নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা- জীবনে আমাদের সম্বন্ধী, আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুরদের সঙ্গে সম্পর্ক আরো সুন্দর কিভাবে হবে, এই সম্পর্কের গভীরতা কিভাবে বাড়বে?
প্রথমেই বলি কোন কিছু আদান প্রদান হল প্রতিটা সম্পর্কের আঁধার। যেখানে আমাদের ব্যবহার স্বার্থপরের মতো হয় অথবা স্বার্থ যুক্ত হয়, সেখানেদই সেই সম্পর্কে বাধা সৃষ্টি হয়। আর যেখানে আমরা ত্যাগ, সেবা ভাবকে মাহাত্ম্য দিয়ে নির্স্বার্থ রূপে ব্যবহার করি সেই সম্পর্কের গভীরতা তখনই বাড়ে। অর্থাৎ সমস্যাটা হল এখানেই, আমাদের নিজেদেরই স্বার্থপরের মতো ব্যবহার।
ধরে নিন এক স্বামী-স্ত্রী রাত্রিবেলায় ঝগড়া করতে করতে শোবার ঘরে গেলেন। তাদের মধ্যে মাঝেমধ্যেই ঝগড়া হতো। কিন্তু, এইদিন রাত্রিতে ঝগড়া তাদের মধ্যে একটু বেশিমাত্রায় হয়ে যায়। সেই ঝগড়া বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে চলে আসে স্বামী মধ্যরাত্রিতে বিছানা থেকে উঠে বলে- আমি আর এই বাড়িতে থাকতে পারবো না। তারপর সে বাইরে গিয়ে তার গাড়ির মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে। ২ ঘন্টা পরে স্ত্রীর মনে বিচার এল আমি আমার স্বামীকে কতো না ভালোবাসি। তখন সেই স্ত্রী এই জিনিসটা উপলব্ধি করার পর মনে মনে ভাবল - আমি আমার স্বামীকে প্রসন্ন করব। তারপর সেই স্ত্রী ফ্রিজ থেকে সোডার বোতল বার করে বাইরে গিয়ে তার স্বামী যে গাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন সেই গাড়ির দরজা খুলে সোডার বোতলটি সেখানে রেখে দিলেন। স্ত্রী তখন মনে মনে ভাবলেন যখন তার স্বামী ঘুম থেকে উঠবেন এবং সেই বোতলটি দেখবে তখন তার মনে পড়ে যাবে যে, সে তার স্ত্রীকে কতটা না ভালোবাসতো। এখন যদি এটা পরীদের কথা থাকতো তাহলে হয়তো তাদের হ্যাপি এন্ডিং হত। কিন্তু, এটা ছিল সংসারের বাস্তবিকতা। তাই স্বামীর যখন ঘুম ভাঙলো তিনি দেখলেন তার স্ত্রী তার পাশে সেই সোডার বোতলটি রেখে গেছেন। সেই স্বামীর রাগ তখনও পর্যন্ত শান্ত হয়নি। তিনি তার রাগের জন্য সেই বোতলটাকে নিচে ছুড়ে মেরে ভেঙ্গে চুরমার করে দিলেন। এই ঘটনাটি যখন তার স্ত্রী দেখল সে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হল এবং সে সকালে এক স্বামীজির কাছে গেল। সে স্বামীজির কাছে গিয়ে বলল-স্বামীজি আমি কতটা নিঃস্বার্থভাবে নিজের স্বামীকে ভালোবাসি। কিন্তু, সে আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহারই করেনা।
তখন স্বামীজী তাকে বলল, আপনি আপনার স্বামীর থেকে কেমন ধরনের ব্যাবহার আশা করছিলেন?
যখনই স্বামীজীর কাছ থেকে এই প্রশ্নটিই শুনলেন স্ত্রী টি তখনই এত কিছু বলতে লাগলেন, যেন মনে হচ্ছিল একটি বোম ফেটেছে। এমনভাবে স্ত্রীটি বলতে বলতে তার হঠাৎ নিজেরই অনুভূতি হয় কোথাও না কোথাও সে নিজেও স্বার্থবাদী ছিল। সে মনে মনে ভাবতে লাগল সে স্বামীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছিল কারন সে আশা করেছিল তার স্বামীও তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে।
বন্ধুরা আমরা ভুলটা তো এখানেই করি, আমাদের নিজেদের প্রত্যেক সম্পর্কে সেটা বন্ধুত্বের অথবা স্বামী-স্ত্রীর অথবা পিতা-মাতার বেশিরভাগ সম্পর্কেই আমরা স্বার্থকে সম্পর্কের আধার বানিয়ে নেই। শুধু তাই নয় সৎসঙ্গেতেও বহু মানুষ যায় বিভিন্ন আশা করে। ঠিক এরকমই একজন সৎ সঙ্গী একদিন স্বামীজীকে বললেন স্বামীজি আমি এই সৎসঙ্গ ত্যাগ করে যেতে চাই। স্বামীজী তাকে জিজ্ঞাসা করলেন তোমার কি সমস্যা হচ্ছে সেটা কি জানতে পারি?
তখন সেই মানুষটি বলেন, স্বামীজি আমি এত নিঃস্বার্থভাবে সৎ সঙ্গে যুক্ত হয়েছি এবং সকল মানুষের সেবা করেছি। কিন্তু, তা সত্ত্বেও কেউ আমার আদর অথবা সম্মান করে না। আমার যতটুকু সম্মান প্রাপ্ত তা আমাকে কেউ দেয় না। তখন স্বামীজী তাকে বলল, দেখুন আপনি যখন সম্মানের আশা নিয়ে সেবা করেছিলেন তখন আপনি নিঃস্বার্থ হলেন কোথায়!
বন্ধুরা এই মানুষ জাতির স্বভাবই হল স্বার্থবাদী। আর সেই স্বার্থরই আমাদের প্রত্যেকটা বিষয়ে একটি ঝলক পরে। আর এই স্বার্থের ফলেই সম্পর্কে অশান্তির সৃষ্টি হয়।
একদিন স্বামীজির কাছে একটি ছেলে ও মেয়ে গেলেন। তারা স্বামীজীকে গিয়ে বলল, স্বামীজি আমরা সদ্য বিবাহিত আপনি আমাদের আশীর্বাদ দিন যাতে আমরা আমাদের বিবাহিত জীবন সুখে কাটাতে পারি। তখন স্বামীজি মেয়েটির সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বললেন। স্বামীজি মেয়েটির কাছে জানতে চাইলেন তুমি এই ছেলেটির সঙ্গে কেন বিবাহ করলে?
তখন উত্তরে মেয়েটি বলল, এই ছেলেটি শিক্ষিত এবং ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে পারবে এবং সে আমাকে খুবই ভালোবাসে। আমার এর থেকে অনেক সুখ মিলবে।
এরপর স্বামীজি আলাদাভাবে ছেলেটির সঙ্গে কথা বলেন। স্বামীজি একই প্রশ্ন ছেলেটিকে করলেন-তুমি এই মেয়েটির সঙ্গে কেন বিবাহ করলে?
তখন ছেলেটি বলল, মেয়েটি দেখতে খুবই সুন্দর এবং বড় ঘরের। তার পিতার ধনসম্পত্তি আছে। সব ধনসম্পত্তি তার মেয়েকেই দিয়ে যাবেন। এর ফলে আমরা একত্রে থেকে অনেক সুখে থাকবো।
দুজনের থেকে কথা শোনার পর স্বামীজি দুজনকে একত্রিত করলেন। তিনি বললেন কিছু মনে করো না, আমি তোমাদের সম্পর্কের ভিতরের কিছু কথা বলতে চলেছি। এরপর স্বামীজি বললেন, তোমরা দুজন নিজের সুখের জন্য একে অপরের সঙ্গে বিবাহ করেছো। স্বামীজি আরো বললেন, তোমরা দুজন এই সম্পর্কে তে যাওয়ার পর যখনই কোথাও তোমাদের নিজের সুখে একটু বাধা আসবে, তখনই একে অপরের সঙ্গে তোমরা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়বে।
বন্ধুরা এ থেকে আমরা বুঝতে পারলাম প্রতিটা সম্পর্কে স্বার্থ যুক্ত ব্যবহার সেই সম্পর্কের বাধা হয়ে দাঁড়াবে। আর যদি আমরা এই সম্পর্ক গুলির সঠিক মেলবন্ধন ও সম্পর্কের গভীরতা চাই তবে যতটা পরিমাণে আমরা আমাদের ব্যবহারে অন্য ব্যক্তির প্রতি ত্যাগ ও সেবার ভাবনাকে জাগ্রত করব, যতটা মাত্রায় আমরা দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তিকে বোঝার চেষ্টা করব, সুখ দুঃখে তার পাশে থাকবো ততটা মাত্রায় আমাদের সেই সম্পর্কগুলোতে তালমিল বজায় থাকবে এবং সম্পর্কের গভীরতাও বাড়বে।
আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন এবং বুঝতে সক্ষম হয়েছেন সম্পর্কে তালমিল বজায় রাখতে নির্স্বার্থ ব্যবহার করা কতটা প্রয়োজন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুন:- সম্পর্কের মেলবন্ধন ঠিকভাবে বজায় রাখার কলা-কৌশল কি?Click here
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা