Breaking

Search Content

Follow Us

শুক্রবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২১

মা কালী ও কালী পূজার (Maa Kali) ইতিহাস || Kali puja / Maa kali ||

 নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।

আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল- মা কালী ও কালী পূজার (Maa Kali) ইতিহাস এবং কি করে মা কালীর উৎপত্তি।




মা কালী হলেন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে শক্তির দেবী। মূলত কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে যে কালীপূজা টি হয় তাকে বলা হয় দীপান্বিতা কালীপূজা।  দীপান্বিতা কালীপূজা মূলত দুর্গাপূজার শেষে পরবর্তী অমাবস্যা তিথিতে হয়।  মা কালীর অন্য নাম শ্যামা বা আত্মশক্তি। তন্ত্র শাস্ত্র মতে দশমহাবিদ্যায় বিশেষ ভূমিকা মায়ের। তন্ত্র মতে পূজিত প্রধান দশমহাবিদ্যার মধ্যে মধ্যে প্রথম ও অন্যতম হলেন মা কালী। পুরাণে মা কালীর বিভিন্ন রূপের বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে সাধারণভাবে মা কালী হলেন চারটি হাত বিশিষ্ট এবং তার গলায় ঝুলছে মুণ্ডমালা। মা কালীর গায়ের রং হয় কালো এবং তিনি তার স্বামী শিবের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছেন।মা কালীর এই রুপ মূলত আমাদের মনে ভয় জাগায়। তবে যাই হোক মা কালী সম্পর্কে আমরা কমবেশি সবাই জানি। কিন্তু মা কালীর উৎপত্তি সম্পর্কে আমরা কে কতটা জানি?        - আজ আপনাদের এই লেখাটিতে জানাবো মা কালীর ইতিহাস  অর্থাৎ মা কালীর উৎপত্তি সম্পর্কে।


বাংলায় মা কালীর পূজার ধারণাটি সুপ্রাচীন। মা কালীর এই পূজার পেছনে রয়েছে একটি পৌরাণিক কাহিনীও।


কালী- শব্দটি হল 'কাল' শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ রূপ। যার অর্থ কৃষ্ণ বা গৌড় বর্ণ। প্রাচীন শাস্ত্রমতে মা কালীর ইতিহাস খনন করলে দেখা যায়- মা কালী হলো দেবী দুর্গার আরেকটি রূপ। আবার হরিবংশম গ্রন্থ অনুযায়ী মা কালী হলেন 'কাল' শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ রূপ। সেই কারণে মা কালীর আরেকটি রূপের বর্ণনা এখানে পাওয়া যায়- 'কাল' অর্থাৎ 'নির্ধারিত সময়'। তা প্রসঙ্গক্রমে মৃত্যু অর্থেও ব্যবহৃত হয়।

মহাভারতে এমন এক দেবীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে যিনি হলেন দেবী কালরাত্রি বা কালী।

কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে 'দীপান্বিতা' কালীপূজা বিশেষ জাঁকজমকপূর্ণ। এছাড়াও মাঘ মাসের চতুর্দশী তিথিতে 'রটন্তী কালীপূজা' ও জৈষ্ঠ মাসের চতুর্দশী তে 'ফলহারিনী কালী' পূজা বিশেষ জনপ্রিয়। এছাড়াও ভাদ্র পৌষ মাসের অমাবস্যা তিথিতে কালীপূজা বিশেষভাবে জনপ্রিয়। কোথাও কোথাও অমাবস্যা তিথিতে মঙ্গলবারও কালী পূজা হয়ে থাকে।


{মা কালী ও কালীপূজার ইতিহাস}

(Maa Kali)


এই কালীপূজা 1768 খ্রী: মতান্তরে 1777 খ্রী: কাশীনাথ রায় রচিত শ্যামা সপর্যাবিধি বা কালী সপর্যাসবিধি গ্রন্থে সর্বপ্রথম এই কালী পূজার উল্লেখ পাওয়া যায়। 


সপ্তদশ শতকে বাংলায় কালী পূজার কিছু কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে। নবদ্বীপের তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ বাংলায় প্রথম মা কালীর মূর্তি বা প্রতিমা পূজার প্রচলন করেছিলেন। পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন কৃষ্ণানন্দ স্বয়ং প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করে কালী পূজা করতেন। তারপর থেকেই ধীরে ধীরে মা কালীর প্রতিমা পূজা শুরু হয়। তবে পূর্বে কালী উপাসক গন তাম্রটাটে ইস্ট দেবী যন্ত্রকে খোদাই করে বা আঁকিয়ে মা কালীর পূজা করতেন। 


এছাড়াও কথিত আছে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় অষ্টাদশ শতকে এই পূজার প্রচলন করে এবং রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পুত্র ঈশানচন্দ্র বহু অর্থ ব্যয় করে কালী পূজার আয়োজন করতেন। সেই থেকেই নদীয়ার কালীপুজো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যার প্রভাবে ধীরে ধীরে মায়ের পূজা শুরু হয়।

  

উনিশ শতকে বাংলার বিভিন্ন ধনী জমিদার পৃষ্ঠপোষকতায় কালীপুজো ব্যাপক আকার ধারণ করে। এই ভাবেই কালী মূর্তির পূজা শুরু হয় এবং তা ধীরে ধীরে এখন বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় আকার ধারণ করেছে।



•মা কালীর বিভিন্ন রূপের বর্ণনা:-

তন্ত্র ও পুরাণ অনুযায়ী মা কালীর বিভিন্ন রূপের বর্ণনা পাওয়া যায়। যথা-দক্ষিণা কালী, শ্মশান কালী, ভদ্রকালী, রক্ষাকালী, গৃহকালী, চামুণ্ডা, ছিন্নমস্তার প্রভৃতি । মহাকাল সংহিতা অনুসারে মা কালীর আরো কিছু রূপের কথা জানা যায়। যথা - সিদ্যিকালী, কঙ্কাল কালী, ধনকালী, চন্ডীকালীর মতো রূপ দেখা যায়। এছাড়াও বিভিন্ন মন্দিরে- ব্রহ্মময়ী, আনন্দময়ী, ভবতারিণী  ইত্যাদিতেও মা কালীকে পূজা করতে দেখা যায়। অভিনব গুপ্তের 'তন্ত্র লোক' ও 'তন্ত্রসার' গ্রন্থে মা কালীর তেরোটি রূপের বর্ণনা পাওয়া যায়। যথা- সৃষ্টি কালী, স্থিতি কালী, সংহার কালী, রক্ত কালী, মৃত্যু কালী, যম কালী, রুদ্র কালী, পরমারকো কালী, মার্তণ্ড কালী, কালাগ্নি রুদ্র কালী, মহাকালী, মহাভৈরব গোঢ় ও চন্ড কালী।


মা কালীর এতগুলি রূপের মধ্যে দক্ষিণাকালী অধিক পূজীয়মান। তার চার হাতে খরগ ও গলায় ঝুলছে মুণ্ডমালা। তার গায়ের রং কালো এবং তিনি শিবের ওপর ডান পা সামনের দিকে রেখে শিবের বুকে ভর করে উদীয়মান অবস্থায় আছে। তার মাথার চুল হাওয়ায় বিলীন। তিনি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর রূপ বহন করেন।


•মা কালীর পরম ভক্তগন-

এই মা কালীর উপাসকদের মধ্যে অন্যতম হলেন- বামাক্ষ্যাপা, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, রামপ্রসাদ সেন, কমলাকান্ত ভট্টাচার্য প্রমুখ। এছাড়াও বাংলা সাহিত্য ও সংগীত চর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো শ্যামা সংগীত। 


•উল্লেখযোগ্য প্রাচীন কালী মন্দির- 

মা কালীর মন্দিরের মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য হলো কলকাতার দক্ষিণেশ্বরের কালীঘাট মন্দির। এটি একটি সতীপীঠ। এছাড়াও তারাপীঠ এবং হালিশহরের রামপ্রসাদী কালীমন্দির প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এর সাথে সাথে আসামের কামাখ্যা কালী মন্দির খুবই জাগ্রত এবং উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বাংলাদেশে বেশকিছু জাগ্রত কালীমন্দির এখনো বর্তমান।

আশাকরি লিখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন এবং জানতে সক্ষম হয়েছেন মা কালীর ইতিহাস সম্পর্কে। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন অথবা আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলটিকে ফলো করতে পারেন।

ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

 নমস্কার, ধন্যবাদ।। 

ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা