Breaking

Search Content

Follow Us

রবিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১

রহস্যময় পুরীর জগন্নাথ মন্দির- যার উত্তর বিজ্ঞানের কাছে নেই!





  নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।


আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল- "রহস্যময় পুরীর জগন্নাথ মন্দির"- যার উত্তর এখনো পর্যন্ত আধুনিক বিজ্ঞান সন্ধান করে উঠতে পারেনি!


আমাদের দেশে অর্থাৎ ভারতে চারটি দিকে যে চারটি প্রধান তীর্থ ক্ষেত্র রয়েছে তাদেরকে একত্রে বলা হয় 'চার ধাম'। এই চার ধাম এর মধ্যে অন্যতম একটি ধাম হল উড়িষ্যার পুরীতে অবস্থিত জগন্নাথ মন্দির। এই জগন্নাথ মন্দির কে মর্তলোকের বৈকুণ্ঠ  বলা হয়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জগন্নাথ রূপে নিজের বড় ভাই বলরাম এবং বোন সুভদ্রা সঙ্গে এই মন্দিরে বিরাজ করেন। কথিত আছে ভগবান বিষ্ণুর স্মরন পেয়ে রাজা ইন্দ্র যুগ্ম এই পুরীর জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ করেন। বলা হয়ে থাকে বাবা বিশ্বকর্মার ছদ্মবেশে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ভিতরে মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। অন্যান্য মন্দিরের ভেতরের মূর্তিগুলি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধাতু বা মাটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে বাবা জগন্নাথের নির্মাণ করার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ ধরনের কাঠের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। জগন্নাথ দেবের মূর্তি নির্মাণের জন্য যে কার্ড ব্যবহার করা হয় তা হলো নিমের কাঠ। প্রতি 12 বছর অন্তর এই জগন্নাথ দেবের মূর্তি বদল করে নতুন মূর্তি স্থাপন করা হয়। একে বলা হয় নবকলেবর। তবে এক্ষেত্রে যে নিম কাঠ ব্যবহার করা হয়- তা কিন্তু যেমন-তেমন নিম কাঠ নয়। জগন্নাথ দেবের মূর্তি নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিমের যে কার্ডটি ব্যবহার করা হয় সে ক্ষেত্রে সেই নিমগাছটি 4 শাখা বিশিষ্ট হতে হয়। নিম গাছের নিচে পিঁপড়ের ঘর কিংবা সাপের গর্ত থাকতে হবে। গাছটিকে শ্মশানের তিন মাথার মোড়ে হতে হবে। যদি কোন কারণে এই রকম নিম গাছ পাওয়া না যায়। তাহলে তার পরিবর্তে তিনদিকে পাহাড় বিশিষ্ট বেল গাছের সমন্বয় অবস্থিত এই ধরনের নিম গাছের কাঠ জগন্নাথ দেবের মূর্তি নির্মাণের জন্য ব্যবহার করা যাবে। আরো একটি অলৌকিক রহস্য জনক বিষয় হলো পুরনো যে মূর্তি থাকে মন্দিরে সেই মূর্তিটিকে কখনোই বিসর্জন দেয়া হয় না। পুরনো মূর্তিটিকে নতুন প্রতিষ্ঠত মূর্তির নিচে মাটিতে চাপা দিয়ে রাখা হয় এবং পরে তা মাটির সঙ্গে মিশে যায়।



পুরীর এই জগন্নাথ মন্দিরের সবথেকে অলৌকিক বিষয় হল মন্দিরের গর্ব মুখ। যেখানে মূল্যবান জিনিসপত্র,অলংকার ও বিভিন্ন ধন রত্ন সংরক্ষিত রাখা আছে। কিন্তু এগুলি দেখাশোনার জন্য ওইখানে কোন লোকজন রাখা নেই। বরং সেই গর্ভ মুখের দুয়ার সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে বেশকিছু বিষধর সাপ এবং তার সাথে কিছু ঐশ্বরিক আত্মা ওই ধনরত্ন গুলিকে বছরের পর বছর ধরে রক্ষা করে যাচ্ছে। যে কারণে মন্দিরের গর্ব মুখের ভিতরের দরজা খুলে কেউ কোনদিন প্রবেশ করতে পারেনি আজ অব্দি।



অপরদিকে মন্দিরের উপরের অংশ রত্নমুর। এই অংশটিতে রয়েছে একটি ঐশ্বরিক চুম্বকীয় শক্তি। যা মন্দিরকে কোনো প্রবল ঝড়, দমকা হাওয়া প্রভৃতি জিনিসগুলি দেখা দিলে মন্দিরকে স্থির রাখে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। যে কারণে উড়িষ্যার পুরীর উপকূল সংলগ্ন এলাকায় বিভিন্ন বিধ্বংসী ঝড় আসলেও পুরী জগন্নাথ দেবের মন্দিরের কোনো ক্ষতি করতে পারে নি। 



মন্দিরের এই রত্নমুর অংশেই রয়েছে অষ্ট ধাতু দ্বারা নির্মিত সুদর্শন চক্র। এই চক্রটি মূলত ২০ ফুট উঁচু এবং এর ওজন প্রায় ১ টন। মন্দিরের একদম চুরাই এটি অবস্থিত। এটির একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পুরী শহরের যেকোনো স্থান থেকে আপনি এই মন্দিরের চূড়ায় অবস্থিত সুদর্শন চক্র টি ও রত্ন মূর দেখতে পাবেন এবং আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এটির মুখ সদাসর্বদা আপনি যে স্থান থেকেই দেখবেন না কেন পুরী শহরের আপনার দিকেই মুখটি থাকবে। মন্দিরের চূড়ায় স্থাপিত এই চক্রটি স্থাপনের পিছনে যে তৈরীর কৌশল রয়েছে বা ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতি রয়েছে সেই বিষয়টি আজও বিজ্ঞানের কাছে জেনে ওঠা সম্ভব হয়নি।



আপনি আরও জানলে অবাক হবেন এই মন্দিরের উপর দিয়ে উড়ে না কোনো পাখি এবং যায় না কোনো বিমান। কিন্তু ভারতে অবস্থিত অন্যান্য মন্দিরের ক্ষেত্রে এই বৈশিষ্ট্য একেবারেই দেখা যায় না বললেই চলে। জায়গাটি প্রকৃতপক্ষে 'নো-ফ্লাই জোন' অর্থাৎ কোনো কিছুই এই মন্দির সংলগ্ন এলাকার উপর দিয়ে উড়তে পারে না। কিন্তু এমনটা কেন হয় এর উত্তর বিজ্ঞান এর কাছে আজো নেই। ভক্তদের বিশ্বাস এ হলো জগন্নাথ দেবের মহিমা। মূলত চারটি ধামের মধ্যে এটি একটি ধাম। সেই অনুযায়ী এটি বৈকুণ্ঠ তথা স্বর্গে যাবার রাস্তা বলে মনে করেন ভক্তারা।


আর একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো এই সুবিশাল মন্দিরের ছায়া কোনদিন মাটিতে পড়ে না। অথচ এই মন্দিরের উচ্চতা-২১৪ ফুট। মন্দির চত্বরে সীমানা ৪ লক্ষ বর্গ ফুট। কিন্তু ভাববার বিষয় এত বড় মন্দির হওয়া সত্ত্বেও এই মন্দিরের ছায়া আজ পর্যন্ত কেউ দেখতে পাইনি। এইরূপ ঘটনাটি সুদক্ষ ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশল নাকি কোনো ঐশ্বরিক তথা দৈবিক ঘটনা?  - এর উত্তর বিজ্ঞানীরা আজ পর্যন্ত দিতে পারেনি।



আরো একটি রহস্যজনক বিষয় হল এই মন্দিরে চারটি দুয়ার রয়েছে। প্রথম দুয়ার অর্থাৎ সিংহদুয়ার দিয়ে যখন আপনি মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করবেন তখন প্রবেশের সময় আপনি পুরি সমুদ্রের ঢেউ এর আওয়াজ কানে শুনতে পাবেন। কিন্তু মন্দিরে ঢোকার পর সেই আওয়াজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। আপনি যখন পিছন ফিরে ওই একই দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসতে থাকবেন তখন ও ঢেউয়ের আওয়াজ পাবেন না। অথচ আপনি ওই দরজা দিয়ে যাওয়ার সময় ঢেউয়ের আওয়াজ পেয়েছিলেন। এই অলৌকিক রহস্য উত্তর বিজ্ঞানের কাছে নেই। ভক্তরা মনে করেন- সুভদ্রা চেয়েছিলেন' মন্দিরের ভিতরে যেন শান্তি বিরাজ থাকে। সেই কারণেই মন্দিরের ভিতরে কোনরূপ শব্দ শোনা যায় না এবং শান্তি বিরাজ থাকে।



আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মন্দিরের উপরে একটি পতাকা লাগানো আছে। এই পতাকাটির সবসময় হাওয়ার বিপরীত দিকে উড়তে থাকে। এছাড়া প্রত্যেক দিন একজন পুরোহিত এই মন্দিরের পতাকা টি পাল্টানোর জন্য মন্দিরের চূড়ায় ওঠেন। যা প্রায় ৪৫ তালা বহুতলের সমান। যদি কোনো কারণে একদিন এই প্রথা অর্থাৎ পতাকা লাগানো বন্ধ হয় তাহলে পরবর্তী ১৮ বছর বন্ধ থাকবে মন্দির।


আশা করি আপনারা এই লেখাটি পড়ে সম্মৃদ্ধ হয়েছেন এবং পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের বেশ কিছু অজানা রহস্য সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন এবং আমাদের অমৃত কথাই ইউটিউব চ্যানেলটিকে ফলো করতে পারেন।

ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

নমস্কার, ধন্যবাদ।

 ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা