বাড়িতে শঙ্খ থাকলে এই বিষয়গুলো মেনে চলুন- সকল বিপদ দূর করে গৃহের সৌভাগ্য নিয়ে আসবে। (শঙ্খের সঠিক ব্যবহার)

  নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।

আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল- "বাড়িতে শঙ্খ থাকলে এই বিষয়গুলো মেনে চলুন- সকল বিপদ দূর করে গৃহের সৌভাগ্য নিয়ে আসবে।"

পূজা হোক অথবা যেকোনো শুভ অনুষ্ঠান আমাদের বাড়িতে শঙ্খের ব্যবহার একটি অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। আমাদের শাস্ত্রে শাক বা শঙ্খের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের শাস্ত্র অনুযায়ী যে ত্রিদেব রয়েছেন অর্থাৎ ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর। সেই ত্রিদেবের মধ্যে বিষ্ণুর একটি প্রধান প্রিয় জিনিস হল শঙ্খ। কারণ শঙ্খধ্বনিতে আওয়াজ তুলে তিনি বারবার অশুভ শক্তিকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন। যে কারণে বৈদিক যুগ থেকে আজ পর্যন্ত হিন্দু ধর্মের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে হ্যাঁ বাড়ির শঙ্খের যদি ঠিকঠাক ভাবে নিয়ম মেনে না রাখতে পারেন তাহলে কিন্তু বাড়ির মারাত্মক ক্ষতিও হয়ে যেতে পারে।

অনেক সময় দেখা যায় বেশিরভাগ মানুষই শঙ্খের এই ক্ষমতা সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকেন। তাই ঠিকমত শঙ্খ রাখতে না পারলে অজান্তেই কিন্তু গৃহের মধ্যে নেগেটিভ শক্তি তৈরি হতে শুরু করে। অন্যদিকে শঙ্খের প্রতিটি গৃহে এই ব্যবহার  অশুভ শক্তিকে যেমন বিনাশ করে ঠিক তেমনই গৃহের দুর্ভাগ্যকে দূর করে পরিবারে নিয়ে আসে সৌভাগ্য। যে কারণে শঙ্খ যদি বাড়িতে থাকে তাহলে অবশ্যই কিন্তু এই জিনিসগুলো মাথায় রাখবেন।

প্রতিটি গৃহে শঙ্খের সঠিক ব্যবহার:-

আপনি নিশ্চয়ই জানেন শঙ্খ মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। শঙ্খ একাধারে- বাদ্য শঙ্খ। অন্যদিকে- পূজ্ব শঙ্খ, যাকে আমরা জল শঙ্খও বলে থাকি। মূলত এই জল শঙ্খ দুধ এবং গঙ্গা জল দিয়ে পূজা করা হয়।

এবার প্রশ্ন হল বাড়িতে কোন শঙ্খ রাখা প্রয়োজন?

বাড়িতে এই দুই ধরনের অর্থাৎ বাদ্য শঙ্খ ও জল শঙ্খ বা পূজ্ব শঙ্খ রাখা প্রয়োজন। অনেক সময় আমরা এই ভুলটি করি বাড়িতে কেবলমাত্র বাদ্য শঙ্খ রেখে দিই। কিন্তু জল শঙ্খ রাখি না। এই জিনিসটি একেবারেই করা উচিত নয়। শঙ্খ যখন কিনবেন দুটি কিন্তু একই সঙ্গে কেনা উচিত।

শঙ্খের ব্যবহার:-

প্রথমত:- বহু ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেকে দুটি শঙ্খ কিনে বাদ্য শঙ্খটিকে শুধুমাত্র ব্যবহার করে। আর জল শঙ্খ টিকে আলমারিতে তুলে রাখে। এটি কিন্তু কখনোই করা উচিত নয়। বাদ্য শঙ্খ টিকে যেমন প্রত্যেক দিন ব্যবহার করবেন ঠিক সেরকম জল শঙ্খটিকেও প্রত্যেকদিন ব্যবহার করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয়তঃ যে শঙ্খটি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করছেন, তাতে জল দিয়ে যেন পুজোর সময় ব্যবহার না করেন। এতে কিন্তু পুজোর ঘর অশুদ্ধ হয়ে যায়। এর সঙ্গে আরেকটি বিষয় মাথায় রাখবেন যে শঙ্খ টি বাজানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে সেই শঙ্খ টিকে হলুদ কাপড়ের উপর রাখবেন। যদি হলুদ কাপড়ের ওপর বাজানোর শঙ্খ টিকে রাখেন তাহলে সেক্ষেত্রে গৃহে পজিটিভ শক্তি বৃদ্ধি পায়।

তৃতীয়তঃ যে জল শঙ্খ টিকে আপনি পূজার কাজে ব্যবহার করছেন। সেটিকে কিন্তু প্রতিদিন গঙ্গা জল দিয়ে পরিষ্কার করে রাখতে হবে। এই শঙ্খ টি কে আপনাকে রাখতে হবে সাদা অথবা লাল কাপড়ের উপর। সব থেকে ভাল হয় আপনি সাদা কাপড়ের ওপর এই শঙ্খ কে রাখার চেষ্টা করবেন।

চতুর্থত- যে বিষয়টির কথা বলব তা হল- বাদ্য শঙ্খ থেকে জল শঙ্খ বা পূজ্ব শঙ্খ দূরত্ব সর্বদা বজায় রাখবেন। দুটি সংখ্যার জানো পরস্পরের খুব কাছাকাছি না রাখেন। কখনোই বাদ্য শঙ্খর পাশে পূজার শঙ্খ টিকে রাখবেন না। বাদ্য শঙ্খের ওপরে পূজা শঙ্খ সর্বদা যেন থাকে। দুটি শঙ্খর মধ্যে দূরত্ব থাকা প্রয়োজন। কারণ জল শঙ্খ গঙ্গাজল ধারণ করছে। তাই যেন তার পূর্ণতা না কমে যায় সেই কারণে দূরত্ব রাখতে হবে।

পঞ্চমত- পুজ্ব শঙ্খ বা জল শঙ্খ কিনে আনার পর আপনার ঠাকুর ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এবং তার নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম বিধি বা উপাচার রয়েছে।

এই বিষয়ে অধিক জানতে আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিওটি দেখে নিতে পারেন- 

ষষ্ঠতঃ যে বিষয়টির কথা বলব তা হল আমাদের ঠাকুরঘরে অনেক সময় ভগবান শিবের মূর্তি কিংবা ছবি থাকে কিন্তু আমাদের শাস্ত্রমতে ভগবান শিবের সামনে বা মাথার কাছে কখনোই শঙ্খ রাখবেন না। শুধু তাই নয় এই প্রসঙ্গে আরও একটি জিনিস মাথায় রাখবেন যে শঙ্খের জল কখনোই যেন দেবাদিদেব মহাদেবের মাথার ওপর ঢালা না হয়। এ প্রসঙ্গে সূর্যদেবের ক্ষেত্রেও একই বিষয় মেনে চলতে হবে। সূর্যদেবের পূজার ক্ষেত্রেও কিন্তু কখনো শঙ্খের জল ব্যবহার করবেন না।

সপ্তমতঃ যে বিষয়টির কথা বলব তা হয়তো সকলেই জানেন কিন্তু তাও অনেকেই করেন না। আপনার বাড়িতে যে বাদ্য শঙ্খটি আছে তা প্রতিদিন অন্তত দুবার ব্যবহার করবেন। বিশেষ করে ঊষা লগ্নে এবং সন্ধ্যেবেলায়। এই সময়ে কিন্তু অবশ্যই শাঁখ বাজানো উচিত।

আশা করি বন্ধুরা এই লেখাটি পড়ে আপনারা সম্মৃদ্ধ হয়েছেন এবং শঙ্খের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জানতে সক্ষম হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে শেয়ার করতে পারেন অথবা আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলটিকে ফলো করতে পারেন।

ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

নমস্কার, ধন্যবাদ।

 ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।