নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।
আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল- ধনতেরাসের (Dhanteras) দিন যা করণীয়-ধনতেরাসের রহস্য।।
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী একটি পবিত্র দিন হিসেবে গণ্য করা হয় ধনতেরাসকে। কারণ ধনোদেবী মা লক্ষী এবং ধনদেবতা কুবের দুজনেরই এই দিনে আরাধনা করা হয়। যে কারণে শাস্ত্র মতে এই দিনটি অত্যন্ত পবিত্রতম একটি দিন। আর এই দিন আপনি বেশ কিছু নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে ভক্তি সহযোগে মা লক্ষী এবং কুবেরর পূজা করেন তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার পরিবারের সুখ , সমৃদ্ধি এবং ধনসম্পত্তির আগমন ঘটবেই ঘটবে। আজকে এই লেখাটির মাধ্যমে আলোচনা করব কিভাবে মা লক্ষ্মী এবং ধনদেবতা কুবেরের পূজা বা আরাধনা করবেন। এছাড়া কোন সঠিক সময়ে আপনি কুবেরের এবং মা লক্ষ্মীর আরাধনা করবেন এবং এর সাথে ঐদিন কোন দ্রব্য বা জিনিসটি কিনবেন তা সম্পর্কে আলোচনা করব।
5 দিনব্যাপী দীপাবলি উৎসবের প্রথম দিন হল ধনতেরাস। ধন মানে সম্পদ বা অর্থ। আর তেরাশ হল ত্রয়োদশ অর্থাৎ কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের 13 তম দিন। আমাদের বিশ্বাস রয়েছে এই ধনতেরাসের দিন বিশেষ কিছু দ্রব্য কিনে আনা সম্ভব হয় তাহলে একদিকে যেমন ধনদেবী লক্ষী তিনি গৃহে অবস্থান করেন এবং অন্যদিকে ধনদেবতা কুবেরও এতে সন্তুষ্ট হন।
ধনতেরাসের পৌরাণিক কাহিনী বা ইতিহাস
ধনতেরাসের ইতিহাস ঘাটলে আমরা দেখতে পাই প্রাচীনকালে রাজা হিমের পুত্র এই ভাগ্য নিয়ে আসেন যে বিয়ের চতুর্থতম দিন রাত্রিবেলায় সাপের কামড়ে তার মৃত্যু হবে। তার সদ্য স্ত্রী স্বামীকে বাঁচাতে নিজের যাবতীয় সোনা রুপার গহনা স্তুপের আকারে জর করে রাখে স্বামীর শোবার ঘরের দরজার সামনে। সমস্ত ঘর প্রদীপের আলোয় সাজিয়ে দেন সাপের পথ আটকাতে। এরপর তিনি সারারাত গল্প বলে গান গেয়ে স্বামীকে জাগিয়ে রাখেন। যখন যমরাজ সাপের বেশে সেই রাজপুত্রের ঘরে প্রবেশ করতে যান তখন তার চোখ ধাঁধিয়ে যায় অলঙ্কার ও প্রদীপের উজ্জলতায়। প্রবেশে বাধা পেয়ে যমরাজ অন্য পথ হয়ে প্রবেশ করতে যান। কিন্তু রাজরানির গল্পে ক্রমশ আকৃষ্ট হয়ে সারারাত সেখানে কাটিয়ে পরদিন ভোরে নিঃশব্দে ফিরে যান। তাই যমের হাত থেকে স্বামীকে রক্ষা করার জন্য এই দিনটিকে যোমদ্বীপ দান বলেও উল্লেখ করা হয়। যে কারনেই এই দিনে প্রদীপ জ্বালানো হয়। তাই প্রদীপ জ্বালানোর একটি নির্দিষ্ট নিয়ম ও পদ্ধতি রয়েছে। সে সম্পর্কে তে একটু পরে আলোচনা করছি। এই দিনটি সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এই কারণেই কারণ এই দিনকে মা লক্ষ্মীর পুনরাগমন ঘটে। আর এর পেছনে স্বাস্থ্যসম্মত যে কারণটি তা হল - একসময় দুর্বাসা মুনির অভিশাপে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন মা লক্ষী। রাক্ষস দের সঙ্গে লড়াই করে ধনতেরাসের দিনেই দেবতারা ফিরে পান দেবী লক্ষ্মী কে। হারিয়ে যাওয়া লক্ষ্মীকে ফিরে পাওয়ার উৎসবই হলো ধনতেরাস। তাই মনে করা হচ্ছে গৃহে যদি কোনো আর্থিক অভাব-অনটন দেখা যায় অথবা ব্যবসার ক্ষেত্রে যদি উন্নতি না হয় বা ক্ষতির সম্মুখীন হন তাহলে এই বিশেষ দিনে কিছু নিয়ম,পদ্ধতি ও পূজার্চনা আপনার সমস্ত ধরনের সমস্যা বিশেষ করে আর্থিক জনিত কোনো সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।
এই বিশেষ দিনের গুরুত্ব প্রসঙ্গে শাস্ত্র আরও একটি বিষয় উল্লেখ করেছে। মনে করা হয় যে কুবের তার আরাধ্যা দেবী আদিলক্ষী কে ভক্তির দ্বারা সন্তুষ্ট করতে পেরেছিলেন। এর ফলে ধনতেরাসের দিনে কুবের এবং লক্ষ্মী দেবীর পূজা একই সঙ্গে করা হয়ে থাকে। এছাড়াও কথিত আছে যে কূপের আজকের দিনে বিবাহের জন্য ভগবান বিষ্ণুর থেকে প্রয়োজনীয় কিছু অর্থ নিয়েছিলেন। তাই আজকের দিনে ভগবান বিষ্ণুর মন্দিরে অনেকে অর্থ দান করেন। যাতে ভগবান বিষ্ণুর কাছে ধার শোধ করা যায়।
•ধনতেরাস কিভাবে পালন করবেন?
এবার আলোচনা করবো এই ধনতেরাস কিভাবে পালন করবেন তাই নিয়ে। তাহলে প্রথমেই বলে রাখা ভালো ধনতেরাসের আগে সারাবাড়ি ভালো করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। এরপর ধনতেরাসের দিন বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে মূল প্রবেশ পথের সামনে রঙ্গলি (rangoli) দিতে হয়। এছাড়াও লাল রংয়ের রাঙ্গলি দিয়ে মা লক্ষ্মীর পা আঁকতে হয়। তারপর নিজের মতো করে লক্ষ্মী দেবীকে পূজা করতে হয়।
আর লক্ষ্মী দেবীর পূজা অর্চনার সহজ সরল পদ্ধতি ইতিমধ্যেই পূর্বের একটি লেখাতে আপনাদের কাছে ব্যক্ত করেছি প্রয়োজন বোধ করলে দেখে নিতে পারেন-CLICK HERE
এর সাথে সাথে প্রত্যেক বৃহস্পতিবার মা লক্ষ্মীর ব্রতকথা ও পাঁচালী পড়তে ভুলবেন না। এই মা লক্ষ্মীর পাঁচালী সম্পর্কে একটি লেখনি এর আগেই আপনাদের সামনে প্রকাশ করেছি। প্রয়োজনবোধ করলে সেটি দেখে নিতে পারেন-CLICK HERE
{ধনতেরাসের রীতিনীতি}
এবার আসবো ধনতেরাসের পূজা পদ্ধতি নিয়ে। প্রথমে লাল রঙের একটি কাপড় নিতে হবে তারপরে একটি ঘট বা বাটি নিতে হবে। মনে রাখবেন এই পাত্রটির শুধুমাত্র ধনতেরাস এর জন্যই যেন নতুন কেন হয় এবং পাত্রটি যেন সোনা, রুপা, কাঁসা, বা পিতলের মধ্যে যেকোনো একটি দিয়ে তৈরি হয় । সাধ্য অনুযায়ী এই ধরনের একটি পাত্র ধনতেরাসের দিন কিনবেন। এবার এই পাএরের মধ্যে চাল দিতে হয় এছাড়াও পাঁচটি সুপারি এবং 21 টি পদ্মবীজ দিতে হয়। এর সঙ্গে আরও একটি ঘড়িতে গঙ্গা জল ভরে তার মধ্যে চিনি ও সোনা বা রূপার পয়সা দিতে হয়। যে ঘটিটি আপনি ব্যবহার করবেন সেটি কখনোই যেন লোহার অথবা স্টিলের না হয় এই দিকটা খেয়াল রাখবেন। উক্ত ঘটিতে জলের উপর ফুল বা মালা দিতে হয়। একটি জিনিস খেয়াল রাখবেন যে ঘরে লক্ষীদেবী এবং গণেশের মূর্তি রয়েছে তার ডান দিকে নতুন কেনা সোনা বা রুপার গহনা অথবা যে সোনা বা রূপার পাত্রটি কিনেছেন সেটিকে রাখতে হবে। যদি নতুন কোন গহনা না কিনে থাকেন তাহলে সে ক্ষেত্রে পুরনো কোনো গহনা ও রাখতে হবে। সেই মূর্তির পাশে অবশ্যই কিছু টাকা রাখবেন। এরপর নতুন প্রদীপ জ্বালাতে হবে। মনে রাখবেন প্রদীপ যেন টানা 2 ঘন্টা জ্বলে। এছাড়াও ভগবানকে উদ্দেশ্য করে কিছু মিষ্টি ও নৈবেদ্য নিবেদন করতে হবে। যদি সম্ভব হয় সারারাত প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখবেন। আর যদি সম্ভব না হয় তাহলে অন্তত দু'ঘন্টা অবশ্যই জ্বালাবেন। প্রদীপটি মাটির হলে কোন সমস্যা নেই। প্রদ্বীপটিতে আপনি সরষের তেল অথবা ঘি ও ব্যবহার করতে পারেন। খেয়াল রাখবেন প্রদীপটি জানো লোহা, স্টিল বা অ্যালুমিনিয়াম ধাতু দ্বারা তৈরি না হয়। আর চেষ্টা করবেন বাড়ির প্রত্যেকটি দিকে প্রত্যেকটি কোনায় অন্তত একটি করে হলেও প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখবেন। অন্তত এক থেকে দুই ঘণ্টা এই প্রদীপ জ্বালানো যেন থাকে। আর যদি বেশি পরিমাণে প্রদীপ কেনার সামর্থ্য আপনার না থাকে তাহলে বাড়ির প্রতিটি সদস্যর নামে অন্তত একটি করে হলেও প্রদীপ জ্বালাবেন। এরপর আপনি বিষ্ণুদেব কে স্মরণ করে দেবী লক্ষী এবং কুবেরের আরাধনা করবেন। এরপর মা লক্ষ্মী ও কুবের এর কাছে আপনার যে আর্থিক সমস্যা সেটি ব্যক্ত করবেন। মা লক্ষ্মীর কাছে এবং ধনদেবতা কুবের এর কাছে প্রার্থনা করবেন আর্থিক সংকট দূর করার জন্য।
ধনতেরাসের এই সমস্ত প্রক্রিয়া করার সবথেকে উপযোগী সময় হল প্রদোষ কাল বা স্থির লগ্ন। এই প্রদোষ কাল বা স্থির লগ্ন বলতে বোঝায় সূর্য অস্ত যাওয়ার পরবর্তী 2 ঘন্টা 24 মিনিট সময় কে। ঠিক এই সময়ে লক্ষ্মী দেবীর আরাধনা করা হয়। আর মনে করা হয় এই সময় পূজা করলে ঘরের লক্ষী দেবী স্থির থাকে।
আশাকরি লিখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন অথবা আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলটিকে ফলো করতে পারেন।
ভালো থাকুন , সুস্থ থাকুন।
নমস্কার , ধন্যবাদ ।।
ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা