একটি সরল উপায় আনন্দময় জীবনের জন্য || বিকাশের সূত্রের ৮ম ভাগ।

 

নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।  

আমরা সকলে ভুলে যাই যে প্রত্যেকটা সম্পর্ক এক একটি ব্যাংক ব্যালেন্সের মত হয়। সেখান থেকে আমরা উইথড্রল তো করতে পারব কিন্তু, মাধুর্য তখনই আসবে যখন আমরা তাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিপোজিট করব। ডিপোজিট করার অর্থ কি?  - এমনটা নয় যে দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির জন্য দিনে 6 ঘন্টা সময় দিতে হলো। শুধুমাত্র কিছু ছোটখাটো ব্যবহারের মাধ্যমেই প্রত্যেকটা সম্পর্কে মাধুর্য আনা সম্ভব। যেমন- ধরেন তার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলেন। এটাই তো দ্বিতীয় ব্যক্তিটি চায়।

যে কোনো সম্পর্ককে আপনি একটি ব্যাংক একাউন্টের মতো ভবুন। ব্যাংক একাউন্টে টাকা জমা করা হয়, তখন তাকে ডিপোজিট বলা হয় এবং যখন টাকা তোলা হয় তখন তাকে উইথড্রল বলা হয়‌। একই প্রকার ভাবে দুটি লোকের মধ্যে যে সম্পর্ক থাকে তাতে ডিপোজিট হয়। যখন আমরা দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির আদর করি, তার সন্মান করি, তার ইচ্ছার সামনে নিজের ইচ্ছাকে ত্যাগ করি, নিজের মনের কথা কে লুকিয়ে রেখে তার মনের কথাকে অধিক প্রধান্য দিই - প্রত্যেকটা সম্পর্কের মধ্যে এই সমস্ত বিষয়গুলি কে ডিপোজিট বলা হয়।

আর উইথড্রল হল যখন জবরদস্তি করে দ্বিতীয় ব্যক্তির ইচ্ছার বিপরীতে তাকে কার্য করতে বাধ্য করা হয় অথবা কখনো কখনো কাউকে বকাঝকা করতে হয়, দ্বিতীয় ব্যক্তির খারাপ কথা তাকে বলতে হয়, তখন হয় উইথড্রল। যে কোনো সম্পর্কই গভীরতা পায় তখনই যখন তার মধ্যে ডিপোজিট ও উইথড্রল উভয়ই সামঞ্জস্য বজায় রেখে হয়।

দ্বিতীয় ব্যক্তির ইচ্ছার বিপরীতে অনেক সময় তাকে দিয়ে কাজ করাতে হয়। কিন্তু, সেটা উইথড্রল তখনই হবে যখন আমরা সেই সম্পর্কে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিপোজিটও করব। বেশিরভাগ সময় সমস্যা এটাই হয় আমরা সকলে ডিপোজিট করতে ভুলে যাই। সেই সম্পর্কটাকে আমরা ফর গ্রান্টেড রূপে নিয়ে নি। আর যখন ডিপোজিট করিনা, শুধুমাত্র উইথড্রলই করে যাচ্ছি তখন ওই সম্পর্করূপী ব্যাংক একাউন্ট ধীরে ধীরে ব্লক হয়ে যায়। তখন আমরা ভাবি যে দ্বিতীয় ব্যক্তি আমাদের কথা শুনছে না কেন? সে তো দেখছি আমারই বিরোধী পক্ষ হয়ে দাঁড়াচ্ছে! অথচ সে আমারই আপন। হতে পারে সে নিজের ছেলে অথবা মেয়ে, ভাই কিংবা বোন যে কেউ হতে পারে।

বন্ধুরা এর উত্তর একটাই আপনি সেই সম্পর্ক রূপী ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ডিপোজিট করতে ভুলে গেছেন।

একটি স্ত্রী পুরুষের বিবাহ সম্পন্ন হল। বিবাহের দুই সপ্তাহ পরে রাতের খাবার খাওয়ার পরে দুজনা তাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় একটু হাঁটাচলা করছিলেন। হঠাৎই স্বামী তার পত্নীকে প্রেমপূর্বক ধরে সাইডে সরিয়ে দিল। তখন তার পত্নী জিজ্ঞাসা করল - কি হয়েছে পতিদেব? তখন তার স্বামী বলল - সামনে কাদা ছিল। তখন তার পত্নী একথা শুনে মনে খুবই খুশি হলো এবং তার স্বামীকে বলল - ধন্যবাদ পতিদেব। এরপর পাঁচ বছর কেটে গেল ওই স্বামী-স্ত্রী  রাতের দিকে রাস্তায় হাঁটা চলা। সামনে কাদা দেখে স্বামী তার পত্নী কে বলল - সামনে কাদা আছে, সাবধানে চলো। এখন কিন্তু পূর্বের মত সেই ব্যবহার নেই। এখন ব্যবহারের পরিবর্তন ঘটেছে কেননা সেই স্বামী তার পত্নী কে ফর গ্রান্টেড হিসেবে নিচ্ছে। আরো পাঁচ বছর কাটলো, আবারো দুজনা হাঁটছিলেন - হঠাৎই স্বামীটি চেঁচিয়ে উঠলো। সামনে কাদা আছে কিন্তু, দেখতে পাও না নাকি। ঠিক ভাবে চলো। ব্যাস এটাই তো আসল সমস্যা। আমরা সকলে ভুলে যাই প্রত্যেকটি সম্পর্ক একেকটি ব্যাংক ব্যালেন্সের সমান। তার মধ্যে আমাদের উইথড্রল তো করতে হবে। কিন্তু, তার মধ্যে মাধুর্য তখনই আসবে যখন আমরা তার মধ্যে সঠিক পরিমাণ ডিপোজিটও করব। ডিপোজিট করার মানে এটা নয়, যে দ্বিতীয় ব্যক্তির জন্য দিনে 6 ঘন্টা সময় দিতে হবে। শুধুমাত্র আপনার ছোট ছোট কিছু ব্যবহারের মাধ্যমে এই ডিপোজিটের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে একটু হাসলেন। কখনো তাকে মন থেকে প্রশংসা করে দিলেন। দ্বিতীয় ব্যক্তির গুণগুলোকে প্রত্যক্ষ করলেন এবং তার প্রশংসা করলেন। এটাই তো ব্যক্তি চায়। এই ধরনের ছোটখাটো স্নেহের মাধ্যমে পশুপাখিরাও আপন হয়ে যায়। 

এক বুড়ি মা সকালে ঘুম থেকে উঠে সে তার ঘরের দরজা খুলল সমাচারপত্র ঘরে আনার জন্য। তখন পাশের বাড়ির কুকুর টি সেই খবরের কাগজটি মুখে নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। এই দেখে ওই বুড়ি মা এত প্রসন্ন হলেন সে দৌড়ে ঘরে গেলেন এবং একটি বিস্কুট নিয়ে এসে সেই কুকুরটিকে দিলেন এবং তার থেকে খবরের কাগজটা নিয়ে নিলেন। এটাই তো সম্পর্কের মধ্যে ডিপোজিট করা হলো।

এর পরদিন সকালে আবারও যখন বুড়িমা খবরের কাগজ নেওয়ার জন্য সকালে দরজা খুলল তখন দেখল 7টি খবরের কাগজ সেখানে পড়ে রয়েছে। কিন্তু, 8 নম্বর খবরের কাগজ কুকুরটি তার মুখে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেই কুকুরটা সামান্য পরিমাণ স্নেহ পাওয়ার কারণে সে সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে গেছে। 

এই কারণে যে কোনো ব্যক্তির ব্যবহার আমরা বদলে ফেলতে পারি পর্যাপ্ত ডিপোজিট এর মাধ্যমে। 

বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন একটি অন্ধকার ঘরে একটি ইঁদুরকে এক বালতি জলের মধ্যে ফেললে সেই ইঁদুরটি নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য সাঁতার কেটেই গেছে সেই এক বালতি জলের মধ্যে। এই ভাবে সে ঘন্টাখানেক সাঁতার কেটেছে। কিন্তু, একটা সময় পর সে নিরাশ হয়ে জলের মধ্যে ডুবে যায়। কিন্তু, এই একই পদ্ধতিতে আবারো যখনই ইঁদুরটা ডুবে যাচ্ছিল তখন তার দিকে একটি টর্চ লাইট ফেললে, শুধুমাত্র সামান্য স্নেহ দেখিয়ে আলোর ঝলকানি দেওয়ার ফলে সেই ইঁদুরটি 16 ঘণ্টারও বেশি সাঁতার কেটেছে বাঁচার জন্য। এ থেকে বোঝা গেল যখন পশুরা স্নেহ পেয়ে বাঁচার জন্য মরিয়া হয়ে যায়, তাহলে একটি মানুষ সামান্য পরিমাণ স্নেহ পেলে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে কিনা করতে পারে।

আমাদের এই ভুলটি করা থেকে বেঁচে চলতে হবে। কেননা যেগুলি আবশ্যক সম্পর্ক সেগুলি যদি ধীরে ধীরে ব্লক হয়ে যেতে শুরু হয়, তাহলে আমাদের নিজেদেরই সমস্যা হবে। এই কারণেই আপনি যদি শেষ অব্দি এই লেখাটি পড়তে থাকেন তাহলে আপনার নিকটবর্তী আপনজনদের বা খুব কাছের সম্পর্ক গুলির একবার যাচাই করুন, যে সেই সম্পর্ক গুলিতে আপনি ঠিকঠাক ভাবে ডিপোজিট করছেন তো?  নাকি নিজের কাছের মানুষদের সম্পর্কগুলোকে ফর গ্রান্টেড রূপে নিয়ে নিয়েছেন? 

আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন এবং বুঝতে সক্ষম হয়েছেন একটি সম্পর্কে মাধুর্যপূর্ণ ভাব বজায় রাখতে হলে কি কি করা প্রয়োজন। এই কলাকৌশল গুলিকে বাস্তবে নিজের জীবনে প্রয়োগ করুন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে শেয়ার করতে পারেন। 

ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার,ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।

আরো পড়ুন:- জীবনে চলার পথে স্বার্থহীন ব্যবহার করা উচিত কেন? Click here