Breaking

Search Content

Follow Us

সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০২২

পেঁয়াজ, রসুন আমিষ না নিরামিষ || হিন্দুধর্ম মতে খাবারের তালিকা।

 


নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।   


বন্ধুরা আপনারা দেখেছেন হিন্দু ধর্মের মানুষরা পূজার্চনা করার সময় পিয়াজ, রসুন কখনই ভোগ দেয় না অথবা আপনারা এটাও লক্ষ্য করে থাকবেন নবরাত্রি সময় কিংবা কোনো বিশেষ বিশেষ পূজার সময় অধিকতর হিন্দু মানুষরাই পিয়াজ, রসুন সেবন করেন না। কিন্তু, বন্ধুরা আপনাদের মনে কি কখনো এটা প্রশ্ন জেগেছে এমনটা কেন করা হয়?  এ সম্পর্কিত একটি বর্ণনা হিন্দু পুরাণে পাওয়া যায়। যেখানে বলা হয়েছে পূজার্চনা করার সময় কখনই পিয়াজ রসুন ভুল করেও ভোগ দেওয়া যাবে না। 


হিন্দু ধর্মে বেশকিছু মান্যতা রয়েছে, যেগুলি আজও বেশির ভাগ হিন্দু মানুষরা পালন করেন। এই মান্যতা গুলির মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় হল পিয়াজ, রসুনের সেবন তাও নবরাত্রি দিনে- একদমই করা যাবে না। পুরাণে বর্ণিত কথা অনুযায়ী সৃষ্টির শুরুতে যখন দেবতা ও দানবরা মিলিত হয়ে সমুদ্র মন্থন করেছিলেন তখন সেখান থেকে নবরত্ন নির্গত হয়েছিল। নবরত্নের মধ্যে সবথেকে শেষের রত্নটি ছিল অমৃত। যেই অমৃত টি কে নেবে?- এই নিয়ে দেবতা ও দানবদের মধ্যে লড়াই শুরু হয়। তখন ভগবান বিষ্ণু মোহিনী অবতারে দেবতাদের অমর বানানোর উদ্দেশ্যে অমৃত পান করাতে লাগলেন। সেইসময়ই রাহু এবং কেতু নামের দুটি রাক্ষস দেবতাদের মাঝে এসে বসে পড়ে ছিলেন। আর মোহিনী রূপী ভগবান বিষ্ণু ওই দুই রাক্ষস কেও অমৃত পান করিয়ে দেন। কিন্তু, তারপরেই যখনই ভগবান বিষ্ণু এই কথাটি জানতে পারলেন তখনই তিনি তার নিজের সুদর্শন চক্র দিয়ে ওই দুই রাক্ষসের ধড় থেকে মাথা আলাদা করে দিলেন। কিন্তু, তাদের ধর থেকে মাথা আলাদা হওয়ার আগেই তাদের মুখে মধ্যে অমৃতের দু একফোঁটা চলে গিয়েছিল।এমত অবস্থায় রাক্ষস দের শরীর তো পুরোই নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু তাদের মুখে দু-এক ফোঁটা অমৃত যাবার ফলে ওই দুই রাক্ষসের মস্তক দুটি অমর হয়ে যায়। 


মানা হয় যে ভগবান বিষ্ণুর ওই রাক্ষস দের মস্তক কাটার সময় ওই দুই রাক্ষসের শরীর থেকে রক্ত বের হয়ে মাটিতে পড়ে। মানা হয় ওই দুই রাক্ষসের শরীর থেকে নির্গত হওয়া রক্ত থেকে পেঁয়াজ ও রসুন এর উৎপত্তি। এই কারণে পিয়াজ, রসুন খেলে মুখ থেকে গন্ধ নির্গত হয়। এছাড়াও মানা হয় পেঁয়াজ এবং রসুন যেহেতু রাক্ষসের রক্ত থেকে উৎপত্তি হয়েছে। সেই কারণে পেঁয়াজ এবং রসুন এর মধ্যে রাক্ষসের বাস হয়। আর এটাই হল আসল কারণ যার জন্য পিয়াজ রসুন কোনো বিশেষ পূজার দিন নাতো সেবন করা হয়; না কোনো ঠাকুর দেবতা কে ভোগ চারানো হয়।


বন্ধুরা এছাড়াও পেঁয়াজ ও রসুন সম্পর্কিত বর্ণনা আরও একটি জায়গায় পাওয়া যায়।  ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতাতে এই বিষয়টি নিয়ে নিজে বর্ণনা করেছেন। গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন মানুষ তিন গুণের অধিকারী। সত্বঃ, রজঃ, তমঃ অর্থাৎ সাত্ত্বিক গুন, রাজসিক গুণ ও তামশিক গুন।


নম্র-ভদ্র সহজ সরল সৎ হওয়া সাত্ত্বিক গুনের প্রকাশ। আর প্রভুত্ব করতে চাওয়া, উচ্চাকাঙ্ক্ষী হওয়া এগুলি হল রজঃ বা রাজসিক গুণের প্রকাশ এবং আলস্য, অতি নিদ্রা, কর্মবিমুখ প্রভৃতি হল তমঃ বা তামশিক গুনের প্রকাশ। 


যে ব্যক্তির মধ্যে যেই ধরনের গুণ থাকে তার খাদ্য সেই ধরনেরই হয়। যেমন ধরুন একজন রাজা শত্রুদের হাত থেকে দেশ ও দেশের মানুষদের বাঁচানোর জন্য সর্বদা সচেতন থাকতে হয় ও নিরন্তন চেষ্টা করতে হয়। ঠিক এরই সাথে রাজার মনোভাব সর্বদা উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়। প্রভুত্ব বিস্তার করা হলো সকল রাজার গুণের মধ্যে একটি অন্যতম গুণ। তারমধ্যে স্বাভাবিকভবেই রাজসিক গুণের প্রভাব বেশি। তাই তার খাদ্যও হবে রাজকীয় । এই কারণেই তিনি খাবেন মাছ, মাংস, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি। সেটাই তার প্রয়োজন। কিন্তু যিনি একজন নিরীহ ব্রাহ্মণ। যারা কাজ পূজা পাঠ করা, শাস্ত্র আলোচনা করা অথবা একজন সাধারণ শিক্ষক তার শরীরের জন্য রাজার ন্যায় তেজের প্রয়োজন নেই। তার প্রয়োজন তার মন ও মস্তিষ্কের জন্য খাবার। তাই তার খাবার হবে হালকা এবং তার কর্মের উপযোগী। এই কারণে দুধ, শাকসবজি এগুলি হল সাত্বিক খাবার অর্থাৎ এই খাবারগুলি সত্ত্বগুণ কে বৃদ্ধি করে। আর তামশিক গুণ সম্পন্ন ব্যক্তি যেহেতু বুদ্ধিরিক্ত কাজ বা সম্পন্ন কাজ করেন না তাই তাদের খাদ্যের কোন তালিকা নেই। অতিরিক্ত ঝাল, টক কোনো কিছু তেই তাদের কাছে না নেই।


বর্তমানে আমরা খাদ্যের এই বিভাগগুলি গুলিয়ে ফেলে আমিষ-নিরামিষে বিভাজন করেছি। কিন্তু যেগুলি আমরা আমিষ বলে খাই সেগুলি কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমিষ নয়। সেগুলিকে বলা হয় রাজকীয় খাবার। তাই এই খাবার গুলির কাজ হলো শরীরের তেজ তৈরি করা। খাবার প্রাণী থেকে আসতে হবে এমন কোনো প্রয়োজন নেই। যেখান থেকেই আসুক না কেন, সেই খাবার শরীরের যদি তেজ তৈরি করে অর্থাৎ রাজকীয় হয় , তাহলেই সেটা রাজসিক খাবার বলে গণ্য।এই কারণে পিয়াজ, রসুন এগুলি উদ্ভিদের ফল হওয়া সত্ত্বেও রাজসিক খাবারের মধ্যে পড়ে। এই খাবারগুলি গ্রহণ করলে আপনার শরীরে তেজ উৎপন্ন হবেই হবে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের এই জ্ঞান না থাকায় আমরা পিয়াজ, রসুন কে এই কারণের জন্য আমিষ বলে থাকি।


অন্যদিকে প্রাণীর দেহ থেকে আসা খাবার দুধ, মধু এগুলিকে আমরা সাত্ত্বিক খাবার রূপে গ্রহণ করি। কিন্তু সেগুলিকে আমরা সাত্বিক বলার বদলে নিরামিষ বলে ভুল করি। এই খাবারগুলি প্রকৃতপক্ষে গ্রহণ করলে দেহে সাত্ত্বিক গুনের অর্থাৎ সত্ত্বগুণের বিকাশ ঘটে। কাজেই দুধ , ছানা বা মধু এই খাবারগুলি কে আর নিরামিষ বলবেন না; বলবেন সাত্ত্বিক আহার। 


আশাকরি খাবার সম্পর্কিত এই বিষয়টি সম্পর্কে আপনি বুঝতে পেরেছেন। এই বিষয়টি বুঝতে পারলে আপনি এটা বুঝতে সক্ষম হবেন পুজোর দিনে বা পিতা-মাতার বিয়োগের পর কেন বেশ কিছুদিন নিরামিষ খাওয়ার কথা বলা হয়। এছাড়া আপনি এটা সম্পর্কে বুঝতে পারবেন যে কেনইবা প্রতিটি হিন্দু বাঙালি ঘরে সপ্তাহে এক, দু'দিন নিরামিষ খাওয়া হয়।


এর কারণ হলো বন্ধুরা প্রকৃতপক্ষে আমরা মুখে নিরামিষ বললেও ওই দিনগুলিতে সাত্ত্বিক আহার গ্রহণ করি। পুজোর দিনে পুজোর জন্য শারীরিক বলের থেকে ধ্যানি মনের প্রয়োজন। এই কারণেই পুজোর দিনে অথবা পিতা-মাতার বিয়োগের পর আমিষ আহার অর্থাৎ রাজকীয় খাবার গ্রহণ করা হয় না। কেননা পুজোর দিনে অথবা পিতা-মাতার বিয়োগের পর বেশিরভাগ মানুষের শরীরে তেজের প্রয়োজন হয় না। বরং সেইদিন প্রয়োজন সাত্ত্বিক আহার। যা মন ও শরীরকে ঠান্ডা রাখে।


আশাকরি বন্ধুরা লিখাটি পড়ে আপনারা খাবারের তালিকা আমিষ নিরামিষ সংক্রান্ত সকল বিষয় ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। ভালো লাগলে আপনজনদের উদ্দেশ্য অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।


আরো পড়ুন- বেদ ও পুরান এর মধ্যে পার্থক্য কি?Click here

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা