Breaking

Search Content

Follow Us

মঙ্গলবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

পিতৃপক্ষ ও দেবীপক্ষ আসলে কী - জানুন কিছু অজানা গুপ্তকথা

  নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই চ্যানেল এর প্রধান বিষয়বস্তু ।

আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল-" পিতৃপক্ষ ও দেবী পক্ষ কি?কেন এই পক্ষ দুটির নাম এমন? অন্যান্য পক্ষের থেকে কেন এই পক্ষ দুটির গুরুত্ব অত্যাধিক, কেন পিতৃপক্ষে পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পন করা হয়।"




পিতৃপক্ষ ও দেবীপক্ষ বা মাতৃপক্ষ কি? 

চাঁদের হ্রাস ও বৃদ্ধির ফলে দুটি পক্ষ তৈরি হয়। এই পক্ষদুটি হচ্ছে শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষ।চাঁদ যে পক্ষে হ্রাস পায় সেটি হলো কৃষ্ণপক্ষ। এই পক্ষে চাঁদ ক্ষয় হতে থাকে এবং অমাবস্যায় সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়। 

অন্যদিকে যে পক্ষে চাঁদ বৃদ্ধি পায় সেটি হলো শুক্লপক্ষ। এই পক্ষে চাঁদের আকার ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে এবং পূর্নিমায় পূর্ণচন্দ্রে পরিনত হয়। 

অন্যদিকে তিথি হচ্ছে চাঁদের হ্রাসবৃদ্ধি দ্বারা সীমাবদ্ধ কাল। যেমন প্রতিপদ, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া এভাবে পূর্ণিমা বা অমাবস্যা পর্যন্ত এ তিথি বিস্তৃত। এমনিভাবে বছরের ১২মাসে মোট ২৪টি পক্ষ রয়েছে, তার মধ্যে ২টি পক্ষ বিশেষভাবে তাৎপর্য্যপূর্ণ। এই পক্ষদুইটি হচ্ছে পিতৃপক্ষ ও দেবীপক্ষ। ভাদ্র পূর্ণিমার পরের কৃষ্ণ পক্ষকে বলা হয় পিতৃপক্ষ।এই পক্ষের অমাবস্যাকে বলা হয় মহালয়া। মহালয়ার পরের পক্ষকে বলা হয় দেবীপক্ষ। অর্থাৎ মহালয়া হচ্ছে পিতৃপক্ষ ও দেবীপক্ষ নামক পক্ষ দুটির মিলনক্ষণ। 

মহাভারত অনুসারে জানা যায়, মহাবীর কর্ণের আত্মা স্বর্গে গেলে সেখানে তাঁকে শুধুমাত্র মণিমাণিক্য খেতে দেওয়া হত। কোন প্রকার অন্ন বা জলের ব্যাবস্থা ছিল না। কিন্তু মণিমাণিক্য যতই মূল্যবান হোক না কেন তা খাওয়ার উপযুক্ত নয়। তাই তিনি দেবরাজ ইন্দ্রকে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে দেব, আমার খাদ্য হিসেবে এসব মণিমাণিক্য দিয়ে উপহাস করার কারণ কি?” দেবরাজ ইন্দ্র বললেন, ‘উপহাস নয় কর্ণ, তুমি সারাজীবন এসব মণিমাণিক্য দান করেছো, কিন্তু পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে কখনো জলও প্রদান করনি। তাই তোমার জন্যে এই ব্যবস্থা।’ কর্ণ বললেন, “ হে দেব, আপনি জানেন আমি আমার পালক পিতা মাতার গৃহে প্রতিপালিত হয়েছি। আমার প্রকৃত পূর্বপুরুষগন কারা তা সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্র ধারনা ছিল না। যখন জানতে পারলাম, পান্ডবগণের মাতা দেবী কুন্তী আমার নিজেরও মাতা তখন আর আমার কিছুই করার ছিল না। কারন তার পর পরই আমি আমার নিজের কনিষ্ঠ ভ্রাতার দ্বারা বীরগতি প্রাপ্ত হই। এমতাবস্থায় আমি কিই বা করতে পারি?” কর্ণের কথার যথার্থতা অনুধাবন করলেন দেবরাজ ইন্দ্র। তাই তিনি কর্ণকে পনেরো দিন তথা এক পক্ষকালের জন্য মর্ত্যে ফিরে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জল ও অন্ন দিতে অনুমতি দিলেন। ইন্দ্রের কথা মতো এক পক্ষকাল ধরে কর্ণ মর্ত্যে অবস্থান করে পিতৃপুরুষকে অন্নজল দিলেন। এভাবে তাঁর পাপ স্খলন হলো এবং যে পক্ষকাল কর্ণ মর্ত্যে এসে পিতৃপুরুষকে জল দিলেন সেই পক্ষটি পরিচিত হল পিতৃপক্ষ নামে।

 মহালয়ার আগে যে কাজ কখনোই করা উচিত নয় - জানুন বিস্তারিত ক্লিক করুন

 পিতৃতর্পন কি? মহালয়াতে কেন পিতৃতর্পন করা হয়?

পিতৃপক্ষ হল স্বর্গত পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে পার্বন শ্রাদ্ধ ও তর্পণাদির জন্য প্রশস্ত এক বিশেষ পক্ষ। সনাতন শাস্ত্রমতে, সূর্য কন্যারাশিতে প্রবেশ করলে পিতৃপক্ষ সূচিত হয়। এই পক্ষ পিত্রুপক্ষ, ষোলা শ্রাদ্ধ, কানাগাত, জিতিয়া, মহালয়া পক্ষ ও অপরপক্ষ নামেও পরিচিত। সনাতন সংস্কার মতে, যেহেতু পিতৃপক্ষে প্রেতকর্ম তথা শ্রাদ্ধ, তর্পণ ইত্যাদি মৃত্যু-সংক্রান্ত আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয়, সেই হেতু এই পক্ষ শুভকার্যের জন্য প্রশস্ত নয়। যখন কোন ব্যাক্তির মৃত্যু ঘটে তখন যমরাজ সেই সদ্যমৃত ব্যক্তির আত্মাকে পিতৃলোকে নিয়ে যান। এই পিতৃলোক স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। পুরাণ বলছে, স্থান, কাল, পাত্রভেদে জীবিত ব্যক্তির পূর্বের তিন পুরুষ বা সাত পুরুষ বা চৌদ্দ পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোকে বসবাস করেন বলে ধারণা করা হয়। পরবর্তী প্রজন্মের একজনের মৃত্যু হলে পূর্ববর্তী প্রজন্মের একজন পিতৃলোক ছেড়ে স্বর্গে গমন করেন এবং পরমাত্মায় লীন হয়ে যান। এবং এই প্রক্রিয়ায় তিনি শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের ঊর্ধ্বে উঠে যান, অর্থাৎ তার আত্মার শান্তি কামনায় আর কোন পূণ্যানুষ্ঠান করার প্রয়োজন পড়ে না।


পিতৃলোকে বসবাসরত পিতৃপুরুষগন পিতৃপক্ষের শুরুতেই পিতৃলোক পরিত্যাগ করে, অন্নজল গ্রহন করার উদ্দেশ্যে তাঁদের উত্তরপুরুষদের গৃহে অবস্থান করেন। এসময় তাদেরকে তৃপ্ত করার জন্য তিল, জল, ইত্যাদি দান করা হয়। এবং তাদের যাত্রাপথকে আলোকিত করার জন্য উল্কাদান করা হয়। শাস্ত্রমতে, যে ব্যক্তি তর্পণে ইচ্ছুক হন, তাঁকে তাঁর পিতার মৃত্যুর তিথিতে তর্পণ করতে হয়। পিতৃপক্ষে পুত্র কর্তৃক শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সনাতন ধর্মে অবশ্য করণীয় একটি অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের ফলেই মৃতের আত্মা স্বর্গে প্রবেশাধিকার পান। এই প্রসঙ্গে গরুড় পুরাণ গ্রন্থে বলা হয়েছে, “পুত্র বিনা মুক্তি নাই।” ধর্মগ্রন্থে গৃহস্থদের দেব, ভূত ও অতিথিদের সঙ্গে পিতৃতর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মার্কণ্ডেয় পুরাণ গ্রন্থে বলা হয়েছে, পিতৃগণ শ্রাদ্ধে তুষ্ট হলে স্বাস্থ্য, ধন, জ্ঞান ও দীর্ঘায়ু এবং পরিশেষে উত্তরপুরুষকে স্বর্গ ও মোক্ষ প্রদান করেন। তবে বাৎসরিক শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যাঁরা অপারগ, তাঁরা সর্বপিতৃ অমাবস্যা পালন করে পিতৃদায় থেকে মুক্ত হতে পারেন। জীবিত ব্যক্তির পিতা বা পিতামহ যে তিথিতে মারা যান, পিতৃপক্ষের সেই তিথিতে তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। তবে এই নিয়মের কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে। যেমন পূর্ববর্তী বছরে মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধ হয় চৌথা ভরণী বা ভরণী পঞ্চমী তিথিতে। সধবা নারীর মৃত্যু হলে, তাঁর শ্রাদ্ধ হয় নবমী বা অবিধবা নবমী তিথিতে। শিশু বা সন্ন্যাসীর শ্রাদ্ধ হয় চতুর্দশী তথা ঘট চতুর্দশী তিথিতে। অস্ত্রাঘাতে বা অপঘাতে মৃত ব্যক্তিদেরও শ্রাদ্ধ হয় এই তিথিতেই তথা ঘায়েল চতুর্দশী তিথিতে। মাতার কুলে পুরুষ সদস্য না থাকলে সর্বপিতৃ অমাবস্যায় দৌহিত্র মাতামহের শ্রাদ্ধ করতে পারেন। কোনো কোনো বর্ণে কেবলমাত্র পূর্ববর্তী এক পুরুষেরই শ্রাদ্ধ করা হয়। পিতৃপক্ষের শেষে তথা সূর্য বৃশ্চিক রাশিতে প্রবেশ করলে, পিতৃপুরুষগণ পুনরায় পিতৃলোকে ফিরে যান। এই শেষ দিনটি হচ্ছে অমাবস্যা, যেটি আমাদের কাছে মহালয়া নামে বহুল প্রচলিত।

পিতৃপক্ষ ও দেবীপক্ষ এই পক্ষদুটির সরাসরি কোন সম্পর্ক না থাকলেও অমাবশ্যায় পিতৃপূজা সেরে পরের পক্ষে দেবীপূজায় প্রবৃত্ত হতে হয়। তাই দেবীপূজার পক্ষকে বলা হয় দেবীপক্ষ বা মাতৃপক্ষ, মহালয়া হচ্ছে পিতৃপক্ষের শেষ দিন এবং দেবী পক্ষের শুরুর পূর্ব দিন। পিতৃপক্ষে আত্মসংযম করে দেবী পক্ষে শক্তি সাধনায় প্রবেশ করতে হয়। দেবী শক্তির আদিশক্তি, তিনি সর্বভূতে বিরাজিত। তিনি মঙ্গল দায়িনী করুণাময়ী। সাধক সাধনা করে দেবীর বর লাভের জন্য, দেবীর মহান আলয়ে প্রবেশ করার সুযোগ পান বলেই এ দিনটিকে বলা হয় মহালয়া। পুরাণ মতে এই দিনেই দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকে আবির্ভূতা হন। এদিন অতি প্রত্যুষে চণ্ডীপাঠ করার রীতিও রয়েছে সনাতন সমাজে। মহালয়ার পর প্রতিপদ তিথি থেকে শুরু হয় এই দেবী আদ্যাশক্তির বন্দনা। বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উত্‍সবও এই দেবী আদ্যাশক্তির বন্দনা তথা শারদীয়া দুর্গাপূজা।


‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা।

নমস্ত্যসৈ নমস্ত্যসৈ নমস্ত্যসৈ নমঃ নমঃ’ ।।


শ্রীশ্রীচণ্ডীর এই শ্লোক উচ্চারণের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় শুভ মহালয়া। শাস্ত্রমতে দেবী দুর্গার আবাহনই হলো মহালয়া। এর মাধ্যমে মর্ত্যলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয় দেবী দুর্গাকে। সূচনা হয় দেবীপক্ষের। সনাতন ধর্মের বহুবিধ তত্ত্বের মধ্যে মহালয়া তত্ত্ব সুগভীর যোগতাত্ত্বিক দর্শন তত্ত্ব। দেবী শক্তিকে পূজা করার জন্য অর্থাত্‍ দেবী শক্তি আপন সাধনায় সঞ্চার করার জন্য সুগভীর তাত্‍পর্য ব্যঞ্জক তিথি হচ্ছে মহালয়া।সাধক যখন কুণ্ডলিনী শক্তিকে মূলাধারে জাগ্রত করে ক্রমে ক্রমে বৃহত্‍ কূটস্থে প্রবেশ করেন তখন তা মহাশক্তিতে পরিণত হয়। এই শক্তির সাহায্যে সাধক তখন মহিষাসুর বধ করতে পারেন। মহী অর্থাত্‍ ভূমিকে যে কামনা করে সে হচ্ছে মহিষ। যে পৃথিবীকে উগ্রভাবে ভোগ করতে চায় সেই ব্যাক্তি হচ্ছে মহিষ বা মহিষ বৃত্তিসম্পন্ন। উল্লেখ্য, মহিষ ক্রোধী জীব, ভোগ করতে না পারলে সে ক্রুদ্ধ হবে স্বাভাবিকভাবে। সাধকের কাজ হবে তখন বৃহত্‍ কূটস্থে বা মহতের আলয়ে বা মহালয়ে প্রবেশ করে জাগ্রতা দেবীশক্তির সাহায্যে সেই ভোগপ্রবৃত্তি রূপ মহিষাসুরকে পরাজিত করা। মহিষাসুরের সঙ্গে লড়াই করার যোগ্যতা সাধকের তখনই অর্জিত হবে যখন সে মহালয়াতে প্রবেশ করবে। তাই মহালয়া অমাবস্যার পরদিন থেকেই দেবীপক্ষের শুরু হয়। দেবীপক্ষ মানে অসুরের বিরুদ্ধে দেবীর সংগ্রামের পক্ষ, সংগ্রামে দেবীর জয়ের পক্ষ।


চণ্ডীপূজা, চণ্ডীপাঠ ইত্যাদি ধর্মানুষ্ঠানের মাধ্যমে মহালয়া উদযাপিত হয়। এই সকল ধর্মানুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য সাধনার মাধ্যমে মহতের আলয়ে অর্থাত্‍ মহালয়ে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত হওয়া। এ দিন মন্দিরে মন্দিরে বেজে ওঠে শঙ্খধ্বনি। পুরোহিতগণের শান্ত, অবিচল ও গম্ভীর কন্ঠ থেকে ভেসে আসে সুমধুর চণ্ডীপাঠ। এই মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে দেবতারা দুর্গাপূজার জন্য নিজেদের জাগ্রত করেন। তারা সমস্বরে দেবীকে আহ্বান জানান পৃথিবীর ঘোর অন্ধকার দূরীভূত করে মঙ্গল প্রতিষ্ঠা করার জন্য। মহালয়া সূচিত হয় ঘোর অমাবস্যায় এবং দেবী আদ্যাশক্তির মহাতেজের আলোয় সেই অমাবস্যা দূর হয় ধীরে ধীরে।

আশাকরি লেখা টি পড়ার পর আপনারা নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পেরেছেন। পারলে নিজের আপনজনের সাথে শেয়ার করবেন। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন, 

নমস্কার! ধন্যবাদ!

ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা