে চান। কপিলমুনি তখন জানান যদি স্বর্গ স্রোতা গঙ্গা কে তাদের ভষ্মের স্থানের উপর দিয়ে প্রবাহিত করা যায় তবেই তারা মুক্তি পাবেন। অংশুমান দেবী গঙ্গার কাছে প্রার্থনা করে তার পিতা দের ভষ্মের সেই স্থানের উপর দিয়ে দেবী গঙ্গা কে প্রবাহিত করার জন্য তুষ্ট করতে পারলেন না। এরপর তাদের বংশধর দিলিপের পুত্র ভগিরথ বুদ্ধি করে ব্রহ্মার তপস্যা শুরু করেন। তপস্যায় ব্রহ্মা সন্তুষ্ট হন। তখন ভগিরথ ব্রহ্মার কাছে দেবী গঙ্গা কে মর্তে প্রবাহিত হওয়ার বর চান। ব্রহ্মা তখন গঙ্গাকে আদেশ দেন মধ্যে প্রবাহিত হওয়ার জন্য। তখন গঙ্গা জানান তিনি যদি মর্তে নামেন তবে সমস্ত সৃষ্টি প্লাবিত হয়ে যাবে। তাহলে উপায় কি, -গঙ্গার গতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ভগিরথ এরপর ভগবান শিবের তপস্যা করতে লাগলেন। ভগবান শিব তার তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে গঙ্গা ধারণে সম্মত হন। এরপর শুরু হয় গঙ্গার মর্তে আরোহণের পালা।
ভগবান বিষ্ণু পদধ্বৈত গঙ্গা কে ব্রহ্মা তার কুন্ডলীতে ধারণ করলেন। ব্রহ্মা গঙ্গাধারা কে ধরা অভিমুখে প্রক্ষিপ্ত করেন। কৈলাসে অবস্থানকারী ভগবান শিব তখন গঙ্গাকে তার জটায় বেধে ফেললেন। এরপর তিনি গঙ্গাকে একে একে বিভিন্ন শাখায় তার জটা ছেরে মুক্ত করলেন।
গঙ্গার একটি ভাগ কে ভগিরথের পশ্চাৎ ধাবনের নির্দেশ দেওয়া হলো। সেই অংশটি ভগিরথ এর পিছনে পিছনে অগ্রসর থাকে। এই ধারাই কপিল মুনির আশ্রমের সম্মুখে 'ভগবতী' নামে প্রবাহিত হয়ে সগঢ়ের পূত্র দের মুক্তি দান করে। ভগিরথ এই গঙ্গা আনয়ন করেছিলেন বলেই গঙ্গার অপর নাম হয় 'ভাগীরথী'।
বন্ধুরা স্বর্গের নদী এই গঙ্গাকে মূলত আহ্বান করা হয়েছিল আত্মার মুক্তির জন্য। তাই তিনি মুক্তি প্রদায়নী। ভগবান বিষ্ণুর পদদ্ধৌত চরণামৃত জল হলেন দেবী গঙ্গা। পাশাপাশি তিনি ব্রহ্মার কুমোরটুলি থেকে নির্গত এবং ভগবান শিবের জটায় তার বাস। এইজন্য গঙ্গা অতি পবিত্র একটি নদী। নদীর ত্রিদেবের কাছ থেকে বর প্রাপ্ত তার সংস্পর্শে আসা পতিত সমস্ত জীব উদ্ধার পাবে এবং তার এই জল দিয়ে সমস্ত ধরনের অসূচি এবং অপবিত্রতা দূর হবে। যে কারণে গঙ্গার জল কে সর্বদা পবিত্র হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ- 2022 সালে মকর সংক্রান্তির পূর্ণাঙ্গ সময়সূচী। সংক্রান্তির দিন গঙ্গাস্নান কেন করা উচিত।
• গঙ্গাজলের পবিত্রতার বৈজ্ঞানিক কারণঃ-
তবে বন্ধুরা শুধুমাত্র আধ্যাত্বিক নয় বৈজ্ঞানিক দিক থেকেও এটি প্রমাণিত গঙ্গা জল খুবই পবিত্র। গঙ্গা যেহেতু হিমালয়ের পাদদেশ থেকে বয়ে চলে আসছে তাই গঙ্গার জলে বিভিন্ন ঔষধি মিশে আছে। কারণে এটি সহজেই বিভিন্ন রোগীর বিভিন্ন রোগ সারিয়ে তুলতে পারে। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে গঙ্গার জলে 'ব্যাকটেরিওফাজ' নামে এক ধরনের পদার্থ দেখা যায়। এই ব্যাকটেরিওফাজ মূলত দূষক পদার্থ নাশ করতে সক্ষম।
শুধু তাই নয় গঙ্গার জলে মিশে থাকা বিভিন্ন ঔষধি, খনিজ লবণ এবং এর সঙ্গে গঙ্গার জলের অন্যান্য নদীর তুলনায় অক্সিজেনের মাত্রা বেশি পরিমাণে থাকে, যার করণেই গঙ্গার জলে গঙ্গাস্নান করার একটা আলাদাই মাহাত্ম্য রয়েছে। তবে সব শেষে একটি কথা অবশ্যই বলব, গঙ্গা নিজে থেকেই নিজের দূষণকে কম করে নিতে সক্ষম হলেও বর্তমানে যুগের মানুষ তথা আমরা গঙ্গা কে যেভাবে দূষণ করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত তার প্রতিরোধের প্রয়োজন আছে।
আশাকরি লেখাটি পড়ে আপনারা সম্বৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন এবং আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলটি ফলো করতে পারেন।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
নমস্কার , ধন্যবাদ।। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা