মা লক্ষ্মীর (Maa Laxmi) গৃহে আগমনের সংকেত।

  নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।

আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল- মা লক্ষ্মীর (Maa Laxmi) গৃহে আগমনের সংকেত।

"এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে 

আমার ঘরে থাকো আলো করে"।।

 ঞআমাদের সকলেরই প্রায় এক ইচ্ছা যে মা লক্ষ্মী আমাদের গৃহে এসে স্থায়ীভাবে অবস্থান করুন। মা লক্ষ্মী একদিকে যেমন ধন-সম্পদের দেবী আবার অন্যদিকে গৃহের স্থায়ী শান্তি ও সৌভাগ্যের দেবী। তাই আমরা প্রত্যেকেই চাই মায়ের কৃপা যেন আমাদের উপর সদাসর্বদা থাকে এবং তিনি যেন আমাদের গৃহে সব সময় অবস্থান করেন। একসময় দেখা যায় মা লক্ষ্মী আপনার গৃহে অবস্থান করে রয়েছেন অথবা মা লক্ষ্মী আপনার গৃহে অবস্থান করবেন তার বার্তা প্রদান করেন। কিন্তু আমরা এই সংকেত গুলি বুঝতে অক্ষম হন। আজকে এই লেখাটির মাধ্যমে আমরা এই বিষয়টি নিয়েই জানব।

এই লেখাটি পড়লে আপনারা বুঝতে পারবেন আপনার গৃহতে মা লক্ষ্মীর অবস্থান রয়েছে কি নেই এবং আপনার গৃহে মা লক্ষ্মী অবস্থান করতে চাইছেন তার কোন বার্তা বা সংকেত মা লক্ষ্মী দিয়েছেন কিনা তা এই লেখাটি পড়লে আপনারা পরিষ্কারভাবে, স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবেন যে মা লক্ষ্মী আপনার গৃহে অবস্থান করছেন অথবা মা লক্ষ্মী আপনার গৃহেতে আসতে চলেছেন।

আমরা প্রত্যেকেই জানি মা লক্ষ্মী চঞ্চলা। কোনো একটি গৃহে খুব কম সময় তিনি স্থায়ীভাবে অবস্থান করেন। কিন্তু যে গৃহে তিনি একবার অবস্থান করেন সেই গৃহ থেকে খুব সহজে তিনি চলে যান না। এই চঞ্চলা দেবীকে স্থায়ীভাবে নিজ গৃহে পাওয়ার জন্য আমরা তার নিত্য পূজা করি প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবারে এবং তার সঙ্গে আরো কিছু উপাচার পালন করি।আর যখন মা লক্ষ্মী আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হন তখন তিনি আপনার গৃহে স্থায়ীভাবে আসার কিছু সংকেত প্রদান করেন।  

(এই সম্পর্কিত ভিডিওটি আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলে দেয়া রয়েছে প্রয়োজন বোধ করলে দেখে নিতে পারেন)-

বিষ্ণুপুরাণ অনুযায়ী এই এই সংকেত গুলি হল -

 প্রথমত, মা লক্ষ্মী যে গৃহে আগমনের বার্তা দেন অনেক সময় সেই গৃহের কোন একজন ব্যক্তি হতে পারে আপনি বা আপনার পরিবারের অন্য কোনো সদস্য বা সদস্যা যিনি প্রত্যক্ষ করেন কোন এক সন্ধ্যায় অথবা রাত্রে মা লক্ষ্মীর অত্যান্ত প্রিয় বা তার বাহন একটি পেঁচা কে। বিষ্ণুপুরাণ অনুযায়ী  আপনি বা আপনার পরিবারের কোনো সদস্য যদি মা লক্ষ্মীর বাহন পেঁচাকে দর্শন করে তা থেকে অনুমান করা হয় যে মা লক্ষ্মী আপনার গৃহতে আগমন করতে চলেছেন। তবে হ্যাঁ যদি দিনের বেলায় আপনি এই মা লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা কে দর্ষণ করেন তাহলে সেই সম্ভাবনা ক্ষীন। আপনি যদি সন্ধ্যাবেলায় অথবা রাত্তিরে দর্শন করেন তাহলে নিশ্চিত হয়েছেন মা লক্ষ্মী আপনার ঘরে স্থায়ীভাবে আসতে চলেছে।

দ্বিতীয় যে সংকেত বা বিষয়টির কথা বলব তা হয়তো আপনি জানেন। মা লক্ষ্মী গৃহের কখনোই অপরিচ্ছন্নতা বা অপরিষ্কার পছন্দ করেন না। তাই যদি কোন গৃহে অপরিষ্কার বা অপরিচ্ছন্নতা থাকে তাহলে নিশ্চিত হয়ে যান সেই গৃহে মা লক্ষ্মী কখনোই প্রবেশ করবেন না। আর এই গৃহের পরিষ্কার পরিছন্নতা করতে সবথেকে বড় ভূমিকা নেয় ঝাটা বা ঝাড়ু। আমরা অনেকেই জানিনা যে ঝাঁটা হল মঙ্গলের প্রতীক। যে কারণে আপনি লক্ষ করেছেন হয়তো যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিথি ধনতেরাসের দিন এ ঝাঁটা কেনার পরামর্শ দেয়া হয়। আর এই ঝাঁটার মাধ্যমেই বাড়ির সমস্ত ধরনের অপরিচ্ছন্নতা ও নোংরা দূর করা সম্ভব হয়। তাই আপনি যদি সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এমনটা কোনদিন দেখেন যে আপনার গৃহে কোনো একজন কেউ ঝাঁট দিচ্ছে তাহলে আপনি নিশ্চিত হয়েছেন আপনার গৃহে মা লক্ষ্মী বিরাজ করবেন। তবে হ্যাঁ, আপনি যদি হঠাৎ দেখেন এই দৃশ্য তবেই এই সম্ভাবনা প্রকট হয় নচেৎ তা কার্যকারী হয় না। এর সাথে সাথে আপনার বাড়ি ঘরগুলো ও পরিষ্কার পরিছন্নতা থাকতে হবে।

তৃতীয়তঃ যে বিষয়টির কথা বলবো তা হল যদি আপনি লক্ষ্য করেন আপনার বাড়ির আশেপাশে সবুজে সবুজ হয়ে গেছে, সমগ্র পরিমণ্ডল ফুলে ফলে ভরে উঠেছে তাহলে তা ইঙ্গিত বহন করে মা লক্ষীকে স্বাগত জানাতে মাতা প্রকৃতির এই আয়োজন।যদি এর উল্টোটা হয় অর্থাৎ আপনার বাড়ির আশেপাশে সমগ্র সমস্ত কিছু শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে তাহলে বুঝতে হবে মা লক্ষ্মী সেই স্থান থেকে বিদায় নিতে চলেছে। তাই আপনার আশেপাশে যে সমস্ত বৃক্ষ-গাছপালা রয়েছে সেগুলিকে নিয়মিত পরিচর্যা করবেন, জল দেবেন।

চতুর্থত যে বিষয়টি মা লক্ষ্মীর আগমনের সংকেত বহন করে তা হল মা লক্ষ্মীর অত্যান্ত একটি প্রিয় সামগ্রী তা হলো- করি এবং এই করি আমরা অনেক সময় মা লক্ষীকে অর্পণ করি এবং ধনতেরাসের সময় অনেকেই করি কেনেন মা লক্ষীকে নিবেদন করার উদ্দেশ্যে। আর এই করি আপনি যদি আপনার বাড়ির আশেপাশে কোথাও পড়ে থাকতে দেখেন তাহলে আপনি বুঝে নেবেন মা লক্ষ্মী আপনার গৃহে অবস্থান করতে চলেছে। তবে হ্যাঁ এই প্রক্রিয়া কিন্তু সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ভাবেই হওয়া প্রয়োজন কৃত্রিমভাবে করা কোনো প্রক্রিয়া কিন্তু মা লক্ষ্মীর আগমনের ইঙ্গিত বহন করেনা। তাই হঠাৎ যদি রাস্তায় আপনি করির দর্শন পান তাহলে আপনি বুঝে নেবেন মা লক্ষ্মীর আগমন তা সূচিত করছে।

পঞ্চমত যে বিষয়টির কথা বলব তা মা লক্ষ্মীর অত্যন্ত পছন্দের একটি জিনিস তাহলো শঙ্খ। শঙ্খ বাজিয়ে মা লক্ষ্মীর আগমন হয়। আমরা অনেক সময় গানেতেও শুনে থাকি শঙ্খ বাজানোর কথা-

"শঙ্খ বাজিয়ে তোমায় ঘরে এনেছি 

সুগন্ধি ধূপ জ্বেলে আসন পেতেছি"।

লক্ষ্মী পূজা তে যেমন শঙ্খ বাজানো হয় ঠিক তেমনি প্রত্যেকটি গৃহস্তে সন্ধ্যেবেলায় শঙ্খ বাজানো হয়। তাই শঙ্খর ধ্বনি মা লক্ষ্মীর আগমনের বার্তা সূচিত করে। যদি কোনো সময়ে এমনটা হয় যে আপনার ঘুম ভাঙলো বা আপনি ঘুম থেকে উঠলেন কোনো এক শঙ্খ ধ্বনির আওয়াজে। স্বাভাবিক নিয়মেই তাহলে বুঝতে হবে মা লক্ষ্মীর সেই গৃহে আগমন হতে চলেছে। তাই সকাল- সন্ধ্যা নিয়মিত বাড়িতে শঙ্খ ধ্বনি বাজাতে কখনোই ভুলবেন না।

ষষ্ঠত যে বিষয়টির কথা বলবো সেটা হয়তো আপনারা সকলেই জানেন আপনার গৃহে যে-পাত্রে চাল রাখেন খেয়াল রাখবেন সেই পাত্রে কখনোই যেন চাল ফুরিয়ে না যায়। আর যদি চাল ফুরিয়েও যায় তাহলে আপনি কখনোই বলবেন না চাল ফুরিয়ে গেছে। বরং বলবেন যে চাল বাড়ন্ত রয়েছে। তাই যে গৃহে চাল রাখার পাত্রে সর্বদা চাল থাকে সেই গৃহে মা লক্ষ্মী বিরাজ করেন। তাই কখনো চালের পাত্র খালি অবস্থায় রাখবেন না। আপনার গৃহে চালের পাত্র খালি রাখার অর্থ হল মা লক্ষ্মীর সেই গৃহ ত্যাগ করে চলে যাওয়া।

সপ্তমতঃ যে বিষয়টি কথা বলব তা হল স্বপ্নের মাধ্যমে ঘটিত ঘটনা। আপনি যদি এমনটা কোনদিনও স্বপ্ন দেখেন যে মা লক্ষ্মী আপনাকে অথবা অন্য কোনো ব্যক্তিকে দুহাত ভরে আশীর্বাদ করছেন তাহলে আপনি সেই বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হয়ে যান যে মা লক্ষ্মী আপনার গৃহে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবেন। আপনি যদি মা লক্ষীকে স্বপ্নদর্শন করেন তাহলে কিন্তু অবশ্যই বৃহস্পতিবার দিন মা লক্ষ্মীর পাঁচালী পড়তে ভুলবেন না।

(মা লক্ষ্মীর পাঁচালী সম্পর্কে ইতিমধ্যেই একটি লেখনি আমরা প্রকাশ করেছি যদি প্রয়োজন বোধ করেন তাহলে দেখে নিতে পারেন)-CLICK HERE

মা লক্ষ্মীর স্বপ্নদর্শন আপনাকে পরিষ্কার ইঙ্গিত দেয় যে মা লক্ষ্মী আপনার গৃহতে আসতে চলেছে।

সবশেষে যে বিষয়টির কথা বলব সেটি হল যে ধনসম্পত্তির আগমন মানেই কিন্তু মা লক্ষ্মীর আগমন এটা কখনোই নয়। যদি ধন-সম্পদের সাথে সাথে সুখ এবং গৃহের শান্তি আসে তাহলে সেটির অর্থ হয় মা লক্ষ্মীর আগমন। আর তারর জন্য নিজের মনটাকে সর্বপ্রথম পরিষ্কার করতে হবে এবং তার সঙ্গে নিজের কর্ম কিন্তু কখনোই ভুলে গেলে চলবে না। যাইহোক লেখা টি আজ এখানেই শেষ করলাম ।

আশাকরি লিখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে শেয়ার করতে পারেন অথবা আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলটি ফলো করতে পারেন।

ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

নমস্কার, ধন্যবাদ।।

ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।