Breaking

Search Content

Follow Us

বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২

গয়াতে - কেন পিন্ডদান করা হয়? || গয়ায় গয়াসুর বধের রহস্য || Garud Puran : Why Pind Daan is done in Gaya?




নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু। 


বন্ধুরা আপনারা সকলে বিহারে অবস্থিত গয়া তীর্থস্থান সম্পর্কে তো অবশ্যই শুনেছেন। একে হিন্দু ধর্মে মোক্ষস্থলও বলা হয়ে থাকে। আর এটাই কারণ প্রতিবছর সারা দেশ এবং পৃথিবীর অন্যান্য জায়গা থেকে লাখ লাখ হিন্দু গয়ায় গিয়ে নিজের পরিবারের মৃত ব্যক্তির আত্মার মোক্ষ লাভের জন্য শ্রাদ্ধ, তর্পণ, পিণ্ডদান প্রভৃতি করে থাকে। এমনটা মনে করা হয় গয়া ধামে পিন্ডদান করার ফলে 108কূল ও 7টি পিড়ি পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির আত্মা উদ্ধার হয়ে যায়। গরুড় পুরাণে পূর্বপুরুষের আত্মার মুক্তি কামনার জন্য গয়াকে বিশ্বের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। এমনি তো পুরো বছরই গয়া ধামে পিন্ডদান করা হয়, কিন্তু পিতৃপক্ষ চলাকালীন পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে পিন্ডদান হিন্দু ধর্মে সর্বোচ্চ মহত্বপূর্ণ হিসাবে বলা হয়েছে। 


তো চলুন বন্ধুরা এবার জেনে নেওয়া যাক পিতৃপক্ষ চলাকালীন সময়ে গয়ায় কিভাবে পিন্ডদান করলে পূর্বপুরুষদের আত্মার মুক্তি মেলে। আর কোন অসুরের নাম অনুসারে এই পবিত্র তীর্থ স্থলের নাম 'গয়া' হয়েছিল । বন্ধুরা এই সবকিছুর বর্ণনা আমারা গরুড় পুরণে পেয়ে থাকি।


গরুড় পুরাণের আধার কাণ্ডে বর্ণিত কথা অনুসারে যখন ব্রহ্মাজি এই সৃষ্টির রচনা করছিলেন সেই সময় অসুর কুলে গয়াসুর নামে এক অসুরের রচনা হয়ে যায়। যেহেতু সে কোনো অসুর স্ত্রীর গর্ভ থেকে জন্ম নেয়নি সেই কারণে তার মধ্যে অসুরের মতো কোনো প্রবৃত্তি ছিল না। এই কারণে সে ভাবতে থাকে সে যদি কোনো বড় কাজ না করে তাহলে তার বংশে কেউ তাকে সম্মান করবে না। এটা ভাবতে ভাবতেই সে ভগবান বিষ্ণুর ঘর তপস্যা করতে থাকে। কিছু সময় পরে গয়াসুরের কঠোর তপস্যায় ভগবান বিষ্ণু প্রসন্ন হয়ে তার সামনে এসে প্রকট হন এবং তাকে বরদান চইতে বললেন। তখন গয়াসুর বরদান হিসেবে ভগবান বিষ্ণুর কাছে চান - আপনি আমার শরীরে বাস করুন, যাতে যে কেউ আমাকে দেখলে তার পাপ নষ্ট হয়ে যায় এবং সেই জীব যেন তখনই পূর্ণ আত্মা হয়ে যায় ও তার জন্য স্বর্গলোকে ঠাই মেলে। তার কথা অনুযায়ী ভগবান তাকে সেই বরদান করেন এবং সেখান থেকে অন্তরধ্যান হয়ে যান। এরপর থেকে গয়াসুরকে যে কেউ দেখতো তার সকল পাপ মুছে যেত। এইভাবে ক্রমশ হতে হতে ধীরে ধীরে সৃষ্টির সন্তুলন খারাপ হয়ে যেতে থাকে। এটা দেখার পর সকল দেবগন চিন্তিত হয়ে পড়ে। তারপরে সকল দেবতার একত্রিত হয়ে ভগবান বিষ্ণুর স্মরণে এসে ওই গয়া সুরের বধের দাবি জানান। তখন শ্রী হরি বিষ্ণু দেবতাদের উদ্দেশ্য বলে আপনারা চিন্তা করবেন না; এর অন্ত অবশ্যই হবে। এরপর সকল দেবতারা নিজ নিজ ধামে ফিরে যান। এরপর যখন একদিন গয়াসুর শিবজির পূজার জন্য শিরসমুদ্র থেকে কোমল নিয়ে এসে বিষ্ণু মায়ায় বিমহিত হয়ে কিকট্ দেশে স্মরণ করতে লাগলেন সেই সময়েই সে ভগবান বিষ্ণুর গদার দ্বারা মারা যান। কিন্তু মরার আগে গয়াসুর ভগবান বিষ্ণুর কাছে একটি বিনতি করেছিলেন। গয়াসুর ভগবান বিষ্ণুকে অনুরোধ করেছিলেন- হে নারায়ণ! আমি যেই শিলায় বসে ধ্যান করছিলাম সেখানে আপনি এবং সকল দেবতারা সমেত অপ্রতক্ষ রূপে এই শিলাতেই বিরাজমান থাকবেন এবং এই স্থান মৃত্যুর পরে করা ধার্মিক কার্যাবলী গুলি করার তীর্থস্থান রূপে পরিণত হোক। এ কথা শুনে শ্রী হরি বিষ্ণু বলেন - হে গয়া! ধন্য তুমি। তুমি মরার আগেও অন্যের ভালো সম্পর্কে ভেবেছো এবং মরার সময়তেও মৃত আত্মাদের কল্যাণের জন্য বরদান চাইছো। এরপর ভগবান শ্রী হরি বিষ্ণু তাকে আশীর্বাদ করে বলেন - যেখানে গয়া স্থাপিত হয়েছে সেখানে পূর্বপুরুষদের আত্মার উদ্দেশ্যে শ্রাদ্ধ, তর্পণ ও পিন্ডদান ইত্যাদি করার ফলে মৃত আত্মাদের মুক্তি মিলবে।


গরুড় পুরাণ অনুসারে তারপর থেকেই সেখানে পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে পিন্ডদান হওয়া শুরু হয়। যার মাধ্যমে পূর্বপুরুষেরা জীবন মরণের চক্র থেকে মুক্তি পেতে পারে। আর আজও ভগবান বিষ্ণু মুক্তি দেওয়ার জন্য গদাধর রূপে গয়াতে স্থিত রয়েছেন। এরপর পিতামহ ব্রহ্মা গয়া তীর্থকে শ্রেষ্ঠ জেনে সেখানে ধর্মযজ্ঞ করেন ও হৃত্বিক রুপে আশা ব্রাহ্মণদের পূজা করেন। এরপর পূজা শেষে ধর্মযজ্ঞে দেওয়া বিশাল দান ব্রাহ্মণরা লোভ বসত স্বীকার করে নিয়েছিল। যার ফলে তখন থেকেই সেখানের ব্রাহ্মণদের উপর একটি অভিশাপ লেগে যায় যে - ব্রাহ্মণদের দ্বারা অর্জিত ধন ও বিদ্যা তার পরবর্তী তিন পুরুষ অব্দিও স্থায়ী থাকবে না।


এছাড়াও গুরুড় পুরাণে এটাও বলা হয়েছে যে, যে সমস্ত মানুষ পশুর আক্রমণ দ্বারা মারা যান কিংবা যাদের মৃত্যু সাপে কাটার ফলে হয়, সেই সকল মানুষের পরিবার পরিজনেরা যদি গয়ায় গিয়ে পিন্ডদান করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে সেই মৃত ব্যক্তির আত্মা বন্ধন মুক্ত হয়। বিষ্ণুপর্বত থেকে উত্তর মানষ পর্যন্ত স্থান গয়ার মস্তক বলে মনে করা হয়। একেই আবার ফাল্গু তীর্থও বলা হয়। এখানে পিন্ডদান করার ফলে পূর্বপুরুষদের আত্মার পরম গতিপ্রাপ্ত হয়। আর গয়া গমন মাত্রই ব্যক্তি পিতৃ ঋণ থেকে মুক্তি পায়। গয়ায় ভগবান বিষ্ণু পিতৃদেব রূপে বিরাজমান থাকেন। এখানে প্রিতামহের ব্রহ্মার দর্শন করে ব্যক্তি পাপমুক্ত হয়, আবার অন্যদিকে প্রপিতামহের দর্শন করে অনাময় লোকের প্রাপ্তি করে। ঠিক একই প্রকার ভাবে গদাধর ভগবান বিষ্ণু কে প্রযত্নে প্রণাম করলে তার পুনর্জন্ম হয় না। শুধু তাই নয় যেই মানুষ গয়া তীর্থ করতে যায় তারা পিতৃ ঋন থেকে মুক্ত হয়ে ব্রহ্মাজীর পূজা করে, এই কারণে তারা মৃত্যুর পরে ব্রহ্মলোক লাভ করে। আবার অন্য দিকে প্রভাস তীর্থে প্রভাবশেশ্বর শিবের দর্শন করে তার পূজা করার ফলে মানুষ পরম গতিপ্রাপ্ত হয়।


বন্ধুরা এগুলি ছাড়াও গয়ায় অবস্থিত আরও বেশ কিছু তীর্থ সম্পর্কে গরুড় পুরাণে আলোচনা করা হয়েছে। বন্ধুরা এক্ষেত্রে আপনাদের উদ্দেশ্যে বলে রাখি আপনারা যদি কোন সময় গয়া তীর্থে যান তাহলে পারলে অবশ্যই এগুলি করবেন। গরুর পুরাণ অনুসারে হংস তীর্থস্থানে স্নান করার ফলে মানুষ সকল পাপ থেকে মুক্তি পায়। এছাড়াও রয়েছে - কোটিতীর্থ, গায়লোক, গোমক্ষ তীর্থ প্রভৃতি স্থানে পূর্ব পুরুষের উদ্দেশ্যে শ্রাদ্ধ শান্তির কাজ করলে মানুষ নিজের ২১ কুল পর্যন্ত ব্রহ্ম লোকে নিয়ে যেতে পারে। ব্রহ্মতীর্থ, রাম তীর্থ, অগ্নি তীর্থ, সোম তীর্থ ও রামহাদ তীর্থস্থানে শ্রাদ্ধ করানো মানুষরা নিজের পূর্বপুরুষদের ব্রহ্মলোক প্রাপ্ত করান। এছাড়াও রয়েছে - উত্তর মানষ তীর্থ। এখানে শ্রাদ্ধ করালে পুনর্জন্ম হয় না। ভীষ্ম তর্পণের কার্য যে স্থানে সম্পন্ন হয়েছিল সেই কূটস্থানে শ্রাদ্ধ শান্তির কাজ করিয়েও মানুষ নিজের পিতৃগনদের ভব্ সাগর পার করাতে পারে। ধর্মারন্য তথা মাতংগবাপী তীর্থস্থানে শ্রাদ্ধ শান্তির কাজ করার ফলে আত্মার স্বর্গলোক প্রাপ্ত হয়। প্রেতশিলা তীর্থ স্থানে শ্রাদ্ধ করার ফলে পিতৃগণ পুরোপুরি ভাবে প্রেত ভাব থেকে মুক্তি লাভ করে। এছাড়াও অক্ষয় বট তীর্থস্থানে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে যা কিছুই করানো হোক না কেন তা সবকিছুই অক্ষয় থাকে। গয়া তীর্থস্থানে দিন তথা রাত্রি সবসময়েই শ্রাদ্ধ তথা পিণ্ড দান করানো যাবে। এই কারণেই বন্ধুরা আপনিও যদি আপনার পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনার উদ্দেশ্যে শ্রাদ্ধ অথবা পিন্ডদান করতে চান তাহলে পিতৃপক্ষের সময়কালে গয়া গিয়ে অবশ্যই তর্পণ তথা পিন্ডদান করুন।


আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনি সমৃদ্ধ হয়েছেন এবং গয়া তীর্থস্থানের মাহাত্ম্য সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আজ এখানে শেষ করলাম। 

নমস্কার, ধন্যবাদ।।

ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।


আরো পড়ুন:- কোন ভুলগুলির জন্য নেগেটিভ শক্তির প্রভাব বৃদ্ধি পায় - CLICK HERE

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা