Breaking

Search Content

Follow Us

বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০২২

শ্রীকৃষ্ণের ৫ টি শক্তিশালী অস্ত্রের গুনাগুন ও মাহাত্ম্য || ব্রম্ভাস্ত্র থেকেও শক্তিশালী অস্ত্র।

 



নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।  


ভগবান বিষ্ণুর অবতার শ্রীকৃষ্ণ অত্যন্ত চঞ্চল ছিলেন। তার লীলায় এমন রস ছিল যার মাধ্যমে তিনি প্রত্যেক ব্যক্তিকে বশ করে নিতে পারতেন। দ্বাপর যুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজের লীলার মাধ্যমে কোনটি ঠিক এবং কোনটি ভুল এই বিষয়ে তার জ্ঞান দেন। শুধু তাই নয় মহাভারতের যুদ্ধের মাধ্যমেও তিনি ধর্মের বহু উপদেশ দেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সঠিক জ্ঞান ও নীতির কারণেই তিনি আজ এই গোটা বিশ্বে পূজিত হন। আত্মবল ছাড়াও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে কিছু প্রলয়ংকারী অস্ত্রও ছিল। আজকের এই লেখাটিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই মহা প্রলয়কারী অস্ত্রগুলো সম্পর্কেই আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করব।


১) নারায়ন অস্ত্র - যদি নারায়ন অস্ত্রের একবার প্রয়োগ করা হতো তাহলে এই সম্পূর্ণ সৃষ্টিতে এমন কোনো শক্তি ছিলনা যে একে আটকাতে পারবে। এই অস্ত্রকে কেবল আত্মসমর্পণ করে আটকানো যেত। যদি শত্রু লুকিয়েও যেত তাহলেও এই অস্ত্র শত্রুকে খুঁজে নিয়ে তার বধ করে দিত। যদি কাউকে এই অস্ত্র থেকে বাঁচতে হতো তাহলে আত্মসমর্পণ ছাড়া আর কোনো রাস্তা ছিল না। এই অস্ত্রটির নির্মাণ সত্যযুগে স্বয়ং শ্রী নারায়নের (ভগবান বিষ্ণু) দ্বারা করা হয়েছিল। 


মহাভারতের যুদ্ধের সময় এই অস্ত্রের জ্ঞান ভগবান বিষ্ণুর অবতার শ্রীকৃষ্ণ, গুরু দ্রোণাচার্য ও তার পুত্র অশ্বথামার ছিল। যুদ্ধের শেষের দিকে অশ্বত্থামা তার পিতার মৃত্যুর পর যখন পান্ডবদের অক্ষসোহীনি সেনা নষ্ট করার জন্য এই নারায়নী অস্ত্র প্রয়োগ করেছিল তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই অস্ত্র থেকে বাঁচার জন্য পাণ্ডব সেনাকে আত্মসমর্পণ করতে বলেছিল। তা না হলে পান্ডব সেনার বিনাশ নিশ্চিত ছিল।


২) সুদর্শন চক্র - বিষ্ণুপুরাণে সুদর্শন চক্রের বর্ণনা পাওয়া যায়। সুদর্শন চক্র টি একটি সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে। যার অর্থ মঙ্গলময় দর্শন। এই অস্ত্র ভগবান বিষ্ণুর ডানদিকের উপরের হাতে ধারণ করেন। বেদ এবং পুরাণে বর্ণিত অস্ত্র গুলির মধ্যে সুদর্শন চক্রই একমাত্র এমন অস্ত্র ছিল যা নিজে চলাচল করতে পারত। সুদর্শন চক্র হচ্ছে একটি ধারালো অস্ত্র, যার ১০৮টি ধারালো ধার রয়েছে। এই সুদর্শন চক্র দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ছিল এবং শত্রু নিধনে পুরোপুরি সক্ষম ছিল। 


একটি কথা অনুযায়ী ভগবান বিষ্ণু যখন অসুর শ্রিদামাকে বধ করেছিলেন তখন ভগবান শিব এই চক্র ভগবান বিষ্ণু কে দিয়েছিলেন। ভগবান বিষ্ণু থেকে এই চক্র অগ্নিদেবের কাছে হস্তান্তরিত হয়েছিল এবং অগ্নিদেবের থেকে বরুনদেবের কাছে গিয়েছিল, এরপর বরুনদেবের কাছ থেকে ভগবান পরশুরাম এর কাছে গিয়েছিল এবং সবশেষে পরশুরাম এই সুদর্শন চক্র ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে দিয়েছিলেন। 


বলা হয় যে গোমান্তক পর্বতে শ্রীকৃষ্ণ ও জরা নামের সন্তের (সাধু) যুদ্ধের পরে শ্রীকৃষ্ণ ও পরশুরামের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়, তখন শ্রীকৃষ্ণ পরশুরামকে মহাভারতের যুদ্ধের ধর্ম ও অধর্ম এর পক্ষে হতে চলেছে; এই সমস্ত কিছু বিষয় নিয়ে যুদ্ধের পুরো ঘটনাটি পরশুরাম কে শোনান। তখন পরশুরাম পুরো ঘটনা শোনার পর শ্রীকৃষ্ণকে সুদর্শন চক্রের গুনাগুন বলে তাকে সেই অস্ত্রটি সপে দেন। ভগবান কৃষ্ণ দ্বারা এর প্রথম প্রয়োগ এক হিংসাত্মক প্রকৃতির রাজা শ্রেগালের ওপর করা হয়েছিল। 


একটি অন্য কথা অনুযায়ী ভগবান কৃষ্ণের এই অস্ত্রটি দেবী থেকে প্রাপ্ত হয়েছিল।


৩) কৌমোদকী গদা - কৌমোদকী গদা ভগবান বিষ্ণুর তার বাঁ হাতে ধারণ করেন। এটা হল ভগবান বিষ্ণুর শক্তির স্রোত। ভগবান বিষ্ণুর ভিন্ন ভিন্ন অবস্থায় এই গদা ভিন্ন ভিন্ন কাজের প্রতীক । যেমন ভগবান বিষ্ণুর ধ্যান অবস্থাতে এই গদা জ্ঞান, বুদ্ধি এবং সময়ের শক্তিকে প্রদর্শিত করে।


বিষ্ণুপুরাণে গদা কে জ্ঞানের শক্তি বলা হয়েছে। এছাড়া এই গদা সেই সমস্ত লোক যারা অহংকার নিয়ে বেঁচে থাকেন তাদের প্রবৃত্তি কেও প্রদর্শিত করে। এছাড়াও বিষ্ণুপুরাণে আরো উল্লেখ রয়েছে যে এই কৌমোদকী গদা ভগবান বিষ্ণুর পত্নী তথা সমৃদ্ধি ও বুদ্ধির দেবী মাতা লক্ষ্মী কে প্রদর্শিত করে। আবার অন্যদিকে কৃষ্ণোপনিষদে এই গদা মা কালী অর্থাৎ সময় বা কালের শক্তির ধারণকারী কে প্রদর্শিত করে।


এই গদা মহাভারত কালে ভগবান কৃষ্ণ বরুনদেবের কাছ থেকে পেয়েছিলেন।কৌমোদকী ভয়ঙ্কর গর্জনা তৈরি করে শক্তিশালী রাক্ষস অসুরদের ধ্বংস করতে সক্ষম ছিল।


৪) বৈষ্ণবাস্ত্র- ভগবান বিষ্ণুর দ্বারা নির্মিত  বৈষ্ণবাস্ত্র সবথেকে বড় শক্তিশালী অস্ত্র ছিল। এর গতি ছিল খুবই বেশি। তীব্র গতির কারণে শত্রুর জন্য একে আটকানো খুবই কঠিন ছিল। ভগবান বিষ্ণুর বরাহ অবতার এই অস্ত্র পৃথিবী দেবকে কে দান করেছিলেন। পৃথিবীর কাছ থেকে এটি আবার নরকের রাজা নরকাসুর পেয়েছিলেন, নরকাসুর এই অস্ত্র তার পুত্র ভাগদত্তকে দান করেছিলেন। ভাগদত্ত প্রাক জ্যোতিষ পুরের রাজা ছিলেন। মহাভারতের দ্রন পর্বে উল্লেখিত আছে যে, রাজা ভাগদত্ত এবং অর্জুনের মধ্যে চলা যুদ্ধের সময় যখন অর্জুনের বানে ভাগদত্তা পুরোপুরি আহত হয়েছিলেন তখন কুপিত হয়ে বা কোনো উপায় না পেয়ে তিনি বৈষ্ণবাস্ত্রের প্রয়োগ অর্জুনের ওপর করেছিলেন। এটিকে কিভাবে আটকানো যায় তার জ্ঞান অর্জুনের ছিলনা, তখন ভগবান কৃষ্ণ স্বয়ং মাঝখানে এসে এটি তাঁর বুকে নিয়ে নিয়েছিলেন। আর এই অস্ত্র তাঁর গলার রজন্তীমালা রূপে সুসজ্জিত হয়েছিল। কেননা ভগবান কৃষ্ণ স্বয়ং এর নির্মাতা ছিলেন এই কারণে এটি তাকে কোনো আঘাত করতে পারেনি।মহাভারত কালে এই অস্ত্রের জ্ঞান শ্রীকৃষ্ণ ছাড়াও ভগবান পরশুরাম, ভাগদত্ত, মহারথী কর্ণ আর কৃষ্ণ পুত্র প্রদ্যুমনের কাছে ছিল। এই অস্ত্রকে সঞ্চালিত করার পরে এটি প্রথমে আকাশের দিকে অনেক উঁচু পর্যন্ত যেত, আর বিদ্যুতের গতিতে নিচে এসে শত্রুর উপর আক্রমণ করত।


বন্ধুরা ভগবান কৃষ্ণের কুটিল জ্ঞান এবং বুদ্ধির সাথে সাথে তাঁর এই অস্ত্র যেকোনো খারাপ, অধর্ম ও পাপীকে বিনাশ করার জন্য সক্ষম ছিল। 


আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন এবং ভগবান (অষ্টম অবতার কৃষ্ণের) বিষ্ণুর প্রত্যেকটি অস্ত্রের গুনাগুন ও মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানতে সক্ষম হয়েছেন।ভালো লাগলে আপন জনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আজ এখানেই শেষ করলাম। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।


 আরো পড়ুন:- এত বড় শালী হওয়া সত্বেও শ্রীকৃষ্ণের বড় ভাই বলরাম কেন মহাভারতের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি?CLICK HERE




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা