নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।
আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল - "এমন সাত জন ব্যক্তি যারা মহাভারতের যুদ্ধের পূর্বেই যুদ্ধের ফলাফল জানতেন।"
বন্ধুরা আমরা সবাই জানি পৌরাণিক কালের সবথেকে বড় যুদ্ধ মহাভারত আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে কুরুক্ষেত্রের ময়দানে লড়া হয়েছিল। ধর্ম আর অধর্মের এই যুদ্ধে পান্ডবরা বিজয়ী হয়েছিল। আর কৌরবদের সম্পূর্ণ বংশের নাশ হয়েছিল। কিন্তু, বন্ধুরা আপনারা কি জানেন মহাভারত কালের সাতজন এমন মানুষ ছিলেন যারা মহাভারতের যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই জানতেন ভবিষ্যতে এটি একটি বিনাশকারী যুদ্ধতে পরিণত হবেই হবে এবং এই মহাযুদ্ধের পরিণাম কি হবে তাও তারা জানতেন। অর্থাৎ এই সাত জন লোক মহাভারতের যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই জানতেন এই যুদ্ধে পাণ্ডবরা বিজয়ী হবে এবং কৌরবদের বংশ নষ্ট হবে। চলুন বন্ধুরা জানা যাক এই সাতজন কে কে ছিলেন যারা পূর্বেই এই যুদ্ধ ও যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে জানতেন।
শ্রীকৃষ্ণ - যুদ্ধের পরিনাম যারা জানেন তাদের মধ্যে সবার প্রথমে যে নামটি আসে তিনি হলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। মহাভারত যুদ্ধ হওয়া নিশ্চিত এবং এই যুদ্ধে পাণ্ডবরা বিজয়ী হবে- এই কথাটি বাকি অন্যান্য মানুষদের আগেই জানতেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।
বন্ধুরা আমরা যেমনটা জানি যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে ভগবান শ্রী বিষ্ণুর অবতার বলে মানা হয়। তাহলে এটা কি করে সম্ভব হয় তিনি দ্বাপর যুগে মহাভারতের মহাযুদ্ধের পরিণাম আগে থেকেই জানবেন?
এর কারণ হিসেবে বন্ধুরা আপনাদের বলি- কেননা গীতাতে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজে বলেছেন -
"এই পৃথিবীতে যা কিছু হয় তা আমার ইচ্ছা অনুযায়ী হয়।"
"আমি এই মৃত্যু লোকে জন্ম নেই, আবার আমিই মৃত্যুকে প্রাপ্ত হই।"
এর সাথেই ভগবান শ্রী হরি দ্বাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণ অবতারে জন্মেছিলেন কৌরবদের অধর্মের বিনাশ ঘটিয়ে ধর্মের প্রতিষ্ঠা করতে। যে কারণে তিনি আগে থেকেই জানতেন যে অধর্মের বিনাশ হবেই।
এছাড়াও মহাভারতে এই বর্ণনাও পাওয়া যায় যে দ্রোপদী যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে মহাভারতের পরিনাম জানতে চান? তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীকে বলেন- ধর্মের প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ রুপি এই যজ্ঞে সকল অধর্মী মারা যাবে। শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীকে আরো বলেন- ধর্ম প্রতিষ্ঠা করার জন্য- তোমাকেও কিছু বিসর্জন দিতে হবে, তোমাকেও কিছু হারাতে হবে। আর আমরা সকলেই জানি এই যুদ্ধে অভিমুন্য সহ দ্রৌপদীর পাঁচজন পুত্রই মারা গিয়েছিলেন।
ভীষ্ম- ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পর দ্বিতীয় যে ব্যক্তিটি মহাভারতের যুদ্ধের পরিণাম সম্পর্কে জানতেন তিনি হলেন পিতামহ ভীষ্ম।
বন্ধুরা মহাভারতের কথা অনুযায়ী পিতামহ ভীষ্ম দিবিয়া দৃষ্টি (divya-drishti) প্রাপ্ত ছিলেন। যে কারণে এই যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই তিনি জানতেন ভবিষ্যতে কৌরব এবং পান্ডবদের মধ্যে হস্তিনাপুরের সিংহাসন নিয়ে এই বিশাল মহাযুদ্ধ হবেই হবে। আর এই যুদ্ধে পাণ্ডবরা জয়ী হবে। কিন্তু, তার মনে দুঃখ ছিল এই কারণে যে তিনি হস্তিনাপুরের সিংহাসনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণে না চাইতেও তাকে কৌরব দের পক্ষ থেকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হবে। যেই কারণে এই যুদ্ধটি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য পিতামহ ভীষ্ম হস্তিনাপুরের দুই ভাগে বিভাজনকেও স্বীকার করে নিয়েছিলেন। কিন্তু তাও তিনি এই যুদ্ধটিকে এড়িয়ে যেতে পারেননি।
ঋষি বেদব্যাস- যেমনটা আমরা সকলে জানি মহাভারত গ্রন্থের রচনা মহর্ষি বেদব্যাস করেছিলেন। আর এমনটা মনে করা হয় এই গ্রন্থটি তিনি যুদ্ধ হওয়ার অনেকদিন আগেই রচনা করে দিয়েছিলেন। এরকমটা তিনি তার তপবলের মাধ্যমে করেছিলেন ; তার কাছে দিবিয়া দৃষ্টি ছিল যার মাধ্যমে তিনি ভবিষ্যতে হওয়া কোনো ঘটনা সম্পর্কে আগেই জানতে পারতেন। যার প্রমান আমরা মহাভারতেও পাই।
বন্ধুরা আপনারা হয়তো দেখেছেন অথবা পড়েছেন যখন যুদ্ধটি সংঘটিত হতে যাচ্ছিল তার পূর্বেই মহর্ষি বেদব্যাস দুর্যোধনের পিতা ধৃতরাষ্ট্রকে বুঝিয়ে বলেছিলেন - হে বৎস, এখনো সময় আছে; তুমি হস্তিনাপুরের রাজা হওয়ার কারণে এই যুদ্ধটি তুমি আটকাতে পারো। অন্যথা তোমার পুরো কুলের বা বংশের নাশ হবে । কিন্তু মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র বেদব্যাসের কথাগুলি ঠিক ভাবে বুঝতে পারলেন না। আর যুদ্ধে শেষ হতে হতে তার পুরো বংশের নাশ হয়ে গেল।
সহদেব- বন্ধুরা মহাভারতে বর্ণিত কথা অনুযায়ী পঞ্চপান্ডব এর মধ্যে একমাত্র সহদেবই ছিলেন যিনি মহাভারতের যুদ্ধের পরিণাম সম্পর্কে জানতেন। যার কারণ ছিল সহদেব তার পিতা পান্ডুর মৃত্যুর পর তার পিতার মস্তিষ্কের তিনটি অংশ খেয়ে ছিলেন যার পর থেকেই তিনি ত্রিকাল দর্শী হয়ে গিয়েছিলেন। এরপর তিনি ভবিষ্যতে হওয়া প্রত্যেকটি ঘটনা সম্পর্কে আগে থেকেই জানতে পেরে যেতেন। কিন্তু, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অভিশাপের জন্য তিনি মহাভারত যুদ্ধের পরিণাম কখনো কাউকে বলতেন না। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যদি তিনি এই মহাভারতের যুদ্ধের পরিণাম সম্পর্কে কাউকে কিছু বলে তাহলে তার মৃত্যু হবে।
সঞ্জয়- বন্ধুরা আমরা সকলেই জানি সঞ্জয় মহারাজ ধৃতরাষ্ট্রের সারথি ছিলেন। আর সময়ে সময়ে সঞ্জয় - মহারাজ ধৃতরাষ্ট্রকে ভালো এবং খারাপ সম্পর্কে বোঝাতেন। মহাভারতের যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পূর্বে ধৃতরাষ্ট্রের মহর্ষি বেদব্যাসকে বলার কারণে মহর্ষি বেদব্যাস সঞ্জয়কে দিবিয়দৃষ্টি প্রাপ্ত হওয়ার বর প্রদান করেছিলেন। যাতে সঞ্জয় মহারাজ ধৃতরাষ্ট্রকে যুদ্ধের-পরিনাম ফলাফল শোনাতে পারে।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে একদিন মহারাষ্ট্র বেদব্যাসের কাছে জিজ্ঞাসা করলেন- হে ঋষি বর, কৃপা করে এটা বলে দিন মহাভারতের এই যুদ্ধের পরিণাম কি হবে? তখন বেদব্যাস ধৃতরাষ্ট্র কে বলেছিলেন- হে বৎস, যেই বৃক্ষ ছায়া দেওয়া বন্ধ করে দেয় তাকে কাটতেই হয়। এইজন্য যদি তুমি যুদ্ধের পরিণাম জানতে চাও তাহলে আমি তোমাকে দিবিয় দৃষ্টি প্রদান করছি; যা মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র নিতে মানা করে দেন। আর সেই দিবিয় দৃষ্টি সঞ্জয়কে দেওয়ার বিনতি করেন। দিবিয় দৃষ্টি প্রাপ্ত হওয়ার পর সঞ্জয়ও মহাভারতের পরিণাম সম্পর্কে জানতে পেরে গিয়েছিলেন। কিন্তু, তিনি কাউকে কোনদিন যুদ্ধের পরিণাম সম্পর্কে জানান নি।
দ্রোণাচার্য- হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী কৌরব এবং পান্ডবদের গুরু ছিলেন দ্রোণাচার্য। গুরু দ্রোণাচার্য কে দেবগুরু বৃহস্পতির অবতার বলে মনে করা হয়। আর এমনটা মনে করা হয় তিনিও দিবিয় দৃষ্টি প্রাপ্ত ছিলেন। যে কারণে তিনি জানতেন মহাভারতের যুদ্ধে বিজয় শুধুমাত্র সেই পক্ষেরই হবে যেপক্ষে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ থাকবেন। কিন্তু, তাও পিতামহ ভীষ্মের মতো না চাইতেও তাকে কৌরবদের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হয়।
কৃপাচার্য- বন্ধুরা উপরিক্ত এই 6 জন ব্যক্তি ছাড়াও গুরুকুলের গুরু কিপাচার্য-ও মহাভারতের যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই এর পরিণাম সম্পর্কে জানতেন। যার কারণ ছিল তিনিও দিবিয় দৃষ্টি প্রাপ্ত ছিলেন। আর এর প্রমাণ মেলে এইভাবে- যখন কুরুক্ষেত্রের ময়দানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার নিজের বিরাট স্বরূপের দর্শন অর্জুনকে করিয়েছিলেন, কৃপাচার্য শ্রীকৃষ্ণের সেই বিরাট স্বরূপটিকে পূর্বেই নিজের দিবিয় দৃষ্টির মাধ্যমে দেখেছিলেন।
বন্ধুরা এই ছিল সেই সাতজন ব্যক্তি যারা মহাভারত যুদ্ধের পূর্বেই যুদ্ধের ফলাফল বা পরিনাম সম্পর্কে জানতেন।
আশাকরি বন্ধুরা লেখা টি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন অথবা আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলটিকে অবশ্যই ফলো করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা