Breaking

Search Content

Follow Us

শনিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২১

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কলিযুগ সম্পর্কে বিখ্যাত ভবিষ্যৎ বাণী ||কলি যুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দশম অবতার

  নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই চ্যানেল এর প্রধান বিষয়বস্তু ।

আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল- "ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তিনি কলিযুগ সম্পর্কে কোন বাণী করে গেছেন" এবং তা বর্তমানে কতখানি সত্য হচ্ছে এবং কলিযুগের পাপের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কোন উপায় এর কথা তিনি বলছেন এবং সর্বোপরি কলিযুগে কবেই বা তিনি আবির্ভূত হবেন ,কি বলছে আমাদের শাস্ত্র। কী তিনি ভগবত গীতায় উল্লেখ করে গেছেন তার সমস্ত কিছুই আমরা জানতে পারবো আজকে এই বিষয়বস্তুর মাধ্যমে।



আমরা সকলেই জানি আমাদের শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে যুগ প্রধানত চারটে। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর এবং কলি যুগ‌। দ্বাপর যুগের শেষ ভাগে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে কংসের কারাগারে আবির্ভাব হন ভগবান কৃষ্ণ। তাহার এই পবিত্র তিথিকে জন্মাষ্টমী বলা হয় একথা আমরা সকলেই জানি। মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের সমাপ্তি এবং পাণ্ডবগণ এর প্রস্থানের পর শুরু হয় কলিযুগ। আমাদের শাস্ত্রীয় ধারণা অনুযায়ী এই কলি যুগের পর আবার শুরু হবে সত্যযুগ। এই কলিযুগ সম্পর্কে পাণ্ডবরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে প্রশ্ন করেছিলেন যে কলিযুগের প্রকৃতি কেমন হবে। কবেই বা শুরু হবে এই কলিযুগ এবং কর হাতেই বা অন্ত হবে এই কলিযুগের। এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পাঁচ পাণ্ডব কে একটি বনে নিয়ে গিয়ে বললেন এই জঙ্গলের পাঁচটি দিকে তোমরা পাঁচ জনা ভিন্ন ভিন্ন অভিমুখে যাত্রা শুরু করো এবং ভিন্ন ভিন্ন অভিমুখে যাত্রা করার পর প্রথম যে ঘটনাটি তোমরা লক্ষ্য করবে সেটি আমার কাছে এসে ব্যক্ত করো। যেমন কথা তেমনি কাজ, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা অনুযায়ী পঞ্চপান্ডবরা জঙ্গলের পাঁচটি অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। সবার প্রথমে যুধিষ্ঠির ফিরে এলেন। তিনি শ্রীকৃষ্ণের কাছে একটি অদ্ভুত ঘটনার কথা ব্যক্ত করলেন। তিনি দেখতে পেলেন দুই শুর বিশিষ্ট একটি হাতি জলাশয়ে খেলা করছে। এই ঘটনাটি দেখার পর তিনি শ্রীকৃষ্ণের কাছে এসে সম্পূর্ণ ঘটনাটি ব্যক্ত করেন এবং অদ্ভুত দুই শুর হাতিটির প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে চান শ্রীকৃষ্ণের কাছে। শ্রীকৃষ্ণ যখন বলেন যে কলিযুগে মানুষ হবে ঠিক এইরকম। কলিযুগের বেশিরভাগ মানুষ হবে মিথ্যেবাদী এবং স্বার্থপর। তারা মুখে এক কথা বললেও কর্ম ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন থাকবে ‌। অর্থাৎ কথা, প্রতিশ্রুতি এবং কাজের মধ্যে কোন মিল তাদের থাকবে না। তারপর ভীম ফিরে এসে তার অভিজ্ঞতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জানালেন। তিনি বললেন তিনি একটি গরুকে তার বাছুরকে চেটে চেটে আদর করতে দেখেছেন। কিন্তু এত মাত্রায় বাছুরটিকে চাটছে বাছুরটির গায়ের ছাল উঠে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এই প্রশ্নের উত্তরে শ্রীকৃষ্ণ বলেন কলিযুগে পিতা-মাতা তাদের সন্তানের প্রতি অন্ধ ভালোবাসা ও স্নেহ তাদের সন্তানের ক্ষতির কারণ হয়ে উঠবে। অন্যদিকে অর্জুন তিনি ফিরে এসে শ্রীকৃষ্ণকে বললেন, একটি শকুনের যার বিশাল আকার ডানায় বেদ লিখিত আছে। কিন্তু, শকুনটি নর মাংস ভক্ষণ করছে । অর্জুন পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ ভগবানের কাছে এর কারণ জানতে চান। তখন শ্রীকৃষ্ণ বলেন কলিযুগে ভন্ড সাধকের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ দেশে যে সব মানুষই জ্ঞানী হিসাবে স্বীকৃত হবে, তাদের বেশিরভাগেরই মনোভাব থাকবে ঐ শকুনের মতো। ওপরে ধর্ম সাধকে মোরা জ্ঞানী মানুষগুলি আদতে নিজেরাই হবে ধর্মভ্রষ্ট। এরপর নকুল ফিরে এসে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে তার অভিজ্ঞতা জানালেন। তিনি শ্রীকৃষ্ণকে বললেন, এক বিশাল আকার পাথরখণ্ড পাহাড় থেকে গড়িয়ে নিচে পড়ছে। কোন বৃক্ষ তাকে আটকাবার ক্ষমতা রাখছে না, সেই পাথরটি সবকিছু দুমড়েমুচড়ে ভয়ঙ্কর গতিতে নিচের দিকে নেমে আসছে। এইভাবে কিছুক্ষণ নামার পর একটি গুল্ম অর্থাৎ ছোট গাছের গোড়ায় এসে পাথরটি থেমে যায় এবং বন্ধ হয়ে যায় তার তান্ডব লীলা। এই ঘটনা শ্রীকৃষ্ণকে জানালে শ্রীকৃষ্ণ তার পরিপ্রেক্ষিতে বলেন কলিযুগে মানুষের পাপের আকার ওই পাথরের মতন হবে। যা তার জীবনকে তছনছ করে দেবে, ধ্বংসের অভিমুখে চালিত করবে গোটা সমাজকে। কিন্তু যদি কোনো মানুষ শুদ্ধ মনে শুধুমাত্র আমারই শরণাপন্ন হয়, তবে তাকে আমি সর্ববিপদ থেকে রক্ষা করবো। অর্থাৎ সামান্য ওই ছোট গাছের মতো,কেউ যদি আমার ভজনা করে, সমস্ত পাপ তাহলে সেখানেই বিলুপ্ত হবে। এরপর সহদেব তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা শ্রীকৃষ্ণকে জানালেন। তিনি দেখলেন জঙ্গলের মাঝে বেশ কয়েকটি কুয়ো। কিন্তু, আশ্চর্যের বিষয় হলো এদের মধ্যে সবথেকে গভীরতম যে কুয়োটি তাতেই জল নেই। শ্রীকৃষ্ণ এই কথাটি শুনে বললেন যে কলিযুগে সমাজের সবথেকে অর্থশালী ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরাই সেই সমাজে সবচেয়ে বেশি শোষণ করবে। যারা নিচ তারা কাম ও বিনোদনের জন্য এবং সূরা, তামাক প্রভৃতির জন্য প্রচুর অর্থ ব্যায় করবে এবং সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য থাকবে শুধুই অবহেলা। অতএব গরিবের শোষনই হবে কলিতে প্রবল। ধনীরা হারাবে তাদের বিচার বিবেচনা করার ন্যূনতম বুদ্ধি। বর্তমান যুগ সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণ যে ব্যাখ্যা করে গেছেন এবং তার প্রতিটি যুক্তির বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হবে না- তাও সত্য। এভাবেই যে আমরা নিজেদের ধ্বংসকে নিজেরাই নিকট থেকে নিকটতম করে তুলেছি তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। তার জলন্ত দৃষ্টান্ত উদাহরণ আমরা আমাদের হাতের কাছেই দেখতে পাই। সুতরাং এই পাপের যুগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় কৃষ্ণ ভজনা করা। একমাত্র কৃষ্ণ নামে পারে আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে। প্রত্যহ গীতা পাঠ করুন এবং তারি সঙ্গে কৃষ্ণ মন্ত্রে নিজেকে বিভোর করে রাখুন। অন্তত রোজ একটি বার হলেও কৃষ্ণ মন্ত্র জপ করুন।

কলিযুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কখন আবির্ভাব হবে সে সব বিষয়ে আমাদের শাস্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। কলিযুগের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবতার হবে 'কল্কি অবতার"। কলিযুগের অন্তে মুরাদাবাদ জেলার সম্বল গ্রামে 'সুমতি' নামে ব্রাহ্মণ কন্যার গর্ভে- ব্রাহ্মণের বাড়িতে 'কল্কি' নামে "ভগবান বিষ্ণুর দশম অবতারের আবির্ভাব ঘটবে"। 'কল্কি' হবে 'বিষ্ণু' যথা সুমতির চতুর্থ সন্তান।

আরো পড়ুন-ভালো কাজে এত বাধা সৃষ্টি হয় কেন Click here

শাস্ত্র অনুযায়ী কলি যুগের সময়কাল এখনো আসেনি। কিন্তু যুক্ত চক্রের সময়কাল নিয়ে জটিল হিসাব করলে দেখা যায় -যে প্রতিটি যুগের সময়কাল ১২ হাজার বছর। তাহলে এক একটি যুগ ৩ হাজার বছর স্থায়ী হয়। সেই হিসেব মানলে দেখা যায় ১২ হাজার ৬৭৬ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে শুরু হয়েছিল সত্যযুগ এবং সেই হিসেবের সাথে মহাভারতের সময়কাল মিলালে দেখা যায় কলিযুগের অন্ত কাল শুরু হবে ২০২৫  খ্রিস্টাব্দ থেকে। তবে সনাতন বিশ্বাস অনুযায়ী কলি যুগের সময়কাল হবে ৪ লক্ষ ৩২ হাজার বছর। ফলে সেই হিসেব অনুযায়ী কল্কি অবতারের জন্মগ্রহণ করতে এখনো অনেক দেরি। তবে কলিযুগে পাপের হাত থেকে বেঁচে পুণ্য লাভের একমাত্র উপায় হল হরিনাম ও পবিত্র গীতা পাঠ।

আজ এখানেই শেষ করলাম । ভালো লাগলে নিজের আপন জনের সাথে শেয়ার করবেন ।

ভালো থাকবেন ,সুস্থ থাকবেন।

নমস্কার , ধন্যবাদ।।

 ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা