Breaking

Search Content

Follow Us

শুক্রবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২১

উৎপন্না একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য || উৎপন্না একাদশী পালনের নিয়ম কানুন।

  নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।

আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল- উৎপন্না একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য সম্পর্কে। এছাড়াও জানাবো এই উৎপন্না একাদশীর বিভিন্ন নিয়ম কানুন সম্পর্কে।



একদা অর্জুন শ্রী ভগবানের কাছে জিজ্ঞাসা করলেন-  হে  দেব!  অগ্রহায়ণ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী কেন 'উৎপন্না' একাদশী নামে খ্যাত? কেন এই একাদশী পরম পবিত্র ও দেবতাদের খুবই প্রিয়? কৃপা করে তা আমাকে বলুন!

শ্রীভগবান তখন বললেন- পূর্বে অনেক আগে সত্যযুগে 'মুর' নামে এক অসুর তথা দানব ছিল। এই দানব ছিল অত্যান্ত শক্তিশালী। এমনকি সে দেবরাজ ইন্দ্র কেও হারিয়ে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করেছিল। তার ফলে দেবতারা স্বর্গলোক ছেড়ে পৃথিবীতে আসতে বাধ্য হয়েছিল। অবস্থায় দেবতারা কোনো উপায় না পেয়ে মহাদেবের কাছে তাদের সমস্ত ঘটনা মহাদেবকে জানান।

সবকথা শুনে মহাদেব বললেন-  হে দেবরাজ!  যেখানে শরণাগত বৎসল জগন্নাথ, গরুধ্বজ বিরাজ করছেন তোমরা সেখানে যাও। তারা নিশ্চয়ই তোমাদের সমস্যার সমাধান করবে। দেবাদিদেব মহাদেবের কথামতো দেবরাজ ইন্দ্র অন্যান্য দেবতাদের নিয়ে ক্ষীর সমুদ্রের তীরে গমন করলেন।

সেখানে গিয়ে জলে শয়িত অবস্থাতে শ্রীবিষ্ণু কে দেখে সকল দেবতারা হাতজোড় করে শ্রী বিষ্ণুর প্রার্থনা করতে লাগলেন। এরপর তারা ওই দানবের কথা শ্রী বিষ্ণুকে জানালেন। তখন শ্রীবিষ্ণু বললেন- হে ইন্দ্র! সেই 'মুর' দানব কিরকম দেখতে তা আমায় বলো। 


তখন ইন্দ্র বললেন- হে  ভগবান! প্রাচীনকালে ব্রহ্ম বংশে 'তালজাঙ্ঘা' নামে এক অতি পরাক্রমী অষুর ছিল। সেই তালজাঙ্ঘার পুত্রই হল 'মুর'। সেও প্রচন্ড শক্তিশালী ও ভিশন উৎকট। দেবতাদেরও ভয় প্রদানকারী।

সে চন্দ্রাবতী নামে এক পুরীতে বাস করে।স্বর্গ থেকে আমাদেরকে বিতাড়িত করে সে এখন দেবলোক সম্পূর্ণ অধিকার করেছে।স্বর্গ থেকে আমাদেরকে তাড়িয়ে তারা নিজেদের কাউকে রাজা,কাউকে দিকপালরূপে প্রতিষ্ঠা করেছে।তার ভীষণ অত্যাচারে আমরা আজ পৃথিবীতে বিচরণ করছি। ইন্দ্রের কথা শুনে ভগবান অসুরের প্রতি অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হলেন। তিনি দেবতাদের সঙ্গে চন্দ্রাবতী পুরীতে গেলেন।সেই দৈত্যরাজ শ্রী নারায়ন কে দেখে জোরে জোরে চিৎকার করতে লাগলো, তারপর দেবতা ও অসুর দের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। তখন যুদ্ধক্ষেত্রে শ্রী নারায়ন কে একা দেখে সেই দানব তাকে দাঁড়াও দাঁড়াও বলতে লাগলো। শ্রীভগবানও রেগে গিয়ে চিৎকার করে বললেন-ওরে দুরাচার দানব আমার বাহুবল দেখ। এই বলে সমস্ত অসুর যোদ্ধাদের দিব্য বানের আঘাতে এক এক করে নিহত করতে লাগলেন। তখন তারা প্রাণের ভয়ে বিভিন্ন দিকে পালিয়ে যেতে লাগলো। সেই সময় নারায়ন অসুর সৈন্যদের মধ্যে সুদর্শন চক্র নিক্ষেপ করলেন ফলে সমস্ত অসুর সৈন ধ্বংস হলো। একমাত্র মুর অসুরই বেঁচে ছিল, সে অস্ত্র যুদ্ধে শ্রী নারায়নকেও পরাজিত করল। এইভাবে দেবতাদের হিসাবে এক হাজার বছর যুদ্ধ করেও ভগবান তাকে পরাজিত করতে পারলেন না।


তখন শ্রীহরি বিশেষ চিন্তিত হয়ে বদরিকা আশ্রম গেলেন, সেখানে সিংহাবতী নামে একটি গুহা আছে। গুহাটি এক দ্বার বিশিষ্ট এবং বারোযোজন অর্থাৎ ৮৬ মাইল বিস্তারিত। ভগবান বিষ্ণু ওই গুহার মধ্যে শয়ন করলেন।দৈত্য তার পিছন পিছন সেই গুহার ভিতরে প্রবেশ করলো, সে বুঝতে পারল বিষ্ণু ঘুমিয়ে আছে তখন সেই দৈত্য খুব আনন্দিত হয়ে ভাবতে লাগলো তার সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বিষ্ণু ওই গুহাতে গোপনে শুয়ে আছে। এখন সে বিষ্ণুকে অবশ্যই বধ করবে। দানবের এইরকম চিন্তার সঙ্গে সঙ্গে শ্রীবিষ্ণুর শরীর থেকে একটি কন্যা উৎপন্ন হলো।এই কন্যাই উৎপন্না একাদশী। তিনি রূপবতী, দিব্য অস্ত্রশস্ত্রধারিণী, সৌভাগ্যশালিনী ও বিষ্ণু তেজসম্ভুতা বলে মহা পরাক্রমশালী ছিলেন।তারপর দৈত্যরাজ সেই স্ত্রী রুপি দেবীর সাথে তুমুল যুদ্ধ শুরু করলো। কিছুকাল যুদ্ধের পর দেবীর দিব্য তেজে অসুর ভস্মীভূত হয়ে গেল। তারপর শ্রীবিষ্ণু জেগে ওঠে। সেই ভষ্মিভূত দৈত্যকে দেখে অবাক হলেন এক দিব্য কন্যাকে তার পাশে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। বিষ্ণু বললেন- হে! মহাপরাক্রান্ত উগ্র মূর্তি এই মুর দানবকে কে বধ করল? যিনি এই দৈত্যকে হত্যা করেছে তিনি নিশ্চয়ই প্রশংসনীয় কাজ করেছে। সেই কন্যা বললেন- হেঃ প্রভু আমি আপনার শরীর থেকে উৎপন্ন হয়েছি, আপনি যখন ঘুমিয়ে ছিলেন তখন এই দানব আপনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল তাই দেখে আমি তাকে বধ করেছি। আপনাদের কৃপাতে আমি তাকে বধ করতে পেরেছি।

একথা শুনে ভগবান বললেন আমার পরাশক্তি তুমি একাদশীতে উৎপন্ন হয়েছ, তাই তোমার নাম হবে উৎপন্না একাদশী। আমি এই ত্রিলোকে ঋষি ও দেবতাদের অনেক বর দান করেছি। হে ভদ্রেঃ, তুমি ও তোমার মন মতো বর প্রার্থনা করো আমি তোমাকে তা দান করবো। একাদশী বললেন হে দেবেশঃ, ত্রিভুবনের সর্বত্র আপনার কৃপায় সর্ববিঘ্ননাশিনী ও সর্বদায়িনীরূপে যেন পরম পূজ্য হতে পারি, এই বিধান করুন। আপনার প্রতি ভক্তিবশত: যারা শ্রদ্ধা সহকারে আমার ব্রত উপবাস করবে তাদের যেন সর্ব সিদ্ধি লাভ হয়, এই বর দান করুন। বিষ্ণু বললেন,হে কল্যাণী তাই হবে।উৎপন্না নামে প্রসিদ্ধ তোমার ব্রত পালন কারীর সমস্ত ইচ্ছে পূরণ হবে তুমি তাদের সকলের মনোকামনা পূরণ করবে। তোমাকে আমার শক্তি বলে মনে করি তাই তোমার ব্রত পালনকারী সকলে আমারই পূজা করবে এর ফলে তারা মুক্তি লাভ করবে।এবং তুমি হরিপ্রিয়া নামে জগতে বিখ্যাত হবে। তুমি ব্রত পালন কারীর শত্রুবিনাশ, সর্ব সিদ্ধি প্রদান এবং পরমগতি দান করতে পারবে।ভগবান বিষ্ণু এইভাবে উৎপন্না একাদশী কে বরদান করে অন্তর্হিুত হলেন। সমস্ত ব্রতকারি দিনরাত ভক্তিপরায়ন হয়ে এই উৎপন্না একাদশীর উৎপত্তির কথা শ্রবণ- কীর্তন করলে শ্রী হরির আশীর্বাদে ধন্য হবেন।।


আশাকরি ব্রত কথাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন অথবা আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলটিকে ফলো করতে পারেন। 

ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

নমস্কার, ধন্যবাদ।।

 ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা