জীবনে সর্বদা যে কোন অবস্থাতে সুখী থাকতে হলে নিজেকে এই চারটি প্রশ্ন করুন

  নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই চ্যানেল এর প্রধান বিষয়বস্তু 

বন্ধুরা, আজকে এই লেখাটির মাধ্যমে আপনাদের সামনে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব ।আর তা হল- জীবনে সর্বদা যে কোন অবস্থাতে সুখী থাকতে হলে নিজেকে এই চারটি প্রশ্ন করুন বা বিষয়টিকে এভাবেও বলা যেতে পারে যে এই চারটি প্রশ্নের যদি আপনি সঠিক উত্তর দেন তাহলে জীবনের সঠিক অর্থ খুঁজে পাবেন। আবার এভাবেও এই বিষয়টিকে বলা যেতে পারে যে এই চারটি প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমেই আপনি জানতে সক্ষম হবেন যে আপনার ক্ষেত্রে কোন পেশা বা কোন ক্যারিয়ার উপযুক্ত। 

আপনি আপনার সন্তানকেও চারটি প্রশ্ন করতে পারেন, তার ক্যারিয়ার বা পেশা নির্বাচনের সময়। আসলে কোনো ব্যক্তি এই চারটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার মাধ্যমে তাঁর জীবনদর্শন বা জীবনের মূল্য সম্পর্কে জানতে সক্ষম হয়। তার জীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতা সমস্ত কিছুই নির্ভর করে এই চারটি প্রশ্নের ওপর। এমনকি তার বেঁচে থাকার কারণও নির্ভর করে থাকে এই চারটি প্রশ্নের উপর। আর এই বিষয়টিকেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার “শ্রীমৎভগবত গীতা”য় বলেছেন , “মনুষ্য জীবনম উদ্দেশ্যাম”এবং এই বিষয়টিকে জাপানি ভাষায় বলা হয় “ইকিগাই" যার বাংলা অর্থ হলো- জীবনের দর্শন বা জীবনের মূল্য। 

আজ এরকমই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে এই লেখাটিতে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

আর আশাকরি এই লেখাটি সম্পূর্ন পড়ার পর আপনার জীবন সম্পর্কে এক নতুন ধারণা তৈরি হবে এবং আপনি আপনার জন্য ও আপনার সন্তানের জন্য উপযুক্ত পেশা ও জীবিকা নির্বাচন করতে একটা সুস্পষ্ট ধারণা পাবেন। তাই লেখার প্রতিটি কথা মনোযোগ সহকারে শুনুন উপকৃত হবেন। 

বন্ধুরা মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত প্রতিটি সময় ব্যয় করেন একটি সুখী জীবনের আশায়। তারা তাদের জীবনে একটা ভালো চাকরি বা ধন-সম্পদ পাওয়ার আশায় অতিবাহিত করেন, কিন্তু দিন শেষে মানুষ এটাই ভুলে যায় বা ভেবে পায়না তারা আসলে জীবনে কি চেয়েছিল? তারা যা পেয়েছে তা কি আসলেই চেয়েছিল ? গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যে “মনুষ্য জীবনম উদ্দেশ্যাম” অর্থাৎ মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য অথবা মানুষের জীবনের যে মূল্যের কথা বলেছেন তার অর্থ হল- জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা জীবনে শুধুমাত্র কাজ আর কাজ বা শুধুমাত্র ধন-সম্পদের পেছনে অতিবাহিত না করে, জীবনের প্রকৃত সুখ বা শান্তি লাভ করা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। তাই জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে নিজেকে এই চারটি প্রশ্ন করুন এই প্রশ্নের উত্তর যদি আপনি খুঁজে পান, তাহলে নিশ্চিত এইরূপে আপনি আপনার জীবনের মূল্য জানতে পারবেন। কোন কাজ বা কোন পেশা আপনার জন্য উপযুক্ত সে সম্পর্কেও আপনার স্পষ্ট ধারণা হবে।

  যে প্রশ্নটি আমাদের প্রত্যেকেরই করা প্রয়োজন তা হল- 

১)আমি কি করতে ভালোবাসি? 

প্রত্যেক মানুষেরই ভিন্ন ভিন্ন ভালো লাগা বা ভালোবাসার কাজ রয়েছে,আপনার ক্ষেত্রেও হয়তো এরকম কোন ভালো লাগা বা ভালোবাসার কাজ রয়েছে যা আপনি করতে ভালোবাসেন। এইরকম যে সমস্ত কাজগুলি আপনি করতে ভালোবাসেন বা আপনার ভালো লাগে তা পারলে প্রথমেই একটি খাতায় লিখে রাখুন। হয়তো এক বা একাধিক কাজ এমন রয়েছে যা আপনার করতে ভালো লাগে প্রত্যেকটি কাজই যা আপনার ভালো লাগে তা লিখবেন সেটা সামান্যতম যদি কাজ ও হয়, অর্থাৎ বাগান পরিষ্কার করা বা সেলাই করা বা ছবি আঁকা বা অন্য কোন কিছু কাজ যা আপনার ভালো লাগে কোনোটাকেই তুচ্ছ মনে করবেন না ,দরকার হলে এর জন্য আপনি সময় নিন কিন্তু আপনার ভালোলাগা প্রতিটি কাজই কিন্তু আপনার জানা প্রয়োজন।

 দ্বিতীয় যে প্রশ্নটি নিজেকে করবেন সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর তা হল -

২)আমি কিসে বা কোন কাজে দক্ষ?

অর্থাৎ আমি কোন কাজটি ভালো পারি। বারবার নিজেকে এই প্রশ্নটিই করুন, হয়তো আপনি রান্না ভালো পারেন, হয়তো আপনি ভালো কথা বলতে পারেন, মানুষকে ভালো বোঝাতে পারেন, অথবা হয়তো আপনি ভালো গান করতে পারেন ,বা নাচ করতে পারেন বা অন্য কিছু ভাল করতে পারেন ,যে সমস্ত কাজ আপনি ভালো করতে পারেন সে সমস্ত কাজের একটি লিস্ট আপনি খাতায় তৈরি করুন বারংবার এই প্রশ্নটি নিজেকে করুন আর আপনি সারাদিন কি কি কাজ করছেন সেগুলিকে পর্যবেক্ষণ করে আপনি নিজেই স্থির করুন কোন কোন কাজ গুলি আপনি ভালো পারেন।

তৃতীয় যে প্রশ্নটি আপনি নিজেকে করবেন ,তা হলো-

৩) আমি কি আমার এই কাজের বিনিময় বা যোগ্যতার বিনিময় কোন ইনকাম বা উপার্জন করতে পারব বা পারি?

 যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে সেই সমস্ত কাজ গুলি যেগুলি আপনি পারেন এবং যা থেকে উপার্জন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে অর্থাৎ ইনকাম করতে পারবেন সেগুলির একটি লিস্ট তৈরি করুন। যদি আপনার মনে হয় যে এই মুহূর্তে হয়তো উপার্জন করতে পারবোনা কিন্তু যদি আমি এই কাজটি ভালোভাবে শিখি এটিতে দক্ষতা অর্জন করি তাহলে একদিন এই কাজটি আমাকে আমার জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ এনে দেবে। তাই এই সমস্ত কাজ গুলির একটি লিস্ট অবশ্যই তৈরি করুন। 

এবং সর্বশেষ যে প্রশ্নটি আপনি নিজেকে করবেন। যে-

৪) আমার এই কাজ সমাজের জন্য কি প্রয়োজন বা আমার এই সমস্ত কাজের মাধ্যমে আমি সমাজের কি উপকার করতে পারি?

 এই বিষয়গুলি ও খাতাতে আপনি লিখে রাখুন ।যখন দেখবেন এই চারটি প্রশ্নের উত্তর এক হচ্ছে অর্থাৎ এমন একটি কাজ যে কাজটি আপনি করতে ভালোবাসেন আপনি ভালো করতেও পারেন অর্থাৎ সে বিষয়ে আপনি যথেষ্ট দক্ষ এবং তার পাশাপাশি আপনি তা থেকে উপার্জন করতে পারেন এবং এই কাজের দ্বারা আপনি সমাজের উপকার করছেন তখন এই কাজটি হবে আপনার জীবনের লক্ষ্য বা আপনার জীবনের সর্বোত্তম কাজ। এই কাজটি হবে আপনার পেশা বা জীবিকা ,এই কাজটি হবে আপনার বেঁচে থাকার প্রধান কারণ। আর যেই মাত্র নিজেকে এই প্রশ্ন করে আপনি কাজটি খুঁজে পাবেন, দেখবেন আপনার জীবনে এক বিরাট পরিবর্তন আসবেই আসবে। তাই বারংবার নিজেকে এবং নিজের সন্তান বড় হওয়ার পর এই চারটি প্রশ্ন করুন দেখবেন উত্তর আপনি খুঁজে পাবেনই পাবেন।

আজ এখানেই শেষ করলাম নমস্কার, ধন্যবাদ ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।।