রাধাষ্টমী ব্রতকথা - Radha Ashtami Vrat katha
নমস্কার বন্ধুরা, এই প্রতিবেদনে রাধাষ্টমী ব্রতকথাটি আপনাদের সামনে ব্যক্ত করব। যে কোন ব্রতকথা শোনার বা পাঠ করার একটি নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে, আর তা হল ব্রত কথাটি সম্পূর্ণ পাঠ বা শ্রবণ করা প্রয়োজন। নিম্নে রাধাষ্টমী ব্রতকথা ব্যক্ত করা হলো।
রাধাষ্টমী ব্রতকথা
ঋষি শৌনক মহামতি সূতকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে সূত, অন্যান্য দেবতাদের উপাসনার চেয়ে শ্রীকৃষ্ণের আরাধনাই শ্রেষ্ঠ বলে জানি। আরও শুনেছি, তার চেয়েও রাধারানির আরাধনা অধিকতর পুণ্যপ্রদ ও শেষ্ঠ। অতএব শ্রী রাধার অর্চনা বিষয়ে কোনও ব্ৰতাদির কথা বলুন। সূত বললেন, হে ঋষিবর! আমি একটি গােপনীয় ব্রতের কথা বলছি শুনুন। একদিন দেবর্ষি নারদ শ্রীকৃষ্ণের নিকটে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,ভগবান! আপনার শ্রীমুখে অনেক ব্রতের কথা শুনেছি। এখন শ্রীমতি রাধিকার জন্মদিনের ব্রতকথা শুনতে ইচ্ছা করি। শ্রীকৃষ্ণ বললেন, দেবর্ষি! তুমি আমার পরম ভক্ত।
সে জন্য তােমার কাছে বলছি, শ্রবণ কর। কোনও এক সময় সূর্যদেব ত্রিলােক ভ্রমণ করতে করতে নানা প্রকার ঐশ্বৰ্য্য দেখে মনে মনে তপস্যার সঙ্কল্প করে, মন্দার পর্বতের গুহায় কঠোর তপস্যা আরম্ভ করলেন। এই ভাবে দীর্ঘ দিন গত হলাে। সূর্যের কঠোর তপস্যা আর পৃথিবী অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকায় দেবতারা ভীত হলেন। ইন্দ্র দেবগণ-সহ আমার কাছে এসে সব কথা বলে। আমি বললাম, হে দেবগণ। সূর্য থেকে তােমাদের কোনও ভয় নাই। তােমরা নিজ নিজ স্থানে যাও। আমি সুর্যদেবকে তপস্যা থেকে নিরস্ত করব। তারপর আমি সূর্যের কাছে গেলাম। সূর্য আমাকে দেখে খুব আনন্দিত হলেন। তিনি বললেন, হে শ্রীহরি! আপনার দর্শন পেয়ে আমার জন্ম ও তপস্যা সার্থক হলো।
যিনি সৃষ্টি, স্থিতি, সংহার কর্তা, ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর যাঁকে সবসময় চিন্তা করেন, তাকে দর্শন করে আমি ধন্য হলাম।আমি সন্তুষ্ট হয়ে সূর্যকে বললাম, হে দিবাকর! তুমি তপস্যায় সিদ্ধিলাভ করেছ। এখন বর প্রার্থনা কর। তুমি আমার পরম ভক্ত, সে জন্যই তােমাকে আমি দর্শন দিলাম। এই কথা শুনে সূর্য বললেন, হে প্রভু! আমাকে একটি গুণবতী কন্যার বর দিন। আপনি চির দিন সেই কন্যাটির বশীভূত থাকবেন। এ ছাড়া আমার আর কোনও ইচ্ছা নেই। আমি তথাস্তু বলে তাকে বললাম, এই ত্রিলােকে আমি একমাত্র শ্রীরাধিকারই বশীভূত। শ্রীরাধা এবং আমাতে কোনও প্রভেদ নাই। আমি পৃথিবীর ভার লাঘবের জন্য বৃন্দাবনে নন্দালয়ে অবতীর্ণ হব। তুমিও সেখানে বৃষভানু নামে রাজা হয়ে জন্মগ্রহণ করবে। শ্রীরাধা তােমার কন্যারূপে অবতীর্ণ হবেন। তারপর শ্রীহরি মথুরায় জন্মগ্রহণ করে নন্দালয়ে এলেন।
সূর্যদেব বৈশ্যকুলে জন্মগ্রহণ করে বৃষভানু হলেন। গােপকন্যা কীর্তিদার সঙ্গে তার বিবাহ হল। যথা সময়ে ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে বিশাখা নক্ষত্রে কীর্তিদার গর্ভে রাধিকা জন্মগ্রহণ করলেন। গােপ-গােপীরা আনন্দোৎসবে মেতে উঠল। আমার মায়ায় মুগ্ধ হয়ে রাধিকা আমাকেই পতিত্বে বরণ করতে ইচ্ছা করলেন। যথাকালে আয়ান ঘােষের সঙ্গে শ্রীরাধার বিবাহ হল বটে, কিন্তু আমাকে পরম পুরুষজ্ঞানে আমার সঙ্গে বিহার করতে লাগলেন। শ্রীরাধার এই জন্মতিথিতে গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য ও বসন-ভূষণ দ্বারা শ্রীরাধার পূজা করে, নানা প্রকার মহােৎসব, ক্রীড়া, কৌতুকাদি করতে হয়। রাধার সখীবৃন্দ, গােপিকাবৃন্দ, কীর্তিদা, বৃষভানু, প্রভৃতিরও পূজা করতে হয়।
তার পর ব্রতকথা শুনে সে দিন উপবাসী থেকে পর দিন বৈষ্ণবদের সঙ্গে প্রার্থনা করতে হয়। রাধা নামের সঙ্গে কৃষ্ণ নাম যুক্ত করে জপ করলে যাবতীয় মন্ত্র জপের ফল লাভ হয়। তপ-জপে আমার যেমন সন্তোষ জন্মে, এক বার রাধানাম উচ্চারণ করলে তার চেয়ে সহস্রগুণ বেশি আমি সন্তোষ লাভ করি। এই ব্রতের অনুষ্ঠানে সব দুঃখ দূর হয় ও পরম শান্তি লাভ হয়। ধনৈশ্বর্যে গৃহ পূর্ণ হয় এবং সর্বস্থানে বিজয় লাভ হয়। ভক্তের কাছে এই ব্রতের কথা বললে সমস্ত অমঙ্গল দূর হয়। কিন্তু ভণ্ড,পাষণ্ড, ভক্তিহীন নাস্তিকের কাছে প্রকাশ করলে অমঙ্গল হয়। শ্রীকৃষ্ণের কাছে এই কথা শুনে নারদ মর্তে এই ব্রত প্রচার করলেন আর নিজেও ব্রতপালন করলেন।
আশাকরি ব্রতকথাটি ভাল লেগেছে। যারা রাধাষ্টমী ব্রত পালন করছেন পারলে তাদের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।সকলেই ভাল থাকুন এবং সুস্থ্য থাকুন এই কামনা রেখে আজকে এখানেই শেষ করলাম। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
**জয় শ্রীকৃষ্ণ রাধে রাধে 🙏**
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা