Breaking

Search Content

Follow Us

মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২১

সাতজন মহামানব যারা এখনো বেঁচে আছেন - সাতজন চিরঞ্জীবী যারা কখনো মরে না || 7 immortals who are still Alive.

  নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।

আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল-  সাতজন মহামানব সম্পর্কে যারা এখনো বেঁচে আছেন - সাতজন চিরঞ্জীবী যারা কখনো মরে না ||  




সনাতন ধর্ম অনুযায়ী সব থেকে পুরাতন ধর্ম হল- সংস্কৃত। সংস্কৃত ভাষায় চিরঞ্জীবী কথাটির অর্থ হল- অমর। হিন্দু ধর্মে সাতজন উল্লেখযোগ্য চিরঞ্জীবী ব্যক্তির উল্লেখ পাওয়া যায়, যারা অমর এবং যাদের অস্তিত্ব কলিযুগের শেষ পর্যন্ত পাওয়া যাবে। তারা সৃষ্টির বিনাশ পর্যন্ত বেঁচে থাকবেন।


"অশ্বত্থামা বালী ব্যাসাে হনুমানশ চ

বিভীষন কৃপাচার্য চ পরশুরামম

সপ্তাইতা চিরঞ্জিভিয়ান"।।

এই শ্লোকটির অর্থ হলো- অশ্বথামা, মহাবলী, বেদব্যাস, হনুমান, বিভীষণ, কৃপাচার্য ও পরশুরাম এই সাতজন মহামানব- চিরঞ্জীবী অর্থাৎ যাদের কখনো মৃত্যু সম্ভব নয় বা যারা অমর। হিন্দু ধর্মে এই সাতজন মহামানব কে মানব সভ্যতার রক্ষক বা প্রতিনিধি বলা হয়ে থাকে এবং এই সাতজন মহামানবের প্রধান কাজ হল ভগবান বিষ্ণুর অন্তিম অবতার- কল্কির পথ প্রদর্শন করা।

এই সাতজন মহামানব তথা চিরঞ্জীবী এখনও পর্যন্ত এই পৃথিবীতে বেঁচে আছেন-

(১) অশ্বত্থামা -  অশ্বত্থামা হলেন -                                      মহাভারতের অন্যতম এক যোদ্ধা। যিনি গুরু দ্রোণাচার্যের পুত্র হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অশ্বথামা কৌরবদের পক্ষ থেকে যুদ্ধ করেছিলেন। মহাভারতের ওই যুদ্ধে অশ্বথামা ও তার মামা কৃপাচার্য বেঁচে ছিলেন। কিন্তু অশ্বত্থামা এমন কোনো কাজ করেননি যে তাকে ঈশ্বর অমরত্তের বর দান করবে। অশ্বত্থামা কে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অমরত্তের অভিশাপ দিয়েছিলেন। মহাভারতের 15 তম ও 16 তম অধ্যায় উল্লেখ করা রয়েছে অশ্বত্থামা পান্ডবদের উপর ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ করেন এবং সেই ব্রম্ভাস্ত্র টি অশ্বত্থামা ফিরিয়ে নিতে পারেননি যার ফলস্বরূপ পান্ডবদের পাঁচ পুত্রের বিনাস ঘটে। কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ উত্তরার পেটে অবস্থিত অভিমুন্যর পুত্র পরীক্ষিতের ভ্রুনটিকে পুনর্জীবিত করে দিয়েছিলেন এবং অশ্বত্থামা পাপের ফলে শ্রীকৃষ্ণ তাকে সারা জীবন রোগাক্রান্ত ও একাকী-অসহায় হয়ে থাকার চিরঞ্জীবী অভিশাপ দিয়েছিলেন।

(২) মহাবলী- 

বিষ্ণুভক্ত প্রহ্লাদের জ্যেষ্ঠপুত্র হিসাবে রাক্ষস কূলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রাজা মহাবলী। রাক্ষস কূলে জন্ম হওয়া সত্ত্বেও রাজা মহাবালী একজন বীরপরুষ এবং একজন ধার্মিক রাজাও ছিলেন। রাজা মহাবলীর সাম্রাজ্য বৃন্ধপ্রদেশ থেকে শুরু করে ভারতবর্ষের কেরালা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ভগবান বিষ্ণু রাজা মহাবলী কাছে তৃপদ গুনি বা তিন পা জমি দান চেয়েছিলেন। রাজা মহাবলী তাতে রাজি হন। তখন বামন অবতার রূপে ভগবান বিষ্ণু তার নিজের চেহারার আকার মহাবিশ্বের সমান ধারণ করেন এবং তার একটি পা তিনি পৃথিবীতে রাখেন ও আরেকটি পা আকাশে রাখেন এবং তখন রাজা মহাবলী তার বচন রক্ষার্থে উপায় না নিজের মাথা এগিয়ে দেয়। তখন ভগবান মহাবলীর মাথায় পা রাখেন এবং তাকে পাতাল লোকে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু রাজা মহাবলীর সহৃদয়তা দেখে ভগবান বিষ্ণু তাকে চিরঞ্জীবী বা অমরত্তের বর প্রদান করেন।

(৩) বেদব্যাস-   ব্যাসদেব বা বেদব্যাস রানী সত্যবতীর সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি সমস্ত বেদ গুলিকে লিখিত রুপ প্রদান করেছিলেন। তাই তাকে বেদব্যাস নামে জানা যায়। বলা হয়ে থাকে ভগবান বিষ্ণুর অংশ হিসেবে বেদব্যাস দ্বাপর যুগে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। যাতে তিনি সমস্ত মানুষকে লিখিত বেদের রূপ প্রদন করতে পারেন। তিনি বেদ মন্ত্রটিকে চারটি ভাগে বিভক্ত করে দেন। যাতে বেদমন্ত্রটি সহজে উচ্চারণ করা যায়। এমনকি বেদব্যাস-মহাভারতেরও রচয়িতা। যেটি স্বয়ং ভগবান গণেশ লিখেছিলেন এবং বেদব্যাস নিজেও মহাভারতে একটি চরিত্র রূপে আবির্ভাব হয়েছিলেন। বেদব্যাসের জন্মতিথি এখনো ভারতবর্ষে পালন করা হয়ে থাকে যা 'ব্যাস পূর্ণিমা' বা 'গুরু পূর্ণিমা' নামে বিখ্যাত।

(৪) হনুমান- ভগবান শ্রী রামের পরমভক্ত হনুমান বানর রাজ কেশরী ও মাতা অঞ্জনার পুত্র হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। হিন্দু ধর্মেতে মানা হয়ে থাকে ভগবান শিবের একটি অবতার রূপে- হনুমান জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই হনুমানকে 'বায়ুপুত্র' বা 'পবনপুত্র' নামেও জানা যায়। রামায়ণে একমাত্র হনুমানই ছিলেন যিনি লঙ্কায় সবার প্রথমে মাতা সীতা কে খুঁজে পেয়েছিলেন। খুঁজে পাওয়ার পর শ্রীরামের দূত হিসেবে হনুমান মাতা সীতাকে শ্রীরামের বার্তা প্রেরণ করে। তখন মাতা সিতা শ্রীরামের দূত হিসেবে হনুমানকে দেখে খুশি ও সন্তুষ্ট হন। তখন মাতা সীতা ভগবান হনুমান কে অমরত্তের বর প্রদান করেন।

(৫) বিভীষণ- ঋষি বিশ্রবা ও রাক্ষসী কৈকসীর পুত্র তথা রাক্ষসরাজ রাবণ ও মায়াবী কুম্ভকর্ণের ছোটো ভ্রাতা ছিলেন বিভীষণ। রাক্ষস কূলে জন্মগ্হণ করা সত্ত্বেও বিভীষণ অতি ধার্মিক ছিলেন এবং দশানন কাণ্ডে সীতা অপহরণকালে তিনি কখনোই সমর্থন করেননি। অন্যের স্ত্রীকে হরণ করে নিয়ে নিজের কাছে রাখা কখনোই সঠিকধর্ম নয়। তাই তিনি এর বিরোধিতা করেন। তখন রাবণ তাকে লংকা থেকে তাড়িয়ে দেন। তখন বিভীষণ ভারতবর্ষে শ্রী রামের শরণাপন্ন হন এবং ভগবান শ্রী রাম কে সাহায্য করেন। লংকা তথা রাবণের সমস্ত গুপ্ত রহস্য তিনি শ্রীরাম কে বলে দেন। বিভীষণের সাহায্য দ্বারাই শ্রীরাম রাক্ষসরাজ রাবণকে বধ করতে পেরেছিলেন। তাই শ্রীরাম বিভীষণকে শুধুমাত্র লঙ্কার রাজা হিসেবে গন্য করেননি, একজন ধার্মিক রাজা হিসাবে তাকে একজন চিরঞ্জীবী বা অমরত্তের বরদান প্রদান করেছিলেন।

(৬) কৃপাচার্য-  কৃপাচার্য একজন উন্নত মানের অসাধারণ গুরু ছিলেন। রাজা শান্তনু  কৃপাচার্যকে দত্তক দত্তক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন এবং কৃপাচার্য দুই যমজ বোনের সঙ্গে গুরু দ্রোণাচার্যের বিয়ে হয়েছিল। কৃপাচার্য রাজপুত্রদের শিক্ষা দিতেন এবং মহাভারতে কৃপাচার্য কৌরব দের পক্ষে ছিলেন। অশ্বত্থামা ছাড়া একমাত্র গুরু কৃপাচার্যই কুরুক্ষেত্রের মহাযুদ্ধ থেকে জীবিত ফিরেছিলেন। মহারথী ভীষ্ম গুরু কৃপাচার্য কে একজন মহাযোদ্ধা বলে সম্বোধন করেছিলেন। যার একসঙ্গে 60 হাজার যোদ্ধার সাথে যুদ্ধ করার ক্ষমতা ছিল। পরবর্তীকালে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কৃপাচার্যকে মহারথী অর্জুনের নাতি পরীক্ষিতের গুরু হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন এবং এটা বলা হয়ে থাকে কৃপাচার্য কলিযুগের সপ্তঋষির মধ্যে একজন হয়ে উঠবেন।

(৭) পরশুরাম- পরশুরাম হলেন ভগবান বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার। যিনি মাতা রেনুকা ও ঋষি ঞ্জামাদাগ্নির পুত্র হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পরশুরাম ভগবান শিবের কাছ থেকে বরদান স্বরূপ দৈব অস্ত্র ধনুক বিজয়া ও কুঠার পরশু পেয়েছিলেন। ভগবান পরশুরাম কে- "master of all martialarts"- বলা হয়। যা তিনি ভগবান শিবের কাছ থেকে শিখেছেন। ভগবান পরশুরামের পিতাকে ক্ষত্রিয় রাজা কর্তবীরা অর্জুনা হত্যা করেছিলেন, তাই তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে বিশ্ব থেকে সমগ্র ক্ষত্রিয় বংশ বিনাশ করে দেবার সিদ্ধান্ত নেন। তাই তিনি একাকী সমগ্র বিশ্বের কোটি কোটি ক্ষত্রিয় দের হত্যা করেছিলেন। সমগ্র বিশ্ব থেকে 21 বারের মতো তিনি ক্ষত্রিয় দের নির্বংশ করে দিয়েছিলেন। এরপর পরশুরামকে ত্রেতাযুগে মাতা সীতা স্বয়ম্ভরে দেখা গিয়েছিল। শাস্ত্র গুণীদের মতে এরপর পরশুরামকে দেখা যাবে ভগবান বিষ্ণুর দশম অবতার কল্কির শিক্ষাগুরু হিসেবে

এই ছিল সাতজন মহামানব তথা চিরঞ্জীবী। যারা আজীবন অমর থেকেই যাবে। এখানেই শেষ করলাম, আশাকরি লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন।

 নমস্কার, ধন্যবাদ ।।

ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা