শনিদেবের সাড়েসাতির দশা কি || শনিদেবের সাড়েসাতির প্রতিকার।

 

নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।

আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল- শনিদেবের সাড়েসাতি দশা কি এবং কেনইবা এই বিষয়টিকে আমাদের জীবনে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। মানুষের জীবনে সাড়েসাতি হয়ে থাকলে কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলি হয়ে থাকে এবং সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কোনো ব্যক্তির জীবনে যদি এই সাড়েসাতি হয়ে থাকে, তাহলে সেই সময় কি কি করা প্রয়োজন এবং সর্বোপরি এই 2022 সালে কোন কোন রাশির উপর শনিদেবের সাড়েসাতির প্রভাব থাকবে সেই বিষয়ে আজকের লেখাটিতে আলোচনা করব।

বন্ধুরা আমাদের জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হল শনিদেবের সাড়েসাতির প্রভাব। শনিদেব হলেন কর্মের দেবতা এবং ন্যায়ের দেবতা। মানুষের মনস্তত্ত্ব এবং বিবেক জাগরণকারী গ্রহ হল শনি গ্রহ। শনিদেবের সাড়েসাতির দশার অর্থ হলো - এই সময় ব্যক্তির কর্মের ফল শনিদেব প্রদান করতে এসেছেন। তাই শনিদেবের এই সাড়েসাতির প্রভাব সর্বদাই যে অশুভ হবে তা কিন্তু নয়। শনিদেবের এই সাড়েসাতির প্রভাব জাতক জাতিকাদের বাস্তববাদী করে তোলে। আর সেই কারণে শনিদেবের প্রসঙ্গে এই কথা বলা হয় যে শনিদেব কোনো ব্যক্তিকে রাজা থেকে ফকির বানিয়ে দিতে পারেন, ঠিক তেমনি কোনো ফকিরকে রাজাও করে দিতে পারেন। তাই শনিদেবের সাড়েসাতির পর্যায়টি মানুষের জীবনে অত্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। 

প্রশ্ন হল শনিদেবের সাড়েসাতি মানুষের জীবনে কখন আসে?

শনি গ্রহ সম্পূর্ণ রাশিচক্র অর্থাৎ 12 টি গ্রহ রয়েছে তা পরিক্রমণ করার সময় শনিদেব প্রত্যেকটি রাশিতে আড়াই বছরের জন্য অবস্থান করেন। এই অবস্থান করার সময় শনিদেব যে রাশিতে অবস্থান করছেন তার ডান দিকের ঘর এবং বাঁদিকের ঘর অর্থাৎ যে রাশিতে শনি দেব বর্তমানে অবস্থান করছে সেই রাশির দ্বাদশ এবং দ্বিতীয় ঘরে শনিদেব প্রভাব বিস্তার করে থাকেন। অর্থাৎ শনিদেব একই সঙ্গে তিনটি রাশির ওপর প্রভাব দিয়ে থাকেন। আর যেহেতু শনিদেবের রাশিচক্রের প্রতিটি ঘর অতিক্রম করতে সময় লাগে আড়াই বছর সেই অনুযায়ী তিনটি ঘর অতিক্রম করতে সময় লাগবে সাড়ে সাত বছর। এইজন্যই একে "শনিদেবের সাড়েসাতি" বলা হয়। যার প্রভাব দীর্ঘ সাড়ে সাত বছর পর্যন্ত থাকে। 

শুধু তাই নয় কোন একজন ব্যক্তির জীবনে এই সাড়েসাতি তিনবার আসে। বাল্যকালে, যৌবনকালে এবং বৃদ্ধ বয়সে। বাল্যকালে যে সাড়েসাতি আসে তা শিক্ষায় সংকট আনে এবং পিতা-মাতাকে কষ্ট দেয়। যৌবনকালে আশা সাড়েসাতি জীবিকা, অর্থ সংকট এবং পরিবারের শান্তি বিঘ্ন করে। শেষ বয়সে অর্থাৎ বৃদ্ধকালে সাড়েসাতি শরীরের অসুস্থতা থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত এনে দেয়। সকলের ক্ষেত্রেই এই বিষয়টি সম্পূর্ণ যে এক হবে তা কিন্তু নয়।

যদি জন্ম ছকে শনি দেব 'কারক' অবস্থায় থাকে তাহলে শনিদেবের সাড়েসাতির প্রভাব সামান্যই পড়বে। কিন্তু জন্ম ছকে শনি দেব যদি 'মারক' অবস্থায় থাকে এবং ব্যক্তির কর্ম যদি খারাপ হয় তাহলে শনিদেবের এই সাড়েসাতি ব্যক্তির জীবন কে সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করে দেয়। বিশেষ করে সাড়েসাতির প্রথম আড়াই বছর আসে 'আর্থিক দুর্যোগ' এবং পরের আড়াই বছর আসে 'মানসিক দুর্যোগ' এবং শেষ আড়াই বছর আসে সম্পর্ক জনিত সমস্যা।

এই কারণে কোনো ব্যক্তির জীবনে যদি এই সাড়েসাতির প্রভাব চলতে থাকে তাহলে সেই ব্যক্তিকে কিছু বিষয় মেনে চলা প্রয়োজন। এতে শনিদেবের সাড়েসাতির অশুভ প্রভাব অনেকাংশে দূর হয়।

বন্ধুরা এই বছর অর্থাৎ 2022 সালে শনিদেবের সাড়েসাতির প্রভাব থাকছে 4 টি রাশির উপর। আর এই চারটি রাশি হল- ধনু, মকর, কুম্ভ ও মীন রাশি। এর পাশাপাশি এই বছরের শনিদেবের প্রভাব থাকবে মিথুন, তুলা, কর্কট এবং বৃশ্চিক রাশির উপর। সুতরাং এই বিষয়টি স্পষ্ট রাশিচক্রে বারটি রাশির মধ্যে আটটি রাশির উপর শনিদেবের প্রভাব থাকছে। সেই অনুযায়ী এই বছরকে শনিদেবের বছর হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। তাই এই বছরে শনিদেব কে যদি সন্তুষ্ট করতে পারেন তাহলে শনিদেবের সাড়েসাতির প্রভাব কিন্তু অনেকাংশে কমবে।

• শনিদেবের সাড়েসাতি প্রভাব এড়ানোর জন্য সবার প্রথমে যে বিষয়টি করার কথা বলব তা হল- 

প্রথমত - শনিবার দিন অবশ্যই নিরামিষ আহার গ্রহণ করুন এবং এই দিন যেকোনো শনি মন্দিরে একটি সরষের তেলের প্রদীপ প্রজ্জলন করুন।

আরো পড়ুনঃ - শনিদেবের ব্রতকথা, শনিদেবের ব্রতের প্রয়োজনীয় উপকরণ।

দ্বিতীয়তঃ এই সময়ে নিয়মিত হনুমান চল্লিশা অথবা শনি চল্লিশা পাঠ বা শ্রবণ করুন।

তৃতীয়তঃ এই সময় যেকোন প্রকার কালো পশু-পাখিকে খাবার খাওয়ান। যেমন- ধরুন কালোকাক অথবা কালো কুকুর। এর সাথেই এই দিন যেকোনো প্রকার কালো বস্ত্র অথবা শীতের কালো কম্বল গরীব-দুস্থদের উদ্দেশ্যে দান করুন।

চতুর্থত- এই সাড়েসাতির প্রভাব চলাকালীন কোন অবস্থাতেই শনিবার দিন চামড়ার জুতো অথবা ঝাঁটা কিনবেন না।

পঞ্চমত- এই সময়ে আপনার আন্ডারে যারা কাজ করে, অর্থাৎ আপনার বাড়িতে যে কোনো প্রকার কাজের লোক অথবা হতে পারে আপনার অফিসের গ্রুপ-ডি কর্মী, তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবেন না।

সর্বোপরি এই সময় বিশেষ করে বয়স্ক মানুষদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।

আরো পড়ুনঃ - শনিদেবের ব্রতকথা, শনিদেবের ব্রতের প্রয়োজনীয় উপকরণ।

আশা করি বন্ধুরা লিখাটি পড়ে আপনারা সম্মৃদ্ধ হয়েছেন। আজ এখানেই শেষ করলাম। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।