Breaking

Search Content

Follow Us

শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২২

মহাভারতের সবথেকে শক্তিশালী যোদ্ধা কে ছিল || বিদুর কেন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি; জানুন বিদুরের জন্মকথা ও জীবনী।

 


নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু । 


আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল - 

মহাভারতের অন্যতম শক্তিশালী যোদ্ধা বিদুর কেন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি; জানুন বিদুরের জন্মকথা ও জীবনী।


বন্ধুরা মহাভারতের যুদ্ধ ধর্ম ও অধর্মের মধ্যে হয়েছিল। যে যুদ্ধে পাণ্ডব ও কৌরব দুই দিকেই বহু শক্তিশালী যোদ্ধা লড়াই করেছিল । যেমন- অর্জুন,ভীম, পিতামহ ভীষ্ম, কর্ণ, আর এই সকল যোদ্ধাদের থেকেও সবথেকে শক্তিশালী পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণও এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু বন্ধুরা আপনারা কি জানেন এ ছাড়াও আর একজন এমন ব্যক্তি ছিল যে এই মহাভারতের যুদ্ধে প্রবল শক্তিশালী যোদ্ধা বলে গণ্য। এই যোদ্ধার নাম ছিল বিদুর। বলা হয় বিদুর ছিল ধর্মরাজের অবতার। আর যদি উনি চাইতেন তাহলে মহাভারতের পুরো সেনাকে নিজের অস্ত্র অর্থাৎ একটি তির- এর মাধ্যমে নষ্ট করে দিতে সক্ষম ছিলেন। কিন্তু, বন্ধুরা বাস্তবে তা ঘটেনি। এত শক্তিশালী হওয়ার পরও কেন বিদুর মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধটিকে সমাপ্ত করতে পারলেন না?  



মহাভারত


বন্ধুরা বিদুর ছিলেন ধৃতরাষ্ট্র ও পান্ডুর ভাই এবং কৌরব ও পাণ্ডবদের কাকা। হস্তিনাপুরের রাজা শান্তনু ও তার স্ত্রী সত্যবতীর চিত্রাঙ্গদ ও বিচিত্রবীর্য নামে দুটি পুত্র সন্তান হয়। এই দুই পুত্র ছোট থাকা অবস্থাতেই শান্তনু মারা যায়। তাই এই দুই পুত্রের পালন পোষণ করেন ভীষ্ম। ভীষ্ম ছিল শান্তনুর প্রথম পক্ষের স্ত্রী গঙ্গার পুত্র। শান্তনু পড়ে সত্যবতীর সুন্দরতায় মুগ্ধ হয়ে তার সঙ্গে বিবাহ করেন। কিন্তু বিবাহের পূর্বে সত্যবতীর পিতা রাজা শান্তনুর কাছে শর্ত রেখেছিলেন তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী গঙ্গা থেকে জন্ম নেওয়া পুত্র নয় বরং সত্যবতীর গর্ভ থেকে যে পুত্র সন্তান জন্ম নেবে সেই পরবর্তীতে রাজ সিংহাসনে বসবে। এই শর্তে রাজা শান্তনু রাজি হয়ে যায় এবং সত্যবতীর পিতাকে বচন দেন যে সত্যবতীর গর্ভ থেকে জন্ম নেবে যে পুত্র সেই পরবর্তীতে রাজ সিংহাসনে বসবে। এই কারণে নিজের পিতার বচন রক্ষার জন্য গঙ্গাপুত্র ভীষ্ম জীবনে বিবাহ করবেন না বলে প্রতীক্ষাবধ্য হন এবং সত্যবতীর দুই সন্তানকে নিজের পুত্রের মত লালন-পালন করে বড় করেন।


চিত্রাঙ্গদ বড় হলে ভীষ্ম তাকে রাজ সিংহাসনের পদে প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু কিছু সময় পরেই গন্ধর্বরাজের সঙ্গে যুদ্ধে চিত্রাঙ্গদ এর মৃত্যু হয়। এমত অবস্থায় বিচিত্রবীর্য যুবক অবস্থায় ছিল। তাই ভীষ্ম তার বিবাহ দেওয়ার কথা ভাবতে লাগলেন। ওই সময়ই কাশীরাজের তিন পুত্রী- অম্বা, অম্বিকা, অম্বালিকার স্বয়ংবর সভা অনুষ্ঠিত হয়। ভীষ্ম সেই সয়ংবর সভাতে গিয়ে সকল রাজাদের পরাস্ত করে তিন কন্যার হরণ করে হস্তিনাপুরে নিয়ে আসেন। এরপর বিচিত্রবীর্য- এর সঙ্গে বিবাহের পূর্বে জ্যেষ্ঠা কন্যা অম্বা ভীষ্মকে বলেন যে তিনি পূর্বেই শাল্বরাজকে মনে মনে পতিত্বে বরণ করেছেন সুতরাং তাকে শাল্বের কাছেই যেতে দেওয়া হোক। ভীষ্ম তার অনুরোধ শুনে তাকে শাল্বরাজের কাছে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু অন্য দুই কন্যা অর্থাৎ অম্বিকা, অম্বালিকার সঙ্গে বিচিত্রবীর্যের বিবাহ করিয়ে দেন ভীষ্ম। কিছু সময় বাদে বিচিত্রবীর্যের শরীর খারাপ হয় এবং শারীরিক রোগ-ব্যাধির জন্য তার মৃত্যু হয়। কিন্তু, তাঁর কোনো সন্তান ছিল না। এরকম অবস্থায় বংশ নষ্ট হওয়ার ভয়ে সত্যবতী ভীষ্মকে বিচিত্রবীর্যের স্ত্রীদের থেকে পুত্র সন্তান জন্ম দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু, ভীষ্ম তার প্রতিজ্ঞা ভাঙবেন না বলে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তখন সত্যবতী তার প্রথম সন্তান বেদব্যাস কে স্মরণ করেন। বন্ধুরা বেদব্যাস সত্যবতী এবং ঋষি পরাশরের পুত্র ছিল। বন্ধুরা বেদব্যাসের সম্পূর্ণ জন্মকথা আমরা আপনাদের অন্য একটি লেখাতে জানাবো।


বেদব্যাস মায়ের আজ্ঞা পালন করতে পুত্র উৎপত্তির জন্য রাজি হয়ে যান। বেদব্যাস অম্বিকা ও অম্বালিকাকে এক বর্ষ পর্যন্ত নিয়ম ব্রত পালন করতে বলেন।এক বর্ষ পরে বেদব্যাস তার মা সত্যবতীকে গিয়ে বললেন অম্বিকা, অম্বালিকা কে একটি কক্ষে একে একে নিবস্ত্র হয়ে তার সামনে যেতে হবে। লজ্জার কারনে অম্বিকা ও অম্বালিকা তাতে প্রথমে রাজি হলেন না। কিন্তু, সত্যবতী পরে তাদেরকে বোঝানোর ফলে সত্যবতীর কথা তারা মেনে নিতে বাধ্য হয়। এরপরে বেদব্যাস যখন অম্বিকার কাছে যান তখন অম্বিকা তার চোখ বন্ধ করে নেয়, এরপরে বেদব্যাস মাতা সত্যবতীর কাছে গিয়ে বললেন অম্বিকার গর্ভে এক তেজশ্রী পুত্র জন্ম নেবে। কিন্তু, অম্বিকা তার চোখ বন্ধ করে নেওয়ায় এই পুত্রটি চক্ষুহীন হবে। একথা শোনার পর সত্যবতীর খুব দুঃখ হলো। এরপরে বেদব্যাস ছোট রানী অম্বালিকার কাছে গেলেন, বেদব্যাস কে অম্বালিকা দেখার পর ভয়ে তাঁর গাত্রবর্ণ হলুদ রঙের হয়ে গেল। এরপরে বেদব্যাস তার মাতা সত্যবতীকে গিয়ে আবার পুনরায় বলল-যেহেতু অম্বালিকা গাত্রবর্ণ হলুদ রঙের হয়ে গিয়েছিল সেই অনুযায়ী তার গর্ভে যে পুত্র সন্তান জন্ম নেবে সে পান্ডু রোগে (জন্ডিস) ভুগবে। এ কথা শোনার পর সত্যবতীর আরো বেশি দুঃখ হলো। এরপরে তিনি আবারও পুনরায় রানী অম্বালিকা কে বেদব্যাসের সঙ্গে ওই কক্ষে যেতে বললেন। কিন্তু, এইবার রানী অম্বালিকা স্বয়ং নিজে না গিয়ে তার দাসীকে ওই কক্ষে তে পাঠিয়ে দেন এবং ওই দাসীটি একেবারেই ভয় পান না। যেহেতু কক্ষে অন্ধকার ছিল সেই অনুযায়ী বেদব্যাস বুঝতে পারেননি। বেদব্যাস এর পরে তার মাতা সত্যবতীর কাছে গিয়ে বলেন এই পুত্রটি নীতিবান এবং বেদ জ্ঞানী হবে । এই শুনে সত্যবতী খুশি হয়। কিন্তু, পরবর্তীতে ওই দাসী অন্তঃসত্ত্বা হলে এই ঘটনা জানা যায়।


বন্ধুরা অম্বিকার গর্ভে জন্ম নেয় ধৃতরাষ্ট্র। যে জন্ম থেকেই অন্ধ ছিল। আর অম্বালিকার গর্ভ থেকে জন্ম নেয় পান্ডু। আর ওই দাসীর গর্ভ থেকে জন্ম নেয় বিদুর যে ছিলো নীতিবান ও বেদ জ্ঞানী। মূলত যমরাজই ছিলেন যে ওই দাসীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এক ঋষির অভিশাপের জন্য। এরপরে এই বিদূরই হন ধৃতরাষ্ট্রের মন্ত্রী। বিদুর স্বয়ং ধর্মের পালন করতেন এবং চাইতেন ধৃতরাষ্ট্রও যেন ধর্মের পথে চলে। যখনই ধৃতরাষ্ট্র পান্ডবদের ক্ষতি করার কোনো কথা বলতেন তখনই বিদুর তাকে ভালো ভাবে বোঝাতেন। পান্ডবদের প্রতি বিদুরের বিশেষ শ্রদ্ধা থেকে দূর্যোধন বিদুরকে হিংসা করতেন। যুধিষ্ঠিরকে এক ষড়যন্ত্রের হাত থেকে বিদুরই বাঁচিয়েছিলেন। বিদুরের কাছে এক চমৎকার ও শক্তিশালী তীর ধনুক ছিল। যা তিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। এই ধনুক দিয়ে তিনি চাইলে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধকে একটিমাত্র তীর দ্বারা শেষ করতে পারতেন।


একদা বিদুর একবার দূর্যোধন কে পান্ডবদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে বারণ করেছিলেন। কিন্তু, দুর্যোধন তা শুনে খুবই রেগে যান এবং বিদুর কে তিনি খারাপ কথা বলে অপমান করেন। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে বিদুর তার ধনুকটি ভেঙে ফেলেন এবং তিনি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অংশ নেবেন না বলে ঠিক করেন। ভালই জ্ঞান ছিল তিনি জানতেন তিনি যদি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তাহলে তাকে কৌরব দের পক্ষ নিয়ে লড়তে হবে। অর্থাৎ অধর্মের পক্ষ নিতে হবে তাকে। জন্য তিনি নিজে স্বয়ং যুদ্ধ না করার সিদ্ধান্ত নেন। এর সাথেই তিনি ধৃতরাষ্ট্রকেও বোঝান যে তার পুত্র দূর্যোধন কৌরবদের বংশ যুদ্ধ অশান্তির মধ্যে দিয়ে নষ্ট করার জন্য করার উঠে পড়ে লেগেছে। অতএব এই যুদ্ধ এড়িয়ে চলা বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু, বিদুরের এই কথা কেউই কর্ণপাত করেনি। যার ফলে সংঘটিত হয়েছিল মহাভারতে কুরুক্ষেত্রের মহাযুদ্ধ। আর এই যুদ্ধের পরিনাম আমাদের কারোরই অজানা নেই। এই মহাযুদ্ধের ফলে ধ্বংস হয় কৌরবরা।


বন্ধুরা মহাভারতের বিদুর এই কাহিনী আপনাদের কেমন লাগলো; ভালো লাগলে আপনজনদের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন অথবা আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলটি ফলো করতে পারেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।


 

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা