নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
বন্ধুরা আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি তাহলো - ঋষি পতঞ্জলির অষ্টাঙ্গ যোগ সম্পর্কে; কি এই - অষ্টাঙ্গ যোগ?
বন্ধুরা ভারতের একজন বিখ্যাত ঋষি ছিলেন - মহর্ষি পতঞ্জলি। যিনি যোগ শব্দটির গভীরে প্রবেশ করে এর সম্পূর্ণ বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন। তিনি একটি সঠিক এবং প্রমাণিত যোগ দর্শন রচনা করেছিলেন। বন্ধুরা যোগ দর্শন খুবই মহত্বপূর্ণ একটি গ্রন্থ। যেখানে সরল ও সঠিকভাবে যোগেকে ভাষায় নিরূপণ করা হয়েছে। এই কারণেই বন্ধুরা এই যোগ দর্শন প্রত্যেক প্রকার যোগাসাধক ব্যক্তির কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও বন্ধুরা যে সকল ব্যক্তি যোগ ব্যায়ামের ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করতে চান তাদের এই যোগ দর্শন গ্রন্থটি অবশ্যই পড়া উচিত। যার ফলে বন্ধুরা যোগের সঙ্গে সম্পর্কিত সকল ভ্রান্তি দূর হবে।
বন্ধুরা এই যোগ দর্শনকে মহর্ষি পতঞ্জলি চারটি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা - সমাধিপাদ্ , সাধনপাদ্ , বিভূতিপাদ্ , কৈবল্লপাদ্ । বন্ধুরা যোগ দর্শনের দ্বিতীয় ভাগ অর্থাৎ সাধনপাদে্র মধ্যে পড়ে - অষ্টাঙ্গ যোগ। যার ব্যাখ্যা মহর্ষি পতঞ্জলি যোগের ৮টি অঙ্গ দ্বারা করেছেন। অষ্টাঙ্গ যোগ অর্থাৎ যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারনা, ধ্যান ও সমাধি হিসাবে সংজ্ঞায়িত। বন্ধুরা যোগের এই ৮টি অঙ্গের অনুষ্ঠান করা অর্থাৎ আচরণে নিয়ে আসার ফলে নীতির শুদ্ধিকরণ হয় এবং সেই যোগ সাধক প্রজ্ঞার অধিকারী হয়। তার অবিদ্বার আবরণ সরে যায় এবং তার সাথেই তার জ্ঞানের উৎপত্তি হয়।
বন্ধুরা এই অষ্টাঙ্গ যোগের আটটি নিয়ম রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেগুলি সম্পর্কে।
প্রথম ভাগে রয়েছে - (যম):- বন্ধুরা অহিংসা(হিংসা না করা), সত্য(সত্যবাদীতা), অস্ত্রেয়(চুরি না করা), ব্রহ্মচারী(সতীত্ব) ও অপরিগ্রহ (লোভ না করা) এই পাঁচটিকে যম বলা হয়। বন্ধুরা আত্ম-সংযম একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত বৃদ্ধিতে ও ধর্মের রক্ষাতে সাহায্য করে। অহিংসা না করলে কখনো অন্যের সঙ্গে শত্রুতা বাধেনা। এর ফলে ওই ব্যক্তির বাহ্যিক কিংবা সামাজিক জগৎ বন্ধুত্বপূর্ণ নয় হয়ে ওঠে।
দ্বিতীয় ভাগ - (নিয়ম) :- নিয়ম অর্থাৎ অভ্যাস যা পালন করার মাধ্যমে ব্যক্তির ব্যক্তিগত বুদ্ধির সঞ্চার ঘটে। পতঞ্জলি তার যোগ শাস্ত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলতে বলেছেন। যথা-
ক) শৌচ - বিশুদ্ধতা ও শরীরের পরিষ্কারতা।
খ) সন্তোষ - কিছু পরিবর্তনের জন্য নিজেকে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। এরই সঙ্গে রয়েছে তৃপ্তি ও অন্যের গ্রহণযোগ্যতা।
গ) তাপস - তপস্যা করা, শৃঙ্খলা পূর্ণ মনোভাব বজায় রাখা।
ঘ) স্বাধ্যায় - বেদ অধ্যয়ন, আত্ম অধ্যয়ন, আত্ম-প্রতিফলন, নিজের চিন্তা, বক্তৃতা ও কর্মের আত্মদর্শন।
ঘ) ঈশ্বরপ্রণিধান - ঈশ্বরের মনন করা। ঈশ্বর হলেন সর্বোচ্চ সত্তা ও অপরিবর্তনীয় বাস্তবতা।
এর মত পতঞ্জলি প্রত্যেকটি নিয়মের সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেন। বলেন সন্তোষ মানুষকে সেই অবস্থায় নিয়ে যায় যেখানে আনন্দের বাহ্যিক উৎসগুলির জন্য লালসা বন্ধ হয়ে যায়।
তৃতীয় ভাগ - (আসন):- বন্ধুরা পতঞ্জলি তার যোগ দর্শনের গ্রন্থে আসন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার মতে ধ্যানের ভঙ্গি স্থির ও আরামদায়ক হওয়া উচিত। এটি হল যোগসূত্রের একটি অন্যতম মুখ্য বিষয়। আসন একজন মানুষের মধ্যে স্থিরতা আনে। যোগ সূত্রের মধ্যে কোন নির্দিষ্ট আসনের তালিকা নেই। অসীমকে ধ্যানের সঙ্গে প্রচেষ্টার শিথিলতার মাধ্যমে সকল আসন গুলি সময়ের সাথে ধীরে ধীরে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। পতঞ্জলি যোগসূত্র নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তার গ্রন্থে বলেছেন - ধ্যানের জন্য বসার ধরন সঠিক হওয়া প্রয়োজন। আর ধ্যানের সময় বুক, ঘার ও মাথা খাড়া রাখা অর্থাৎ মেরুদন্ড সোজা রাখা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বারোটি আসনের কথা বলতে হয় - পদ্মাসন (পদ্ম), বিরাসন (বীর), ভদ্রাসন (মহিমান্বিত), স্বস্তিকাসন (ভাগ্যবান চিহ্ন), দন্ডাসন (কর্মী), সোপাশ্রয়সন (সমর্থিত), পর্যঙ্কাসন (শয্যাশালা), ক্রৌঞ্চ-নিষাদাসন (বসা বগলা), হস্তানিশাদসনাসন (বসা) উষ্ট্রনিষাদসন (উপবিষ্ট উট), সমাসস্থানাসন (সমানভাবে ভারসাম্যপূর্ণ) ও স্থিরসুখাসন।
চতুর্থ ভাগ - (প্রাণায়াম):- " প্রাণায়াম " - একটি সংস্কৃত শব্দ। এর অর্থ প্রাণ অর্থাৎ শ্বাস এবং আয়ম অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণ। প্রকৃতপক্ষে এই প্রাণায়াম শব্দের আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে - শ্বাসের নিয়ন্ত্রণ। এই শ্বাস নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার জন্য বিশেষ কৌশল অবলম্বন করা প্রয়োজন। শরীর স্থির করে আসন করে বসার পর সর্বপ্রথম দীর্ঘশ্বাস নিতে হবে এবং তা কিছুক্ষণ নিজের শরীরের রাখতে হবে, এই পর্যায়কে বলা হয় - শ্বাস বিরতি। এরপরে সেই শ্বাস শরীর থেকে বাইরে বার করতে হবে এবং সেই অবস্থাতেও বিরতি নেওয়া প্রয়োজন কিছুক্ষণের জন্য। অর্থাৎ যখন সেই শ্বাস বাইরে বার করছি তখনো কিছুক্ষণ শরীর খালি অবস্থায় বিরতি নেওয়া প্রয়োজন। বিরতি আপনি ৪ থেকে ৬ সেকেন্ড নিতে পারেন।
পঞ্চমভাগ - (প্রত্যাহার):- মহর্ষি পতঞ্জলির মতে, প্রত্যাহার হল বাহ্যিক বস্তু থেকে সংবেদনশীল অভিজ্ঞতা প্রত্যাহার করার প্রক্রিয়া। প্রত্যাহার হল বিমূর্তকরণ ও নিষ্কাশনের পদক্ষেপ। প্রত্যাহার সচেতনভাবে সংবেদনশীল জগতের মনের প্রক্রিয়াগুলিকে বন্ধ করে দিচ্ছে। প্রত্যাহার নিজের অভ্যন্তরীণ জগতের সহজাত স্বাধীনতা অনুভব করার ক্ষমতা দেয়।
অষ্টাঙ্গ যোগ পরিকল্পনার প্রথমের চারটি অঙ্গ থেকে যোগে সূত্রের অভিজ্ঞতার পরিবর্তনকে প্রত্যাহার চিহ্নিত করে, যা বাহ্যিক রূপকে নিখুঁত করে ও শেষ তিনটি অঙ্গে যা যোগিনের অভ্যন্তরীণ অবস্থাকে নিখুঁত করে।
ষষ্ঠ ভাগ - (ধারণা):- ধারণা কথার ইংরেজি শব্দ ফোকাস। ধারণার আক্ষরিক অর্থ হলো- ধারণ করা বা বজায় রাখা। ধারণা বা ধারণ করা হলো যোগের ষষ্ঠ অঙ্গ। ধারণা হল যেখানে যে বস্তুর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হচ্ছে তা থেকে চেতনাকে দোদুল্যমান না করে মনের মধ্যে ধরে রাখা।ধারনা হল - ধ্যানের প্রাথমিক ধাপ ও গভীর একাগ্রতা। ধারণা বজায় রাখার অর্থ এক বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে ঝাঁপ না দিয়ে মনকে স্থির রাখা।
সপ্তম ভাগ - (ধ্যান):- ধ্যান হলো এক ধরনের কৌশল যেখানে কোনো ব্যক্তি নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের উপর মনোযোগ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করে। যোগব্যায়ামের ষষ্ঠ অঙ্গে রয়েছে ধ্যান। ধ্যানের মাধ্যমে ব্যক্তিগত দেবতার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা যায়।ধ্যান হল - জ্ঞানের স্রোত ও সচেতনতার প্রবাহ। বিভিন্ন ধর্মে সুপ্রাচীনকাল থেকেই আধ্যাত্মিকতার অংশ হিসেবে ধ্যানের অনুশীলন ও চর্চা হয়ে আসছে। ধ্যান অবিচ্ছেদ্যভাবে ধরনার সাথে সম্পর্কিত। পতঞ্জলি ধ্যানকে সংজ্ঞায়িত করেছেন মনের প্রক্রিয়া হিসেবে, যেখানে মন কোনো কিছুর উপর স্থির থাকে।
অষ্টম ভাগ - (সমাধি):- সমাধির আক্ষরিক অর্থ হল "একত্র করা, যোগ দেওয়া, মিলিত হওয়া। সমাধি দুই প্রকার - সম্প্রজ্ঞাত সমাধি ও অসমপ্রজ্ঞা সমাধি। সমাধিতে, যখন কোন বস্তুর উপর ধ্যান করা হয়, তখন শুধুমাত্র সচেতনতার বস্তু উপস্থিত থাকে এবং সচেতনতা যে ধ্যান করছে তা অদৃশ্য হয়ে যায়।
বন্ধুরা এই সম্পর্কে যদি আপনারা আরও বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আপনারা স্বামী ওমকার দ্বারা লেখা - পতঞ্জলি যোগ প্রদীপ গ্রন্থটি পড়তে পারেন। এই বইটিতে অষ্টাযোগ সম্পর্কে আরো বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা রয়েছে। অষ্টাঙ্গ যোগ সম্পর্কে আপনি জ্ঞান অর্জনের উপর বুঝতে পারবেন যে যোগ করার মাধ্যমে আমরা জীবনে কি কি পেতে পারি। এরই সাথে আপনি এটাও বুঝতে পারবেন যে নিজের মনকে ও আত্মাকে কিভাবে শুদ্ধ করা যায়।
তো বন্ধুরা এটাই ছিল অষ্টাঙ্গ যোগের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা মানুষের জীবনে অষ্টাঙ্গ যোগের ভূমিকা সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। যদি লেখাটি পড়ে সমৃদ্ধ হয়ে থাকেন তাহলে আপনজনের উদ্দেশ্য অবশ্যই শেয়ার করবেন। আজ এখানেই শেষ করলাম। নমস্কার, ধন্যবাদ । ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুন:- Surya Dev top 3 most powerful sons - CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা