জীবনের মূল্য || জীবন বদলে দেবে যে গল্প

 

আমরা জীবনে অনেক সময় যা চাই তা পাই না । অনেক সময় কোন কাজে আমরা ব্যর্থ হলে অথবা কেউ যদি আমাদের যথাযথ গুরুত্ব না দেয়, আমাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে - তখন মনে হয় এই জীবনে হয়তো আমাদের কোনো দাম নেই । তখন মানুষ অনেক সময় চরম সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিয়ে ফেলেন । জীবনে যদি কোন কাজে বারবার ব্যর্থ হন , অথবা কেউ যদি আপনাকে অবজ্ঞা করে বা অবহেলা করে; আপনি যদি মনে করেন আপনার এই জীবন সম্পূর্ণ মূল্যহীন তাহলে এই গল্পটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন আশা করি এই ছোট্ট গল্প থেকে আপনি জীবনের এক নতুন অর্থ খুঁজে পাবেন ।

এক ব্যক্তির ভগবানের কাছে প্রত্যেকদিনই প্রশ্ন করতেন, ভগবান তুমি আমাকে এতো দুঃখ কষ্ট দিলে; আর এতই যদি দুঃখ দেবে তাহলে জন্ম দিলে কেন তুমি আমাকে তোমার কাছে টেনে নাও; আমি এখানে আর এক দন্ড থাকতে চাইনা । সেই ব্যক্তি তার জীবনের অর্থ খুঁজতে এক সাধু ব্যক্তির কাছে গেলেন। তিনি তখন প্রশ্ন করলে তার এই দুঃখ ভরা জীবনের আদৌ কি কোন মূল্য আছে ? এই জীবন রেখে তার কি লাভ! সাধু ব্যক্তিটি লোকটির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তাকে একটি কাজ ধরিয়ে দিলেন; বললেন , "এই নাও একটি পাথর, একটা বাজারে গিয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছে গিয়ে এর দাম জিজ্ঞাসা করবে কিন্তু এই পাথর বিক্রি করবে না । পাথরটি নিয়ে যখন তুমি যখন ফিরে আসবে তখন বলব তোমার এই দুঃখ ভরা জীবনের  মূল্য কতো। লোকটি তখন সেই ব্যক্তির কথা মতন পাথরখণ্ড টি নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন।

বাজারে গিয়ে প্রথমে তিনি দেখা করলেন এক লেবু বিক্রেতার সঙ্গে । পাথরখণ্ডটি লেবু বিক্রেতা কে দিয়ে তিনি এর মূল্য জিজ্ঞাসা করলেন। লেবু বিক্রেতা সেই লোকটিকে বলল যে এই পাথরের মূল্য হিসেবে তাঁকে একডজন  লেবু সে দিতে পারবে। তখন লোকটি তার কাছ থেকেই পাথরখণ্ড টি নিয়ে চলে গেলেন এক সবজি বিক্রেতার কাছে । সবজি বিক্রেতার কাছে তিনি পাথর দিয়ে এর মূল্য জানতে চাইলেন । সবজি বিক্রেতা এই পাথরটি দেখে বললেন এর জন্য বড়জোর এক বস্তা আলু তাকে সে দিতে পারবে । তখন লোকটি সেখান থেকে গেলেন এক জুয়েলারির দোকানে, সেখানে গিয়ে তিনি সেই একই প্রশ্ন করলেন । "এই পাথরখণ্ডটির দাম কত হতে পারে ?" জুয়েলারি দোকানদার পাথর খণ্ডটি ভালো করে দেখে লোকটিকে বললেন এর জন্য তাকে সে 10 লক্ষ টাকা পর্যন্ত দিতে পারে । দোকানদার লোকটিকে বলল তাকে এটি বিক্রি করে দিতে। লোকটি তখন অবাক হল। সামান্য ছোট পাথর খণ্ডের দাম 10 লক্ষ টাকা! লোকটি তখন সাধুর কথামতো পাথরটি বিক্রি না করে এবার চলে যান এক রত্ন বিক্রেতার কাছে যারা বিভিন্ন রকমের নামি দামি রত্ন ক্রয় বিক্রয় করে থাকে। রত্ন বিক্রেতার কাছে গিয়ে তিনি রত্ন টি তার হাতে দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন যে এই পাথরটির দাম কত হতে পারে? রত্ন বিক্রেতা তখন পাথরটি ভালোভাবে দেখতে লাগলেন । কিছু সময় পর তিনি সেটি একটি লাল কাপড়ের উপর রাখলেন এবং ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে ভালোভাবে দেখতে লাগলেন। এরপর  বড় বড় চোখ করে বললে "এই পাথর তুমি কোথায় পেয়েছো? এই পাথর কেনার সাধ্য আমার নেই। কোটি টাকা দিলেও এই পাথর পাওয়া যাবে না! আমার সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে জীবনের দামেও এই পাথর আমি এই পাথর কিনতে পারব না। লোকটি এই কথা শুনে অবাক হয়ে যায় এবং সম্পূর্ণ বিভ্রান্ত হয়ে পাথরটি নিয়ে তিনি আবার সেই সাধুটির কাছে ফিরে আসেন এবং পুরো ঘটনাটি ব্যক্ত করেন। তখন সেই সাধুটি এই কথা শুনে বলেন তুমি নিশ্চয়ই দেখলে পাথরটি বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ভাবে এর মূল্যায়ন করেছিল এবং শেষ পর্যন্ত শেষের মানুষটি শুধু বলল এই পাথর কেনার ক্ষমতা তার নেই ।এই সমস্ত কিছুর মাধ্যমে আমি তো এটাই বোঝাতে চেয়েছিলাম যে তোমার জীবনের মূল্য এই চকমকি পাথরটার মতনই দামি। কারো কাছে হয়তো তোমার গুরুত্ব খুব কম আবার অন্য কারো কাছে তুমি এই পাথরের মতো মহামূল্যবান। আমাদের প্রত্যেকেরই একেকজনের একেক ধরনের গুন রয়েছে। কারো কাছে রয়েছে টাকা, কারো কাছে রয়েছে জ্ঞান , আবার কারো কাছে আছে বুদ্ধিমত্তা বা অন্যকিছু অনেকসময় সেটা সবাই বুঝতে পারে না যেমনটি ঘটেছে পাথরটির ক্ষেত্রে। লেবু বিক্রেতা যেমন পাথরের মূল্য বোঝেনি তেমনি শেষ ব্যক্তির কাছে সেটা জীবনের চেয়েও মূল্যবান । তাই জীবনে কখনোই ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। যদি কেউ তোমায় কখনো পাত্তা না দেয়, অবহেলা করে তাহলে এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে আপনার মূল্য নেই কেননা আপনাকে যে মূল্যায়ন করছে তার কি সেই ক্ষমতা আছে আপনার মূল্য বিচার করার ? তাই নিজের ওপর এবং ভগবানের উপর সর্বদা বিশ্বাস রাখুন সঠিক সময়ে সঠিক মানুষ আপনাকে এবং আপনার কাজের মূল্য দেবেন ।