Breaking

Search Content

Follow Us

শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২১

‘উত্থান’ বা ‘প্রবোধিনী’ একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ||

  নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।

আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল- ‘উত্থান’ বা ‘প্রবোধিনী’ একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য সম্পর্কে।



মহাভারতের যুধিষ্ঠির একসময় পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণর কাছে কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম ও তার মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানতে চান। তখন 'শ্রীকৃষ্ণ' যুধিষ্ঠির কে বলেন- কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম হলো- ‘উত্থান’ বা ‘প্রবোধিনী’ একাদশী। 

শ্রীকৃষ্ণ আরো বলেন, একসময় প্রজাপতি ব্রহ্মা নারদের কাছে এই একাদশীর মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছিলেন। তখন প্রজাপতি ব্রহ্মা নারদকে "উত্থান বা প্রবোধিনি" একাদশীর মাহাত্ম্য সম্পর্কে ভালো করে জানিয়েছিলেন। এখন তুমি তা আমার কাছ থেকে শ্রবণ করো ; এই বলে শ্রীকৃষ্ণ- 'উত্থান' বা 'প্রবোধিনী' একাদশীর মাহাত্ম্য বর্ণনা করলেন যুধিষ্ঠির কাছে।


 ‘উত্থান’ বা ‘প্রবোধিনী’ একাদশী 

ব্রহ্মা-  নারদ কে বললেন, এই উত্থান বা প্রবোধিনী একাদশী খুবই পাপনাশিনী ও মুক্তি প্রদানকারী। এই একাদশী যদি ভক্তি, নিষ্ঠার সাথে পালন করা হয় তবে এক হাজার অশ্বমেধ যজ্ঞ ও শত শত রাজকীয় যজ্ঞের ফল অনায়াসে লাভ করা যায়। এই একাদশী ব্রত পালন যদি কেউ ভক্তি ও নিষ্ঠার সাথে করে তাহলে সেই ব্যক্তি ঐশ্বর্য্য, প্রজ্ঞা, রাজ্য ও সুখ লাভ করে। এমনকি জগতের সব থেকে দুর্লভ বস্তুও প্রাপ্তি হয় এই একাদশী ব্রত পালনের মাধ্যমে। এই ব্রত পালনের মাধ্যমে কোন ব্যক্তির পর্বতসমান পাপরাশি বিনষ্ট হয়। যে সকল ব্যক্তি এই একাদশী ব্রত পালনের জন্য রাত্রি জাগরন করেন, তাদের সকল পাপ ভূষিত হয়। সর্বশেষ্ঠ মুনিগণ, দেবতাদের ধ্যান-ভজনা করে যে ফল লাভ যায় তার সমানই ফল লাভ করা যায় এই 'উত্থান একাদশী' ব্রত পালনের মাধ্যমে। কিন্তু, আধা বিধি ভাবে এই উত্থান একাদশী ব্রত পালন করলে স্বল্প মাত্র ফল প্রাপ্তি হয়।


যে সকল ব্যক্তি এই উত্থান একাদশী ব্রত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন তাদের পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি হয় এবং বিশ্বাস করা হয় তাদের পূর্বপুরুষরা স্বর্গলোকে স্থান পান। এমনকি এই একাদশী ব্রত পালনের মাধ্যমে ব্রাহ্মণ হত্যার মত বড় পাপ ধুয়ে যায় এবং ভয়ঙ্কর নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

অশ্বমেধ যজ্ঞ দ্বারাও যা সহজে লাভ হয় না, তীর্থে স্বর্ণ প্রভৃতি দান করলে যে পুণ্য অর্জিত হয়, এই উপবাসের রাত্রি জাগরণে সেই সকল অনায়াসে লাভ হয়ে যায়।

যিনি সঠিকভাবে উত্থান একাদশীর ব্রত অনুষ্ঠান পালন করেন তার গৃহে ত্রিভুবনের সমস্ত সুখ ও মঙ্গল এসে উপস্থিত হয়। শ্রী ব্রহ্মা আরও বলেন -হে নারদ! বিষ্ণুর প্রিয়তমা এই প্রবোধিনী একাদশীর উপবাস করলে সর্বশাস্ত্রে জ্ঞান ও তপস্যায় সিদ্ধিলাভ করে চরমে মুক্তি লাভ হয় তার। 

যিনি ভক্তি ভরে এই ব্রত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন তাকে প্রথম জীবনের পাপের শাস্তি পাবার জন্য দ্বিতীয়বার পুনর্জন্ম গ্রহণ করতে হয় না। কারণ তার এই নিষ্ঠার সঙ্গে ব্রত উপবাসের মাধ্যমে তার সমস্ত প্রকার পাপরাশি গোবিন্দের অর্চনে বিনষ্ট হয়ে যায়।যারা উপবাস দিনে শ্রীহরির প্রতি ভক্তিভাবে দিনযাপন করেন, তাদের পক্ষে জগতে দুর্লভ বলে আর কিছু নেই। এই ব্রতের দিনে শ্রদ্ধা সহকারে শ্রীহরির উদ্দেশ্যে স্নান,দান ও জপ-কীর্তন করলে অক্ষয় ফল লাভ হয়।


চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণে গঙ্গাস্নান করলে যে পুণ্য লাভ হয়, এই উপবাসে রাত্রি জাগরণে তার সহস্রগুণ বা অধিক পুণ্য লাভ হয়। কোনো তীর্থস্থানে স্নান, দান, জপ, হোম, ধ্যান- আদির ফলে যে পুণ্য সঞ্চিত হয়, উত্থান একাদশী না করলে সে সমস্ত কিছু নিষ্ফলে হয়ে যায়। হে নারদ! এই উত্থান একাদশীর দিন শ্রীহরিবাসরে শ্রীজনার্দনের পূজা বিশেষ ভক্তিসহকারে করবে। তা না হলে শতজন্মের পুণ্যও বিফল হয়।


হে বৎস! যিনি কার্তিক মাস তথা শ্রীহরির অত্যন্ত প্রিয় দামোদর মাসে সর্বদা ভাগবত গীতার শ্লোক অধ্যয়ন করেন, তিনি সর্বপাপ মুক্ত হয়ে সমস্ত প্রকার সুখ ও মুক্তি লাভ করেন। ভগবান বিশেষ করে এই কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের উত্থান একাদশী তে হরিভক্তিমূলক শাস্ত্রপাঠে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন।

অতএব- হে মুনিবর! কার্তিক মাসে সমস্ত গৌণধর্ম বর্জন করে শ্রীহরি তথা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সামনে হরিকথা শ্রবণ কীর্তন করা প্রত্যেকের কর্তব্য। কোনো ব্যক্তি যদি ভক্তিসহকারে এই মাসে ভক্তদের সঙ্গে হরিকথা শ্রবণ ও কীর্তন করেন, তবে তার শতকুল পাপ মুক্ত হয় এবং হাজার হাজার দুগ্ধবতী গাভী দানের ফল অনায়াসে লাভ করেন। এছাড়াও বিভিন্ন তীর্থক্ষেত্র ভ্রমণ করে একাধিক কৃতকার্য সম্পন্ন করার মাধ্যমে যে পূর্ণ সঞ্চিত হয়, এই কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের উত্থান একাদশী তে শ্রী হরি তথা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের  উদ্দেশ্যে অর্ঘ্য প্রদানে তার কোটি গুণ সুকৃতি পুণ্য লাভ হয়।


এই কার্তিক মাসে পবিত্রভাবে শ্রীকৃষ্ণের সম্পর্কে শ্রবণ ও কীর্তনে দিনযাপন করলে প্রথম জীবনের পাপের শাস্তি পেতে দ্বিতীয়বার অন্য প্রাণী রূপে তার আর পুণর্জন্ম হবে না। এই মাসে ফল, ফুল ও চন্দন দিয়ে শ্রীহরির পূজা করা প্রত্যেকের কর্তব্য। এতে ভগবান সন্তুষ্ট হন এবং পরমেশ্বর ভগবানের কৃপা দৃষ্টি তার উপর সদাসর্বদা থাকে।


হে নারদ! সহস্র সুগন্ধী পুষ্পে দেবতার অর্চনে বা সহস্র সহস্র যজ্ঞ দানে যে ফল লাভ হয়, এই মাসের শ্রীহরির উদ্দেশ্যে একটি মাত্র তুলসী পাতা শ্রীভগবানের চরণকমলে অর্পণ করলে তার অনন্তকোটিগুণ ফল লাভ হয়। শ্রবণ-কীর্তন, স্মরণ, বন্দনাদি ও ভক্তির সাথে তুলসীর সেবার জন্য যারা বীজ রোপন করেন তারা মুক্তিলাভ করে বৈকুন্ঠবাসী হন।


আশাকরি লিখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অথবা যারা এই কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের উত্থান একাদশী পালন করতে ইচ্ছুক তাদের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন। এছাড়া আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলটিকে ফলো করতে পারেন এই ধরনের ভিডিওগুলি দেখার জন্য।

 ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

 নমস্কার, ধন্যবাদ।।

 ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা