Breaking

Search Content

Follow Us

মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

মহাভারতের যুদ্ধ কুরুক্ষেত্রের ময়দানেই কেন লড়া হয়েছিল - অন্যকোনো জায়গায় এই যুদ্ধ লড়া হয়নি কেন?



নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।


আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল - 


বন্ধুরা এটা আমরা সকলেই জানি মহাভারতের যুদ্ধ কুরুক্ষেত্রের ময়দানে লড়া হয়েছিল। যেখানে পাণ্ডবরা জয়ী হয়েছিল।আর ধর্মক্ষেত্র কুরুক্ষেত্রতেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভগবদ্গীতার আনমোল জ্ঞান দিয়েছিলেন। কিন্তু, বন্ধুরা আপনারা কি কখনো এটা ভেবেছেন যে এই ভাইদের মধ্যে হওয়া মহাভারতের যুদ্ধ কুরুক্ষেত্রের ময়দানেই কেন লড়া হয়েছিল? অন্যকোনো জায়গায় এই যুদ্ধ লড়া হয়নি কেন!


বন্ধুরা মহাভারতের যুদ্ধ কুরুক্ষেত্রের ময়দানে কেন হল - এর সঙ্গে যুক্ত তথ্য আমাদের অন্যান্য ধর্ম গ্রন্থে বর্ণিত বিভিন্ন কথা থেকে জানা যায়। যার মধ্যে তিনটি কথা উল্লেখযোগ্য।


বন্ধুরা প্রথম কথা অনুযায়ী যখন কৌরব ও পাণ্ডবদের মধ্যে মহাভারতের যুদ্ধ নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন, এই যুদ্ধের জন্য কোন জায়গাটি উপযুক্ত হবে যেখানে ভাই-ভাই পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারবে এবং যেখানে কোনো সন্ধি ছাড়াই এই যুদ্ধ সমাপ্ত করা যায়। এই জিনিসটি ভেবেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার দূত-দের অনেক দিশা তে এরকম একটি জায়গার খোঁজ করতে পাঠান। যেখানে এই মহাযুদ্ধ কোনো বাঁধা ছাড়াই হতে পারে। এর কিছুদিন পরেই একটি দূত ফিরে এলেন এবং তিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বললেন- হে বাসুদেব, আমি একটি জায়গা পরিদর্শন করেছি, যেখানে কৌরব ও পাণ্ডবদের যুদ্ধ হওয়ার জন্য একদম উপযুক্ত।

এ কথা শোনার পর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন- হে বৎস, তুমি ওই জায়গায় কি এমন দেখলে যে কারনে তোমার মনে হলো এই জায়গাটি কৌরব এবং পান্ডবদের মহাযুদ্ধ হওয়ার জন্য উপযুক্ত?

তখন দূত বললেন- হে বাসুদেব, আপনার আজ্ঞা অনুসারে যুদ্ধের জন্য উপযুক্ত ভূমি খুঁজতে খুঁজতে আমি কুরুক্ষেত্র পৌছালাম। যেখানে আমি দেখলাম দুই ভাই পরস্পরের সঙ্গে জমি নিয়ে লড়াই করছিল। বড় ভাই তার ছোট ভাইকে জমির ভাঙ্গা অংশ দিয়ে বর্ষার জল ঢুকে যাচ্ছিল সেই জল আটকাতে বলেন । কিন্তু, ছোট ভাই বারবার ওই জল আটকাতে বারণ করেছিলেন। এই শুনে তার বড় ভাই খুবই রেগে যায়। তারপর সে নিজের ছোট ভাইকে ছুরি দিয়ে হত্যা করে। আর তার ছোট ভাইয়ের লাশটি দিয়েই জমির যে অংশ দিয়ে জল ঢুকে যাচ্ছিল সেই অংশটি আটকে করে দেয়।     - হে প্রভু, এই দৃশ্য দেখে আমি বুঝে গিয়েছিলাম ভবিষ্যতে হওয়া কৌরব এবং পান্ডবদের মধ্যে মহাভারতের যুদ্ধের জন্য এই জায়গাটি সবথেকে উপযুক্ত। দূতের এই কথা শুনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হাসতে লাগলেন এবং নিজেই আপন মনে অনেক বিচার করার পরে যখন শ্রীকৃষ্ণ নিশ্চিত হয়ে গেলেন যে কুরুক্ষেত্রের ভূমির সংস্কার অনুযায়ী যতই লাশের পাহাড় হয়ে যাক না কেন ভাই ভাইয়ের মধ্যে কখনো সন্ধি হবে না, তখনই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই যুদ্ধ কুরুক্ষেত্রের ময়দানে করার ঘোষণা করলেন।


অন্যদিকে দ্বিতীয় কথা অনুযায়ী যখন কৌরব ও পাণ্ডবদের পূর্ব পুরুষ কুরুক্ষেত্রের ভূমিতে চাষ করাচ্ছিলেন তখন সেখানে ইন্দ্রদেব এসে উপস্থিত হন এবং তিনি রাজা কুরুর কাছে জিজ্ঞাসা করেন- হে রাজন, আপনি কেন এই ভূমি টির চাষাবাস করাচ্ছেন। তখন রাজা কুরু  - ইন্দ্রদেবকে কাছে বললেন- হে দেবেন্দ্র, আমার ইচ্ছা কেউ যদি এই ভূমিতে মারা যায় তাহলে সে এখান থেকেই যেন সোজা বৈকুণ্ঠধামে ফিরে যেতে পারে।


রাজা কুরুর মুখে এরকম কথা শোনার পর ইন্দ্রদেব হাসতে থাকেন এবং রাজা কুরুর মজা উড়িয়ে ইন্দ্রদেব স্বর্গে চলে যান। স্বর্গে পৌঁছানোর পর ইন্দ্রদেব এই সমস্ত কথা সকল দেবতাদের জানালেন। তখন ব্রহ্মাদেব ইন্দ্রদেব কে বললেন তুমি একবার পুনরায় কুরুর কাছে যাও আর তাকে বলো- আপনার এই ইচ্ছা পূর্ণ হবে না। কিন্তু, যদি কোনো পশুপখি, মানুষ অন্নজল ত্যাগ করে অথবা যদি কারো যুদ্ধের সময় এই ভূমিতে মৃত্যু প্রাপ্ত হয় তাহলে সে স্বর্গের ভাগী হবে।

ব্রহ্মার নির্দেশ অনুযায়ী ইন্দ্রদেব পুনরায় রাজা কুরুর কাছে গেলেন এবং তাকে ব্রহ্মার বলা ঐ সমস্ত কথাগুলো বললেন।তখন কুরু দেবরাজ ইন্দ্র কে বললেন-       হে দেবেন্দ্র, পরম ব্রহ্মাজি যে কথাটি বললেন তা আমি মেনে নিলাম আর এমনটাই হবে।


বন্ধুরা এমনটা মনে করা হয় পিতামহ ভীষ্ম এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই কথাগুলো সম্পূর্ণ জানতেন আর এই জন্যই মহাভারতের যুদ্ধ কুরুক্ষেত্রের ময়দানে লড়া হয়েছিল।


এই দুটি কথা ছাড়াও ধর্মগ্রন্থে মহাভারতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত তৃতীয় একটি কথা শ্রবণ কুমারের সঙ্গে জুড়ে আছে। যেই কথা অনুযায়ী একবার শ্রবণ কুমার তার মাতা পিতা কে কাঁধে করে তীর্থযাত্রায় বের হলেন এবং অনেক তীর্থস্থান ঘোরার পর একদিন শ্রবণ কুমারের মাথায় বুদ্ধি এলো- মাতা-পিতাকে পায়ে হাঁটিয়ে নিলে কেমন হয়? এরপর শ্রবণ কুমার তার মাতা পিতা কে পায়ে হেঁটে যেতে বললেন। শ্রবণ কুমারের কথা অনুযায়ী তার মাতা-পিতা অন্ধ হওয়া সত্ত্বেও পায়ে হেঁটে যেতে রাজি হলেন। এই ভাবে হাঁটতে হাঁটতে তারা যখন কুরুক্ষেত্রের ময়দানে এসে পৌঁছাল তখন তার মাতা পিতা ছেলেকে বলল - যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই জায়গাটি অতিক্রম করো, এই বলে তারা দ্রুত পায়ে হেঁটে সেই জায়গাটি অতিক্রম করলেন। দ্রুত পায়ে হাঁটার ফলে শ্রবণ কুমারের মাতা-পিতার পায়ে ফোসকা পড়ে যায়। এই দেখে শোভন কুমার আপন মনেই নিজে নিজে দুঃখ পাচ্ছিলেন এবং সে পশ্চাতাপ করছিলেন। তখন তার মাতা পিতাকে সে পুনরায় কাঁধে নিয়ে চলতে লাগলেন। এমত অবস্থায় তাঁর পিতা তাকে বলল - হে পুত্র, এতে তোমার কোনো দোষ নেই। এই ভূমি এরকমই ; কারণ অনেক সময় আগে এই ভূমিতে ময় নামক অসুরের বাস ছিল। আর সে জন্ম নেওয়ার সাথে সাথেই তার মাতা-পিতাকে হত্যা করেছিল। তখন থেকে এই ভূমি সংস্কার এরকমই হয়ে গেছে।


বন্ধুরা এই কথাগুলো ছাড়াও মহাভারতের বনপর্বে কুরুক্ষেত্রের ভূমি মাহাত্ম্যের বিস্তার পূর্বক বর্ণনা করা হয়েছে। শুধু তাই নয় যদি কোনো মানুষের উপর এই ভূমির ধূলির একটি কণা পরে যায় তাহলে সে পাপ মুক্ত হয়ে যায়।


এছাড়াও নারদ পুরানে বলা হয়েছে কোনো জীব যদি এই ভূমিতে মৃত্যু প্রাপ্ত হয় তাহলে তাকে দ্বিতীয়বার এই মৃত্যু লোকে জন্ম নিতে হয় না। আর বন্ধুরা এটাই হলো কারণ- ভগবত গীতার প্রথম শ্লোকে কুরুক্ষেত্র কে ধর্মক্ষেত্র বলার। তো এরসাথেই আশাকরি আজকের এই লেখা টি আপনাদের পছন্দ হয়েছে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা