Breaking

Search Content

Follow Us

মঙ্গলবার, ৩ মে, ২০২২

মহাভারতে - কে, কোন দেবতার অবতার ছিলেন? | মহাভারত কথা।


 নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।   


আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল - মহাভারত কালে কে কোন দেবতার অবতার ছিল?


পৌরাণিক কাহিনীতে সবসময় মহাভারতের উল্লেখ পাওয়া যায়। মহাভারত সম্পর্কে আপনিও হয়তো বিভিন্ন ধরনের কথা শুনেছেন। কিন্তু আজও মহাভারতে এমন কিছু রহস্যময় বিষয় রয়েছে যেগুলির ওপর থেকে পর্দা ওঠা এখনো বাকি রয়েছে। এই কথাটি তো আমরা সকলেই জানি যে, ভগবান সময়ে সময়ে বিভিন্ন রূপে অবতার গ্রহণ করেন। কিন্তু, মহাভারতে কে কার অবতার ছিল এই বিষয়টি খুব কম লোকেই জানেন। মান্যতা রয়েছে যে মহাভারত কথাতে সকল দেবতা - গন্ধর্ব, রুদ্র, বসু, অপ্সরা আর অন্যান্য ঋষিদেরও অনেক অবতার ছিল। তো চলুন বন্ধুরা জেনে নেওয়া যাক সেই অবতার গুলি সম্পর্কে।


১) মহাভারতের সবথেকে মহত্বপূর্ণ অবতার ছিলেন ভগবান কৃষ্ণ। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে ৬৪ কলা ও অষ্টসিদ্ধি জ্ঞানলাভের জ্ঞাতা বলে মনে করা হতো। মান্যতা রয়েছে দ্বাপর যুগে জন্ম নেওয়া ভগবান শ্রীকৃষ্ণ- ভগবান বিষ্ণুর অবতার ছিলেন।


২) বলরাম:- মহাবলী বলরাম শেষ নাগের অংশ ছিলেন। সকল বলবানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হওয়ার জন্য তাকে বলভদ্রও বলা হত। শ্রীকৃষ্ণের বড় ভাই হওয়ার জন্য তাকে দাউজিও বলা হত। বলরাম জির বিবাহ রেবতীর সঙ্গে হয়েছিল। মহাভারতের যুদ্ধের সময় বলরাম সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে তীর্থ করতে চলে গিয়েছিলেন। এরপর যখন যদুবংশ নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তখন বলরামজি সমুদ্র তটে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় নিজের দেহ ত্যাগ করে শেষ নাগের অবতারের লীন হয়ে যান।


৩) ভীষ্ম:- মহাভারতের প্রমুখ পাত্রদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন ভীষ্ম পিতামহ। দায়ু নামক বসুই - ভীষ্ম পিতামহ রূপে জন্ম নিয়েছিল। বশিষ্ঠ ঋষির অভিশাপে ইন্দ্রের আজ্ঞায় আটটি বসুকে শান্তনু ও গঙ্গা থেকে উৎপন্ন হতে হয়েছিল। শান্তনু ও গঙ্গার থেকে জন্ম নেওয়া প্রথম সাতজন পুত্রকে তথা সাতটি বসুকে গঙ্গা নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু, অষ্টম পুত্র অর্থাৎ অষ্টম বসু 'দায়ু' বেঁচে ছিলেন। এই দায়ুই ছিল ভীষ্ম। যার প্রারম্ভিক নাম ছিল দেবব্রত।


৪) দ্রোণাচার্য:- ভীষ্ম পিতামহের পরে দ্রোণাচার্যকে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। দ্রোণাচার্য কৌরব এবং পান্ডবদের অস্ত্রশস্ত্রের বিদ্যা দান করেছিলেন। দেবগুরু 'বৃহস্পতি' - মহাভারত কালে দ্রোণাচার্য রূপে জন্ম নিয়েছিল।


৫) আশ্বাথামা:- মহাভারতে অশ্বথামা সবথেকে শক্তিশালী একজন যোদ্ধা হিসাবে পরিচিত ছিলেন। গুরু দ্রোণাচার্য পুত্র ছিলেন অশ্বত্থামা। এই পিতা-পুত্রের একত্রিত জোট মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ কে অন্যতম মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিল। অশ্বত্থামাকে মহাদেব ঞ্জম(যম), কাল আর ক্রোধের সম্মিলিত অংশ থেকে উৎপন্ন করেছিল।


৬) কর্ণ:- দেবতাদের মধ্যে সবথেকে প্রভাবশালী উর্যা সম্পন্ন সূর্যদেবের পুত্র ছিল কর্ণ। কর্ণ সূর্যদেবের অংশ অবতার ছিলেন। এটাতো সকলেই জানেন যে কর্ণ সূর্যদেব ও মাতা কুন্তীর পুত্র ছিলেন। কর্নের পালিত পিতা মাতা ছিলেন - অধিরথ ও রাধা দেবী। কর্ণের গুরু ও মিত্র ছিলেন - পরশুরাম ও দূর্যোধন। হস্তিনাপুরেই কর্নের লালন পালন হয়েছিল। কর্ণ এরপর অঙ্গদেশের রাজ সিংহাসনের দায়িত্বভার সামলে ছিলেন।


৭) দূর্যোধন:- দুর্যোধন ও তাঁর ১০০ ভাই ছিলেন কুরু বা কৌরব বংশের, এরা ছিল রাক্ষসের অংশ। দুর্যোধন হস্তিনাপুরের মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারীর 100 পুত্রের মধ্যে সবথেকে বড় পুত্র ছিলেন। বেদব্যাসের আশীর্বাদ ও বরদানের ফলেই গান্ধারী এই শতপুত্রের মা হয়েছিল। দুর্যোধনের অসন্তোষজনক কাজ কর্মের ফল কৌরব ও পাণ্ডবদের মধ্যে মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। দুর্যোধন গদাযুদ্ধে অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। আর দূর্যোধন ছিলেন কৃষ্ণের বড় ভাই বলরামের শীষ্য। দূর্যোধন কর্ণকে নিজের মিত্র বানিয়ে ছিলেন। গান্ধারী দ্বারা তার শরীর দেখে ফেলার ফলে তার শরীর বজ্রের মতো শক্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের লীলার ফলে তার গুপ্তাঙ্গের স্থান কঠোর হতে পারেনি। যার ফলে মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় ভিম দূর্যোধনের উরুদেশে আঘাত করে ও তাকে যুদ্ধে পরাজিত করে। আর এই ভাবেই দুর্যোধনের মৃত্যু হয়।


৮) অর্জুন:- অর্জুনের ধর্ম পিতা ছিল পান্ডু। কিন্তু আসলে সে ইন্দ্রদেব ও কুন্তীর পুত্র ছিল। দেবরাজ ইন্দ্র অর্জুন কে বাঁচানোর জন্য কর্ণের কবজ এবং কুন্ডল তার কাছ থেকে ছলনা করে নিয়ে নিয়েছিলেন।


৯) ভীম:- ভীমকে পবনপুত্র বলা হয়ে থাকে। হনুমানজিও পবন পুত্রই ছিলেন। বলা হয় যে, ভীম একশত হাতির শক্তির মতো বলবান ছিল। ভিম বলরাম এর কাছ থেকে গদা চালানো শিখেছিলেন। ভিমই দূর্যোধন সহ গান্ধারীর ১০০ পুত্রকে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পরাজিত করেছিলেন। দ্রোপদী ছাড়া ভীমের আরেক পত্নী ছিল হিড়িম্বা এবং তাদের ঘটোৎকচ নামের এক পুত্র সন্তান ছিল।


১০) যুধিষ্ঠির:- যুধিষ্ঠির ধর্মরাজ ও কুন্তীর পুত্র ছিলেন ‌‌। যুধিষ্ঠিরের ধর্ম পিতা ছিলেন পান্ডু। আর সে পঞ্চপান্ডব এর মধ্যে সবথেকে বড় ছিল। যুধিষ্ঠির সত্যবাদিতার জন্য বিখ্যাত ছিল। যুধিষ্ঠিরের পিতার ধর্মরাজ একবার তার পরীক্ষাও নিয়েছিলেন। পরীক্ষায়ও যুধিষ্ঠির সঠিক ধর্মের পথ বেছে নিয়েছিল। যুধিষ্ঠিরের দ্রৌপদী ছাড়াও আরেকটি পত্নী ছিল। তার নাম ছিল দেবিকা। যুধিষ্ঠিরের তার দুই স্ত্রী থেকে দুটি পুত্র ছিল।


১১) নকুল ও সহদেব:- তেত্রিশ জন দেবতাদের মধ্যে এই নকুল ও সহদেব অশ্বিনী কুমারের অংশ থেকে উৎপন্ন হয়েছিলেন। এরা ছিলেন অশ্বিনী কুমারদ্বয়। এঁদের ভিতর যিনি অগ্রজ, তার নাম নাসত‍্য এবং যিনি অনুজ, তার নাম দস্র। সহদেব ত্রিকালদর্শী ছিল। সে মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের ফলাফল আগে থেকেই জানতো। কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে এই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের ফলাফল কাউকে জানাতে মানা করেছিল।


১২) কৃপাচার্য :- রুদ্রের একটি গন কৃপাচার্য রূপে জন্ম নেয়।


১৩) শকুনি:- দ্বাপর যুগের অংশ থেকে শকুনির জন্ম।


১৪) বিদুর :- সূর্যের অংশ 'ধর্ম' - বিদুর হিসেবে প্রসিদ্ধ । 


১৫) কুন্তি ও মাদরি :- কুন্তি ও মাদরি রূপে সিদ্ধি ও দীর্তিকার জন্ম হয়েছিল।


১৬) গান্ধারী:- গান্ধারীর জন্ম হয়েছিল গান্ধারের রাজা সুবলের পুত্রী হিসাবে।


১৭) রুক্মিণী ও দ্রপদী:- রাজা ভীষ্মকের কন্যা হিসেবে রুক্মিণী ও পাঞ্চালরাজ দ্রুপদের কন্যা হিসাবে দ্রোপদী জন্ম নেন। দ্রুপদের কন্যা বলে তার নাম দ্রৌপদী ।


বন্ধুরা আশাকরি এই লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক। 


আরো পড়ুনঃ- অক্ষয় তৃতীয়ার দিন বাড়িতে নিয়ে আসুন - এই দ্রব্যটি | এই দিন কোন খাবার খাওয়া শুভ? CLICK HERE

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা