Breaking

Search Content

Follow Us

বুধবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২৩

ভগবান বিষ্ণু - দেবকী ও বাসুদেবের ঘরে কেন নিলেন কৃষ্ণ অবতার? || Birth story of Lord Krishna



নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।


বন্ধুরা আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল - ভগবান বিষ্ণু দেবকী ও বাসুদেবের ঘরে কেন নিলেন কৃষ্ণ অবতার রূপে জন্ম ! 


বন্ধুরা, যখন যখন পৃথিবীতে পাপ এবং অধর্মের সীমা বৃদ্ধি পেয়েছে তখন তখনই ভগবান বিষ্ণু একটি অবতার ধারণ করে এই মর্তলোকে জন্ম নিয়েছেন। দ্বাপর যুগে জন্ম নেওয়া শ্রীকৃষ্ণ ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার ছিল। কিন্তু বন্ধুরা আপনারা কি জানেন কৃষ্ণ অবতারের ভগবান বিষ্ণু দেবকী ও বাসুদেবের ঘরে কেন জন্ম নিয়েছিল? না জেনে থাকলে আজকের এই লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ুন। এর পিছনে কি পৌরাণিক কথা লুকিয়ে আছে চলুন জেনে নেওয়া যাক।


এই সৃষ্টির পালনকর্তার মাতা-পিতা হওয়ার পরম সৌভাগ্য দেবকী ও বাসুদেব কেন পেলেন?

বন্ধুরা এর পেছনে যে পৌরাণিক কারণটি রয়েছে তা হল দেবকী ও বাসুদেব তাদের পূর্ব জন্ম অনুযায়ী ভগবান বিষ্ণুর খুব শ্রদ্ধা ও পূজা করেছিলেন। হিন্দু ধর্মের মূলমন্ত্র বিষ্ণুকে জগতের পালন হার বলা হয়েছে। ভগবান বিষ্ণুর পূজা করার ফলে ব্যক্তির জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি ও শান্তি আসে। মান্যতা রয়েছে ভগবান বিষ্ণুর পূজা করার ফলে সেই ব্যক্তির মাতা লক্ষ্মী খুব দ্রুত প্রাপ্ত হয়। ভগবান বিষ্ণুর অনেক ভক্ত রয়েছে। আর তার ভক্তরা তাকে আলাদা আলাদা নামে ডাকে। ত্রিমূর্তির অন্য দুটি রূপ - ব্রহ্মা ও শিবকে মানা হয়েছে। যেখানে ব্রহ্মাজি কে জগতের রচয়িতা বলে মনে করা হয়। আবার অন্যদিকে ভগবান শিবকে সংহারক মানা হয়ে থাকে।


পৌরাণিক কথা অনুযায়ী দেবকীর পূর্ব জন্মের নাম ছিল পৃশ্মি। আর বাসুদেব ' সুতপা ' নামে প্রজাপতি ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তাদের কোনো সন্তান না হওয়ায়, দুজনেই সন্তান প্রাপ্তির কামনায় খুবই কষ্ট সহ্য করেছেন। এরপর তারা ঠিক করলেন তারা ভগবান শ্রীবিষ্ণুর স্মরণ করবেন। তারপরে তারা দীর্ঘদিন যাবত ভগবান বিষ্ণুর তপস্যাই লীন ছিলেন। এইভাবে দুজনা নিজের ইন্দ্রিয় দমন করে দীর্ঘ বছর তপস্যা করে নিজের মনের সমস্ত ময়লা ধুয়ে ফেলে এবং মনকে শুদ্ধ করে। এইভাবে বারো হাজার বর্ষ ধরে কঠিন তপস্যা করার পর শ্রী বিষ্ণু তাদের সামনে এসে প্রকট হলেন। তারপরে শ্রীবিষ্ণু তাদের উদ্দেশ্যে বললেন - আমি তোমাদের দুজনার তপস্যায় অত্যন্ত প্রসন্ন হয়েছি। তোমরা আমার কাছে কি বরদান চাও বলো? ভগবান বিষ্ণুর এই আওয়াজ শোনার পর দুজনা নিজেদের চোখ খুললেন এবং তারা সামনে ভগবান বিষ্ণুকে দেখে খুবই প্রসন্ন হলেন। তারপরে তারা দুজনা ভগবান বিষ্ণুকে প্রণাম করে বললেন - হে প্রভু! আমাদের দুজনার ইচ্ছা আমরা যেন আপনার মত একজন পুত্রের মাতা পিতা হতে পারি।


পৃশ্মি ও সুতপাকে ভগবান বিষ্ণু তাদের সেই বরদানটি দিলেন এবং বললেন - তথাস্তু। এই বলে ভগবান অন্তর্ধান হয়ে গেলেন। এই বরদান করার পর যখন শ্রীহরি বৈকুন্ঠে তে পৌঁছান তখন তিনি ভাবতে লাগলেন - আমি তো পৃশ্মি ও সুতপাকে আমার মত পুত্র জন্মের বরদান করলাম। কিন্তু, এই ত্রিলোকে আমার মত শীল স্বভাব, উদারতা ও আদিগুণতো কারোর মধ্যেই নেই। তাহলে এমত অবস্থায় তাদের আমার মত পুত্র কিভাবে হবে ! কিন্তু, আমি যদি এখন আমার এই বরদান পূরন না করতে পারি তাহলে কি হবে ! কাউকে কোনো বরদান করার পর তা পূরণ করতে না পারলে তাহলে তাকে তার সমান দ্বিগুণ বস্তু দিতে হয়। এমনটা বিচার করার পর স্বয়ং ভগবান ওই দুজনার পুত্ররূপে তিনবার অবতার নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই কারণে যখন ভগবান প্রথমবার তাদের পুত্র হলেন তখন তাকে পৃশ্মিগর্ভ রূপে জানা যায়। দ্বিতীয় জন্মে পৃশ্মি মাতা অদিতি ও সুতপা কশ্যপ নামে জানা যায়। সেই সময় তাদের ভগবান বামনের রূপে এক পুত্র জন্ম নেয়। এই ভাবেই দ্বাপর যুগে তৃতীয়বার দুজনার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রূপে পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। এই জন্মে ভগবান নিজের বচনকে পূর্ণ করার জন্য সেই পৃশ্মি ও সুতপার অর্থাৎ দেবকী ও বাসুদেবের পুত্ররূপে জন্ম নেন।


চলুন বন্ধুরা, এবার জেনে নেওয়া যাক শ্রীকৃষ্ণের জন্ম সম্পর্কে। শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমার পরে ভাদ্র মাসের সূচনা হয়, ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথি কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী নামে পরিচিত। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমীতে রাত্রি ১২টার সময়ে মথুরার রাজা কংসের কারাগারে বাসুদেবের পত্নী দেবকীর গর্ভে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়। ভগবান বিষ্ণু নিজের অষ্টম অবতারে দেবকীর গর্ভে জন্ম নেন। কিন্তু তার পালন পোষণ যশোদা ও নন্দ করেন। এই অবতারের বিস্তৃত বর্ণনা শ্রীমদ্ভগবত পুরাণে বিস্তারের সঙ্গে বলা হয়েছে। 


সকল মানুষ শ্রীকৃষ্ণের উপর আস্থা রাখেন এবং সনাতন ধর্ম অনুযায়ী ভগবান বিষ্ণু ব্রহ্মাণ্ডের পরিচালক । শুধু তাই নয় তিনি সমস্ত মানুষদের ভোগ ও মোক্ষ দান করার প্রমুখ দেবতা। যখন যখন এই পৃথিবীতে অসুর এবং রাক্ষসদের দ্বাড়া ধর্ম নাশ ঘটবে তখন তখন ভগবান বিষ্ণু কোন না কোন অবস্থায় ধারণ করে এই পৃথিবীকে এদের থেকে মুক্ত করে। বন্ধুরা এমনিতেও ভগবান বিষ্ণুর দশটি অবতারের কথা পৌরাণিক কাহিনীতে বলা হয়েছে। এই অবতারগুলির মধ্যে তার সব থেকে মহত্ত্বপূর্ণ অবতার হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। এই অবতার তিনি দেবকীর গর্ভের মাধ্যমে মথুরার কারাগরে নেন। কারণ সেই সময় চারিদিকে পাপ বেড়েই চলেছিল এবং ধর্ম নামের কোন জিনিসই ছিল না। এই কারণে ভগবান বিষ্ণু ধর্মের পুনঃস্থাপনার জন্য কৃষ্ণ রূপে অবতার নেন। শ্রীকৃষ্ণের মধ্যে এত পরিমানে অনন্ত গুণ লুকিয়ে ছিল যা তিনি নিজেও জানতেন না। সকল দেবতাদের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণই একমাত্র এমন দেবতা ছিল যিনি ষোল কলা পূর্ণ করে এই পৃথিবীতে অবতার ধারণ করেছিলেন। তিনি যেই কাজই করতেন সেটাকে নিজের মহত্ত্বপূর্ণ কার্যরূপে গ্রহণ করে তারপরে করতেন। নিজের কার্যের জন্য তিনি সাম, দাম, দন্ড ভেদে সমস্ত কিছুর সাহায্য নেন। এমনটা তিনি যে কারণে করেছিলেন তার পেছনে একটিই উদ্দেশ্য ছিল এই পৃথিবী থেকে পাপীদের মুক্ত করা। এই উদ্দেশ্য পূরণের জন্য তিনি যা কিছু উচিত মনে করেছিলেন তিনি তাই করেন। তিনি কর্ম ব্যবস্থাকে সর্বোপরি মনে করতেন। তিনি কুরুক্ষেত্রের রণভূমিতে অর্জুনকে জ্ঞান প্রদান করতে গিয়ে গীতা রচনা করেন। যা কলিকালে ধর্মের সব থেকে মহত্ত্বপূর্ণ গ্রন্থ হিসেবে মানা হয়। এই পৃথিবীর রক্ষার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বালক অবস্থাতে কংসের পাঠানো একাধিক রাক্ষসের বধ করেছিলেন। শুধু তাই নয় তিনি কালিয়া নাগের হাত থেকে যমুনাকে রক্ষা করেছিলেন এবং যমুনার জলকে শুদ্ধ করেছিলেন। যখন ইন্দ্রের প্রকোপে প্রচন্ড বসা হতে লাগলেও তখন তিনি সাতদিন পর্যন্ত গোবর্ধন পর্বতকে নিজের আঙুলে তুলে নেন এবং সকল মানুষদের রক্ষা করেন তথা ইন্দ্রের অহংকারকেও নষ্ট করেন। শুধু তাই নয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এরপর তার অধর্মী মামা কংস কে বধ করে তার মাতা পিতাকে কারাগার থেকে মুক্ত করেন এবং উগ্রসেন পুনরায় মথুরার সিংহাসনে বসেন। 


তো বন্ধুরা, এই ছিল আমাদের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কিছু মুহূর্ত পূণ্য কার্য। বন্ধুরা আশাকরি এই লেখাটি পড়ার মাধ্যমে আপনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মের রহস্য সম্পর্কে সবকিছু জানতে সক্ষম হয়েছেন। লেখাটি ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আজ এখানে শেষ করলাম। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।


আরো পড়ুন:- সকালে ঘুম থেকে উঠে করুন এই 5টি কাজ - এতে দূর হবে আপনার দরিদ্রতা CLICK HERE

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা