নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।
আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল -
মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর দুই পক্ষের জীবিত যোদ্ধাদের কি হলো ?
মহাভারতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ চলছিল ১৮ দিন ধরে। এছাড়াও কৌরবদের (১১অক্ষসহিনী) এবং পান্ডবদের (৭অক্ষসহিনী) সব মিলিয়ে প্রধান সেনা সংখ্যা ছিল - ১৮ অক্ষসহিনী অর্থাৎ ১৮ জন প্রধান সৈন্য দ্বারা ঘোড়ার রথ পরিচালক। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ১৮ দিন ধরে চলেছিল। যুদ্ধ সমাপ্ত হতে হতে দুই দিক থেকেই এই সকল সৈন্যের অন্ত প্রায় হয়ে এসেছিল বললেই চলে। যুদ্ধের পরে শুধু কিছুমাত্র যোদ্ধাই বেঁচে ছিলেন। ওই বিনাশকারী যুদ্ধে দুই পক্ষেরই প্রায় সবকিছু নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কথা হচ্ছে কৌরবের দিক থেকে যেই যোদ্ধা গুলো বেঁচে ছিল তাদের কি হলো? আজকের এই লেখাটিতে মূলত আপনাদের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব যে মহাভারতের যুদ্ধের পর যে সকল যোদ্ধারা জীবিত ছিল তাদের কি হলো? মহাভারতের যুদ্ধের পরে তারা কোথায় চলে গেলেন?
কৃপাচার্য - মহাভারতের যুদ্ধে কৃপাচার্য বেঁচে গিয়েছিলেন। কারণ তিনি চিরঞ্জীবী হওয়ার বর পেয়েছিলেন। তার মৃত্যুর কোন কথা আজ অব্দি কথাও উল্লেখ পাওয়া যায়নি। সেই কারণে আজ অব্দি এটাই মনে করা হয় তিনি আজও বেঁচে আছেন।
কৃপাচার্য - শরদ্বানের পুত্র ছিলেন। তার মা তার নাম ছিল- জানপদী। যিনি দেবরাজ ইন্দ্র দ্বারা পেরিত এক দেবকন্যা বা অপ্সরা ছিলেন। ঋষি শরদ্বানের ধ্যান ভঙ্গ করার জন্য এই দেবকন্যা কে দেবরাজ ইন্দ্র প্রেরণ করেছিলেন। ঋষি শরদ্বান ও দেবকন্যা জানপদীর মিলনের ফলে দুটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু তাদের মাতা এবং পিতা দুজনাই তাদের জঙ্গলে রেখে চলে যান। তখন রাজা শান্তনু ওই জঙ্গল দিয়ে পরিভ্রমণ কালে ওই সন্তান দুটিকে দেখলেন এবং তাদের উপর কৃপা করে তাদের পালন পোষণ করার দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। এই দুই সন্তানের নাম কৃপ ও কৃপী রাখা হয়। কৃপের বোন কৃপীর বিবাহ সম্পন্ন হয় দ্রোণাচার্যের সঙ্গে এবং তাদের সন্তানের নাম অশ্বথামা। মহাভারতের যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবার পর কৃপাচার্য পান্ডবদের কাছে পুনরায় চলে এসেছিলেন এবং পান্ডব বংশের শিক্ষাগুরু হয়ে নিয়োজিত হয়েছিলেন। কৃপাচার্য অভিমুন্য ও উত্তর পুত্র পরীক্ষিত কে অস্রবিদ্যা শিখেয়েছিলেন।
কৃতবর্মাঃ- কৃতবর্মা ছিলেন যাদব বংশীয়।কৃষ্ণের অনুগত হওয়া সত্বেও দুর্যোধনের অনুরোধে ইনি কৌরবদের পক্ষে যোগ দিয়েছিলেন। তাকে এক শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা রূপে গণ্য করা হতো। কৃতবর্মা মহাভারতের যুদ্ধে তার ১ অক্ষসহিনী সেনার সঙ্গে দুর্যোধনের পক্ষে নিয়ে যুদ্ধ করতে এসেছিলেন। কৃতবর্মা একটি সাধারণ যোদ্ধা ছিলেন না বরং তিনি একটি শক্তিশালী যোদ্ধা ছিলেন। তিনি যে প্রবল মাত্রায় ক্ষমতাবান ও শক্তিশালী ছিলেন তার তিনি বহু প্রমাণ দিয়েছেন। তিনি মহাভারতে ভীম ও যুধিষ্ঠিরের মতো শক্তিশালী যোদ্ধাদের পরাস্ত করেছিলেন। শুধু তাই নয় মহাভারতে যুদ্ধের শেষের দিকে দূর্যোধন যখন সরোবরে গিয়ে নিজেকে লুকিয়ে নিয়েছিলেন, তখন তিনি দুর্যোধনকে সামনে এসে যুদ্ধ করার জন্য উৎসাহিত করে তার মনোবল বাড়িয়ে ছিলেন।
যখন অশ্বত্থামা রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে অনেক পান্ডব যোদ্ধাদের অনীতিকর বধ করেছিলেন তখন যে সকল যোদ্ধারা জান বাচিয়ে পলায়ন করেছিলেন কৃতবর্মা তাদের হত্যা করেছিলেন। কৃতবর্মা মহাভারতের যুদ্ধ শেষে জীবিত ছিলেন।
পরবর্তীতে অশ্বত্থমাকে সাহায্য করেছিলেন বলে সাত্যকি কৃতবর্মাকে তিরস্কার করেন। কৃতবর্মাও সাত্যকির অন্যায়ভাবে ভুরিশ্রবা-বধের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। বচসা চরমে উঠলে সাত্যকি অসি দিয়ে কৃতবর্মার শিরশ্ছেদ করেন। এই ভাবেই মৃত্যু হয় কৃতবর্মার।
আশ্বাথামাঃ-অশ্বথামা ছিলেন এমন এক মানুষ যিনি অমর। আজও তিনি বেঁচে আছেন বলে মনে করা হয়। মহাভারতের যুদ্ধের পর জীবিত থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন অশ্বত্থামা। গুরু দ্রোণাচার্য এবং কৃপীর বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পর তারা একটি পাহাড়ের গুহায় বহুদিন ধরে এক শিবলিঙ্গের আরাধনা করতে থাকে পুত্র সন্তান লাভের জন্য। তখন ভগবান শিব তাদের তপস্যায় সাড়া দিয়ে তাদেরকে আশীর্বাদ প্রদান করে এবং কাদের যে পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেন সেই ছিলেন অশ্বত্থামা। অশ্বথামার কপালে একটি মনি ছিল মনে করা হতো ওটি ভগবান শিবের আশীর্বাদ। যে কারণে যে কোনো যুদ্ধে অশ্বথামা পরাজিত হবে না বলে মনে করত তার পিতা গুরু দ্রোণাচার্য। কিন্তু মহাভারত অনুযায়ী পান্ডবদের বহু যোদ্ধাদের রাতের অন্ধকারে অশ্বথামা যখন বোধ করেন তখন পান্ডব পুত্রেরা তাকে বন্দী করে নেয় এবং তার কেশ (চুল) কেটে ও তার কপাল থেকে মণিটি নিয়ে তাকে মুক্ত করে দেয়া হয়।
বৃষকেতুঃ- বৃষকেতু ছিলেন কর্ণের পুত্র, যিনি মহাভারত যুদ্ধশেষে জীবিত ছিলেন। বৃষকেতুর আট ভাই ছিল। মহাভারতের যুদ্ধে শুধুমাত্র বৃষকেতুই বেঁচে ছিলেন তার বাকি আট ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছিল। মহাভারত কথা অনুযায়ী কর্ণ বৃষকেতুকে অস্ত্রশস্ত্রের শিক্ষা ভালোভাবে দিয়েছিলেন এবং তার ব্রহ্মাস্ত্র সম্পর্কেও জ্ঞান ছিল। মহাভারতের যুদ্ধের পর কর্ণের এক স্ত্রী যার নাম ছিল বৃশালী; সে কর্ণের চিতার সঙ্গেই নিজের প্রাণ ত্যাগ করেন। কিন্তু, ততক্ষণে পাণ্ডবরা জেনে গিয়েছিলেন যে কর্ণ তাদেরই ভাই ছিল। তখন তারা বৃষকেতু কে নিজের পুত্র রূপে গ্রহণ করে ইন্দ্রপ্রস্থ রাজ্যের দায়িত্ব বৃষকেতু কে দিয়ে দেন।
বূপ্রচিত্তিঃ- শকুনির পত্নীর নাম ছিল আরশি। তাদের তিন পুত্রের বর্ণনা মহাভারত পাওয়া যায়; যাদের নাম ছিল- উলুক, ব্রকাশূর ও বূপ্রচিত্তি। এরমধ্যে বূপ্রচিত্তি সবথেকে ছোট পুত্র ছিল।
মহাভারতের যুদ্ধের 17 তম দিন ব্রকাশূর আর নকুলের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হলে ব্রকাশূর পরাজিত হয় ও তার অন্ত হয়। শকুনি পুত্র উলুক কে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে পান্ডবদের ধমকানোর জন্য পাঠানো হয়েছিল। তিনি পান্ডবদের দুর্যোধনের অপমানজনক সন্দেশ শুনিয়েছিলেন। তখন অর্জুন ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে বধ করতে যান। কিন্তু, শ্রীকৃষ্ণ তখন বাধা দেন এবং বলেন সে তার রাজার সন্দেশটি এখানে নিয়ে এসেছে এখানে তার কোনো দোষ নেই। এরপর যুদ্ধের 18 তম দিন সহদেবের হাতে উলুক কের অন্ত হয়। যতদিন পর্যন্ত শকুনি বেঁচে ছিলেন ততদিন পর্যন্ত বূপ্রচিত্তি গান্ধার রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ ছিলেন। কিন্তু শকুনি এবং বূপ্রচিত্তির সকল ভাইদের মৃত্যুর পর তাকে গান্ধার রাজ্যের রাজা হিসাবে নির্বাচিত করা হলো।
মনে করা হয় কৌরব দের মধ্যে থেকে এখনো অশ্বথামা ও কৃপাচার্য দুজনেই বেঁচে আছেন।
• এছাড়া পান্ডবদের দিক থেকে যারা বেঁচে ছিলেন তাঁরা হলেন- যুযুৎসু, সাত্যকি, শ্রীকৃষ্ণ, পঞ্চপান্ডব, শ্রীকৃষ্ণ পুত্র প্রদ্যুমন, ভীম পুত্র সুতসোম।
বন্ধুরা এদের সম্পর্কে অন্য একটি লেখাতে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করবো।
আশাকরি আজকের এই লেখাটি পড়ে আপনার সমৃদ্ধ হয়েছেন এবং আপনাদের ভালো লেগেছে; ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন এবং আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলটিকে পারলে অবশ্যই ফলো করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা