নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
" ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় ।
জয় শ্রীকৃষ্ণ, রাধে রাধে।। "
বন্ধুরা শাস্ত্রে বলা হয়েছে ভগবান ভক্ত, অভক্ত নির্বিশেষে সকলকে অনুগ্রহ করবার জন্য গোলকধধাম থেকে ভূলোকে সময়ে সময়ে এসে লীলা করেন। বন্ধুরা ভগবানের এই দিব্যিও লীলারই একটি অন্যতম অঙ্গ পবিত্র ঝুলন যাত্রা। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অষ্ট লীলার মধ্যে একটি অন্যতম দিব্য লীলা হল এই ঝুলন যাত্রা। বলা হয় এই ঝুলন যাত্রার সময় কালে ভগবান স্বয়ং গোলকধাম থেকে ভূলোকে অবতীর্ণ হন। বন্ধুরা এই কারণে এই ঝুলন যাত্রার সময় কাল আমাদের কাছে একটি অন্যতম সময় কাল।
এই পবিত্র ঝুলনযাত্রা চলাকালীন আমাদের কোন কাজ করা উচিত ? এই বছর অর্থাৎ 1429 বঙ্গাব্দে (2022 সালে) এই ঝুলন যাত্রা কখন এবং কবে পড়েছে? এই ঝুলন যাত্রার মাহাত্ম্য কি? - এই সকল বিষয়ে আজকের এই বিশেষ লেখাটিতে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করব।
|| ঝুলন যাত্রার শুভ সময়সূচীঃ-
বন্ধুরা প্রত্যেক বছর শ্রাবণ মাসের অমাবস্যার পরের একাদশী থেকে আরম্ভ হয় এই ঝুলন যাত্রা। যা চলে শ্রাবণী পূর্ণিমা তথা ঝুলন পূর্ণিমা পর্যন্ত। এটি মূলত পাঁচ দিন ধরে চলে। ২০২২ সালে অর্থাৎ ১৪২৯ বঙ্গাব্দে এই পবিত্র ঝুলন যাত্রা আরম্ভ হচ্ছে - আগামী ২২ শে শ্রাবণ/ ৮ ই আগস্ট, সোমবার দিন সকাল ৯ঃ৩৩ থেকে ; যা চলবে ২৬ শে শ্রাবণ/ ১২ ই আগস্ট, শুক্রবার দিন সকাল ৭ঃ৩৭ পর্যন্ত, অর্থাৎ এই শুক্রবার দিনে শ্রাবণী তথা রাখি পূর্ণিমার সমাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে এই পবিত্র ঝুলন যাত্রার সমাপ্তি হবে।
• ঝুলন যাত্রার মাহাত্ম্যঃ-
(এই সময় করণীয় কাজ)
বন্ধুরা শাস্ত্র অনুসারে এই পাঁচ দিন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল। শাস্ত্র বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের যে দ্বাদশ যাত্রার কথা শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে তার মধ্যে একটি অন্যতম যাত্রা হল - ঝুলন যাত্রা উৎসব। তাই নানা দিক থেকে এই পাঁচটি দিন আমাদের কাছে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়ে থাকে এই পবিত্র ঝুলন যাত্রা সময় কালে রাধাকৃষ্ণকে যদি সন্তুষ্ট করা যায় তাহলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীরাধা রানীর আশীর্বাদে ভক্তের সকল মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়। আর সেই কারণেই এই সময় ঘরে ঘরে রাধা কৃষ্ণ যুগল মূর্তির পূজা করা হয়। আর ছোট ছোট বাচ্চারা নানান ধরনের মাটির পুতুল, দোলনা, গাছপালা নিয়ে ঝুলন সাজানোর আকর্ষণীয় খেলায় মেতে ওঠে। বন্ধুরা এই পবিত্র সময়কাল সমস্ত দিক থেকেই শুভ হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। তাই যেকোনো শুভ কাজ এই পবিত্র সময় কালে আপনি করতে পারেন। তার শুভ ফল আপনি অবশ্যই পাবেন।
বন্ধুরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যদি আপনার আরাধ্য দেবতা হয়, আপনি যদি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত হন তাহলে এই সমস্ত কাজগুলোর মধ্যে থেকে অবশ্যই অন্তত একটি হলেও এই পবিত্র সময় অবশ্যই করার চেষ্টা করুন। বন্ধুরা আমরা প্রত্যেকেই জানি এই সময়কালে শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধার প্রেমের পূণ্য বিকাশ হয়েছিল। বৃন্দাবনে রাধা এবং কৃষ্ণের প্রেম লীলা কে কেন্দ্র করে দ্বাপর যুগে এই ঝুলন উৎসবের সূচনা হয়েছিল। 'ঝুলন' শব্দটির অর্থ হলো দোলনা। যে কারণেই এই সময়কালে শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রী রাধার যুগল মূর্তি একত্রে দোলনায় স্থাপন করা হয়ে থাকে। তাই এই সময়কালে অন্তত একটি দিনের জন্য হলেও শ্রী রাধা-কৃষ্ণের যুগল মূর্তিকে যদি আপনি দোলনায় বসাতে পারেন বা দোলনায় বসা রাধা কৃষ্ণের যুগল মূর্তিকে যদি আপনি ভক্তি ভরে নিজের হাত দিয়ে দোলাতে পারেন তাহলে এই সময়ে তা পরম্পূর্ণের কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। এই পাঁচ দিনের মধ্যে অন্তত একটি দিনের জন্য হলেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীরাধার যুগল মূর্তির পূজা করুন। পূজার সময় অবশ্যই হলুদ বস্ত্র ধারণ করুন। সাথে হলুদ রঙের ফুল এবং হলুদ রঙের যে কোনো প্রকারের ফল অতি অবশ্যই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রী রাধা কে অর্পণ করুন। কারণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অত্যন্ত পছন্দের রং হলো - হলুদ রং। আর হ্যাঁ, এই পূজার সময় সামান্য মিষ্টান্ন জাতীয় দ্রব্য কখনোই দিতে যেন ভুলবেন না।
বন্ধুরা তৃতীয় যে বিষয়টির কথা বলবে সেটি সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেই এ কথা জানিয়েছেন যে যদি কোনো ভক্ত তার জন্য এই কাজটি করে থাকেন তাহলে তিনি সব থেকে বেশি প্রসন্ন হন। আর তাহলে পবিত্র গীতা পাঠ করা। হ্যাঁ বন্ধুরা, এই পবিত্র দিনে যদি আপনি একটি দিনের জন্য হলেও গীতা পাঠ করতে পারেন সেটি সব থেকে পুন্যের কাজ হিসেবে গণ্য। তবে এক্ষেত্রে বলে রাখা প্রয়োজন শুধুমাত্র গীতা পাঠ করলেই হবে না, গীতার অর্থ বোঝা প্রয়োজন। বন্ধুরা এই পবিত্র দিনে অন্তত একটি বারের জন্য হলেও গীতা পাঠ করুন, দেখবেন মন আনন্দে ভরে যাবে। গীতা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিশেষ লেখা আমাদের এই ওয়েবসাইটে দেওয়া রয়েছে যদি প্রয়োজন বোধ করেন তা দেখে নিতে পারেন।
বন্ধুরা সর্বশেষ যে কথাটি বলবো তা হল এই ঝুলন যাত্র পাঁচ দিন যেকোনো জায়গায় ঝুলন উৎসব উপলক্ষে আপনার দান পরমদান হিসেবে গণ্য হবে। আপনি এরই সাথে কোন গরীব দুঃখী মানুষকেও কিছু দান করতে পারেন। তাই এই সময়ে কোন মানুষকে খালি হাতে ফেরানো কখনোই উচিত নয়।
বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন এবং 2022 ঝুলন যাত্রা সময়সূচী ও তার মাহাত্ম্য সম্পর্কে বুঝতে সক্ষম হয়েছেন। লাগলে আপন জনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন,আজ এখানেই শেষ করলাম। নমস্কার, ধন্যবাদ।। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুন:- ২০২২ জন্মাষ্টমীর শুভ সময়সূচী || বৈষ্ণব ও শাক্ত মতে জন্মাষ্টমী কবে || 2022 - Janmashtami date and time ? CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা