Breaking

Search Content

Follow Us

শনিবার, ৫ মার্চ, ২০২২

সম্পর্কের মেলবন্ধন ঠিকঠাকভাবে বজায় রাখার কৌশল কি || বিকাশের সূত্রের ৬ষ্ঠ ভাগ।

 



নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু । 


আমরা সকলেই এই সমাজে থাকি এবং প্রতিদিনই একটু সময় এই সমাজের মানুষের সঙ্গে কাটে। সমাজে আমাদের অনেক আত্মীয়, বন্ধুত্ব স্থাপন করতে হয়।যথা- মাতা-পিতা, ছেলে মেয়ে, ভাই বোন, স্ত্রী প্রতি, বন্ধু, অফিসের বস, ক্লাইন্ট,‌কাস্টমার ইত্যাদি। কিন্তু, কথা হচ্ছে সবথেকে বড় সমস্যা এই বিভিন্ন আত্মীয়, বন্ধুত্ব এই সমস্ত থেকেই উৎপন্ন হয়। তো এই জন্যই এই সকল সম্পর্কের মেলবন্ধন ঠিকঠাকভাবে বজায় রাখার কলা কৌশল কি? এই সম্পর্কে আলোচনা করব আজকে আপনাদের সঙ্গে এই লেখাতে। 


একদা একটি শপিং মলে একজন মায়ের সাথে তার তিন সালের ছোট মেয়ে গিয়েছিল। সে তার মায়ের হাত ধরে ছিল, সেই ছোট মেয়েটি দেখতে খুবই সুন্দর ছিল। মনে হয় যেন কোন আকাশ থেকে পরী পৃথিবীতে নেমে এসেছে। সেই ছোট্ট মেয়েটি খুবই হাসি খুশি ছিল। কিন্তু, শপিং মল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সে তার মাকে চকলেট কিনে দিতে বলল। এখন যদি তার মা তাকে চকলেট কিনে দেয় তাহলে সেই ছোট মেয়েটি প্রথম থেকে যেমন হাসিখুশি ছিল তেমনই থাকবে। কিন্তু, বাই চান্স যখন তার মা যখন না করে দেয়; ব্যাস আর দেখে কে। ছোট মেয়েটা সেখানেই জোরে জোরে কান্না করতে শুরু করে দেয়। তখন তার মা ওই পরিস্থিতি দেখে মনে মনে ভাবতে লাগল - আমি জন্মই কেন দিলাম এই বাচ্চাকে। 


পাশ থেকে যে ব্যক্তিরা এই দৃশ্যটি লক্ষ করেছেন তারা হয়তো ভাবতে পারেন কিছু সেকেন্ডের মধ্যেই এই বাচ্চা মেয়েটির মধ্যে এত পরিবর্তন হলো কি করে! এর কারণ ছিল খুবই ছোট। সে তার মার কাছে তার একটি ইচ্ছার প্রকাশ করল। কিন্তু, তার মা তার ইচ্ছাটা পুরন করে না। যার কারণেই সেই ছোট মেয়েটির মন খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো এটাই, আমাদের মধ্যে অনেক মানুষই নিজের বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে ওই তিন সালের বাচ্চা মেয়েটির থেকে এগিয়ে যেতে পারেনা। আমরা আমাদের আত্মীয় অথবা বন্ধু কিংবা সম্বন্ধিদের কাছে সবসময় আশা করে থাকি - যে তারা এমনটা করবেন, এমনটা করবেন না ইত্যাদি। আর যেখানেই আমাদের সম্বন্ধি কিংবা আত্মীয় অথবা বন্ধুরা আমাদের ইচ্ছানুরূপ কাজ না করে তখনই আমরা দুঃখী হয়ে পড়ি। 


আরেকটি প্রধান বিষয় হলো কোন একজন ব্যক্তি সকলের ইচ্ছা একত্রে পূরণ করতে কখনোই পারেনা। একজন ব্যক্তি চাইলেও তার পক্ষে সকলের মন জুগিয়ে চলা কখনোই সম্ভব নয়। ধরে নিন একজন ব্যক্তি অফিসে কাজ করেন। তার অফিসের বস তার থেকে আশা করে আছেন - আমার এমপ্লয় রাত ৮টা অবধি কাজ করে তবেই বাড়ি যাবে। কিন্তু, অন্যদিকে তার নববিবাহিত পত্নী আশা করে আছেন - আমার স্বামী সন্ধে ৬টার মধ্যে বাড়ি ফিরুক। তাহলে তার সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানো যাবে। এখন বন্ধুরা আপনারাই দেখুন সেই ব্যক্তি যদি তার অফিসের বসের আশা অনুযায়ী কাজ করে তাহলে তার পত্নী দুঃখী হয়ে যাবে। আর যদি তার পত্নীর আশা পূরণ করতে চায় তাহলে অফিসের বস নিরাশ হয়ে যাবেন। 



এমনটা কি কখনো সম্ভব নয়, কি আমরা আমাদেরই আশা গুলিকে একটু কম করে দিই। একজন পতি কাজ সেরে বাড়ি পৌঁছাছিলেন। আর তিনি মনে মনে এটা আশা রাখছিলেন - যেমন রাজার যুদ্ধ থেকে ফিরলে রানী তার আরতী করে আগমন করেন। এমন ভাবেই তাকেও তার পত্নী স্বাগত জানাবে। কিন্তু পত্নী তার ছোট বাচ্চা দুটিকে সারাদিন সামলাতে সামলাতে নাজেহাল হয়ে গিয়েছিল। এরপর যখন তার স্বামী বাড়ি ফিরে এলো তখন সে আরতি করে স্বাগতম জানানোর বদলে তার স্বামীকে বলতে শুরু করল বাচ্চার আজ কি শয়তানি-বদমাশি করেছে সেসব। তখন সেই স্বামীটি মনে মনে তার ইচ্ছা গুলি কে মেরে দিলেন। এরপর রাতের খাবার খাওয়ার সময় তার স্ত্রী তাকে বলল, খাবারগুলো টেবিলে সাজিয়ে দিতে। তখন তার স্বামী তাকে সাহায্য করল। তাকে ভালো করে স্বাগত জানানো হয়নি এই কারনে তার মন আগে থেকেই একটু খারাপ ছিল। খাবার গুলি টেবিলে সাজিয়ে দেওয়ার পর সে টিভি দেখতে লাগল। আর তখনই তার ছোট ছেলে এসে - তাকে ঘোড়া হতে বলল। এখন সেই স্বামী ধীরে ধীরে আর কন্ট্রোল করতে পারছিলো না তার রাগ। তারপর সে রেগে গিয়ে জোরে জোরে বলতে লাগল - তোমরা সকলেই আমাকে নিয়ে কখনওই ভাবনা। তোমরা কেমন নিষ্ঠুর-নির্দয়। এই বলে জোরে চিৎকার করে সে তার শোবার ঘরে চলে গেল। কিন্তু, তখন তার পরিবার ভাবছেন হঠাৎ করে তার এরকম আচরণ তার কি হলো? তারা এটাই বুঝতে পারছেন না। 


আসলে বন্ধুরা এখানে ঘটনাটি ঘটেছিল এই - ওই স্বামী বা বাচ্চাটির বাবা তিনি আশা করেছিলেন যে পরিবারের সকলে আমার সুখ পুরন করার ব্যবস্থা করবেন। আমার যে সারাদিনের কষ্ট হয়েছে কাজ করে বাড়ি ফিরেছে আমাকে ভালোভাবে গৃহে স্বাগতম জানানো হবে। কেননা আমি এই পরিবারের সকলের জন্য সারাদিন কষ্ট করে কাজ করেছি। এমন ধরনের চিন্তাভাবনা ছিল ওই স্বামীর মনে। তিনি তার পরিবারের থেকে এই সকল বিষয়গুলি আশা করেছিলেন যে তার পরিবার তার সুখের ব্যবস্থা করবেন। তার এই আশা পূরণ না হওয়ায় তিনি রেগে যান। কিন্তু, বন্ধুরা এর বদলে তিনি যদি নিজের আশাকে একটু কমিয়ে নিতেন। তাহলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।


এইজন্যই বন্ধুরা বলা হয়েছে, এমনটা আশা রাখা অন্যরা আমাদের কে বুঝবে। তার আগেই আমাদের চেষ্টা করা উচিত অন্যকে বোঝা। অন্যের থেকে যতটা পরিমাণ আশা আমরা রাখবো ঠিক ততটাই আমাদেরও এইটা বোঝার চেষ্টা করতে হবে যে তারও কি কি সমস্যা থাকতে পারে। এটা আগে বুঝতে হবে অন্যজনা আমার আশানুরূপ কাজ করছে না কেন? সেই-বা কেমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেই কারণে তার আমার সম্পর্কে এমন বিচার আসছে - এই ধারণাটা আগে মনে আনতে হবে। তাহলে দেখবেন অটোমেটিক আমাদের অন্য আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সুবিধা হবে। অতএব নিজের সম্বন্ধি, আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধুর সঙ্গে কিভাবে সঠিকভাবে তাল মিলিয়ে চলতে হয় এই সূত্রটি আজকে আমরা শিখলাম। 


আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনাদের ভাল লেগেছে। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।



আরো পড়ুন :- অন্যকে দোষারোপ করা বন্ধ করুন || বিকাশের সূত্রের ৫ম ভাগ। Click here



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা