Breaking

Search Content

Follow Us

সোমবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২১

শ্রী শ্রী সন্তোষী মাতার ব্রত কথা - ব্রতের নিয়ম, প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং ব্রতের ফল ||


 নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই চ্যানেল এর প্রধান বিষয়বস্তু ।


আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল- শ্রী শ্রী সন্তোষী মায়ের ব্রতকথা। ব্রতের নিয়ম, প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং ব্রতের ফল সম্পর্কে।




ব্রতের নিয়ম:- প্রতি শুক্রবারে উপবাসে থেকে স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্রে ধুপ, দীপ জ্বালিয়ে সন্তোষী মাতার পূজা করতে হয়।


ব্রতের উপকরণ:-  ধান ,দূর্বা, ফুল, ছোলা, গুড় ও বাতাসা ।


ব্রতের ফল:- ভক্তিভরে বিশ্বাসের সঙ্গে যে এই ব্রত উদযাপন করবে- তার সব কামনা সিদ্ধ হবে। গৃহে অর্থাভাব থাকবে না।


{ব্রত কথা}

এক দেশে এক বৃদ্ধা রমনি বাস করত। বৃদ্ধার ছিল সাত পুত্র। বৃদ্ধার সাত পুত্রের মধ্যে ছয়জন বড় হয়ে অর্থ উপার্জনে সক্ষম হল। কিন্তু সপ্তম পুত্রটি ছিল বেকার। বৃদ্ধা প্রতিদিন ভাল ভাল রান্না করে সকল কে খাওয়াতো। আর যে সকল খাবার অবশিষ্ট থাকত অর্থাৎ নিকৃষ্ট খাদ্য ওই সপ্তম পুত্রকে খেতে দিত। সপ্তম পুত্র অর্থাৎ বৃদ্ধার কনিষ্ঠপুত্র কিন্তু এ বিষয়ে কিছুই জানতো না। বৃদ্ধার কনিষ্ঠ অর্থাৎ সপ্তম পুত্রের নাম ছিল রামু। রামু ভাবতো তার মা ও পরিবার তাকে খুবই ভালোবাসেন।


কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অন্য ছেলেদের চাপে পড়ে এবং রামু উপার্জন করে না বলেও রামুর মা তার সঙ্গে এই ধরনের আচরণ করতো। এই সংসারে টাকা-পয়সারই আদর। যার টাকা পয়সা নেই বা এই সংসারে যে কোন টাকা পয়সা দিতে পারে না ,তার এই সংসারে কোনো আদর থাকেনা। অতএব এই পরিবারে রামু এবং রামুর স্ত্রী-র অর্থাৎ ছোট বউয়ের এই পরিবারে কোনো আদর ছিল না। রামু কিন্তু এইসব ব্যাপার কিছুই জানতো না। সে হলো প্রাণখোলা একজন মানুষ। একদিন সকালে সে তার স্ত্রীকে বললঃ জানো সাবিত্রী, মা এবং দাদারা আমাদের খুবই ভালোবাসেন।


সাবিত্রী সেদিন আর তার মনের দুঃখ চেপে রাখতে পারলো না। সে তার স্বামীকে বললঃ তোমার মা তোমাকে তোমার দাদাদের উচ্ছিষ্ট খেতে দেয়। আমি ছয় বউয়ের পাতের উচ্ছিষ্টই খাই।


স্ত্রীর একথা বিশ্বাস করলো না রামু। পরদিন সে নিজেই দেখলো- ভাল ভাল রান্না আর পিঠে পায়েস সব দাদাদের খেতে দেওয়া হচ্ছে। আর দাদাদের পাতের উচ্ছিষ্ট ওর জন্য তুলে রাখা হচ্ছে। দাদাদের খাওয়া শেষে যখন মা রামুকে ডাকলো, রামু অসুখের ভান করে শুয়ে রইলো।


শুয়ে শুয়ে সে দেখলো -তার স্ত্রী সাবিত্রীকে ও অন্যান্য বউদের উচ্ছিষ্ট খেতে দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া বৌদিরা সব আরাম-আয়েশে থাকে। আর সাবিত্রীকে বাসনপত্র মাজতে হয়।


রামুর মনে খুব দুঃখ হলো। সে ঠিক করল পরদিনই কাজের জন্য বেরিয়ে পড়বে। যদি দূর দেশেও যেতে হয় তবুও সে পিছুপা হবে না।


পরদিন রামু তার মাকে প্রণাম করে বলল মা দূর দেশে কাজের চেষ্টায় যাচ্ছি।


মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে রামু ও তার স্ত্রী-র কাছে এলো। সাবিত্রীর দু চোখে অশ্রুর বন্যা নেমে এলো। এতদিন তার স্বামী বেকার হলেও কাছে ছিল।এখন তার স্বামী দূর দেশে চলে যাচ্ছে। কাজ পাবে কি পাবে না তার ঠিক নেই। কতদূর যেতে হবে তাইবা কে জানে? আর এতদিন সাবিত্রী স্বামী ছাড়া হয়ে কিভাবেই বা থাকবে? আর না জানি স্বামীর অবর্তমানে সাবিত্রীকে কত দুঃখ কষ্টেই দিন কাটাতে হবে।


উপায় নেই,তাছাড়া রামু দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। অতএব মনের দুঃখে স্বামীকে বিদায় জানাতে হল।

                      

 *   *   *


বাড়ি থেকে বেরিয়ে রামু এদিক-ওদিক ঘুরতে লাগলো। কিন্তু কোথাও কোনো কাজ পেল না। তবু তার দৃহপণ। নানা দেশে ঘুরে অবশেষে এক দেশে এক শেঠজীর দোকানে এসে কাজ পেল। দোকানে আরো কর্মচারী ছিল, শেঠজী রামুর সত্যতা দেখে রামুকে পছন্দ করতে লাগলেন। ক্রমে ক্রমে রামু শেঠজীর ডান হাত হয়ে উঠল। তারপর শেঠজীর অংশীদার হলো। পরে সে নিজেই বিরাট ব্যবসার মালিক হলো।

                        *  *  *


এদিকে সাবিত্রীর কষ্টের শেষ নেই। ঘরের সব কাজ তাকে করতে তো হয়ই, তাছাড়া জঙ্গল থেকে রোজ কাঠ কুড়িয়ে- কাঠের পাঁজা মাথায় করে আনতে হয়। এমন সুন্দরী সাবিত্রীও অতিরিক্ত কাজের চাপে হাড়ভাঙ্গা কাহিল হতে থাকলো। কিন্তু কাহিল হলেই বা শুনছে কে এদিকে স্বামীর কোনো খবর নেই, - কোথায় আছে? কিভাবে আছে, কে জানে? এদিকে দূরের বনে কাঠ কোরাতে গিয়ে সাবিত্রী এক বিরাট মন্দির দেখতে পেল। কৌতুহলবশে সাবিত্রী মন্দিরে প্রবেশ করল এবং মন্দিরের পুরোহিত কে জিজ্ঞাসা করলঃ ইনি কোন দেবী? এই দেবীর আরাধনা করলে কি শুভ হয়? পুরোহিত এবং ভক্তগণ বললেন, সন্তোষী মাতার মন্দির। প্রতি শুক্রবার সন্তোষী মাতার পুজো হয় ।সন্তোষী মাতার পূজা করলে- অপুত্রক এর পুত্র হয়, নির্ধনের ধন হয়, বিদ্যাহীন এর বিদ্যা হয় ।


সাবিত্রী তখন জিজ্ঞাসা করলঃ আমি সন্তোষী মাতার পূজা করবো আমাকে কি করতে হবে?


পুরোহিত তখন বললেন আজতো শুক্রবার তুমি যদি এখনই উপবাস থাকো তাহলে এখনই তুমি এই ব্রত পালন করতে পারো। কেবলমাত্র ছোলা আর কিছু গুর নিয়ে দেবীর ব্রত কথা শনো। তাছাড়া প্রতি শুক্রবার এই ব্রত পালন করবে। একবেলা উপবাস, ব্রত ভেঙে নিরামিষ আহার। সম্ভব হলে প্রতি শুক্রবার সন্তোষী মাতার ভোগ দেবে। বালক ভোজন ও ব্রাহ্মন ভোজন করাবে। পান ,সুপারি ,বাতাসা ,ছোলা আর গুর ই যথেষ্ট। কিন্তু ব্রত পালনের দিন কখনোই টক খাবে না বা কাউকে খাওয়াবে না।


সাবিত্রী সেদিন থেকেই ব্রত পালন করল। কেঁদে কেঁদে সন্তোষী মাতার কাছে তার দুঃখের কথা বলল।


সন্তোষী মা দূর দেশের রামুকে স্বপ্নদর্শন দিয়ে বললেন, তুমি কি তোমার স্ত্রী সাবিত্রীর কথা ভুলে গেছো।


রামু তখন বললঃ না, মা ,ভুলিনি।


এদিনের পর থেকে রামু প্রতিমাসে সাবিত্রীর নামে মানি অর্ডারের টাকা পাঠাতে লাগলো। কিন্তু সতী স্ত্রী সাবিত্রী টাকায় খুশি হবে কেন, স্বামীর সঙ্গো যদি না সে পেল। সাবিত্রী আবার সন্তোষী মাতার কাছে কাতর আবেদন জানাল‌। সন্তোষী মাতার কৃপা হলো। 


রামু প্রচুর ধন-সম্পদ নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো। সাবিত্রী তখন কাঠের বোঝা মাথায় নিয়ে বাড়ি এলো, রামু প্রথমে তাকে চিনতেই পারেনি। একী কঙ্কালসার দেহ হয়েছে সাবিত্রীর। কোথায় সেই কনকচাঁপা রং। রামু সাবিত্রীর জন্যে অনেক নতুন অলংকার ও শারি এনেছিল। সাবিত্রী তা পড়ল। রামু নতুন বাড়ি করে সাবিত্রীকে সেই বাড়িতে নিয়ে গেল। প্রচুর ধন-সম্পদ রামুর। সাবিত্রী ও স্বামী সুখে সুখী। কিন্তু রামুর বৌদিরা সাবিত্রীর হিংসায় জ্বলতে লাগলো, তারা ভাবলো যে করেই হোক সন্তোষী মা'র বিষ-নজরে ফেলতে হবে।


তারা তাদের ছেলেমেয়েদের শিখিয়ে দিল আজ শুক্রবার, তোদের ছোট কাকিমা ব্রত পালন করবে, মিঠাই মন্ডা খাওয়ার পরে তার কাছে টক খেতে চাইবি।


অতএব, তাদের ছেলেমেয়েরা সাবিত্রীর কাছে টক খেতে চাইলো। কিন্তু সাবিত্রী বলল, আজ তো টক খেতে নেই, কিন্তু বাচ্চারা আবদার করল ।তাই সাবিত্রীকে পয়সা দিতে হলো। সেই পয়সাদিয়ে বাচ্চারা টক কিনে খেলো ফলে সাবিত্রী সন্তোষী মায়ের বিষ নজরে পড়ল। রাজার লোকেরা এসে রামুকে ধরে নিয়ে গেল ।রাজা রামুর ধন-সম্পদ কেড়ে নিল।


সাবিত্রী আবার সন্তোষী মার কাছে কাতর আবেদন জানিয়ে বললঃ মা এমন ভুল আর কখনো করবো না। আমায় ক্ষমা করো।


ভক্তের কান্না সন্তোষী মায়ের আসন টলল। তিনি রাজাকে স্বপ্নে আদেশ দিলেন, ধন সম্পদসহ রামুকে মুক্তি দিতে। না হলে রাজার ঘর অকল্যাণ ঘটবে।


স্বপ্নে সন্তোষী মাতার নির্দেশ-দর্শন পেয়ে রাজা ভয় পেয়ে পরেরদিন প্রভূত ধন-সম্পদ সহ রামুকে মুক্তি দিল রাজা। সাবিত্রীর জীবনে আবার সুখ ফিরে এলো। সন্তোষী মাতার কৃপায় তার পুত্র সন্তান হলো। ধনে জনে গৃহে পূর্ণ হইল, কোন দুঃখ রইল না।


একদিন সন্তোষী মাতা ভয়ঙ্কর মক্ষিকা রূপে সাবিত্রীর ঘরে এলেন। তারপর তিনি নিজ মূর্তি ধারণ করে বললেন ,তোমার ভক্তি ও নিষ্ঠা নিয়ে যে আমার ব্রত পালন করবে আমি তার গৃহে চিরকাল বিরাজ করব।

 

সন্তোষী মাতার কথা হলো সমাপন । উলুধ্বনি দাও সবে যত বামাগণ।

  জয় জয় সন্তোষী মা, তুমি কল্যাণী।। তোমার কৃপায় সবে সুখী হয় জানি ।।


আশাকরি ব্রতকথাটি ভালো লেগেছে। যারা সন্তোষী মার ব্রত পালন করছেন পারলে তাদের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।সকলেই ভাল থাকুন এবং সুস্থ্য থাকুন এই কামনা রেখে আজকে এখানেই শেষ করলাম। নমস্কার, ধন্যবাদ।

 ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা