Breaking

Search Content

Follow Us

শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২১

উত্থান একাদশী ব্রত কথা মাহাত্ম্য 2021, নিয়ম, পারণ, সময়সূচী || Probodhini dev uthani ekadashi 2021

  নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।

আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল- উত্থান একাদশী কি?  এই একাদশী কেন পালন করা হয়ে থাকে ||  কীভাবেই বা এই উত্থান একাদশী পালন করতে হয়?  ২০২১ সালে উত্থান একাদশীর সময় - এই সমস্ত কিছু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব আজকের লেখাটিতে।


ভগবান বিষ্ণুর শয়ন,পার্শ্ব পরিবর্তন এবং উত্থান উপলক্ষে আষাঢ়, ভাদ্র এবং কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষে যে একাদশী পরে তা বিশেষ শুভ ফলপ্রদ হিসেবে গণ্য করা হয়।উত্থান একাদশী এই সমস্ত একাদশীর মধ্যে একটি অন্যতম একাদশী। শাস্ত্র অনুসারে এই সময় ভগবান বিষ্ণু শয়ন থেকে জেগে ওঠেন। সেই কারণেই এই একাদশীর নাম উত্থান একাদশী। প্রত্যেক বছর পবিত্র দামোদর মাস তথা কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষে এই উত্থান একাদশী তিথিতে ব্রত পালন করা হয়ে থাকে। এই একাদশী নানা দিক থেকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।উত্থান একাদশীর ব্রত কথায় তথা ব্রত মাহাত্ম্য এই বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। 


স্কন্দ পুরাণে বর্ণিত ব্রহ্মা- নারদ সমন্বয়ে এই উত্থান একাদশী সম্পূর্ণ বর্ণনা করা হয়েছে। যা উত্থান একাদশী ব্রতকথা হিসেবে গণ্য করা হয়। পবিত্র উত্থান একাদশী ব্রত কথা তথা ব্রত মাহাত্ম্য তে বলা হয়েছে- একদিন মহারাজ যুধিষ্ঠির ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন- কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম কি এবং সেই একাদশীর গুরুত্ব কতখানি?

এই প্রসঙ্গে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন- হে রাজন! কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম- 'উত্থান' তথা 'প্রবোধিনী' একাদশী। প্রজাপতি ব্রহ্মা পূর্বে নারদের কাছে এই একাদশী সম্পর্কে কীর্তন করেছিলেন। এখন তুমি আমার কাছে সেই কথা শ্রবণ করো। এই বলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই উত্থান একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য সম্পর্কে যুধিষ্ঠিরের কাছে ব্যক্ত করতে শুরু করলেন।

যারা এই একাদশী ব্রত পালন করেন তাদের এই একাদশী ব্রত পালনের সময় এই  ব্রতকথা তথা ব্রত মাহাত্ম্য পাঠ বা শ্রবণ করতে হয়। এ সম্পর্কিত একটি ভিডিও আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া রয়েছে প্রয়োজন বোধ করলে সেটি দেখে নিতে পারেন এবং এই ব্রত কথা তথা ব্রত মাহাত্ম্য শ্রবণ করতে পারেন-


প্রজাপতি ব্রহ্মা নারদ এর কাছে ব্যক্ত করলেন এই উত্থান একাদশী সম্পর্কে। তিনি বললেন- হে নারদ! উত্থান একাদশী যথার্থই পাপনাশিনী, পুণ্যবোর্ধিনী এবং মুক্তিপ্রদায়ী। এই একাদশী ব্রত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করলে এক হাজার অশ্বমেধ যজ্ঞ এবং শত শত রাশিও যজ্ঞের ফল অনায়াসে লাভ হয়। জগতের দুর্লভ বস্তুর প্রার্থী হয় এই একাদশী পালনের মাধ্যমে। এই একাদশী ভক্তি প্রদায়ী মানুষকে রাজ্য, ঐশ্বর্য ও সুখ প্রদান করে। এই ব্রথের প্রভাবে পর্বত সমান পাপরাশি বিনষ্ট হয়ে যায়। যারা এই একাদশীর দিন রাত্রি জাগরন করে তাদের সমস্ত ভূষিত হয়। শ্রেষ্ঠ মুনিগণ তপস্যার দ্বারা যে ফল লাভ করেন এই ব্রথের উপবাসে তা পাওয়া যায়। যথাযথভাবে এই ব্রত পালন করলে আশারূপ ফল লাভ হয়।

বন্ধুরা যেকোনো একাদশীর মূল কাজ হলো নিরন্তর নিষ্ঠার সঙ্গে সেইদিন ভগবানকে স্মরণ করা। 


একাদশী পালনের সঠিক নিয়ম গুলি হল- 

যিনি একাদশী পালন করবেন তিনি দশমীতে- একাহার, একাদশীতে- নিরাহার তথা উপবাস এবং দ্বাদশীতে একাহার করবেন।  যদি সম্পূর্ণ সক্ষম না হন তাহলে কেবলমাত্র একাদশীতে উপবাস করবেন। আর যদি তাহাতেও সক্ষম না হন, তাহলে একাদশীতে পঞ্চ রবিশষ্য বর্জন করে- ফল মূলাদি এবং অনুকল্প গ্রহণের বিধান রয়েছে।

         একাদশী পালনের ক্ষেত্রে যে পাঁচ প্রকার রবিশস্য বর্জনের বিধান রয়েছে তা হলো- চাল, গম, যব, ডাল ও সরিষা বা সরিষা থেকে তৈরি যেকোনো প্রকার খাদ্যদব্য। এইদিন একাদশী পালন করলে চা, কফি, পান, বিড়ি, সিগারেট ইত্যাদির নেশাজাতীয় দ্রব্য থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।


যারা একাদশী ব্রত পালন করবেন তাদের আগের দিন রাত বারোটার পূর্বে অন্ন ভোজন করে নেওয়া প্রয়োজন।


একাদশীর দিন ঘুম থেকে ওঠার পর প্রথমে সংকল্প গ্রহণ করতে হয়। একাদশীর সংকল্প মন্ত্র টি হল- 

"একাদশ্যাং নিরাহারঃ স্থিত্বা অহম অপরেহহানি, ভোক্ষ্যামি পুন্ডরিকাক্ষ শরণম মে ভবাচ্যুত" 


একাদশী ব্রত পালন কেবলমাত্র উপবাস করা নয় তার সাথে সাথে নিরন্তর শ্রীভগবান কে স্মরণ করা এবং ব্রত কথা পাঠ, শ্রবণ ও কির্তনের মাধ্যমে একাদশীর দিন অতিবাহিত করা। এই দিন পরনিন্দা-পরচর্চা, মিথ্যা কথা বলা, ক্রোধ,দুরাচার,স্ত্রী সহবাস সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।


একাদশীতে বিভিন্ন খুঁটিনাটি কাজ যেমন সবজি কাটার সময় সতর্ক থাকতে হবে।যাতে রক্তক্ষরণ না হয়। কারণ একাদশীর দিন রক্তক্ষরণ খুবই অশুভ বলে গণ্য।


একাদশীর দিন শরীরে প্রসাধনী ব্যবহার নিষিদ্ধ অর্থাৎ তেল, সুগন্ধি, সাবান-শ্যাম্পু ইত্যাদি বর্জনীয় এবং সকল প্রকার ক্ষৌরকর্ম করা অর্থাৎ চুল ও নখ কাটা ইত্যাদি বর্জনীয়।


 একাদশীর দিন সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল সন্ধ্যেবেলায় শ্রীবিষ্ণুর উদ্দেশ্যে একটি ঘিয়ের প্রদীপ নিবেদন করা।


একাদশী তিথির পরদিন অর্থাৎ দ্বাদশীর দিন একাদশীর পারণ ক্রিয়া সমাপ্ত করতে হয়। এই পারণ ক্রিয়া একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মন্ত্র উচ্চারণ করে সম্পন্ন করতে হয়।


2021 উত্থান একাদশীর সময়

2021 সালে অর্থাৎ ১৪২৮ বঙ্গাব্দে এই উত্থান একাদশীর সময় পড়েছে আগামী ২৭ শে কার্তিক 14 ই নভেম্বর রবিবার দিন-  দিবা: 8:56 থেকে এবং এই একাদশী শেষ হচ্ছে পরের দিন ২৮ শে কার্তিক 15 ই নভেম্বর সোমবার- দিবা: 8:50 মিনিটে। এই দিনই উত্থান একাদশীর উপবাস পালন করতে হবে এবং পরের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার দিন দ্বাদশীর সময় শেষ হওয়ার পূর্বেই পারণ ক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। উত্থান একাদশীর এই সময় পড়েছে আগামী ২৯ শে কার্তিক 16 ই নভেম্বর মঙ্গলবার দিন সকাল ৬ টা বেজে ১৩ মিনিট থেকে ৯ টা বেজে ১৪ মিনিটের মধ্যে। এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশষ্য ভগবানকে নিবেদন করার পর প্রসাদ হিসেবে গ্রহণ করে পারন করা একান্ত আবশ্যক। নচেৎ একাদশীর কোনো ফল লাভ হয় না। পারনের সময় যে মন্ত্রটি পাঠ করতে হয় সেটি হল-

"অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য ব্রতেনানেন কেশব, প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব" 

অথবা

"একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব, প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব"


আশাকরি লিখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অথবা যারা উত্থান একাদশী ব্রত পালনে ইচ্ছুক তাদের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন। এছাড়া আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলটি ফলো করতে পারেন।

ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। 

নমস্কার, ধন্যবাদ ।।

ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা