নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো তা হল - সূর্যদেবকে অর্ঘ্য নিবেদন করার সময় যে ভুলগুলো কখনোই করা উচিত নয় তার সম্পর্কে; সূর্যদেবকে অর্ঘ্য নিবেদন এর সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে।
বন্ধুরা সনাতন ধর্মের বেশিরভাগ মানুষ এটাতো জানেনই যে প্রতিদিন স্নান করার পর সূর্যদেবকে জল বা অর্ঘ্য নিবেদন করা হয়। কিন্তু, কিছু এমন মান্যতা রয়েছে যা এমন ভুল গুলো সম্পর্কে বলে যে, আপনার এই কর্মের ফলে ভবিষ্যতে হতে চলা লাভ কে ধ্বংস করে দিতে পারে। তো বন্ধুরা জেনে নেওয়া যাক সেই ভুলগুলি সম্পর্কে যা সূর্যদেবকে জল দান করার সময় করতে নেই।
সূর্যদেবকে জল বা অর্ঘ্য নিবেদন
বন্ধুরা পুরাণ অনুযায়ী স্নান করার পর সূর্যদেবকে জল দান করার পেছনে বেশ কিছু লাভের বিষয়ে বলা হয়েছ। যার মধ্যে একটি হলো তামার পাত্র দিয়ে জল দান করা খুবই শুভ বলে মনে করা হয়েছে। সূর্যদেবকে জল বা অর্ঘ্য দান করলে সূর্যদেব খুব তাড়াতাড়ি প্রসন্ন হন। এই সময় একটি মন্ত্র উচ্চারণ করা উচিত-
"ওঁ শ্রীসূর্যায় নমঃ "
এরফলে মনে শুভ শক্তির উর্জার প্রভাব বৃদ্ধি পায়। যেসব লোকের স্বাস্থ্য বেশিরভাগ সময় খারাপ থাকে, আর যদি তারা স্নান করার পর রোজ সূর্যদেবকে জল দান করেন তাহলে সেই ব্যক্তির স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে সমস্ত সমস্যাগুলি দেখা দেয় তা দূর হয়।
অনেক মানুষেরই জন্ম কুণ্ডলীতে সূর্যদেবের অবস্থান ঠিক থাকেনা , তাই তাদের এই সমস্যা সমাধানের জন্য সূর্যদেবকে প্রতিদিন জল দান করা উচিত। এর ফলে তাদের ঘরে যে সমস্ত সমস্যা গুলি উৎপন্ন হয়ে থাকে সেগুলি দূর হয়। রোজ সকালে স্নানপর্ব সেরে নিয়ে সূর্য ওঠার এক ঘণ্টার মধ্যে সূর্যদেবকে দ্রুত জল দান করা উচিত। বন্ধুরা এটা তো ছিল সূর্যদেবকে কখন এবং কী কারণের জন্য জল দান করা করতে হয় তার উত্তর।
সূর্যদেবকে জল বা অর্ঘ্য নিবেদনের সময় যে ভুলগুলি কখনই করতে নেই:-
এখন আপনাদের জানাবো - সূর্যদেবকে জল দান করার সময় আমাদের কোন বিষয়গুলি ঠিকভাবে নজরে রাখতে হবে। আর বন্ধুরা এই প্রসঙ্গে বলেদি আপনি যদি সূর্যদেবকে জল দান করার সময় এই ভুলগুলি করে থাকেন তাহলে সূর্যদেবকে জল দান করা ও না করা সমান। এই কারণেই এই বিষয়গুলি এড়িয়ে যাওয়া একেবারেই উচিত নয়। হতে পারে এই ভুলগুলি করার জন্যই আপনার রোজ সকালে সূর্যদেবকে জল দান করার পর যেই লাভ টা হয়, তা হচ্ছে না অথবা আপনি সেই ফলটি পাচ্ছেন না।
প্রথমত,(পূর্ব দিকে মুখ থাকা প্রয়োজন) বন্ধুরা আমাদের ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ করা রয়েছে সব সময় পূর্ব দিকে মুখ করে সূর্যকে জল দান করা উচিত। এছাড়া এই বিষয়টিও মাথায় রাখবেন যে সূর্যদেবকে জল দান করার সময় সেই জলের ছিটে ফোটা যেন আপনার পায়ে কখনোই না লাগে। যদি সূর্যদেবকে জল বা অর্ঘ্য দানের সময় আপনার পায়ে জলের ছিটে ফোটা লাগে তাহলে হিন্দু ধর্মমতে তা অশুভ বলে মানা হয়। কেননা এমনটা মনে করা হয় যে এতে সূর্যদেব অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন এবং তার অশুভদৃষ্টি আপনার উপর পড়ে।
দ্বিতীয়ত,(স্নানপর্ব সারার এই কাজ করুন) বন্ধুরা আপনি যদি প্রতিদিন সূর্যদেবকে জল দান করতে চান তাহলে প্রতিদিনই আপনাকে স্নান করে তা করতে হবে। কখনোই ভুলেও এমনটা করবেন না যে, স্নান না করে সূর্যদেবকে জল বা অর্ঘ্য দান করছেন। কেননা আমাদের ধর্ম গ্রহণ তাতে উল্লেখ করা রয়েছে সূর্যদেবের পরিষ্কার পরিছন্নতা খুবই প্রিয়। আর আপনি যদি স্নান না করে সূর্যদেবকে জল দান করেন তাহলে সূর্যদেব আপনার উপর রুষ্ট হতে পারেন। যার পরিণাম স্বরূপ আপনাকে অনেক কষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। এই জন্যই এই বিষয়টি সব সময় মাথায় রাখবেন স্নান করার পরে সূর্যদেবকে জল বা অর্ঘ্য প্রদান করবেন। তা না হলে আপনি যে মনস্কামনা নিয়ে সূর্যদেবকে জল দান করছেন তা কখনো পূর্ণ হবেনা।
তৃতীয়ত,(তামার পাত্র ব্যবহার করুন) সূর্যদেবকে জল দান করার সময় সর্বদা তামার পাত্র ব্যবহার করুন। বন্ধুরা আপনারা দেখেছেন হয়ত আজকাল বেশিরভাগ লোকই পূজার্চনা করার সময়ও প্লাস্টিক অথবা স্টিলের তৈরি পাত্র ব্যবহার করে থাকে। যা একেবারেই ঠিক নয়। কিন্তু যদি আপনি সূর্যদেবকে প্রতিদিন জল দান করতে ইচ্ছুক হন তাহলে ভুল করেও প্লাস্টিক অথবা স্টিলের পাত্রে জল দান করবেন না। সর্বদা তামার কোনো ঘটি ব্যবহার করুন।
চতুর্থত,(ব্রম্য মুহুর্তে এই ক্রিয়া সম্পন্ন করুন / চপ্পল অথবা জুতা পড়ে কখনই উচিত নয় এই ক্রিয়া)বন্ধুরা হিন্দুধর্ম শাস্ত্রতে এটাও বলা হয়েছে যে, সূর্যদেবকে অর্ঘ্য সর্বদা ব্রহ্ম মুহুর্তেই দেওয়া উচিত। আর এটাই সূর্যদেবকে জল দান করার সবথেকে শুভ মুহূর্ত বলে মানা হয়ে থাকে। এছাড়াও জল প্রদান করার আগে এই জিনিসটি মাথায় রাখবেন আপনি আপনার দৈনিক ক্রিয়া থেকে মুক্ত হয়েছেন। আপনি স্বচ্ছ বস্ত্র ধারণ করে তারপর সূর্যদেবকে জল বা অর্ঘ্য প্রদান করুন।
পঞ্চমত,(জলের সাথে দিন এই বস্তুগুলি) জলের সাথে সাথে লাল চন্দন,ফুল এবং তার সাথে আপনি চাইলে চাল মিশিয়ে তারপর সূর্যদেবকে জল দান করতে পারেন। আর বন্ধুরা সবসময় মনে রাখবেন জল দান করার সময় আপনার দুটি হাত যেন ওই তামার পাত্রটিকে স্পর্শ করে থাকে আপনি আপনার মাথা থেকে একটু উপরের দুটি হাত কে তুলে তারপর সূর্যদেব কে অর্ঘ্য প্রদান করবেন। এছাড়াও বন্ধুরা এই বিষয়টি মনে রাখবেন কখনোই জুতো পড়ে অথবা চপ্পল পড়ে সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে এই শুভ ক্রিয়াটি করতে যাবেন না। ফলে এই শুভ ক্রিয়াটি সম্পূর্ণভাবে অশুভ হয়ে যাবে।
ষষ্ঠত ,(রবিবার দিন করুন এই ক্রিয়া) সপ্তাহের বাকী দিনগুলিতে আপনি সূর্যদেবকে জল প্রদান করুন আর নাই করুন কিন্তু, রবিবারের দিন অবশ্যই আপনি সূর্যদেবকে জল বা অর্ঘ্য নিবেদন করবেন। এইদিন সকলেরই উচিত সূর্যদেবকে জল প্রদান করা। কেননা হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী রবিবারের দিনটি সূর্যদেবের দিন বলেই গণ্য। এর ফলে আপনার কুন্ডুলিতে যদি সূর্যদেব সম্পর্কিত কোন দোষ থেকে থাকে তাহলে সেই দোষও গুনে পরিবর্তিত হয়ে যাবে।
সপ্তমত,(সাত্ত্বিক আহার গ্রহণ) যদি আপনি সপ্তাহের প্রতিদিনই সূর্যদেবকে জল বা অর্ঘ্য নিবেদন করে থাকেন তাহলে রবিবার দিন সাত্ত্বিক আহার গ্রহণ করুন। অর্থাৎ রবিবারের দিন মাছ, মাংস ভক্ষণ করবেন না। তার সাথেই মুসুরির ডালও ঐদিন সেবন করবেন না। এছাড়াও রবিবারের দিন লাল রঙের বস্ত্র ভুলেও ধারণ করবেন না।
তো বন্ধুরা আশাকরি আপনারা লেখা টি পড়ে সমৃদ্ধ হয়েছেন এবং বুঝতে সক্ষম হয়েছেন আমাদের কী কী ভুল হয় যেই কারনে আমরা সূর্যদেবকে অর্ঘ্য নিবেদন করা সত্বেও তার ফল থেকে বঞ্চিত হই। আশা করি এই বিষয়গুলো মেনে চললে সূর্যদেবকে অর্ঘ্য নিবেদন করার ফলে সূর্যদেবের কৃপা দৃষ্টি সদা সর্বদা আপনার উপর থাকবে।
ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আজ এখানেই শেষ করলাম। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুন:- শ্রীকৃষ্ণের গায়ের রং নীল কেন?CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা