অক্ষয় তৃতীয়ার দিন বাড়িতে নিয়ে আসুন - এই দ্রব্যটি | এই দিন কোন খাবার খাওয়া শুভ?

 

নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।   

সুধী দর্শক বন্ধুরা আগামী মঙ্গলবার দিন (ই:-03/05/22) পালন করা হবে পবিত্র অক্ষয় তৃতীয়া। অক্ষয় তৃতীয়া আমাদের কাছে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। শাস্ত্র অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি এই দিনে যে কাজ করে থাকে সেটি অনন্তকালের জন্য অক্ষয় হয়ে থাকে। সেই কারণেই বলা হয়ে থাকে যদি কোনো শুভকাজ আপনি করতে চান তাহলে এই অক্ষয় তৃতীয়ার দিন শুরু করুন। ব্যবসার কাজ হোক কিংবা জমি বা বাড়ি কেনা, যানবাহন-গহনা কেনা, বিবাহের মত শুভ কাজও এই অক্ষয় তৃতীয়া সম্পন্ন করার জন্য একটি অন্যতম পবিত্র দিন। আজকে আপনাদের সামনে এই লেখাটির মাধ্যমে আলোচনা করবো - এই পবিত্র অক্ষয় তৃতীয়ার দিন আমাদের কোন খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন?

যদি আপনি এই পবিত্র অক্ষয় তৃতীয়া পালন করেন কিমবা নাও করেন তা সত্বেও অক্ষয় তৃতীয়ার পবিত্র দিনে অবশ্যই এই খাবার গ্রহণ করার চেষ্টা করুন এবং এর পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনাদের সামনে এই লেখাটিতে আলোচনা কোরবো যে, এই পবিত্র অক্ষয় তৃতীয়ার দিন কোন দ্রব্য বাড়িতে আনা শুভ?

 

বাড়ির বাইরে যদি আপনি অক্ষয় তৃতীয়ার দিন বের হন তাহলে কিন্তু কখনোই খালি হাতে গৃহে প্রবেশ করা এই দিন কোনমতেই উচিত হবে না। অন্তত সামান্য একটি দ্রব্য অতি অবশ্যই আপনাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। কারণ অক্ষয় তৃতীয়ার পবিত্র দিনে খালি হাতে যদি আপনি গৃহে প্রবেশ করেন সেটা গৃহের পক্ষে কখনই কল্যাণ জনক নয়। তাই বন্ধুরা অক্ষয় তৃতীয়ার এই পবিত্র দিনে অতি অবশ্যই এই সমস্ত আহার গ্রহণ করুন এবং তারই সঙ্গে এই সামান্য একটি দ্রব্য নিয়ে গৃহে প্রবেশ করুন।

বন্ধুরা এই পবিত্র অক্ষয় তৃতীয়ার দিন স্বাস্থ্যবিদরা পরামর্শ দিয়েছেন নিরামিষ আহার অতি অবশ্যই গ্রহণ করা প্রয়োজন।এই বিষয়টি কিন্তু সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যারা অক্ষয় তৃতীয়া পালন করছেন বা পুজো করছেন তাদের ক্ষেত্রেও এই বিষয়টি যেমন প্রযোজ্য। আর যারা অক্ষয় তৃতীয়া পালন করছেন না তাদের ক্ষেত্রেও এটি একই ভাবে এই বিষয়টি প্রযোজ্য। শাস্ত্র অনুযায়ী এই দিনে চাল, মুগ ডাল এবং বিভিন্ন সবজি খিচুড়ি খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। যদি কেউ অক্ষয় তৃতীয়া পালন করে থাকেন, অক্ষয় তৃতীয়ার পূজা করে থাকেন তাহলে পূজার নৈবেদ্য হিসেবে অবশ্যই আপনি এই খিচুড়ি ঠাকুরকে অর্পণ করতে পারেন এবং পূজা শেষ হয়ে যাওয়ার পর এই ভোগের প্রসাদ গ্রহণ করবেন।

বন্ধুরা এই বিষয়টি নিশ্চয়ই আপনি জানেন যে এই পবিত্র অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে মা লক্ষ্মীর প্রতীক স্বরূপ কোনো কিছু কেনা অত্যন্ত শুভ ফলদায়ক। মা লক্ষ্মীর প্রতীক হিসাবে দানাশস্য কেও গণ্য করা হয়। চাল মা লক্ষ্মীর একটি অন্যতম প্রতীক। তাই অক্ষয় তৃতীয়ার দিন যদি আপনি বাড়ির বাইরে কখনো যান তাহলে চাল-ডাল বা বিভিন্ন প্রকার দানাশস্য আপনি কিনতে পারেন। এর পাশাপাশি অক্ষয় তৃতীয়ায় সবুজ শাকসবজি কেনাও অত্যন্ত শুভ হিসেবে বিবেচিত। শাস্ত্র অনুযায়ী এই সবুজ শাকসবজি আমাদের কাছে প্রকৃতির আশীর্বাদ স্বরূপ। এই দিনে যদি কখনো বাড়ির বাইরে বের হন তাহলে দানাশস্য কেনার পাশাপাশি সবুজ শাকসবজি অবশ্যই কিনবেন এবং তাই দিয়ে ঠাকুরের উদ্দেশ্যে ভোগ তৈরী করে ঠাকুরকে অবশ্যই নিবেদন করবেন এবং পুজোর পর সেই ভোগের প্রসাদ গ্রহণ করবেন ও অপরকেও প্রদান করবেন। ভোগের এই প্রসাদ প্রস্তুত করার সময় অতি অবশ্যই সামান্য হলেও ঘি নিবেদন করবেন। যেকোনো পবিত্র বা শুভ কাজে ঘি নিবেদন করা আবশ্যক। ভগবানের জন্য নিবেদিত এই ভোগের প্রসাদে যদি আপনি ঘি নিবেদন করেন তাহলে এতে মানসিক ও শারীরিক ক্ষতিকর উপাদান দূরে রাখতে সহায়তা করে এই ঘি। অক্ষয় তৃতীয়ায় তাই অতি অবশ্যই সামান্য পরিমাণ ঘি কিনে আনুন এবং সেই ঘি ঠাকুরের ভোগের প্রসাদ নিবেদন করুন এবং কিছুটা পরিমাণ আলাদাভাবে সরিয়ে রাখুন। তা দিয়ে আপনি ঠাকুরের সামনে একটি ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালান। যেকোনো পবিত্র কাজেই ভগবানের সামনে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালানো অত্যন্ত ফলদায়ক হয়ে থাকে।

দ্বিতীয়তঃ যে বিষয়টির কথা বলব তা হল যদি আপনি অক্ষয় তৃতীয়া পালন করেন বা কোন দেবীর পূজা করেন তাহলে আখের রস পান করে উপস ভঙ্গ করার চেষ্টা করুন। বন্ধুরা আখের রস পান করার কথা এইজন্য বলা হয়ে থাকে যে আখের রস আমাদের তাৎক্ষণিক এনার্জি প্রদান করে। তাই উপোস করার পর যখন সাধারণভাবে শরীর ক্লান্ত থাকে সেই সময় এই আখের রস পান করলে শরীর সতেজ থাকে। তাই উপোস করার পর আখের রস পান করুন আর তা না হলে আপনি ডাবের জল পান করেও উপস ভাঙতে পারেন।

  

বন্ধুরা এই পবিত্র অক্ষয় তৃতীয়ায় যে দ্রব্যটি কেনা সবথেকে বেশি শুভ তা হল - সোনা বা রুপা। কিন্তু বহু মানুষেরই সোনা বা রূপা কেনার সামর্থ্য থাকে না। যদি সোনা বা রুপা কিনতে না পারেন তাহলে অন্তত এই দিন নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী অন্য ধাতু দিয়ে তৈরি কোনো জিনিস অবশ্যই কিনতে পারেন। আর তাও যদি না পারেন তাহলে আপনার গৃহের জন্য যেটি সবথেকে বেশি প্রয়োজন বা আপনার যেটি প্রয়োজন সেই ধরনের একটি দ্রব্য অতি অবশ্যই বাড়িতে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন এই পবিত্র দিনে আপনার প্রয়োজনের জন্য যে দ্রব্যটি আপনি কিনবেন সেটি নিশ্চিত রূপে ফল প্রাপ্ত হবেই হবে।

অক্ষয় তৃতীয়ায় আরো একটি কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আর তা হল - দান ধর্ম। এই দিন যদি আপনি কোনো মানুষকে বা কোনো গরীব দুস্থকে বা পশু-পাখিকে কোনো কিছু দান করতে পারেন বা খাওয়াতে পারেন তাহলে সেটা অত্যন্ত শুভ ফল প্রদান করে। এই দিন আপনি ঠাকুরের উদ্দেশ্যে বা কোনো দুঃস্থ দরিদ্র মানুষদের উদ্দেশ্যে বা কোনো বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে লাড্ডু দান করতে পারেন, কোনো প্রকার দানাশস্য দান করতে পারেন অথবা কোন বস্ত্র দান করতে পারেন। কিছু না কিছু হলেও অতি অবশ্যই কিন্তু এই দিন আপনার সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী দান করুন। কারণ এই দান অক্ষয় হয়ে লেখা থাকবে চিরজীবনের জন্য। আপনি ঠাকুরের উদ্দেশ্যে যা তৈরি করেছেন বা আপনার নিজের খাওয়ার জন্য যা তৈরি করেছেন তার থেকে সামান্য কিছু পরিমাণ আপনি এই দিন গরীব দুঃস্থ মানুষ, বাচ্চা অথবা কোনো পশু পাখিদের উদ্দেশ্যে দান করুন।

সর্বশেষ যে বিষয়ে কথা বলব তা হল এই দিন যেহেতু একটি পবিত্র দিন তাই এই পবিত্র দিনে মিষ্টি মুখ করুন এবং বাড়ির সকলকে মিষ্টিমুখ করান এইভাবে একটি সুন্দর সম্পর্কের ভিত তৈরি করুন। অক্ষয় তৃতীয়া তিথি আপনাদের খুব ভালো কাটুক এই কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করলাম। শুভ অক্ষয় তৃতীয়া। জয় শ্রী গুরু।

বন্ধুরা আশাকরি এই লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক। 

আরো পড়ুনঃ- নরক যাত্রা থেকে কি করে বাঁচবেন, জানুন উপায়। CLICK HERE