নবরাত্রি নয়টি রাতের তাৎপর্য কি, নবদুর্গা কারা, জানুন মা দুর্গার নয়টি রূপ সম্পর্কে

  নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইট এর প্রধান বিষয়বস্তু ।

আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল-" নবরাত্রির নয়টি রাতের তাৎপর্য"।।

আমরা নবরাত্রি সম্পর্কে প্রত্যেকেই জানি কিন্তু এই নবরাত্রির নয়টি রাতের তাৎপর্য কী, তা হয়তো অনেকেই সঠিকভাবে জানেন না।

নবরাত্রি এবং দুর্গাপূজা একে অপরের পরিপূরক। আশ্বিন মাসে শরৎকালে একদিকে যেমন দুর্গাপুজো হয়। ঠিক তেমনি নবরাত্রিও হয়। হিন্দু সনাতন ধর্ম মতে মহালয়ার আগের ১৫ দিন থাকে পিতৃপক্ষ এবং মহালয়ার দিন থেকে শুরু হয় দেবীপক্ষের। দেবীপক্ষের সূচনা কালে প্রথম দিন অর্থাৎ মহালয়ার পর দিন থেকে নবমী পর্যন্ত এই নয়টি রাত্রে মা দুর্গার নয়টি আলাদা আলাদা রূপকে শাস্ত্র অনুযায়ী পূজা করা হয়। একেই বলা হয় 'নবরাত্রি'। দুর্গার এই নয়টি শক্তি কে অনেকে আবার 'নবদুর্গা' ও বলে থাকেন। 

এই নয়টি শক্তির নয়টি আলাদা আলাদা রূপ গুলি হল-

প্রথম রূপ শৈলপুত্রী। নবরাত্রির প্রথম রাত্রে মা দুর্গার শৈলপুত্রী রূপকে পূজা করা হয়। শৈল শব্দের অর্থ হচ্ছে পাহাড় বা পর্বত। আর মা দুর্গা হলেন হিমালয় পর্বতের কন্যা। দেবীর এই রূপটিতে দেবীর বাহন হিসেবে থাকে ষাঁড় এবং দেবীর হাতে থাকে পদ্মফুল ও ত্রিশূল।

দ্বিতীয় রূপটি হলো ব্রহ্মচারিণী। নবরাত্রির দ্বিতীয় রাত্রে মা দুর্গার ব্রহ্মচারিণী রূপটিকে পূজা করা হয়। শ্রী ব্রহ্মার বরে দেবী এই রূপটি ধারণ করেছিলেন। এইরূপটি কোন ভক্ত স্মরণ করলে সে ব্রহ্মচারীতা লাভ করতে পারে। দেবীর এই রূপটিতে এক হাতে থাকে কমণ্ডলু এবং অন্য হাতে থাকে রুদ্রাক্ষ জপ মালা।

তৃতীয় রূপটি হলো চন্দ্রঘন্টা। নবরাত্রির তৃতীয় রাত্রে দেবী চন্দ্রঘন্টা রূপটিকে পূজা করা হয়। এইরূপে দেবীর মাথায় থাকে চাঁদ এবং দেবরাজ ইন্দ্রের দেওয়া ঘন্টা থাকে দেবীর হাতে।

চতুর্থ রূপটি হলো কুষ্মান্ডা। নবরাত্রির চতুর্থ রাত্রে পূজা করা হয় দেবীর এই কুষ্মান্ডা রূপটিকে। এই রূপটির অর্থ হলো দুর্বিষহ ত্রিতাপ। কথিত আছে দেবী তার এইরূপ টির মাধ্যমে অর্থাৎ তার দুর্বিষহ ত্রিতাপ এর মাধ্যমে সমগ্র অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করেছিলেন। তাই দেবীর এই রূপটিকে নবরাত্রি চতুর্থ রাত্রিতে পূজা করা হয় ।

পঞ্চম রূপটি হল স্কন্দমাতা। নবরাত্রির পঞ্চম রাতে পূজা করা হয় দেবীর এই স্কন্দমাতা রূপটিকে। স্কন্দ অর্থাৎ কার্তিক। কার্তিক ছিলেন যুদ্ধের দেবতা। আর স্কন্দমাতার অর্থ হলো স্কন্দের মা বা দেব সেনাপতি। এইরূপ টিতে দেবী ছিলেন প্রবল শক্তিশালী। এইজন্য নবরাত্রি পঞ্চম রাত্রিতে পূজিত হয় দেবীর স্কন্দমাতা রূপটি।

ষষ্ঠ রূপটি হলো কাত্যায়নী। নবরাত্রির ষষ্ঠ রাত্রে পূজিত হয় দেবীর এই কাত্যায়নী রূপটি। পুরাণ অনুযায়ী কাত্যায়ন নামে এক ঋষি ছিলেন। দেবী তার ঘরে জন্ম নেন।এই কারণে দেবীর নাম হয় কাত্যায়নী।

সপ্তম রূপটি হলো কালরাত্রি। নবরাত্রির সপ্তম রাত্রে পূজিত হয় দেবীর এই কালরাত্রি রূপটি। দেবীর এই রূপটি হলো সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রূপ। এইরূপে দেবীর গলায় ঝুলেছে বজ্রের মালা। দেবীর নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে ভয়ঙ্কর অগ্নিশিখা। তিনি ত্রিনয়নী। এইরূপে দেবী কৃষ্ণবর্ণের। কাল রাত্রির রূপ ভয়ঙ্কর হলেও তিনি সুফলের দেবী।এইরূপে দেবীর বাহন হল গাধা। দেবীর কালরাত্রি রূপটির উপাসনা করলে ভুত-প্রেত, দৈত্য, দানব, রাক্ষস এই কালরাত্রি রূপের ভয়ে পালিয়ে যায়।

অষ্টম রূপটি হলো মহাগৌরী। নবরাত্রির অষ্টম রূপে দেবীকে মহাগৌরী রূপে পূজা করা হয়। এইরূপে দেবী সন্তানসহ্- শিবসোহাগিনী। এই রূপে দেবী হলেন মা দূর্গা। বিশ্বাস করা হয় যে দেবীর নবরাত্রির অষ্টম রাত্রিতে অর্থাৎ অষ্টমীতে পূজা করলে সব পাপ ধুয়ে যায়। মহাগৌরী সাদা রঙের পোশাকে সজ্জিত থাকে। এইরূপে দেবীর বাহন গরু।

নবম রূপ তথা দেবির শেষ রূপটি হলো সিদ্ধিদাত্রী। নবরাত্রির নবম রাতে দেবীর এই সিদ্ধিদত্রী রূপটিকে পূজা করা হয়। এই রূপ টিতে দেবী পদ্মের উপর বিরাজমান। চতুর্ভূজা তিনি লাবণ্যময়ী যোগমায়া মহেশ্বরী। এই রূপে দেবী ভক্তদের ডাকে বা সিদ্ধিলাভ প্রদানে সাড়া দেন।

 নবরাত্রির প্রত্যেকটি রাত দেবীর নয়টি রূপের তাৎপর্য বহন করে। যা সমাপন বা শেষ হয় বিজয়া দশমীর মাধ্যমে।

আশাকরি লেখাটি পড়ে আপনারা নবরাত্রির প্রত্যেকটি রাতের তাৎপর্য বুঝতে পেরেছেন ও নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পেরেছেন। ভালো লাগলে আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলটি ফলো করতে পারেন।

ভালো থাকুন , সুস্থ থাকুন।

নমস্কার, ধন্যবাদ।।

ভগবান আপনার মঙ্গল করুক।