নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইট এর প্রধান বিষয়বস্তু ।
আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল-" মহালয়ার পরদিন সকালে প্রতিষ্ঠা করুন একটি মঙ্গল ঘট সকল সমস্যার সমাধান হবে"।
বন্ধুরা সামনেই 20ই আশ্বিন (ইং- 7অক্টোবর)আসছে এই সুবর্ণ সুযোগ কে হাতছাড়া করবেন না। অতি অবশ্যই মহালয়া পরের দিন সকালে বাড়িতে একটি মঙ্গল ঘট স্থাপন করুন। খুব সহজভাবেই বাড়ির সকলের মঙ্গল কামনার জন্য আপনি এই মঙ্গলঘট নিজের বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।
সবার প্রথমে আমাদের জানা প্রয়োজন এই মঙ্গলঘট কি? কেনই বা প্রতিষ্ঠিত করা হয়? এই প্রসঙ্গে বলতে গেলে, একটি কথা বলতেই হয় সেটি হল- আপনি হয়তো জানেন আগামী ১৯ শে আশ্বিন বুধবার পিতৃপক্ষের অবসান ঘটে সূচনা হচ্ছে দেবীপক্ষের। আমরা মূলত এই দেবী পক্ষের শক্তির আরাধনা করে থাকি। আর এই ঘট প্রতিষ্ঠার মানে হল ঈশ্বরের নিরাকার স্বরূপ আহবান করা,তার পূজা করা। শক্তি, সমৃদ্ধি এবং মঙ্গলের প্রতীক হিসাবে গণ্য করা হয় এই ঘটকে। সেই জন্য দেখবেন প্রায় প্রতিটি পূজাতেই এই ঘট প্রতিষ্ঠা করা হয়। ঘট স্থাপন ছাড়া পূজা অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হয়।
দেখবেন এমন অনেক বাড়ি রয়েছে যেখানে মা লক্ষ্মীর মূর্তি পূজা হয় না। বরং দেখবেন মা লক্ষ্মীর একটি মঙ্গল ঘট প্রতিষ্ঠা করে পূজা করা হয়। সুতরাং বাড়ির সকলের মঙ্গলার্থে এবং পরিবারের সমস্যা সমাধানের জন্য বাড়িতে যাতে মঙ্গল হয় সেই জন্য মঙ্গল ঘট আপনাকে প্রতিষ্ঠা করতেই হবে। তাই এই মহালয়া আপনাদের সামনে একটি সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে এসেছে। অতি অবশ্যই এই মহালয়ার দিন মঙ্গলঘট প্রতিষ্ঠার পর আপনার ইষ্টো দেবতার পূজা করুন। কিন্তু, প্রশ্ন হল- কিভাবে আপনি বাড়িতে থেকেই নিজে থেকে এই মঙ্গলঘট প্রতিষ্ঠা করতে পারেন? খুব সহজভাবেই আপনি নিজেই এই মঙ্গলঘট টি প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। তবে এর জন্য আপনাকে মহালয়ার দিন অর্থাৎ বুধবার দিন কিছু জিনিসপত্র সংগ্রহ করে রাখতে হবে। তবে সর্বদা মনে রাখবেন যে ঘট প্রতিষ্ঠা মহালয়ার পর দিনই করবেন। তার আগের দিন নয় বা তার পরের দিনও নয়।
মঙ্গলঘট প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে সমস্ত প্রয়োজনীয় উপকরণ লাগবে তা হল-
প্রথমত ঘট স্থাপন করার জন্য প্রয়োজনীয় মাটি। সবথেকে ভালো হয় যদি আপনি গঙ্গা মাটি ব্যবহার করতে পারেন। তবে একান্ত সম্ভব যদি না হয় তবে যে কোনো একটি পুকুর বা নদী থেকে আপনি এই মাটি সংগ্রহ করতে পারেন। আর তাও যদি সম্ভব না হয় আপনার তুলসী মন্দিরের যে মাটি সেই মাটি আপনি ব্যবহার করতে পারেন।
দ্বিতীয় যেটি দরকার তা হলো সামান্য পরিমান ধান। এই ধানকে মা লক্ষ্মীর প্রতীক হিসেবে মানা হয়। এরপরে যেটি লাগবে সেটি হল ঘট। আপনি মাটির ঘট ব্যবহার করতে পারেন অথবা আপনার বাড়িতে যদি পিতলের ঘট থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে খুবই ভালো হয়। তবে একটা জিনিস সম্পর্কে সচেতন থাকবেন যে এই ঘট কখনোই যেন লোহার ঘট না হয়। এর সঙ্গে আপনার প্রয়োজন পড়বে গঙ্গাজল এবং তার সঙ্গে দরকার আম্রপল্লব। এই আম্রপল্লব খুবই গুরুত্বপূর্ণ একান্ত থাকতেই হবে। পাঁচটি পত্র বিশিষ্ট একটি আম্রপল্লব শাখা আপনাকে সংগ্রহ করে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে যদি আপনি আম্রপল্লব না পান, তাহলে অসত্ব কিংবা যজ্ঞ ডুমুর গাছের পাঁচটি পত্র বিশিষ্ট অথবা সাতটি পত্র বিশিষ্ট পল্লব ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু আম্রপল্লব হলে খুবই ভালো হয়। এর সঙ্গে সংগ্রহ করে রাখুন একটি গোটা স্ব-শীশ যুক্ত কচি ডাব। যদি সেটি না পান তাহলে আপনি একটি কাঁঠালি কলা অথবা একটি বেল এবং তার সঙ্গে তিনটি হরিতকী, তিনটি সুপারি ও তার সঙ্গে তিনটি কাঁচা হলুদের গাঁট এবং তার সঙ্গে অবশ্যই সিঁদুর। এর সঙ্গে সংগ্রহ করে রাখুন একটি নতুন গামছা এবং চারটি তীর কাঠি ও লাল ধাগা। যদি তীর কাঠি ও ধাগা নাও থাকে তাহলে সমস্যা নেই।এটি সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক বিষয়।
কিভাবে আপনি এই মঙ্গল ঘটটি প্রতিষ্ঠা করবেন?
মহালয়ার পর দিন সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠার পর দ্রুত স্নানপর্ব সেরে নিন। স্নানপর্ব সারার পর এরপর আপনার ইষ্টদেবতার পূজা করুন। ইষ্ট দেবতার পূজার পর এই মঙ্গল ঘটটি প্রতিষ্ঠা করবেন। এখানে ইষ্ট দেবতা বলতে বোঝানো হয়েছে যে দেবদেবীর আপনি নিত্য পূজা করেন তার পূজার কথা। মঙ্গল ঘাটতি প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বপ্রথম আপনি গঙ্গা মাটি নিয়ে সেটিতে গঙ্গাজল অথবা কোনো শুদ্ধ জল দিয়ে মাটিটি নরম করুন। তারপর সেই তামার অথবা মাটির ঘটের উপর লাল সিঁদুর অথবা লাল চিহ্ন এর মাধ্যমে একটি স্বস্তিক চিহ্ন এঁকে দিন , আপনি চাইলে নারায়ন চিহ্ন আঁকতে পারেন। তারপরে সেই নরম মাটির উপর পিতলের অথবা মাটির সেই ঘটটি বসিয়ে দিন। এরপরে ওই ঘটটির মধ্যে তিনটি সুপারি, তিনটি হলুদের গাঁট এবং তিনটি হরিতকী ফেলে দিন। এরপর ঘরের মধ্যে গঙ্গা জল দিয়ে তা পূর্ণ করুন। এরপর ঘটের মুখে আম্রপল্লব শাখাটি দিন অথবা যে পল্লব আপনি সংগ্রহ করেছেন সেই পল্লব শাখাটি দিন। পল্লব শাখাটির ওপরে ঠিক একইভাবে লাল সিঁদুরের চিহ্ন দিয়ে ফোটা দিয়ে দিন প্রতিটি পত্রে। এরপর যে ফলটি আপনি সংগ্রহ করতে পেরেছেন অর্থাৎ শীশ যুক্ত কচি ডাব বা বেল অথবা কাঁঠালি কলা সেটিকে ওই আম্রপল্লব এর উপরে দিয়ে দিন। মনে রাখবেন সেই ফলটির উপরে একটি স্বস্তিক চিহ্ন অথবা একটি নারায়ন চিহ্ন এঁকে দেবেন। এরপর যে নতুন গামছাটি কিনে এনেছেন সেই গামছাটা দিয়ে ফলটি ভালো করে ঢেকে দিন। তার ওপর একটি মালা নিবেদন করুন। সাদা ,হলুদ অথবা লাল যে কোন প্রকার মালা আপনি নিবেদন করতে পারেন। এরপর সেই সংগৃহীত মাটি দিয়ে চারটি মাটির ঢেলা প্রস্তুত করে তারমধ্যে ওই এক একটি করে চারটি মাটির ঢেলা তে, চারটি তীর কাঠি বসিয়ে দিন। এরপর ওই চারটি তীর কাঠি কে একটি লাল ধাগা দিয়ে যুক্ত করে দিন। তবে এটি সম্পূর্ণ একটি ঐচ্ছিক বিষয় । আপনি চাইলে এই চারটি তীর কাঠি ও লাল ধাগা এটি নাও বসাতে পারেন। এরপর ঘটের ওপরে ধান ও দুব্বা দিয়ে প্রণাম করে বলুন এই একটি মন্ত্র-
"ওম সর্ব মঙ্গলো মঙ্গল্যে
শিবে সর্বার্থসাধিকে
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরী
নারায়ণি নমোহস্তুতএ"
-এর অর্থ হলো হে দেবী সর্বমঙ্গলা শিবা সকল কার্য সাদিকা স্মরণযোগ্য গৌরী ত্রিনয়নী নারায়নী তোমাকে নমস্কার।
এই মন্ত্রটি তিনবার মনে-মনে জব করবেন এবং এই মঙ্গল ঘটটি আপনি আপনার বাড়ির যে স্থানে স্থাপন করবেন সেখানে সেই ঘরের ঈশান কোণে অর্থাৎ উত্তর-পূর্ব দিকে স্থাপন করবেন এবং দূর্গা পূজার বিসর্জনের দিন পর্যন্ত এই ঘটটি আপনি আপনার বাড়িতে স্থাপন করে রাখবেন এবং সম্ভব হলে এই ঘটের প্রত্যেক দ্রব্যাদি প্রতি বৃহস্পতিবার নাগাদ আপনি পাল্টাতে পারেন। তবে প্রত্যেক দিন সকাল ও সন্ধ্যা বেলায় এই ঘরের সামনে প্রদীপ ও ধুপ জ্বালাবেন। এই মঙ্গল ঘট স্থাপনের ফলে সকল প্রকার অশুভ শক্তি দূরীভূত হয় শুভশক্তি বিরাজ করবে আপনার গৃহেতে। গৃহের সকল প্রকার বাস্তুদোষ দূর করবে এই মঙ্গলঘট।
আশা করি এই লেখাটির মাধ্যমে আপনি নিজেকে কিছুটা সমৃদ্ধ করতে পেরেছেন। ভালো লাগলে আমাদের অমৃত কথা ইউটিউব চ্যানেলটিকে ফলো করতে পারেন। ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।। এই কামনা রেখে আজ এখানেই শেষ করলাম। নমস্কার, ধন্যবাদ!
ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা