নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব- নরক যাত্রা থেকে কি করে বাঁচবেন, সেই সম্পর্কে। গরুর পুরানে উল্লেখিত কিছু এমন কর্ম যেগুলি করার মাধ্যমে নরকের হাত থেকে পাওয়া যায়।
বন্ধুরা ছোটবেলা থেকেই আমি এবং আপনারা নিজের বাড়ির বড় গুরুজনের থেকে এটা শুনে এসেছেন যে, খারাপ কাজ করা মানুষকে নরকে যেতে হয়। হ্যাঁ বন্ধুরা, সেই নরকের কথাই বলছি যেখানে যমরাজ খারাপ কাজ করা মানুষদের শাস্তি দেয়। বন্ধুরা আমাদের হিন্দুধর্ম শাস্ত্রতে মৃত্যুর পরে স্বর্গ অথবা নরক প্রাপ্তি হওয়ার উল্লেখ পাওয়া যায়। যদি মানুষ তার জীবন কালে ভালো কাজ করে থাকে তাহলে সেই মানুষের স্বর্গলোক প্রাপ্ত হয়। আর যদি কর্ম খারাপ হয় তাহলে নরক প্রাপ্তি আবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়।
বন্ধুরা গরুর পুরানে বলা হয়েছে ব্যক্তির কর্মের আঁধারেই আত্মার সাথে ব্যবহার করা হয়। আর সেই ব্যক্তি কেমন কর্ম করেছে তার উপরই স্বর্গ অথবা নরক প্রাপ্তি হয়। তো বন্ধুরা চলুন সবার প্রথমে সেই খারাপ কর্মগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। যেগুলি করার ফলে আমাদের মরার পরে নরক প্রাপ্ত হয়।
বন্ধুরা গরুড় পুরাণ অনুযায়ী গর্ভবতী স্ত্রী যদি ভ্রুণ হত্যা করে বা নবজাতক শিশুকে গর্ভের মধ্যেই হত্যা করে হলে সেই মানুষের নরক যাত্রা নিশ্চিত হয়। এছাড়া যেই পুরুষ স্ত্রীর উপর অত্যাচার করে, মদ্যপান করে তাকেও মরার পর নরকে যেতে হয়। শুধু তাই নয় গরুর পুরাণে এটাও বলা হয়েছে অন্যের ক্ষতি করা মানুষেরা নরকে অবশ্যই যায়। মান্যতা অনুযায়ী গরীব, অসহায়, অনাথ ও বৃদ্ধদের কষ্ট দেওয়া মানুষগুলির মরার পরে খুবই খারাপ হল হয়। আর তাদের নরকে যমদূত দ্বারা অনেক কষ্ট দেয়া হয়ে থাকে। নিজের পিতার শ্রাদ্ধশান্তির কাজ না করা ব্যক্তিরও নরকে ঠাই হয়। শুধু তাই নয়, যারা অন্য লোকের টাকার উপর নজর রাখে তাদেরও নরকে যেতে হয়।
চলুন বন্ধুরা এবার সেই কর্মগুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক, যেগুলি করার ফলে যাত্রা থেকে বাঁচা যায়।
রামচরিত মানস পাঠ - গরুর পুরানে বলা হয়েছে সকল মানুষদের রামচরিত মানষের নিয়মিত পাঠ করা উচিত। রামচরিত মানস পাঠ করলে মৃত্যুর সময় হওয়া কষ্টও দূর হয়। আর ভগবান শ্রী বিষ্ণুর রাম অবতারের কাহিনী পাঠ করলে সব সময় পূর্ণ প্রাপ্তি হয়। রামচরিত মানষে উল্লেখিত শব্দগুলি শুধুমাত্র শব্দ নয়, বরং এই শব্দগুলি মৃত্যুর পরে মানুষকে বহু সাগর পার করানোর নৌকা হিসেবে কাজ করে। রামচরিত মানস এর নিয়মিত পাঠ করলে মানুষের স্বর্গলোকে উচ্চ স্থান লাভ হয়।
বিষ্ণু সহস্রনাম পাঠ - বন্ধুরা রামচরিত মানস ছাড়াও বিষ্ণু সহস্রনাম নিয়মিত পাঠ করলে সেই ব্যক্তির ভাগ্য সবসময় সাত দেয়। আর সে স্বর্গে উচ্চ স্থান প্রাপ্ত হয়। বিষ্ণু সহস্রনাম পাঠের মাধ্যমে ব্যক্তির মধ্যে পজিটিভ এনার্জি তৈরি হয়। আর ব্যক্তি পাপ কর্ম থেকে মুক্তি পায়। বন্ধুরা বিষ্ণুসহস্ত্রানাম পাঠ জীবনের সকল বাধা থেকে মুক্তি দেওয়ার সাথে সাথেই এটি নরক যাত্রা থেকেও মুক্তি দেয়। এই কারণে বিষ্ণু সহস্রনাম এর পাঠ সকল মানুষকে নিয়মিত করা উচিত।
একাদশী ব্রত পালন- হিন্দু ধর্মে একাদশী ব্রত পালন খুবই পূন্যদায়ক বলে মনে করা হয়। আর গরুর পুরানেও এটা বলা হয়েছে যদি কোনো ব্যাক্তি একাদশীর দিন ব্রত পালন করে ও আর শ্রদ্ধার সঙ্গে ভগবানের উপাসনা করে তাহলে সে জীবন-মরনের বন্ধন থেকে সব সময়ের জন্য মুক্ত হয়ে যায়।
গঙ্গা স্নান- বন্ধুরা আমাদের হিন্দু ধর্ম তে গঙ্গাস্নান কে একটি বিশেষ মাহাত্ম্য দেওয়া হয়েছে। আর গরুর পুরাণেও এর উল্লেখ পাওয়া যায় যে, যেই ব্যক্তি নিয়মিত ভাবে, বিশেষ তিথিতে গঙ্গা স্নান করে তার জন্য নরকের দুয়ার বন্ধ করে দেওয়া হয়। গরুর পুরানে এটাও বলা হয়েছে যেই ব্যক্তি পূর্ণিমার দিনে গঙ্গা স্নান করে থাকে সেই ব্যক্তি নরকের যাত্রা থেকে বেঁচে যায় ।
গঙ্গাজলের পান- বন্ধুরা গরুড় পুরাণে এটাও বর্ণিত রয়েছে যে, প্রতিদিন গঙ্গাজল পান ও তুলসীপাতার সেবন করা উচিত। এই দুটিই ভগবান বিষ্ণুর অত্যন্ত প্রিয়। এগুলি সেবনের ফলে মানুষের মন পাপ কর্ম করা থেকে সরে যায়। আর জীবনে পজিটিব প্রভাব বৃদ্ধি পায়। এই দুটিকেই মুক্তি দায়িনি বলা হয়েছে। এই কারণে মৃত্যুর পরও ব্যক্তির মুখে সামান্য পরিমাণ গঙ্গাজল দেয়া হয় ও চোখে তুলসী পাতা দেওয়া হয়। যাতে তার স্বর্গপ্রাপ্তি হয়।
ব্রত- বন্ধুরা নরক থেকে বাঁচার জন্য ব্রত পালনেরও খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাহাত্ম্য রয়েছে। গরুড় পুরাণ অনুযায়ী শিবচতুর্দশী, প্রদোষ ও একাদশী ব্রত পালন কারী ব্যক্তি নরকের যাত্রা থেকে মুক্তি পেতে পারে। এটাও বলা হয় যারা নিয়মিত রূপে পূজা পাঠ ও ব্রত পালন করে তার জীবনের চক্র থেকে মুক্তি মেলে। এর সাথেই তার স্বর্গ লাভ হয়।
মহিলাদের সম্মান- বন্ধুরা গরুর পুরাণে এটাও বলা হয়েছে মানুষদের সব সময় নিজের জীবনে সচেতন হয়ে সঠিক ও সৎ ভাবে কাজ করে যেতে হবে। তার সাথেই পাঁচটি ইন্দ্রিয় তে কাবু পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। গরুর পুরান এটা বলা হয়েছে যে, যেই ব্যক্তি শুধুমাত্র নিজের পত্নী ছাড়া এই দুনিয়ায় বাকি সকল মহিলাদের মাতা ও বোনের চোখে দেখে এবং সকল মহিলাদের সম্মান করে - এমনটা করে সে নিজের জন্য স্বর্গের রাস্তা খুলে দিচ্ছে। আর তার জীবনে নরকের দরজা আপনা আপনিই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
গাছ লাগানো- যেই ব্যক্তি নিজের জীবনে বটগাছ, নিম গাছ, আমলা গাছ, আম গাছ ও তেঁতুল গাছ লাগায় তার জন্য সবসময়ের মতো নরকে যাওয়ার রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় । এছাড়াও আমাদের ধর্মতে অশোক গাছ ও তুলসী গাছ লাগানোকেও পুণ্যের শ্রেণীতে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয় যেই মানুষ অন্য মানুষের সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দেন এবং সময় দান ধর্ম করেন সেই ব্যক্তিদের জন্য নরকের দরজা সব সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
বন্ধুরা আশাকরি এই লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুনঃ- ভগবান বিষ্ণু, মহেশ্বর ও ব্রহ্মার উৎপত্তি হলো কি করে? | Creation of Bramha, Vishnu and Mahesh CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা