Breaking

Search Content

Follow Us

সোমবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২২

মহাভারত কালে দেওয়া পাঁচটি বড় অভিশাপ - যার ফলে ভুগছেন আজও বহু মানুষ।



 নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।


আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল - "মহাভারত কালে দেওয়া পাঁচটি বড় অভিশাপ - যার ফলে আজও ভুগছেন বহু মানুষ।"


বন্ধুরা আপনারা মহাভারতের অনেক কাহিনী শুনেছেন হয়তো, কিন্তু হিন্দু ধর্মে মহাভারতে এমন কিছু কাহিনী আছে যা হয়তো আপনিও কোনদিন শোনেননি। যা থেকে আজও বহু হিন্দু ধর্মের মানুষ অজানা। এই লেখাটিতে আজকে আপনাদের সঙ্গে মহাভারত কালে দেওয়া কিছু এমন অভিশাপ সম্পর্কে জানাতে যাচ্ছি যা সম্পর্কে এটা মানা হয় ওই অভিশাপ গুলির প্রভাব আজও বহু মানুষ ভোগ করছেন।


প্রথমত, যুধিষ্ঠির দ্বারা স্ত্রী জাতিকে দেওয়া অভিশাপ। মহাভারতে দেওয়া অভিশাপ গুলির মধ্যে যুধিষ্ঠিরের স্ত্রী জাতিকে দেওয়া অভিশাপটি সর্ববিধিত। মহাভারতে বর্ণিত কথা অনুযায়ী কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে যখন অর্জুন মহারথী কর্ণের বধ করেন তখন পান্ডবদের মাতা কুন্তী - কর্নের মৃতদেহের পাশে গিয়ে নিজের চোখের জল ঝরাতে থাকে। এই দেখে পাণ্ডবরা খুবই আশ্চর্য হলেন। তারা ভাবতে লাগলেন কি এমন কারণ যার জন্য তাদের মাতা কুন্তী - কর্নের মৃতদেহের পাশে গিয়ে নিজের চোখের জল ঝরাচ্ছেন! 


তখন জৈষ্ঠ পুত্র যুধিষ্ঠির দেবী কুন্তীর কাছে গেলেন এবং তার কাছে জিজ্ঞাসা করলেন- হে মাতা, তুমি কাঁদছো কেন, কি হয়েছে? কেন তুমি আমাদের সব থেকে বড় শত্রুর মৃতদেহের পাশে বসে নিজের চোখের জল ঝরাচ্ছ?


তখন দেবী কুন্তী বললেন- হে পুত্র, তোমরা যাকে এতদিন ধরে নিজের সব থেকে বড় শত্রু বলে মনে করতে বাস্তবে সে তোমাদের বড় ভাই ছিল। এই কথা শোনার পর যুধিষ্ঠির অবাক হয়ে যান। তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর মাতা কুন্তী কে বলেন- হে মাতা, এই কথা তো আপনি প্রথম থেকেই জানতেন হয়তো- যে অঙ্গরাজ কর্ণ আমার বড় ভাই ছিল। তাহলে আপনি আমাদের এই কথাটি আগে কেন জানালেন না? এতদিন এই কথাটি কেন গোপন রেখেছিলেন আমাদের থেকে? 

আপনার এই কথাটি আগে না জানানোর ফলে আজকে আমাদের সবকটি ভাইকে নিজের ভাতৃহত্যা পাপে জড়াতে হল। এইজন্য "আমি আজ এই ধর্মক্ষেত্র কুরুক্ষেত্র থেকে সবকটি দিশা, আকাশ আর মাটি কে সাক্ষী মেনে সকল স্ত্রীজাতি কে অভিশাপ দিলাম আজকের পর থেকে কোনো স্ত্রী বা নারী নিজের মনের মধ্যে কোনো প্রকার রহস্য লুকিয়ে রাখতে পারবে না।"


দ্বিতীয়তঃ সঙ্গী ঋষির পরীক্ষিত কে দেওয়া অভিশাপ। মহাভারত কথা অনুযায়ী পঞ্চপান্ডব 36 বছর ধরে হস্তিনাপুরে রাজত্ব করার পর যখন পঞ্চপান্ডব দ্রৌপদী সহ স্বর্গলোক লাভের উদ্দেশ্যে হিমালয়ের দিকে রওনা দেন, তখন যুধিষ্ঠির হস্তিনাপুরের রাজ সিংহাসনের দায়িত্ব অভিমন্যুর পুত্র পরীক্ষিতকে সপে দেন।


এমনটা মনে করা হয় রাজা পরীক্ষিতের শাসনকালেও হস্তিনাপুরের সকল প্রজা যুধিষ্ঠিরের শাসনকালের মত হাসিখুশ ভাবে জীবনযাপন করতো। কিন্তু, কথায় আছে যেটা হবার সেটা হবেই, ভাগ্যকে কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। একদিন রাজা পরীক্ষিত রোজ দিনের মতো তীর-ধনুক নিয়ে বনে বিচরণ করতে বের হলেন। সেখানে তিনি 'স্বমীক' নামের এক ঋষিকে দেখলেন। ঋষি তার তপস্যায় গভীরভাবে ধ্যানে মগ্ন ছিলেন; তথা ওই ঋষি মনব্রতোও রেখেছিলেন। কিন্তু, এই কথা রাজা পরীক্ষিত জানতেন না। তিনি অনেক বারই ঋষি কে ডাকলেন। কিন্তু তাসত্ত্বেও ওই ঋষি নিজের মনের প্রতি কাবু করে ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। এমত অবস্থায় রাজা পরীক্ষিত ঋষি কে অনেকবার ডাকা সত্ত্বেও ঋষি কোনো সাড়া না দিলে তখন রাজা পরীক্ষিত ক্রুদ্ধ হন এবং রাগের মাথায় একটি মরা সাপ ঋষির গলায় ঝুলিয়ে দেন।


অন্যদিকে এই কথা যখন ঋষি স্বমীকের পুত্র - "ঋষি সঙ্গী" জানতে পারলেন তখন সে রাজা পরীক্ষিত কে অভিশাপ দিলেন- আজ থেকে সাত দিন বাদে তক্ষক নাগের ছোবলে রাজা পরীক্ষিতের মৃত্যু হবে। আর শেষে রাজা পরীক্ষিতের মৃত্যু তক্ষক নাগের ছোবলেই হয়েছিল। আর এটা মানা হয় এর পরেই সূচনা হয়েছিল কলিযুগের। কেননা রাজা পরীক্ষিত জীবিত থাকাকালীন কলিযুগের (যেখানে পাপের ভাগ ৭৫ শতাংশ) এমন সাহস ছিল না; সে মানুষের উপর নিজের প্রভাব বিস্তার করতে পারবে। বন্ধুরা আজকে আমরা ওই অভিশাপ এর জন্যই এই কলিযুগকে ভোগ করতে হচ্ছে।


তৃতীয়তঃ শ্রীকৃষ্ণের অশ্বথামাকে দেয়া অভিশাপ। মহাভারতের যুদ্ধের শেষ দিন যখন অশ্বথামা গোপন ভাবে চালাকি করে পান্ডব পুত্রদের হত্যা করে; আর এই কথা যখন পঞ্চপান্ডব জানতে পারেন তখন পান্ডবরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে অশ্বথামার পিছু নিয়ে বেদব্যাসের আশ্রম এ পৌছায় পান্ডবদের দেখে অশ্বত্থামা অর্জুনের উপর ব্রহ্মাস্ত্র তীর নিক্ষেপ করে। এই দেখে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকেও ব্রম্ভাস্ত্র চালানোর নির্দেশ দেন; যার পর অর্জুনও অশ্বথামার উপর ব্রহ্মস্ত্র নিক্ষেপ করে। কিন্তু, মহর্ষি বেদব্যাস দুই দিক থেকে নিক্ষেপ করা 2 ব্রম্ভাস্ত্র কে মাঝখানে আটকে দিলেন তার শক্তির দ্বারা। এবং অর্জুন ও অশ্বত্থামার উদ্দেশ্যে বেদব্যাস বলেন, তোমরা কী এটা জানো না  দুটি ব্রম্ভাস্ত্র একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে এই পুরো সৃষ্টি ধ্বংস হয়ে যাবে। এই জন্য তোমরা দুজনই তোমাদের ব্রম্ভাস্ত্র কে ফিরিয়ে নাও। তখন অর্জুন নিজের ব্রম্ভাস্ত্রকে ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু, অশ্বত্থামা মহর্ষি বেদব্যাস কে জানায় - আমার পিতা আমায় ব্রম্ভাস্ত্র কে ফিরিয়ে নেওয়ার বিদ্যা শেখায় নি। এইজন্য আমি এটিকে ফিরিয়ে নিতে পারব না। এরপর অশ্বথামা ব্রহ্মাস্ত্র দিশা পরিবর্তন করে অভিমন্যুর পত্নী উত্তরার গর্ভের দিকে করে দেয়। এই দেখে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অশ্বত্থামা কে অভিশাপ দেন- 

"তুমি 3000 বর্ষ পর্যন্ত এই পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াবে। আর যে কোনো জায়গায় কোনো পুরুষের সাথে তোমার কথা হবে না। তোমার শরীর দিয়ে একপ্রকার গন্ধ নির্গত হবে যেই কারনে তুমি পৃথিবীতে থাকা অন্যান্য মানুষদের সঙ্গে একসাথে থাকতে পারবে না। সব সময় তোমাকে দুর্গম বনের মধ্যেই থাকতে হবে।"

আর এই অভিশাপের জন্য আজ পর্যন্ত এটা মনে করা হয় অশ্বথামা এখনো বেঁচে আছেন।


চতুর্থতঃ- মান্ডব্য ঋষির - যমরাজ কে দেওয়া অভিশাপ। মহাভারতে মান্ডব্য ঋষির বর্ণনা পাওয়া যায়। একবার রাজা ভুলবশত নিয়ে আয় বিচার করতে অক্ষম হন। আর নিজের সৈনিকদের মান্ডব্য ঋষিকে শূলে চড়ানোর আদেশ দিয়ে দেন। কিন্তু, অনেক সময় ধরে শূলে চড়ানোর পরেও যখন ঋষির প্রাণ গেল না তখন রাজা নিজের ভুল বুঝতে পারেন। এরপর তিনি তার সৈনিকদের ঋষি কে শূল থেকে নামাতে বলেন। আর রাজা নিজের ভুলের জন্য ঋষির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।


এরপর ঋষি মান্ডব্য যমরাজের সঙ্গে দেখা করতে যান এবং যমরাজের কাছে তিনি জিজ্ঞাসা করেন কেন আমাকে মিথ্যে অভিযোগে শাস্তি দেওয়া হল? তখন যমরাজ তার উত্তরে বলেন যখন তুমি যখন 12 বছর বয়সের ছিলে তখন তুমি একটি প্রজাপতির গায়ে সুঁচ ফুটিয়ে ছিলে; এই শুনে ঋষি প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হল এবং বলল কোনো মানুষেরই 12 বছর বয়সে এই বিষয়টির জ্ঞান থাকেনা যে ধর্ম ও অধর্ম কি!

যেহেতু একটি ছোট অপরাধের জন্য তুমি আমাকে এত বড় একটি দন্ড দিলে, অতএব আমিও তোমাকে অভিশাপ দিচ্ছি তুমি এক শূদ্র পরিবারে দাসীর ঘরে জন্ম নেবে। ঋষির এই অভিশাপের ফলে যমরাজ কে বিদুর রূপে পরে জন্ম নিতে হয়েছিল।


পঞ্চমতঃ- অপ্সরা উর্বশীর অর্জুনকে দেওয়া অভিশাপ। এই কাহিনীটি সেইসময়ের যখন 13 বছর বনবাসের সময় অর্জুন একবার দিবিয়া অস্ত্রের খোঁজে স্বর্গলোকে গিয়েছিলেন। সেখানে উর্বশী নামে এক অপ্সরা - অর্জুনের সৌন্দর্য দেখে তার উপর মোহিত হয়ে পড়ে। একদিন উর্বশী অর্জুনকে বললেন যে তাকে বিবাহ করতে। তখন অর্জুন তাকে বলেন আমি আপনাকে মাতার স্বরূপ হিসেবে দেখি।  সেই কারণে আমি আপনাকে বিবাহ করতে পারবোনা। তখন উর্বশী ক্রুদ্ধ হয়ে যান এবং তিনি অর্জুনকে বলেন তুমি আমার সঙ্গে একটি নপুংসকের মত কথা বলছ। এই জন্য আমি তোমাকে অভিশাপ দিচ্ছি - তুমি আজীবন নপুংসক হয়ে হয়ে রবে ; তথা স্ত্রীদের মধ্যে তুমি নর্তকী হয়ে থাকবে। এই কথা শুনে অর্জুন বিচলিত হয়ে পড়ল। তিনি দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে গেলেন এবং তার কাছে সমস্ত কথা জানালেন। তারপরে দেবরাজ ইন্দ্র উর্বশীর সঙ্গে কথা বলার ফলে ঊর্বশী তার অভিশাপের বৈধতা কমিয়ে এক বছরের জন্য সীমিত করে দেন। তারপরে দেবরাজ ইন্দ্র অর্জুনকে গিয়ে বললেন তোমার ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই । এই অভিশাপ তোমার বনবাসে থাকাকালীন বরদান হিসাবে তোমার কাজে দেবে। আর অজ্ঞাত বেসে থাকাকালীন সময়ে তুমি নর্তকীর বেস ধারন করে কৌরবদের নজর থেকে বাঁচতে পারবে।


বন্ধুরা আশাকরি আপনারা লেখাটি পড়ে সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্য অবশ্যই শেয়ার করবেন অথবা আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলটিকে ফলো করতে পারেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা