নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
ভগবান যাকে নিয়ে সঠিকভাবে ব্যাখ্যাও নেই। কিন্তু, আমাদের বেদে এমন কিছু ব্যাখ্যা করা রয়েছে যার মাধ্যমে পরম সত্য জানা সম্ভব। আজকের দিনে বৈজ্ঞানিকরাও এটা মানেন যে আমাদের এই সৃষ্টিতে অনেক আয়াম রয়েছে। ১০ টি আয়ামের একটি থিওরি সামনে আনা হয়েছে। কিন্তু আমাদের বেদ এবং পুরানে ৬৪ টি আয়ামের কথা বলা হয়েছে। আজকে এই লেখাটিতে আপনাদের এই ধরণেরই বেদিক ডায়মেনশনের সম্পর্কে জানাতে চলেছি।আর এটাও জানার চেষ্টা করব যে, ভগবান কোন আয়ামে থাকেন।
আমাদের এই সংসারিক সৃষ্টিতে তিন ধরনের আয়াম রয়েছে। যার মধ্যে প্রথম আয়ামটি হল উপর নিচে হওয়া। দ্বিতীয় আয়ামটি হল ডানদিক ও বাদিকে হওয়া। আমাদের টিভিতেও এই দুই আয়াম লক্ষ্য করা যায়। যার মধ্যে যে কোনো জিনিসই হয়তো উপর-নিচে কিংবা ডায়ে বাঁয়ে যেতে পার। কিন্তু, আমরা তিন আয়াম এর অন্তর্ভুক্ত সৃষ্টিতে বসবাস করি। যেখানে এই দুটি আয়ামের সাথে সাথেই আরেকটি আয়্যাম অর্থাৎ তৃতীয় একটি আয়াম লক্ষ করা যায়। এই তৃতীয় আয়াম টি হল আগে-পিছে হওয়া। আমরা সকলেই এই তিনটি আয়ামে বেঁধে রয়েছি। কিন্তু, এই তিনটি ছাড়াও আরেকটি আয়াম রয়েছে যা হলো সময়। এই আয়ামকে আমার কেবল আগে এগিয়ে যেতে লক্ষ করব। এই আয়ামে আমরা কখনো পিছনে যেতে পারবো না। আমরা কেবল এই চারটি আয়ামের অন্তর্ভুক্ত। এটাই হলো আমাদের সিমা। যদি আমরা আমাদের বেদ এবং পুরাণের অধ্যায়ন করি তবে দেখতে পাবো আমাদের এই চারটি আয়ামের সৃষ্টিতে অন্য গ্রহের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে জীবনের সন্ধান মেলে। এই গ্রহ গুলি কে লোক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যে গুলি হল - সত্যলোক, তপলোক, জনকলোক, মহরলোক, স্বর্গলোক, ভূবরলোক, ভূলোক, অতাল, বিতাল, সুতাল, তলতাল, মহাতাল ও পাতাল। ভুলোকে আমরা মানুষেরা বসবাস করি। ভূবরলোকে মৃত্যুর পরে আমাদের আত্মা বাস করে। স্বর্গলোকে দেবতারা বাস করে। কিন্তু এই সব আমাদের তিন আয়ামিয় শক্তিতেই নিবাস করে। আমরা জেনে গেছি চতুর্থ আয়াম টি হল সময়। কিন্তু, এর পরেই আসে পঞ্চম আয়াম। যাকে বলা হয় - Multiple Universe বা ব্রহ্মলোক। এই আয়ামেই ব্রহ্ম নিবাস করে। কিন্তু, ব্রহ্মা শুধু একটিই নয়। সকল ব্রহ্মা এই আয়ামেই জন্ম নেয়। আর এখানেই তাদের মৃত্যু হয়। একটি ব্রহ্মা থেকে একটি ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি হয়। বিগ ব্যাঙ্ক যাকে আমরা সাংসারিক তিনটি আয়ামের সূচনা বলে মনে করি সেটি এই পঞ্চম আয়ামের ব্রহ্মা থেকে উৎপন্ন হয়। এখান থেকে অনেক ব্রহ্মা উৎপন্ন হয় অর্থাৎ Multiple Universe ; এখানের সময় আলাদা কেননা এই আয়ামটি আমাদের চারটি আয়াম থেকে বাইরে।
এরপরেই রয়েছে ষষ্ঠ আয়াম। যেখানে নিবাস করেন মহাবিষ্ণু। মহাবিষ্ণুর আবার তিনটি ভাগ রয়েছে। যেগুলো হলো মহাবিষ্ণু, গর্বোদক্যাশিয় বিষ্ণু ও কাশিরোধক্যাশিয় বিষ্ণু। এই আয়ামে মহাবিষ্ণু তত্ত্ব ও উর্যা নির্মাণ করেন, যার মাধ্যমে এই পাঁচটি আয়ামের নির্মাণ হয়। একেই মহা তত্ত্ব বলা হয়। গর্বোদক্যাশিয় বিষ্ণু সকল ব্রম্ভান্ডের নির্মাণ করেন। এর থেকেই ব্রহ্মার জন্ম হয়। এরপরেই রয়েছে কাশিরোধক্যাশিয় বিষ্ণু যা আমাদের তিন অয়ামিও শক্তির সকল তত্ব ও পরমাণুতে বিলীন হয়ে আছে। যখন আমরা ধ্যান করে থাকি তখন আমরা কাশিরোধক্যাশিয় বিষ্ণুকে অনুভব করে থাকি। যখন আমরা এই বিষয়টির জ্ঞান লাভ করি তখন আমরা সাংসারিক মায়া থেকে বেরিয়ে আসতে পারি। এর থেকেই আমরা পরমাত্মাকে অনুভব করতে পারি।
এরপরে রয়েছে সপ্তম আয়াম। যাকে সত্যঅয়াম বা ব্রহ্মজ্যোতি বলা হয়ে থাকে। একেই আমাদের বেদে অকাশি ত্রিকট রূপে প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। একজন যোগী যখন জ্ঞান সাধনা করতে থাকেন তখন সে এই আয়ামটি অনুভব করে থাকে। এই আয়ামের মধ্যেই রয়েছে সেই অনন্ত জ্ঞান যার মাধ্যমে যার মাধ্যমে মানুষ দেবতাদের শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এই আয়্যামের বোধ পাওয়া ব্যক্তি মহাজ্ঞানী হয়ে থাকেন। এই আয়্যামের বোধ পাওয়া ব্যক্তি জ্ঞানচক্ষু চরম সীমায় পৌঁছে যায়।
এরপরেই আছে অষ্টম আয়্যাম। যাকে কৈলাস বলা হয়। এই আয়্যামে ভগবান শিবের সাংসারিক নিবাস করে। যার কার্য এই সাতটি আয়্যামের মধ্যে সন্তুলোন বজায় রাখা। এই কারণে সিদ্ধি যোগীরা ভগবান শিব কে পাওয়ার চেষ্টা করেন। কেননা সত্য আয়্যাম থেকে জ্ঞান লাভ করে সকল যোগী ভগবান শিবকে পেতে চায়। এটাই হলো মোক্ষের রাস্তা।
এরপরে রয়েছে নবম আয়্যাম। যা হলো বৈকুণ্ঠ। এই আয়্যামেই নারায়ন নিবাস করে। যিনি সব আয়্যামকে চালিয়ে রাখেন। মোক্ষলাভ করার অর্থ হল এই আয়্যামেই পরমাত্মাতে বিলীন হয়ে যাওয়া। সকল আয়্যাম এটা থেকেই তৈরি হয়েছে। এটাই হল নির্মাণের স্ত্রোত। মোক্ষলাভ হলে পরমাত্মা এই আয়্যামে এসেই লীন হয়ে যায়।
এরপরে রয়েছে দশম আয়্যাম অর্থাৎ অনন্ত আয়্যাম। এটাই হলো সেই আয়্যাম যেখানে পরম সত্য পরমাত্মা নিবাস করে। এই আয়্যাম সব সময়েই বর্তমান ছিল। এই আয়্যামকে আমরা আয়্যাম না বলে সত্য পরমাত্মাও বলতে পারি। হিন্দু ধর্মে একেই আলাদা আলাদা নামে জানা যায়। একেই নিরাকার অনন্ত সদাশিব বলা হয়ে থাকে। একেই অনন্ত সত্য বিষ্ণু বলা হয়ে থাকে। একেই আলাদা আলাদা নামে জানা যায়। এনারই অংশ সকল আয়্যামে নিজের নিজের কার্য করে চলেছে। এই আয়্যামের মধ্যেই কোনো না কোনো রূপে ৬৪ টি আয়্যাম রয়েছে। আমরা এর পুরো তথ্য এখনো জোগাড় করতে পারিনি। কেননা আমাদের বোধ সেই স্তরেরই নয়। আমরা কেবল বেদ এবং পুরাণের সূত্রগুলি কে যুক্ত করতে পারি।
বন্ধুরা আশাকরি লেখাটি পরে আপনারা সম্মৃদ্ধ হয়েছে। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আজ এখানেই শেষ করলাম। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুনঃ- শ্রীমদ্ভাগবত গীতায় বর্ণিত ১৮-টি জ্ঞানের কথা। CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা