Breaking

Search Content

Follow Us

শুক্রবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

মহাভারতের শকুনির স্বর্গলোক প্রাপ্ত হওয়ার কারণ || Why shakuni went to heaven

 


নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু । 


আপনাদের সামনে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল - কি এমন পুণ্যের কর্ম করেছিলেন শকুনি; যে কারণে তিনি স্বর্গলোক প্রাপ্ত হলেন?


বন্ধুরা মহাভারতে শকুনি এমন একজন পাত্র ছিলেন যিনি তার সম্পূর্ণ জীবনে শুধুমাত্র কূটনীতি ও ষড়যন্ত্রই করে গেছেন। শুধু তাই নয় কুরুক্ষেত্রের রণভূমি তে হওয়া ঐতিহাসিক যুদ্ধের পিছনে কোথাও না কোথাও শকুনির হাত ছিল। কিন্তু, বন্ধুরা এটা কি আপনারা জানেন মৃত্যুর পরে এই শকুনির স্বর্গলোক প্রাপ্ত হয়েছিল। কিন্তু, এটা কি করে সম্ভব! যে ব্যক্তি তার সারা জীবন কূটনীতি, ষড়যন্ত্র এবং অধর্ম করে গেল তার কি করে স্বর্গলোক প্রাপ্ত হল?


বন্ধুরা শকুনির এই কাহিনীটি শুরু হয় গান্ধার রাজ্য থেকে। মহাভারতের সময়ে গান্ধার রাজ্যের রাজা ছিলেন সুবল। তিনি গান্ধার নরেশ নামে খ্যাত ছিলেন। একটি সময়ের কথা যখন ধৃতরাষ্ট্রের সঙ্গে বিবাহের জন্য পিতামহ ভীষ্ম গান্ধার রাজ্যে পৌঁছালেন। সেখানে গিয়ে তিনি গান্ধার নরেশকে বললেন আপনার পুত্রীর সঙ্গে মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র বিবাহ করতে চান। এই শোনার পর গান্ধার নরেশ এর সব থেকে ছোট পুত্র শকুনি এবং গান্ধার নরেশ নিজেও অবাক হলেন। কেননা তারা জানতেন ধৃতরাষ্ট্র জন্ম থেকেই অন্ধ ছিল। কিন্তু তাও তারা ভীষ্মের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে না। আর ভীষ্ম পিতামহের যুদ্ধকৌশলের ভয়ে তারা সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। এরপর রাজা সুবল নিজের পুত্রী গান্ধারীর বিবাহ ধৃতরাষ্ট্রের সঙ্গে করিয়ে দেন।


এদিকে ধৃতরাষ্ট্রের সঙ্গে গান্ধারীর বিবাহ হলো এবং গান্ধারীও নিজের চোখে সারা জীবনের জন্য পট্টি বেঁধে নিলেন। বলা হয়ে থাকে এই বিষয়টির জন্য রাজা সুবল এত গভীরভাবে কষ্ট পেলেন সেই কারণে তিনি তার সবথেকে বুদ্ধিমান পুত্র শকুনি কে এই বিষয়টির জন্য বদলা নিতে বলেন। সেই সময় গান্ধার হস্তিনাপুরের তুলনায় খুবই ছোট একটি রাজ্য ছিল। কিন্তু, বন্ধুরা কথায় আছে বদলার আগুন কখনো ছোট অথবা বড় দেখে না। এরপর যখন গান্ধার নরেশ সুবলের মৃত্যু হয় তখন তার দেহের হাড় দিয়ে শকুনি পাশা তৈরি করে। আর এমনটা শকুনি তার পিতার আদেশ অনুসারেই করেছিলেন। ওই পাশা ছিল এমন এক প্রকার জাদু পাশা মা কোনো প্রকার জুয়া খেলাতেই শকুনি কে হারতে দিত না। আর বন্ধুরা শকুনির সেই জাদু পাশার মাধ্যমেই হস্তিনাপুরের বিনাশের কাহিনীর সূত্রপাত ঘটে।


দ্বিতীয় কারণ হলো গান্ধার নরেশের পুত্রী গান্ধারীর কুণ্ডলী দেখে পণ্ডিতেরা বলেছিলেন যার সঙ্গে গান্ধারীর বিবাহ হবে, তার মৃত্যু হবে। পণ্ডিতদের কথা মেনে নেওয়ার পর গান্ধার রাজ্যের রাজা সুবল তার পুত্রী গান্ধারীর বিবাহ প্রথমে একটি পাঠা ছাগলের সঙ্গে করিয়ে দেন। এরপরে যেমনটা আমরা সকলেই জানি গান্ধারীর বিবাহ পড়ে ধৃতরাষ্ট্রের সঙ্গে হয়েছিল। বিবাহর পরে যখন ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারী প্রথম ওই বিবাহ সম্পর্কে জানতে পারেন তখন সে গান্ধার নরেশ সহ তার পুরো পরিবারকে বন্দি বানিয়ে আটক করার আদেশ দেন। জেলের মধ্যে বন্দী করা গান্ধার নরেশ ও তার পুরো পরিবারকে রোজ এক মুঠো করে চাল দেয়া হতো খাবার জন্য। এমত অবস্থায় খিদের কারণে তার পরিবারের এক একটি সদস্য মরে যেতে থাকে। তখন গান্ধার নরেশ শকুনিকে ছাড়ার বিনতি করেন মহারাজ ধৃতরাষ্ট্রের কাছে। যাতে শকুনি এর বদলা নিতে পারে। আর ধৃতরাষ্ট্র গান্ধার নরেশের কথায় রাজি হলেন। আর তিনি শকুনি কে বাঁচিয়ে রেখে এমন একটি ভুল করলেন যা পড়ে গিয়ে তার বংশের বিনাশের কারণ হয়ে দাঁড়ালো। 


যাইহোক শকুনি তার বুদ্ধি ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ধৃতরাষ্ট্রের বরপুত্র দুর্যোধনের প্রিয় পাত্র হলেন। শকুনির মনে প্রথম থেকেই কৌরব বংশের বিনাশ কি করে করা যায়, এই বিষয়টি মাথায় ছিল। এই জন্য সুযোগ পেয়েই পাণ্ডব এবং কৌরব দের মধ্যে যুদ্ধ বাধাতে শকুনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল । শকুনি সবসময়ই তার ভাগ্নে দুর্যোধনকে পান্ডবদের বিরুদ্ধে উস্কে দিতে। শেষমেষ ওই উস্কানোর ফলেই মহাভারতের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। 18 দিন ধরে চলা এই যুদ্ধে লাখ লাখ পরিচিত মানুষরা নিজেদের হাতেই মারা গেলেন। এমনকি ধৃতরাষ্ট্রের একশ টি পুত্রের মধ্যে একজনও বেঁচে থাকলো না। দুর্যোধনকে সবশেষে ভীম গলা যুদ্ধে পরাজিত করেন। ওখানেই যুদ্ধের শেষ দিন অর্থাৎ 18 তম দিন সব সময় কূটনীতি ও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে চলা মামা শকুনি নিজের মৃত্যু থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারলেন না। পান্ডবদের সব থেকে ছোট ভাই সহদেব শকুনি কে যুদ্ধে হার মানিয়ে তার বধ করেন।


মৃত্যুর পর শকুনির যখন পরমাত্মার কাছে পৌঁছাল তখন শকুনির স্বর্গলোক লাভ হল। এখন এমনটা জানার পর অনেক বেদবান আশ্চর্য বোধ হয়। এমন ষড়যন্ত্র করা ব্যক্তির স্বর্গলোক কিভাবে লাভ হল? কেননা পান্ডবদের আগুনে পুড়িয়ে জ্বালিয়ে মারার ষড়যন্ত্র অথবা পান্ডবদের জুয়ায় হারিয়ে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ সবকিছুতেই মামা শকুনির বিশেষ ভূমিকা ছিল। কিন্তু এতকিছু কূটনীতি ষড়যন্ত্র ও অধর্ম করার পরও এমন অবস্থায় শকুনির স্বর্গলোক প্রাপ্তি হল কিভাবে? 


আরো পড়ুন:- মৃত্যুর কতদিন বাদে আত্মা দ্বিতীয় জন্ম হয়?Click here


বন্ধুরা আমাদের এই প্রশ্নের উত্তরটি মেলে "শকুনির কর্তব্যপরায়ণতা" -তে। আসলে শাস্ত্রে এই কথাটি উল্লেখ করা রয়েছে সকল পাপীদের তার পাপের শাস্তি মেলে। আর কুটিলতা একটি পাব বলেই গণ্য। যার সাজা অবশ্যই কোনো ব্যক্তি পায়। কিন্তু নিজের পিতা ও পুরো পরিবারের অপমানের বদলা নেওয়ার কারণে যেভাবে শকুনি আজীবন চেষ্টা করেন এবং তাতে সফলতাও অর্জন করেন - শকুনির এই কর্তব্য ও কর্মের কারণে তার জন্য স্বর্গের দুয়ার খুলে দেওয়া হয়।  


বন্ধুরা বিষয়টা ঠিক সেরকমই যেখানে মরার পরে দুর্যোধনেরও স্বর্গলোক প্রাপ্ত হয়েছিল। যেখানে পাণ্ডবরা দুর্যোধনকে দেখেও আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন। এমনকি ভীম ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির কে প্রশ্ন করেছিলেন যে জীবন ভর এত পাপ করল; তার (দূর্যোধন) কি করে স্বর্গলোক প্রাপ্তী হলো?

তখন ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির এর উত্তরে ভীম কে বলেন- শুরু থেকেই তার ভালো লোকেদের সংগতি মেলেনি। এতে তার কোন দোষ নেই। বরং সে যে কাজটি সম্পর্কে সব সময় ভেবেছে সেই কাজটি কে সবসময় সম্পূর্ণ করেছে। যেমন আপনার কর্ম এবং নিষ্ঠা আপনার জন্য সফলতার মার্গটি নিশ্চিত করে ঠিক তেমনি আপনার কর্তব্যপরায়ণতা আপনার জন্য স্বর্গের দুয়ার খুলে দেয়।


আরো পড়ুন:- মৃত্যুর পরে আত্মার দ্বিতীয় জন্ম কত দিন পর হয়? Click here


আশা করি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন এবং বুঝতে সক্ষম হয়েছেন মরার পরেও পাপী মানুষদের স্বর্গলোক কেন লাভ হয়। ভালো লাগলে আপন জনের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা