তুলসী গাছের তাৎপর্য ও গুরুত্ব || কৃষ্ণ তুলসী ও রাম তুলসী-কোন প্রকার তুলসী গাছ বাড়িতে থাকা প্রয়োজন?

  নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।

আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল- তুলসী গাছ সম্পর্কে। তুলসী গাছ বিভিন্ন প্রকার। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কৃষ্ণ-তুলসী এবং রাম তুলসী। কিন্তু কথা হচ্ছে কোন প্রকার তুলসী গাছ বাড়িতে থাকা মঙ্গল জনক এবং অধিক শুভ??

প্রতিটি হিন্দু বাড়িতেই একটি কমন গাছ দেখা যায়, আর সেটি হল তুলসী গাছ। আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে তুলসী গাছ বাড়িতে থাকলে মৃত্যুর দেবতা যমরাজও বাড়িতে প্রবেশ করতে পারে না। বাড়িতে তুলসী গাছ থাকলে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আমাদের ধর্মে তুলসী গাছকে দেবী হিসেবে পূজা করা হয়ে থাকে। এছাড়া প্রায় প্রত্যেকটি পূজার ক্ষেত্রে তুলসী গাছ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু আপনি কি জানেন- বাড়িতে কোন ধরনের তুলসী গাছ থাকা প্রয়োজন?    বাড়ির কোন স্থানের কোথায় থাকা প্রয়োজন?

বাড়িতে তুলসী গাছ থাকলে একটি তুলসী মঞ্চ বা তুলসী মন্দির নির্মাণ করে তুলসী গাছ কি রাখবেন। কারণ তুলসী গাছের উপকারিতা পেতে গেলে আপনাকে এই বিষয়টি নজরে রাখতে। এই তুলসী গাছ যখন লাগাবেন অবশ্যই এই গাছটিকে বাড়ির উত্তর-পূর্ব কোনে অর্থাৎ ঈশান কোণে লাগাবেন। শাস্ত্র অনুযায়ী সবথেকে শুভ হলো ঈশান কোন। যদি ঈশান কোণ সম্ভব না হয়, তাহলে চেষ্টা করুন বাড়ির উত্তর দিকে এই তুলসী গাছ লাগানোর।

কিন্তু কখনোই তুলসী মঞ্চ টিকে বাড়ির দক্ষিণ দিকে রাখবেন না। এটা বাস্তুদোষ তৈরি করে। আরেকটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখবেন তুলসী মঞ্চ বা মন্দিরের পাশে কোন সময় জুতো বা ঝাঁটা কিংবা কোন কাপড়ের নেতা এই ধরনের জিনিস গুলো রাখবেন না। এই ঝাঁটা এবং জুতো তুলসী মন্দির এর পাশে রাখার ফলে বাড়িতে একপ্রকার নেগেটিভ এনার্জি তৈরি হয়।

তুলসী মঞ্চ টিকে সর্বদা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা প্রয়োজন। তবেই কিন্তু এর সুফল আপনি পাবেন এবং আপনার বাড়ি হয়ে উঠবে মঙ্গলময়।

তুলসী গাছ যদি কোনদিন বাড়িতে মরে যায় বা শুকিয়ে যায়, তা কখনোই কিন্তু বাড়িতে রাখবেন না। মরা তুলসী গাছ অবশ্যই তুলে ফেলুন। কিন্তু তুলে যেখানে সেখানে ফেলবেন না। মরা তুলসী গাছ টি কোনো নদী কিংবা শুদ্ধ জলাশয়ে ফেলবেন।

আরো একটি বিষয় মাথায় রাখবেন যে তুলসী গাছের পাশে কোনো প্রকার ক্যাকটাস বা কাটা জাতীয় গাছ যেন না থাকে। ক্যাকটাস বা কাটা জাতীয় গাছ যদি তুলসী গাছের পাশে থাকে তবে সে ক্ষেত্রে সংসারে অশান্তি বাড়ে। সুস্বাস্থ্য এবং বাড়ি মঙ্গলময় হাসি খুশিতে ভরিয়ে উঠাতে চাইলে তুলসী গাছের পাশে ফুলের গাছ লাগান।

সবথেকে বড় প্রশ্ন এইবার আসছে- 

বাড়িতে কোন ধরনের তুলসী গাছ রাখা প্রয়োজন?

আপনি হয়তো জানেন তুলসী গাছ চার প্রকার। বাবুই তুলসী, রাম তুলসী, কৃষ্ণ তুলসী এবং স্বেত তুলসী। যার মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দুটি তুলসী গাছ হলো রামতুলসী এবং কৃষ্ণ তুলসী। অধিকাংশ হিন্দুবাড়িতে এই দুই প্রকার তুলসী গাছই দেখা যায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো কোন প্রকার তুলসী গাছ বাড়িতে থাকা অবশ্যই প্রয়োজন।

এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আমাদের সবার প্রথমে এইটি জানা প্রয়োজন এই দুই প্রকার তুলসীর মধ্যে পার্থক্য কোথায়।

১)কৃষ্ণ তুলসী-  কৃষ্ণ তুলসী গাছের পাতার রং গারো সবুজ বা হালকা বেগুনির ছোঁয়া থাকে। এই তুলসীকে মনে করা হয় বৈষ্ণবী হিসাবে। ভগবান বিষ্ণুর আরেক রূপ হল এই বৈষ্ণবী। কৃষ্ণ হলেন শ্রী বিষ্ণুর একটি অবতার। আর কৃষ্ণের গায়ের রং যেহেতু নীল, এই তুলশী তেও রয়েছে নীল বর্ণ। তাই এই তুলশীর নাম কৃষ্ণ তুলসী।

কৃষ্ণ তুলসীর উপকারিতা- এই তুলসী জ্বর, হাঁপানি, পেটের সমস্যা, সর্দি কাশি ইত্যাদি সমস্যার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। কারনে তুলসির রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। বেশ গাড়ো গন্ধযুক্ত এবং এর স্বাদও বেশ গাড়ো হয়।

২) রাম তুলসী- রাম তুলসির পাতা কৃষ্ণ তুলসীর মত কারো হয় না এবং নীল আভাও থাকে না। এই রাম তুলসির পাতা অনেকটা হালকা সবুজ রঙের হয়ে থাকে। কৃষ্ণ-তুলসী যেমন গরম প্রকৃতির' ঠিক সেরকমই এই তুলসী ঠান্ডা প্রকৃতির। যে কারণেই এই তুলসী পাতার ব্যবহার সাধারণত গ্রীষ্মকালে হয়ে থাকে এবং কৃষ্ণ তুলসীর অপেক্ষায় রাম তুলসী পাতা ছোট হয়।

রাম তুলসীর উপকারিতা- এই রাম তুলসির পাতা শরীরকে ভালো রাখতে হার্টকে ঠান্ডা রাখতে এবং লিভারকে ঠান্ডা রাখতে খুব কার্যকরী। এছাড়া এই তুলসির পাতা রক্ত পরিষ্কার রাখে এবং স্কিনের জন্য এই তুলসী যথেষ্ট ভালো।

কিন্তু, প্রশ্ন হল - প্রত্যেকটি বাড়ির তুলসী মঞ্চ বা মন্দিরে কোন তুলসী গাছ লাগানো উচিত?

এর উত্তর হলো কৃষ্ণ-তুলসী। কারণ আমাদের শাস্ত্রে উল্লেখ আছে- কৃষ্ণ-তুলসী দিয়ে পূজার বিধান। এই তুলসী গাছ কে খুবই পবিত্র বলে মনে করা হয়। ভগবান বিষ্ণু এই তুলসীকে পবিত্র বৃন্দা বলেছেন। আর এই তুলসীর রং ও ভগবান বিষ্ণু বা বিষ্ণুর অবতার কৃষ্ণের মতো। ভগবান স্মরণে এই তুলসীকে পূজা করা হয়ে থাকে। বলা হয় এই কৃষ্ণ তুলসী গাছ বাড়িতে থাকলে বাড়ির পরিবেশ খুবই ভালো থাকে। তাই অবশ্যই বাড়িতে একটি কৃষ্ণ তুলসী গাছ লাগান।

আশা করি এই লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন অথবা আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলটিকে ফলো করুন।

নমস্কার, ধন্যবাদ।

ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।