নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
বন্ধুরা সকল মানুষের ইচ্ছা হয় সে যেন এই পৃথিবীতে অনেক দিন বাঁচতে পারে। এইজন্য মৃত্যুর কথা শুনলেই সবাই ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু একদিন তো সবাইকেই মরতে হবে। কিছু মানুষ দীর্ঘায়ু হয় ও অনেকদিন পর্যন্ত বাঁচে। আবার কিছু মানুষ হঠাৎ করেই এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। অল্প বয়সে যদি কারো মৃত্যু হয় তাহলে তার আত্মীয়-স্বজন, পরিবার-পরিজন রা খুব সহজেই সেটা মেনে নিতে পারে না। এই ধরনের মৃত্যুকে অকালমৃত্যুও বলা হয়ে থাকে। আজকের এই লেখাটিতে আমরা এই বিষয়টিই বোঝার চেষ্টা করব যে, কারো মৃত্যু অল্প আয়ুতে হওয়ার কারণ কি? আর এরকম মানুষ কোন যোনীতে জন্ম নেয়?
চলুন বন্ধুরা শুরু করা যাক আজকের এই প্রস্তুতি। বন্ধুরা গরুর পুরাণে বলা হয়েছে যে মানুষের জীবনের ৭টি চক্র নিশ্চিত। আর যদি কোনো মানুষ এই চক্রটিকে পুরো না করে অর্থাৎ অল্প আয়ুতেই মৃত্যু প্রাপ্ত হয়, তাহলে তাকে মৃত্যুর পরেও অনেক প্রকারের কষ্ট সহ্য করতে হয়। কিন্তু, সবার প্রথমে এটা জানা প্রয়োজন যে, অল্প আয়ুতে মৃত্যু বলতে কী বোঝায়? এর অর্থ কি?
গরুর পুরাণে্র সিংহাবলোকান অধ্যায়ে বলা হয়েছে যদি কোন প্রাণী খিদের জ্বালায় কাতর হয়ে মারা যায় অথবা কোনো হিংসাত্মক প্রাণী দ্বারা তাকে মেরে দেওয়া হয় অথবা বিষ তথা অগ্নির দ্বারা মৃত্যু প্রাপ্ত হয়, যার মৃত্যু জলে ডুবে হয় কিংবা যার মৃত্যু সাপে কাটার ফলে হয় অথবা যার মৃত্যু দুর্ঘটনা কিংবা রোগের জন্য হয়ে যায় - তারাই অকালমৃত্যু প্রাপ্ত হয়। সবমিলিয়ে এটা বলা যায় যদি নির্ধারিত আয়ুর পূর্বেই যদি কোন ব্যক্তির মৃত্যু হয় এই সব কারনের জন্যে তাহলে তা অকালমৃত্যু বলে গণ্য।
গরুর পুরানে ভগবান বিষ্ণু বলেছেন যেই মানুষ অথবা প্রাণীর মৃত্যু প্রাকৃতিক হয় সে ৩, ১০ অথবা ৪০ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় শরীর ধারণ করে নেয়। অল্প আয়ুতে মৃত্যু প্রাপ্তকারী আত্মা নিজের প্রবল ইচ্ছা অর্থাৎ খিদে, তৃষ্ণা, সম্ভোগ সুখ, রাগ-ক্রোধ, দোষ আর লোভ ইত্যাদি পূরণের জন্য অন্ধকারের ছত্রছায়ায় ততক্ষণ পর্যন্ত আবদ্ধ হয়ে ছটফট করে ঘুরতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না তার পরমাত্মা দ্বারা নির্ধারিত জীবনচক্র পূর্ণ না হয়। কিন্তু এখন এখানে এই প্রশ্নটিই ওঠে যে, কোনো প্রাণীর অল্প আয়ুতে মৃত্যু কেন হয়?
তো বন্ধুরা আমি আপনাদেরকে বলে দিই যে, এর বর্ণনাও আমরা গরুর পুরাণে পাই। যা অনুসারে বিধাতা দ্বারা নিশ্চিত করা মৃত্যু প্রাণীর কাছে আসে তখন শীঘ্রই তাকে নিয়ে এই মৃত্যুলোক থেকে চলে যায়। প্রাচীনকাল থেকেই বেঁধে এই কথাটি রয়েছে যে মানুষ ১০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। কিন্তু যে মানুষ খারাপ কর্ম করে সে শীঘ্রই বিনষ্ট হয়ে যায়। যার বেদের জ্ঞান না থাকার কারণে বংশ-পরম্পরার সদাচার পালন করে না, যে অলস হওয়ার দরুন কর্ম পরিত্যাগ করে, যে পরস্ত্রীর প্রতি অনুরক্ত থাকে - এই ধরণেরই অন্যান্য মহাদোষ এর কারণে মানুষের আয়ু ধীরে ধীরে খিন্ন হয়ে পড়ে। যে নিজের কর্ম পরিত্যাগ তথা যে কটি মুখ্য আচরণ রয়েছে তা পরিত্যাগ করে দেয় আর অন্যের কর্মেতে সংলগ্ন থাকে সে নিশ্চিত অল্প আয়ুতে মৃত্যু প্রাপ্ত হয়। আর যে ধর্মবিরুদ্ধ আচরণ করে সেও নিশ্চিত সময়ের পূর্বেই যোমলোক চলে যায়। বন্ধুরা এটা তো হলো অল্প আয়ুতে হওয়া মৃত্যু আর তার ফলে হওয়া কষ্টগুলির কথা।
তো চলুন বন্ধুরা এইবার জেনে নেওয়া যাক অল্প আয়ুতে মৃত্যু হবার পর কোন আত্মা কী যোনীতে ঘুরতে থাকে?
গরুর পুরাণে বলা হয়েছে যে পুরুষ অল্প আয়ুতে মৃত্যু প্রাপ্ত হয় সে ভুত-প্রেত, পিসাচ, কুষ্মাণ্ডা, ব্রহ্মরাক্ষস অথবা বেতাল যোনিতে ঘুরতে থাকে। যখনই কোনো স্ত্রীর অল্প আয়ুতে মৃত্যু হয় সেও এই একই প্রকার ভাবে যোনিতে ঘুরতে থাকে। কিন্তু তাকে আলাদা আলাদা নামে জানা হয়। যেমন কোনো নবজ্যোতি স্ত্রী অথবা প্রসূতা অল্প আয়ুতে মৃত্যু প্রাপ্ত হয় তাহলে সে রাক্ষসী হয়ে যায়। আবার যদি কোন কুমারী কন্যার মৃত্যু অল্প আয়ুতে হয়ে যায় তাহলে তাকে দেবী যোনিতে ঘুরতে হয়।
এই প্রকারের মৃত্যুর পর মৃত আত্মার শান্তি কিভাবে প্রাপ্ত হবে সেই বিষয়েও গরুর পুরাণে কিছু উপায় বলা হয়েছে। যা এই প্রকারে - অল্প আয়ুতে হাওয়া মৃত্যুর পরে মৃত আত্মার শান্তি হেতু তার পরিবার-পরিজনের সদস্যদের নদী অথবা কোনো শুদ্ধ জলে তর্পণ করা উচিত। এর সাথেই মৃত আত্মার ইচ্ছা পুণ্যের জন্য পিন্ডদান, শ্রাদ্ধ শান্তির কাজ অথবা সৎকর্মের মত দানধর্ম অথবা গীতা পাঠ করা উচিত। এই কর্মকাণ্ড গুলিকে কম করে তিন বছর পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে। এর সাথেই মৃত্যুবার্ষিকীতে গরীব দুস্থ মানুষদের, মহাত্মা ব্যক্তিদের আথবা বালকদের ভোজন করানো উচিত। এর কারণ হল যাতে মৃত আত্মা তাড়াতাড়ি মুক্তি পেতে পারে ও তার আত্মার যাতে শান্তি হয়।
দুর্ঘটনা, রোগ অথবা কোনো অন্য প্রকারের অকাল মৃত্যুকে আটকানো মানুষের হাতে নেই। আর এইসব আমাদের পূর্ব জন্মের কর্মের উপরই আধারিত হয়।
বন্ধুরা আশাকরি এই লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুনঃ- গরুর পুরাণ অনুযায়ী কিছু মহিলারা অল্প বয়সে বিধবা হয়ে যায় কেন? | Why Young Women become Widows? CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা