Breaking

Search Content

Follow Us

মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০২২

শ্রীকৃষ্ণ অনুসারে, ক্রোধ বা রাগ কি‌? কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়? || কেনই বা মানুষ রাগ হয়ে থাকে? || Bhagwat Geeta : How to handle Anger?



 নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু। 


বন্ধুরা, আমাদের মানুষদের প্রকৃতি হল যখন কেউ আমাদের প্রশংসা করে তখন আমরা খুবই মুগ্ধ হই।আর সেখানে যদি কেউ আমাদের কে নিয়ে খারাপ কিছু বলে তখন আমরা খুবই রেগে যাই। আর সামনে উপস্থিত ব্যক্তিকে কোনো কিছু না ভেবেই ভালো খারাপ বলে দিই। যার কারণ হলো আমাদের - রাগ। আমরা মানুষেরা রাগের বসে বিভিন্ন রকমের ভুল কাজ করে থাকি। কিন্তু, এটাই বুঝতে পারি না যে রাগ হলো আমাদের সব থেকে বড় শত্রু। রাগই হল যা ভাইকে ভাইয়ের থেকে, পিতা কে পুত্রের থেকে আর স্বামী স্ত্রীকে আলাদা করে দেয়। অতএব এটা বলা যায় রাগই হলো মানুষের দ্বারা করা সমস্ত অপরাধের মূল কারণ। বন্ধুরা, রাগ আর প্রাকৃতিক বিপর্যয় (যেমন - ঘূর্ণিঝড়) দুটোই সমান হয়ে থাকে। শান্ত হওয়ার পরেই মানুষ বুঝতে পারে যে কতটা ক্ষতি হয়েছে। এই কারণে ভগবদ্গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, রাগকে নরকের দরজা বলেছেন।


বন্ধুরা আজকের এই লেখাটিতে আপনাদের জানাবো যে রাগ কি? আর ভগবদ্গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য কি কি উপায়ে বলেছেন? 


ভগবত গীতার দ্বিতীয় অধ্যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন, রাগ মানুষের সেই ভাবনা, যা তার সমস্ত জীবন সংকটে ঘিরে রাখে। যে মানুষ কথায় কথায় রেগে যায় সে তার সম্পূর্ণ জীবনে না ভালো কোনো কাজ করতে পারে আর না সুখী হতে পারে। কারণ রাগী মানুষ না বয়সের মর্যাদা বোঝে আর না জ্ঞানের ভাষা বোঝে। এরকম মানুষের মধ্যে কখন কোথায় আর কি কারনে রাগ জন্ম নেয় তা কেউ বলতে পারেনা। মানুষের মধ্যে যখন রাগের জন্ম নেয় তারা তখনই কোনো কিছু বিচার করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, অন্ধকারের পর্দা ছড়িয়ে যায়।‌‌ এরকম পরিস্থিতিতে অনেক বছরের সম্পর্ক কিছু সময়ে ভেঙে যায়, আর সম্পূর্ণ জীবন নষ্ট হয়ে যায়। আর এর থেকেও বড় আফসোসের কথা হল - বেশিরভাগ মানুষ রাগের জন্য হওয়া ক্ষতির ব্যাপারে জেনেও রাগের সময় আসলে রাগের ওপর‌ একদমই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তারা বারে বারে রাগ না করার শপথ নেয়, কিন্তু যখন তার কোনো ইচ্ছা পূরণ না হয় অথবা কোনো ব্যক্তি কোনো কাজে তার থেকে আগে বেরিয়ে যায় তাহলে তখন সে রেগে যায়। 


বন্ধুরা এখন এটাই প্রশ্ন ওঠে যে বাস্তবে রাগ আসলে কি? আর তা কেন জন্ম নেয় আর মানুষ রাগের ওপর কেন সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ থাকেনা? 


বন্ধুরা তাহলে চলুন আপনাদের একটি উদাহরণের সাহায্য তা বোঝাই। আপনারা হয়তো দেখেছেন যে কোনো একটি ছোট শিশু বা বালক যখন কোনো বস্তুর চাহিদা হয় আর সেই সময় যদি সেটা সে না পায় আর কেউ তাকে সেটা না দিলে তাহলে সে প্রতিক্রিয়া দেয়। বালকটির প্রতিক্রিয়া হল - রাগ ও রাগে কান্না‌ করা। কারণ বালকটি হল দুর্বল এবং অসহায়। বালকটি তার থেকে বড়দের তার কথা বোঝানোর চেষ্টা করে। এরকম ভাবে যখন মানুষ বড় হয়ে যায় তখন তার মনে কিছু পাওয়ার ইচ্ছা থেকে যায়, আর সেই সময় যদি সে তা না পায় তাহলে যখন সে রাগের বসে এসে যায় এবং তারপর তার ভাবনা চিন্তা করার সমস্ত শক্তি হারিয়ে যায়। আর তখন সে এমন কিছু কাজ করে ফেলে যা সে শান্ত মনে করতে পারত না। অর্থাৎ রাগ কেবল কোনো ছোট বাচ্চার ব্যবহারের বৈশিষ্ট্য নয়। 


এছাড়া মানুষের যখন অহংকারে আঘাত লাগে এবং যখন মানুষ কাউকে ভয় পায় অথবা যখন কোনো বস্তু সে না পায় তখন মানুষ রেগে যায় - ঠিক এই বালকটির মতনই। তবু আমরা বালকের মতো রাগ করা বন্ধ করি না।


মানুষ তার অনুভবের সাহায্যে জানে যে, রাগের সাহায্যে কখনো কিছু পাওয়া যায় না, তা সম্মান হোক - কি সম্পত্তি হোক, কি প্রেম অথবা তা সুরক্ষাই হোক - রাগ দিয়ে তা পাওয়া যায় না। বরং এগুলো পাওয়া যায় প্রচেষ্টায় করলে, বুদ্ধিপূর্বক বিচার করলে। তাও মানুষ কোনো ছোট কারণেও রাগ করে। অর্থাৎ ক্রোধ বা রাগ বাস্তবে কিছুই নয়, আমাদের বাচ্চা বুদ্ধির নামই হল রাগ। যখন আমরা এটা মনে রাখবো যে আমরা বাচ্চা নই, বাচ্চাদের মতো ব্যবহার আমাদের মানায় না - তখনই রাগ স্বয়ং বন্ধ হয়ে যায়।


এরপর ভগবদ্গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ বলেন যে, মানুষের উচিত যখন জীবনে প্রথমবার মানুষের রাগ আসে, আর যখন তার রাগ শান্ত হয়ে যায় তখন মানুষের উচিত রাগের থেকে হওয়া ক্ষতির একটি সূচি তৈরি করা। এরপর যখন তার এরকম অনুভব হয় যে, সে আবার রাগের বসে চলে যাচ্ছে তখন তার উচিত সেই সূচি মনোযোগ দিয়ে পড়া যার ফলে সে রাগ হওয়া থেকে সহজেই বেঁচে যাবে।


এছাড়া ভগবদ্গীতার তৃতীয় অধ্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ বলেন যে, যখন কোনো মানুষ কোনো বস্তু বা ব্যক্তির বিষয়ে ইচ্ছা প্রকাশ করে, আর যখন তার সেই ইচ্ছা পূরণ না হয় তখন সে রেগে যায়। এছাড়া কোনো মানুষ যদি কর্মের অনুরূপ ফল না পায় তাহলে সেই পরিস্থিতিতেও রাগ উৎপন্ন হয়। এই কারণে শ্রীকৃষ্ণ ভগবদ্গীতায় বলেন মানুষকে প্রতিনিয়ত তার কর্ম করা উচিত, ফলের চিন্তা করা উচিত নয়। 


তার সাথে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এও বলেন যে, রাগের একটি প্রমুখ কারণ হল মানুষের দ্বারা গ্রহণ করা ভোজন। যে মানুষ নিরামিষ খাবার ভোজন করে সে কখনো রাগী হতে পারে না। আর যেখানে যেসব মানুষ আমিষ আহার ভোজন করে তার ওপর রাগ তাড়াতাড়ি বাসা বেধে ফেলে। অর্থাৎ মানুষের উচিত ক্রোধরুপি অন্ধকার থেকে বাঁচার জন্য ভেবেচিন্তে কথা বলা আর কর্ম করা, সাথে সে যে কাজ করতে যাচ্ছে তার পরিণামের বিষয়ে প্রথমেই ভালোমতো ভেবে নেওয়া উচিত। তবে বন্ধুরা আশা করি আপনাদের ভগবদ্গীতার এই জ্ঞান ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে আপনজনদের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। 


আজ এখানেই শেষ করলাম। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।


আরো পরুন:- ৭ টি এমন সংকেত - যা বলে দেয় ভগবান আপনার সঙ্গেই আছেন || ভগবানের সংকেত CLICK HERE



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা