নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।
আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল-" ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত কোন কোন রীতি নীতি পালিত হয় দুর্গাপূজার সময় "।
বাঙ্গালীদের সবথেকে বড় উৎসব হলো দুর্গাপূজা। এই উৎসবের জন্য সারা বছর ধরে অপেক্ষা করে থাকে প্রত্যেকটি বাঙালি। মূলত মহালয়ার দিনে এসেই এই অপেক্ষার শেষ হয় এবং দেবীপক্ষের সূচনা তে পুজোর আনন্দে মেতে ওঠে প্রত্যেকটি বাঙালি। এখন বর্তমানে চতুর্থী, পঞ্চমীর দিন থেকেই পুজো শুরু হয়ে যায়। কিন্তু রীতি নীতি গুলি মূলত শুরু হয় ষষ্ঠীর দিন থেকে। এই দুর্গাষষ্ঠীর দিন থেকে দশমীর দিন পর্যন্ত একাধিক রীতিনীতি লক্ষ করা যায়। চলুন তাহলে জানা যাক প্রত্যেকটি রীতিনীতি সম্পর্কে।
বোধন- এই বোধন কথাটির আক্ষরিক অর্থ হলো- মা দুর্গা কে আহবান করা। বোধন এর মাধ্যমেই মা দুর্গাকে আহ্বান করা হয়। শরৎকালে দুর্গা পুজোর সূচনা করেছিলেন রাম। রাবণকে পরাজিত করার জন্য দশভূজার আশীর্বাদের কামনায় তিনিই এ সময় দুর্গা পুজো করেন। মূলত এই বোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই মা দুর্গাকে ডাকা হয়। যাতে তিনি অশুভ শক্তির বিনাশ করে, শুভ শক্তির সূচনা করেন।
কলাবউ স্নান বা - মূলত সপ্তমীর দিন এই নবপত্রিকা স্নান নিয়মটি দেখা যায়। এ দিন একটি ছোট কলাগাছের সঙ্গে আরও ৮টি গাছের পাতা বেঁধে তা স্নান করানো হয়। এগুলির মধ্যে কলাগাছটিই স্পষ্ট ভাবে দেখা যায় বলে এই নিয়মকে অনেকে কলাবউ স্নানও বলে। ৯টি গাছের পাতা শক্তির ৯টি রূপকে তুলে ধরে— ব্রহ্মাণী (কলা), কালিকা (কচু), দুর্গা (হলুদ), কার্ত্তিকী (জয়ন্তী), শিব (কৎবেল), রক্তদন্তিকা (বেদানা), শোকরহিতা (অশোক), চামুণ্ডা (ঘটকচু), লক্ষ্মী (ধান)। সপ্তমীর সকালে নবপত্রিকাকে স্নানের জন্য নদী বা জলাশয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর লাল পাড় সাদা শাড়িতে মুড়িয়ে সেটিকে গণেশের পাশে প্রতিস্থাপিত করা হয়।
পুষ্পাঞ্জলি- মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী ও মহানবমী এই তিনদিনই হয়ে থাকে পুষ্পাঞ্জলি। দেবীর কাছে ভক্তরা তাদের অঞ্জলি প্রদানের মাধ্যমে দেবীর প্রতি তাদের আস্থা, শ্রদ্ধা ও ভরসা রাখে। পুরোহিত মশাইয়ের সাথে তাই ভক্তরা মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে দেবীকে অঞ্জলি প্রদান করেন। এছাড়াও অঞ্জলি দেওয়ার পরে মহিষাসুরমর্দিনীর তথা মা দুর্গার চরণে ফুল জ্ঞাপনের নিয়মও আছে।
কুমারী পূজা- অষ্টমীর দিন মূলত করা হয় এই কুমারী পূজা। এই- পূজাতে বাচ্চা মেয়েদের বা কুমারী মেয়েদের মা দুর্গা সাজিয়ে তাদেরকে পূজা করা হয় অষ্টমীর দিনে। মা দুর্গা হলেন নারী শক্তির প্রতীক। তাই প্রত্যেকটি নারীর মধ্যে তিনি বিরাজমান। এই নিয়মটি মাধ্যমে মূলত দেবীর উপস্থিতিকে গণ্য বলে মনে করা হয়।
সন্ধিপুজো- মূলত অষ্টমীর সমাপ্তি এবং নবমীর সূচনা অর্থাৎ অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে এই সন্ধি পূজা করা হয়। মনে করা হয় এই সময়ে মা দুর্গা 'চণ্ড-মুণ্ড' বধের জন্য তার চামুণ্ডা রূপ ধারণ করেন। এ সময় ১০৮টি প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করা হয়। এককালে এদিন পশুবলি দেওয়া হত, তবে বর্তমানে সবজি বলি দেওয়া হয়।
ধুনুচি নাচ- নবমীর দিন পালিত হয় ধুনুচি নাচ। ঢাকের তালে তালে বিভিন্ন কৌশলে ও ছন্দে তালে তাল মিলিয়ে নারী পুরুষ নির্বিশেষে নবমী দিনে পূজামণ্ডপে মা দুর্গার সামনে করা হয় এই দুর্নীতি নাচ। এই নাচে প্রত্যেকটি বাঙালি অংশগ্রহণ করেন। ধুনুচি নাচ হলো বাঙালির দুর্গাপুজোর একটি অন্যতম নিয়ম। এটি ছাড়া প্রত্যেকটি বাঙালির দুর্গাপুজো অসমাপ্ত।
সিঁদুর খেলা- মূলত দশমীর দিন পালিত হয় এই নিয়ম। মা দুর্গার বিসর্জনের আগের মুহূর্তে দশমীর দিন দুর্গাকে সিঁদূরে রাঙিয়ে, মিষ্টি খাইয়ে, পান, ধান, দূর্বা দিয়ে বরণ করা হয়। তারপরে সধবা মহিলারা সিঁদুর খেলায়।
বিসর্জন- উৎসবের পর এবার বিদায়ের পালা। প্রত্যেকটি বাঙালির মন খারাপের পর্ব। এবার সময় দেবী দুর্গার কৈলাস গমনের। মা দুর্গা এবং তার সাথে সাথে কার্তিক,গণেশ ,সরস্বতী, লক্ষী প্রত্যেক কে একে একে নদীর পাড়ে নিয়ে গিয়ে সাত পাক ঘোরানো হয়। তারপর সকল ভক্তরা মিলে প্রবাল ধ্বনি তুলে বলা হয়- "বলো দুগ্গা মা কি"- জয়। আসছে বছর আবার হবে। এই নিয়মের মাধ্যমে শেষ হয় বিসর্জন পর্ব।
বিজয়া- শারদীয়া উৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা করে বিজয়া। বিজয়ার দিনে ছোটরা বড়দের প্রণাম করে আশীর্বাদ নেয়। সমবয়সিরা কোলাকুলি করে একে অপরের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেয়। মিষ্টির আদানপ্রদানও হয় এ সময়।
আশাকরি লেখা টি পড়ে আপনাদের ভালো লেগেছে এবং আপনারা দূর্গা পূজার সকল নিয়ম-নীতি ধাপে ধাপে জানতে পেরেছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন অথবা আমাদের ইউটিউব চ্যানেল অমৃতকথা কে ফলো করতে পারেন।
ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন ।
নমস্কার, ধন্যবাদ ।।
ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা