Breaking

Search Content

Follow Us

শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

অন্যান্য যুগের মত কলিযুগে দেওয়া অভিশাপ কেন লাগেনা? || Why is There No Curse in Kaliyuga?

 


নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু। 


বন্ধুরা কলিযুগের সূচনা আজ থেকে প্রায় ৫ হাজার বছর পূর্বে হয়ে গিয়েছে। আর এর অন্ত হতে এখনো লাখ লাখ বর্ষ বাকি রয়েছে। ধর্মগ্রন্থ ও পুরাণ অনুযায়ী চারটি যুগেরই বেশ মাহাত্ম্য রয়েছে। এমনটা বলা হয় যে, কলিযুগে পাপের মাত্রা সবথেকে বেশি হবে। বর্তমানে কলিকাল অর্থাৎ কলিযুগ চলছে। বন্ধুরা আমরা সবাই শুনেছি যে আগেকার দিনের অভিশাপ প্রত্যেকটি কার্যকরী হত। কিন্তু, বর্তমানে কলিযুগে পাপের ভাগ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই কারণে কলিযুগে দেওয়া অভিশাপেরও তেমন প্রভাব পরে না। তো বন্ধুরা এমত অবস্থায় হয়তো আপনি এমনটা ভাবছেন যে, কলিযুগ যখন পাপের মাত্রা চরম সীমায় যাবে তখন হয়তো এই যুগের মানুষদের কোনো অভিশাপ লাগবেনা!  তো বন্ধুরা চলুন আজকে আপনাদের এই বিষয়টির কারণ সম্পর্কে জানাবো যে, কলিকালে অর্থাৎ কলিযুগে দেওয়া অভিশাপ কেন লাগেনা।


বন্ধুরা সত্যযুগে ঋষি মুনিদের কাছে অনেক দিব্য শক্তি ছিল। আর এই শক্তির কোনো খারাপ ব্যবহার তারা কখনোই করতেন না। কারণ তারা জানতেন যে কাউকে যদি তারা কোনো খারাপ অভিশাপ দেন তবে তাকে সেই অভিশাপের ফল ভোগ করতেই হবে। তাদের দেওয়া অভিশাপ এত তীব্র ও প্রভাবিত হতো যে অভিশাপ দেওয়ার সাথে সাথেই সেই অভিশাপ তার প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করতো। সেই সময় শুধুমাত্র ঋষিমুনি-রাই নয় বরং সাধারণ পুন্য জীবাত্মার মানুষদের দেওয়া অভিশাপও ব্যাপক প্রভাব ফেলতো। বন্ধুরা সত্য যুগে ঋষি মুনিরা ও পুণ্য জীবাত্মারা কখনো কোন মানুষের খারাপ চাইত না। তারা সব সময় নিজের তপস্যার মাধ্যমে ভালো কিছু সূচনা করত ও দুষ্টের দমন করত। বন্ধুরা এদের মধ্যে থাকতো দিব্য শক্তি। কিন্তু, বন্ধুরা যদি কোনো ঋষিমুণি অথবা কোনো পুন্য জীবাত্মা নিজের শক্তির খারাপ ব্যবহার করে কিংবা কোনো খারাপ কাজ করে তাহলে তাদের ভেতরে থাকা সেই দিব্য শক্তি ধীরে ধীরে কমে যেত। বন্ধুরা সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর - এই যুগগুলোতে নাতো কখনো পাপ হতো, আর না এই বিষয়টির জন্য কোনো নিয়ম সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু বন্ধুরা তা সত্ত্বেও যখন যখন এই যুগ গুলিতে পাপের সৃষ্টি হয়েছে তখন তখন ভগবান নিজে অবতার ধারণ করে সেই পাপীর বিনাশ করেছেন। বন্ধুরা উদাহরণ হিসেবে আমরা এটি দেখে নিতে পারি যে, ভগবান বিষ্ণু - শ্রী রামের অবতার ধারণ করে এই পৃথিবীতে আতঙ্ক মাচানো রাবণের নাশ করেছিলেন।


অন্যদিকে ভগবদ্গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুন কে বলেন, তিনটি যুগে মানুষেরা তো পাপ করেননি। কিন্তু, কলিযুগে মানুষেরা অনেক পাপ করবে। আর এর থেকে বাঁচার একটি রাস্তাই রয়েছে শ্রী হরির নাম করা। এই যুগে সব থেকে বেশি পাপ হওয়ার কারণে পূর্ণ আত্মা অনেক কম থাকবে এবং পাপী আত্মা এই পৃথিবীতে সব থেকে বেশি বৃদ্ধি পাবে। যে কারণে ওই পাপী আত্মাদের দেওয়া অভিশাপের কোনো প্রভাবই পড়বে না। আর কলিযুগেও যদি কোনো পুন্য আত্মা থেকে থাকে তাহলে তাদের অভিশাপের প্রভাব পড়বে। কিন্তু, তা ধীরে ধীরে। কারণ যেই ব্যক্তি অভিশাপ দিয়েছেন সেও জীবনে কোথাও না কোথাও পাপ করেছে। যার ফলে তার অভিশাপের প্রভাব ধীরে ধীরে পড়বে। বন্ধুরা, আপনাদের বলি যে, কলিযুগে পুণ্য আত্মা পাওয়া খুবই কঠিন। যদি আপনি কখনো কোন পাপ না করে থাকেন, আর আপনি কাউকে অভিশাপ দিয়ে দেন তাহলে তৎক্ষণাৎ সেই অভিশাপের প্রভাব না পরলেও ধীরে ধীরে কিন্তু সেই অভিশাপের প্রভাব অবশ্যই পড়বে। এর জন্য আপনাকে সময়ের অপেক্ষা করতে হবে, আর আপনি নিজেই বুঝতে পেরে যাবেন।


বন্ধুরা ভগবান এখনো আছেন, আগেও ছিলেন, আর আসতে চলা ভবিষ্যতেও থাকবেন। আমাদের কেবলমাত্র ওই পরমাত্মার উপরে ভরসা রাখতে হবে। যেই ব্যক্তিরা ভগবানের উপর ভরসা করেন, সেই ব্যক্তিদের উপর ভগবানের নজর সবসময়ই থাকে। যেই প্রকার ভাবে মানুষের দেওয়া আশীর্বাদ কোনো অন্য ব্যক্তির জন্য শুভ যোগের সৃষ্টি করে, ঠিক সেরকম ভাবেই মানুষের দেয়া অভিশাপও অন্য কোনো ব্যক্তির জন্য অশুভ যোগের সৃষ্টি করে। যেখানে তাকে পাপের ভাগীদার হতে হয়। বন্ধুরা অধর্মের জিৎ কখনোই হয়নি। সেটা নাতো ভূতকালে, আর নাতো বর্তমান কালে। আর ভবিষ্যতেও কখনোই অধর্মের জিৎ হবে না। যদি আপনি অধর্মের সাথ দেন তাহলে আপনি পাপের ভাগীদার হচ্ছেন। কিন্তু, যদি আপনি ধর্মের মার্গে টিকে থাকেন তবে আপনি নিজেই অধর্মীদের অভিশাপ দিয়ে নাশ করতে পারবেন। আর বন্ধুরা সব থেকে বড় ভুল তো তারা করে যারা অভিশাপে বিশ্বাস করেন না। যদি আপনি 'আশীর্বাদ' - এই বিষয়টিকে বিশ্বাস করে থাকেন, তাহলে আপনাকে 'অভিশাপ' কেও বিশ্বাস করা উচিত। তো বন্ধুরা আপনি জানলেন কলিযুগে কেন অভিশাপ লাগে না।


বন্ধুরা এই প্রসঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কিত আরেকটি জিনিস আমাদের ধর্মগ্রন্থ তে লক্ষ্য করা যায়। বন্ধুরা আপনি কি জানেন মহাভারতে এই ধরনেরই লাখ লাখ অভিশাপ দেয়া হয়েছিল। এই অভিশাপ গুলির মধ্যে কিছু কিছু অভিশাপ আজও কলিযুগের মানুষেরা ভোগ করে চলেছে। বন্ধুরা এই অভিশাপ গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অভিশাপ ছিল - 


যুধিষ্ঠিরের নারী জাতিকে দেয়া অভিশাপ - 

মহাভারতের সময় যুধিষ্ঠির সম্পূর্ণ স্ত্রী জাতিকে একটি অভিশাপ দিয়েছিলেন, তো চলুন বন্ধুরা জেনে নেওয়া যাক যুধিষ্ঠির এমনটা কেন করেছিল। আসলে বন্ধুরা কর নিয়ে মৃত্যুর পর পাণ্ডবরা জানতে পেরেছিলেন যে কর্ণ কোনো সুতপুত্র নয়, বরং সে ছিল পাণ্ডবদেরই জ্যৈষ্ঠ ভ্রাতা (বড় ভাই)। এটা জানার পর যুধিষ্ঠির তার মাতা কুন্তী কে বলেন, আপনি এত বড় একটি কথা আমাদের কাছে কেন লুকিয়ে রেখেছিলেন? আপনি তো আমাদেরকে আমাদের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হত্যার পাপে জর্জরিত করলেন ! যুধিষ্ঠির আরো বলেন - আপনি আমাদের কাছে আমাদের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার পরিচয় লুকিয়ে ছিলেন, এই কারণে আমি আজকে সমস্ত নারী জাতিকে অভিশাপ দিয়ে বলছি - আজকের পর থেকে কোনো নারী কোন কথাকে নিজের মনে লুকিয়ে রাখতে পারবেনা। আর বন্ধুরা তারপর থেকেই আজ অব্দি কলিযুগের নারী জাতিরা পর্যন্ত কোনো কথা তার মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখতে পারেনা। 


শৃঙ্গী ঋষির পরিক্ষিৎ - কে দেওয়া অভিশাপ) - 

পৌরাণিকথা অনুযায়ী দ্রৌপদী ও পান্ডবরা স্বর্গলোকের দিকে প্রস্থান করার পর গোটা রাজ্য ভার অভিমন্যুর পুত্র পরীক্ষিৎ-এর হাতে সপে দেওয়া হয়। হস্তিনাপুরের সকল প্রজারা পরীক্ষিৎ-এর শাসনকালে খুবই খুশি ছিল। কিন্তু একদিন রাজা পরীক্ষিত বনে যান, তখন তিনি সেখানে শমীক নামক এক ঋষিকে তার তপস্যায় লীন থাকতে দেখেন। ঋষি তখন মনব্রত পালন করছিলেন। কিন্তু, পরীক্ষিত তা জানতো না। তারপর পরীক্ষিৎ অনেকবার ঋষিকে ডাকেন। কিন্তু, ঋষি কোনো উত্তর দেন না। এই দেখে পরীক্ষিৎ অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন। ভূমিতে পরে থাকা মৃত একটি সর্পকে ধনুকের অগ্রভাগ দিয়ে তুলে তা ঋষির স্কন্ধে স্থাপন করলেন। এই কথা যখন শমীক ঋষির পুত্র ঋষি শৃঙ্গী জানতে পারলেন তখন তিনি রাজা পরীক্ষিৎকে অভিশাপ দিলেন - "যে পাপী আমার তপস্বী পিতার স্কন্ধে মৃত সর্প স্থাপন করেছে সে নিজের আগামী সপ্ত রাত্রির মধ্যে তক্ষক নাগের দ্বারা মৃত্যু প্রাপ্ত হবে।" 


বন্ধুরা এই অভিশাপের ফলে রাজা পরীক্ষিৎ-এর মৃত্যু ঠিক একই প্রকার ভাবে তক্ষক নাগের দংশনের ফলে হয়েছিল। এমনটা মানা হয় যে তারপর থেকে কলিযুগে শুরু হয়। কেননা রাজা পরীক্ষিৎ বেঁচে থাকতে কলিযুগের এত বড় সাহস ছিল না যে, সে মানুষদের উপর নিজের প্রভাব বিস্তার করতে পারে। সেই অভিশাপের কারণেই আজকে আমরা সকলেই এই কলি যুগকে ভোগ করে চলেছি।


তো বন্ধুরা আজকের এই লেখাটি পড়ে আপনি জানতে পারলেন কলিযুগে দেওয়া অভিশাপ কেন তার প্রভাব ফেলে না এবং এরই সাথে এটাও জানলেন যে, দ্বাপর যুগে দেওয়া কোন অভিশাপ গুলির ফল আজও আমরা কলিযুগে ভোগ করে চলেছি। 


আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।


আরো পড়ুন:- গণেশ চতুর্থীর উৎপত্তি হলো কিভাবে? এই সময় শ্রী গনেশজীর বিসর্জন কেন করা হয়? CLICK HERE


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা