নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
বন্ধুরা বলা হয়ে থাকে মানুষ যদি তার জীবনের ধ্বংসের বা পতনের কারণ জানতে পারে তাহলে সে তার জীবন সুখের বানিয়ে তুলতে পারে। 5 হাজার বছর পূর্বে শ্রীকৃষ্ণ দ্বারা বলা এই কারণগুলোর জন্যই আজ এই দুনিয়া ভরে অধিকতর অপরাধী হয়তো জেলে বন্দি রয়েছে আর না হলে কোথাও লুকিয়ে পালিয়ে বেঁচে রয়েছে। বন্ধুরা আজকে আমরা একটি কথার মাধ্যমে ভগবান কৃষ্ণ দ্বারা বলা সেই 3টি কারণ সম্পর্কে জানাতে চলেছি, যার ফলে মানুষ ধ্বংসের পথে এগিয়ে যায়।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাতে বর্ণিত এই কথা অনুসারে - প্রাচীনকালে এক রাজ পরিবারে এক শিশু বালকের জন্ম হলো। সেই বালকটিকে খুবই অল্প বয়সে রাজ পরিবারের সুখ থেকে বঞ্চিত করে গুরুকুলে পাঠিয়ে দেয়া হলো শিক্ষা গ্রহণের জন্য। যেই গুরুকুলে ওই বালকটি নিজের শিক্ষাপ্রাপ্ত করছিল সেখানে সবথেকে ভালো ও বুদ্ধিমান বিদ্যার্থী হয়ে উঠেছিল সেই বালকটি। গুরুকুলে সেই বালকটি সকল হিন্দু বেদ, পুরাণ - অধ্যায়ন করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই বালকটির গুরুকুল শিক্ষা সমাপ্ত হওয়ার পূর্বেই সেই বালকটির মাতা-পিতা ও সকল ভাই-বোন এক প্রাকৃতিক বিপদের সম্মুখীন হয়ে মারা যান। মাতা-পিতা ও নিজের সকল ভাই-বোনকে হারানোর পর সেই বালকটি সাংসারিক মোহমায়া থেকে বিরক্ত হয়ে যায়। আর গুরুকুল থেকে শিক্ষা পূর্ণ করার পর সেই বালকটির ঠিক করে যে, সে তার সম্পূর্ণ জীবন মানুষদের বিপদে পাশে দাঁড়াতে ও মানুষদের ভালো কাজ করতে মগ্ন থাকবে। তারপর সেই বালকটি সন্ন্যাসী হয়ে যায়। আর সে সাংসারিক মোহমায়া থেকে নিজেকে দূর করে হিমালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তারপর সে সেখানে অনেক লম্বা সময় ধরে তপস্যা করে। তার তপস্যা শেষ হওয়ার পর সেই সন্ন্যাসী অন্যান্য মানুষদেরকে শিক্ষা দেওয়া শুরু করে। সময়ের সাথে সাথে সেই সন্ন্যাসীর চর্চা চারিদিকে হতে থাকলো। দূর দূর থেকে মানুষেরা তার কাছে শিক্ষা নিতে ও নিজেদের সমস্যা সমাধান করতে আসতে লাগলো। সন্ন্যাসী টি খুবই সহজ সরলভাবে মানুষের সমস্যাকে মিটিয়ে দিতেন। যার ফলে সে কিছু সময়ের মধ্যেই পুরো রাজ্যে খ্যাতিনামা অর্জন করে। দুর্ভাগ্যবশত সেই সময় সেই রাজ্যের রাজা একজন কুর ব্যাক্তি ছিলেন। সেই রাজাটি যখন সন্ন্যাসী সম্পর্কে জানতে পারলেন তখন সে সন্ন্যাসীর সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা করলেন। আর পরের দিন সকালে সে রাজমহল থেকে বেরিয়ে সেই সন্ন্যাসীর কুঠিতে গিয়ে হাজির হল। রাজা সেখানে পৌঁছানোর পর সেই সন্ন্যাসীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে, যার পরেই এক চমৎকার হয়। ওই রাজা প্রথম দেখাতেই সন্ন্যাসীর কথায় এত প্রসন্ন হয় যে, রাজা সেই মুহূর্ত থেকেই ভালোর পথে চলার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর রাজা নিজেই আপন মনে ভাবতে লাগল যে, একটি ছোট আলাপ-আলোচনায় এই সন্ন্যাসী আমাকে এতটা পরিবর্তন করে দিতে পারলো! তাহলে এই সন্ন্যাসী যদি সারা জীবনই আমার সঙ্গে থাকে তাহলে তো আমার পুরো জীবনটাই বদলে যাবে। এরপর সেই রাজা সন্ন্যাসীকে নিজের সঙ্গে রাজমহলে যাওয়ার অনুরোধ জানায়। রাজার করুণভাবে বলার ফলে সন্ন্যাসী তাকে না করতে পারলো না। আর সে রাজমহল যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেল। এরপর রাজা সন্ন্যাসী কে নিয়ে রাজমহল যেতে লাগলো। রাজমহল যাওয়ার পর রাজা সন্ন্যাসীর খুব আদর যত্ন করল। এরপর রাজা সন্ন্যাসীকে শাহী কক্ষে ভোজন করান। ভোজনের পর সন্ন্যাসী - রাজাকে ধন্যবাদ জানায় এবং রাজার কাছ থেকে ফিরে যাওয়ার আজ্ঞা চাইল। তখন রাজা সন্ন্যাসী কে বলল আপনি আমাদের বাগিচাতে যতক্ষণ ইচ্ছে থাকতে পারেন। আপনার এখানে কোনো প্রকার অসুবিধা হবে না। এটা শোনার পর সন্ন্যাসী রাজার প্রস্তাব স্বীকার করে নিল। রাজা তার সেবকদের বললেন বাগিচাতে সন্ন্যাসী মহারাজের থাকার ব্যবস্থা করো। তার যা যা প্রয়োজন- অন্ন, বস্ত্র এবং অন্যান্য সকল জিনিসের ব্যবস্থা করো। এরপর রাজার আজ্ঞা অনুযায়ী সেবকরা বাগিচাতে সুন্দর একটি কুঠি নির্মাণ করে দিলেন। তারপর সেই সন্ন্যাসী অনেক বছর পর্যন্ত সেই কুঠিতে থাকেন। আর সেই সময়ে রাজাও তার অনেক সেবা করেছিলেন। কিন্তু, একদিন একটি বিশেষ কাজে রানী এবং রাজাকে অন্য রাজ্যে যেতে হয়। তারা যাওয়ার আগে একজন সেবক কে সন্ন্যাসীর সেবা-যত্ন করার জন্য নিযুক্ত করে দিয়ে যান। কিন্তু সেই সেবক রাজা যাওয়ার পরই অসুস্থ হয়ে যায় এবং সে নিজের বাড়ি চলে যায়। সে আর ফিরে আসে না। এরকম সময় সন্ন্যাসী কে ভজন দেওয়ার কোনো লোকই সেখানে থাকে না। অন্যদিকে কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর যখন রাজা তার রাজ্যে পুনরায় ফিরে আসেন, তখন সন্ন্যাসী সেই রাজার উপর খুবই রেগে যায়। সেই সন্ন্যাসী রাজা কে বলেন-
" হে রাজন ! যেই দায়িত্ব তুমি পালন করতে পারবে না, তা নেওয়ার দরকারই-বা কী ছিল ? "
তখন রাজা সন্ন্যাস এর কাছে ক্ষমা চাইতে যেতে বলেন -
" হে কৃপাময় ! যদি আমার কোনো ভুল হয়ে থাকে তাহলে আমি তার জন্য আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি । আমাকে ক্ষমা করে দিন। "
এই ঘটনার কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে সবকিছু শান্ত হলো। রানীও এইসব কিছু চুপিচুপি দেখলেন, কিন্তু শান্ত রইলেন। এরপর রাজা সেই সন্ন্যাসীকে আর দ্বিতীয় কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে দেয়নি। রাজা সেই সন্ন্যাসীর অনেক সেবা-যত্ন করে। কিন্তু কিছুদিন পর আবারও রাজাকে একটি আবশ্যক কাজের জন্য বাইরে যেতে হয়। কিন্তু, এইবার রাজা তার রাজ্য ছেড়ে বাইরে যাওয়ার আগে রানীকে নির্দেশ দেন যে - যতদিন পর্যন্ত আমি ফিরে না আসি ততদিন পর্যন্ত আপনি সন্ন্যাসীর সেবা যত্নের উপর পুরো নজর রাখবেন। এরপর রানী প্রতিদিন ঠিক সময়ে ভোজন তৈরি করে সন্ন্যাসীর কাছে পাঠিয়ে দিতেন নিয়মিত। কিন্তু, একদিন রানী স্নান করতে যাওয়ার কারণে সন্ন্যাসীকে ভোজন দিতে ভুলে যান। সন্ন্যাসী অনেকক্ষণ পর্যন্ত ভজন আসার জন্য অপেক্ষা করেন, কিন্তু তা সত্বেও ভোজন যখন না আসে তখন সন্ন্যাসী গভীর চিন্তায় পড়ে যান। তখন সন্ন্যাসী সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি নিজেই মহলের ভিতরে গিয়ে দেখবেন। এরপর সে মহলে গিয়ে পৌঁছায়। সেখানে যাওয়ার পর তার নজর রানীর উপর পড়ে। সন্ন্যাসী রানীর রূপ দেখে খুবই মুগ্ধ হয়ে যায়। রানী সুন্দরতা সন্ন্যাসীর মনে বসে যায়। সন্ন্যাসী রানীর সুন্দরতাকে একদমই ভুলতে পারে না। আর সে খাওয়া-দাওয়া বাদ দিয়ে নিজের কুঠিতে পড়ে থাকত। সন্ন্যাসী অনেকদিন পর্যন্ত কিছুই খান না। যার ফলে সে খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে। কিছুদিন পর রাজা আবার ফিরে আসেন। আসার পর যখন রাজা সন্ন্যাসীর কথা জানতে পারেন তখন সে সোজা সন্ন্যাসীর কাছে দেখা করতে চলে যান। তখন সে সন্ন্যাসীকে বলেন -
" আপনি খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছেন। আর কি এমন গভীর চিন্তায় ডুবে রয়েছেন ! আমার দিক থেকে আবারও কি কোনো ভুল হয়ে গেছে ? "
তখন সন্ন্যাসী রাজা কে বললেন -
" হে রাজন ! আমি আপনার রানীর অদ্ভুত সুন্দরতায় মুগ্ধ হয়ে গিছে। আর রানীকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না। "
এই কথা শোনার পর রাজা সন্ন্যাসী কে বললেন - " আপনি আমার সঙ্গে মহলে চলুন। আমি আপনার কাছে, রানীকে দিয়ে দেব। "
এরপর রাজা সন্ন্যাসী কে নিয়ে মহলে চলে যান। সৌভাগ্যবশত সেই দিন রানী তার সবথেকে সুন্দর বস্ত্র ও গহনা পরা ছিলেন। এরপর রাজা রানীর কাছে গিয়ে হাজির হলেন এবং তাকে বললেন -
" আপনার সন্ন্যাসী বাবাকে সাহায্য করা উচিত। তিনি খুবই দুর্বল হয়ে। আমি এটা কখনোই চাইনা যে কোন জ্ঞানী পুরুষের মৃত্যুর কলঙ্ক আমার উপর লাগুক। এরপর রাজা রানী কে জিজ্ঞাসা করে আপনি কি এই পাপের ভাগি নিতে চান ? "
তখন রানী জিজ্ঞাসা করল- সন্ন্যাসীর এই দুঃখের কারণ কি? তখন রাজা বলল- সন্ন্যাসী আপনার অদ্ভুত সুন্দরতায় মুগ্ধ হয়ে গেছেন। এই শুনে রানী রাজা কে বলল- আপনি চিন্তা করবেন না, আমি জানি আমাকে কি করতে হবে ! যাতে করে না আপনার মাথায় কোনো সন্ন্যাসীর হত্যার কলঙ্ক লাগবে, আর না আমার পতিব্রত ধর্মনাশ হবে। এরপর রাজা, রানীকে সন্ন্যাসীর কাছে সপে দেন। এরপর সন্ন্যাসী রানীকে নিয়ে তার কুঠিতে পৌঁছালেন। তখন রানী, সন্ন্যাসীকে বললেন- আমাদের থাকার জন্য ঘর প্রয়োজন। এই শুনে সন্ন্যাসী দ্রুত রাজার কাছে গেল এবং তাকে বলল- হে রাজন ! আমাদের থাকার জন্য ঘর প্রয়োজন। রাজা তাদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করে দিল। সন্ন্যাসী রানীকে নিয়ে সেই ঘরে যখন পৌঁছালেন তখন রাণী বলল- ঘর তো খুবই নোংরা, আর এর হাল তো খুবই খারাপ। সন্ন্যাসী পুনরায রাজার কাছে যান এবং রাজা কে বলেন - হে রাজন ! তুমি আমাকে যেই ঘরটি দিয়েছো তার হাল খুবই খারাপ। তখন রাজা নিজে দায়িত্ব নিয়ে সেই ঘরের সবকিছু ঠিকঠাক করিয়ে দেন। এরপর রানী স্নান করে বিছানায় যায় বিশ্রামের জন্য, আর তখন সেই সন্ন্যাসীও সেখানে গিয়ে হাজির হয়। এরপর রানী সেই সন্ন্যাসীকে জিজ্ঞাসা করলেন - " আপনি কি জানেন আপনি কে ছিলেন, আর এখন আপনি কি হয়ে গেছেন ? " - আপনি একজন মহান সন্ন্যাসী ছিলেন। যার জন্য স্বয়ং রাজাও সকল প্রয়োজনীয় বস্তু উপলব্ধ করিয়ে দিতেন। আর আজ, আপনি বাসোনার জন্য আমার গোলামে পরিবর্তিত হয়েছেন।
এই শোনার পর সন্ন্যাসীর উপলব্ধি হলো সে তো একজন মহান সন্ন্যাসী ছিল। যে নিজের জীবনের সকল সুখ-সুবিধা ত্যাগ করে শান্তির জন্য হিমালয়ে গিয়ে তপস্যা করেছিল। তখন সন্ন্যাসী খুব জোরে জোরে চিৎকার করতে লাগলো। আর রানী কে বলল - আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি এখনই আপনাকে রাজার কাছে গিয়ে সঁপে আসছি। তখন রানী প্রশ্ন করল- যখন ওই দিন আপনি ভোজন পাননি আপনি তখন খুবি ক্রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন আমি তখনই আপনার এই রূপটি প্রথমবার দেখেছিলাম। তখন থেকেই আমি আপনার ব্যবহারে পরিবর্তন অনুভব করেছিলাম।
তখন সন্ন্যাসী রানী কে বোঝালো - যখন আমি হিমালয়ের উদ্দেশ্যে তপস্যা করতে গিয়েছিলাম তখন আমি সময়তে ভোজনও পাইনি। কিন্তু, মহলে আসার পর আমি অনেক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে থাকি, আর আমি এগুলোর মোহতে জড়িত হয়ে যাই। আমার এসবের প্রতি ধীরে ধীরে লোভ জন্মাতে শুরু হয়। আর যখন আমি এগুলো পাইনি তখন আমার ক্রোধ উৎপন্ন হয়েছিল। সন্ন্যাসী রানীকে আরো বলল- যদি ইচ্ছা পূর্ণ না হয় তাহলে ক্রোধের উৎপত্তি হয়। আর যদি ইচ্ছা পূর্ণ হয় তাহলে সেটার লোভ হয়ে যায়। তখন সন্ন্যাসী রানী কে বলল এই ইচ্ছার পূর্তি বা পূর্ণি আমাকে বাসনার দুয়ারে আমাকে ঠেলে দেয়, আর আমি আপনার প্রতি আকর্ষিত হই। এরপর সন্ন্যাসী বুঝতে পারেন যে তাকে পুনরায় জঙ্গলে ফিরে যাওয়া উচিত। আর তিনি সেটাই করেন।
বন্ধুরা গীতায় শ্রীকৃষ্ণ নরকের তিনটি দুয়ার সম্পর্কে বলেছেন। আর এই তিনটি দুয়ার হলো - কাম, ক্রোধ এবং লোভ।
তো বন্ধুরা আশাকরি এই লেখাটি পড়ে আপনার সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আজ এখানেই শেষ করলাম। নমস্কার, ধন্যবাদ।। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।।
আরো পড়ুনঃ- মৃত্যুর ১ ঘন্টা মধ্যে আত্মার সঙ্গে কি হয়? || What happens to Soul immediately after Death? CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা