নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।
আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল- "ষটতিলা একাদশীর ব্রতকথা " সম্পর্কে।
একদা যুধিষ্টির মহারাজ বললেন- হে জগন্নাথ ! মাঘ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম কি, বিধিবা কি এবং এই একাদশী পালনে কি ফল লাভ হয় তা বিস্তারে বর্ননা করুন ।
উত্তরে পরমেশ্বর ভগবান বললেন-
হে রাজন ! এই একাদশী 'ষটতিলা' নামে পরিচিত । মাঘ মাসের কৃষ্ণপক্ষের ‘ষটতিলা’ একাদশী মাহাত্ম্য ভবিষ্যোত্তরপুরানে বর্ণিত আছে।
একসময় দালভ্য ঋষি মুনিশ্রেষ্ট পুলস্তকে জিজ্ঞাসা করেন- মর্ত্যলোকে মানুষেরা ব্রহ্মহত্যা,গোহত্যা, অন্যের সম্পদ হরন আদি পাপকর্ম দ্বারা নরকে গমন করে ।যাতে তারা নরক গতি থেকে রক্ষা পায়, তা যথাযত ভাবে আমাকে উপদেশ প্রদান করুন। অনায়াসে সাধন করা যায় এমন কোন কাজের মাধ্যমে যদি তাদের পাপ থেকে উদ্ধারের কোনো উপায় থাকে তবে তা বলুন ।
ঋষি পুলস্ত্য বললেন, হে মহাভাগ ! তুমি একটি গোপনীয় উত্তম বিষয়ের প্রশ্ন করেছ। মাঘ মাসে শুচি, জিতেন্দ্রিয়, কাম, ক্রোধ আদি শূন্য হয়ে স্নানের পর সরবদেবেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের পূজা করবে ।পূজাতে কোন বিঘ্ন ঘটলে কৃষ্ণনাম স্মরন করবে । রাত্রিতে অর্চনান্তে হোম করবে । কুমান্ড, নারকেল অথবা একশত শুবাক দিয়ে অর্ঘ্য প্রদান করে; এই মন্ত্রে-
‘ কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃপালুস্তমগতীনাং গর্তিভব’
শ্রীকৃষ্ণের পূজা করতে হয় । এরপর-
‘কৃষ্ণ আমার প্রতি প্রীত হোন’
বলে যথাশক্তি ব্রাহ্মণকে জলপূর্ণ কলস, ছত্র, বস্ত্র,পাদুকা, গাভী ও তিলপাত্র দান করবে । স্নান দানাদি কার্যে কালো তিল অত্যন্ত শুভ। হে দ্বিজত্তম ! ঐ প্রদত্ত তিল থেকে যে পুনরায় যে তিল উৎপন্ন হয়, ততো বছর ধরে দানকারী স্বর্গলোকে বাস করে। তিলদ্বারা স্নান, তিল শরীরে ধারন, তিল জল মিশিয়ে তা দিয়ে তর্পন, তিল ভোজন এবং তিল দান – এই ছয়প্রকার বিধানে সর্বপাপ বিনষ্ট হয়ে থাকে । এই জন্য এই একাদশীর নাম- 'ষটতিলা' ।
হে যুধিষ্টির! - এক সময় নারদও এই ষটতিলা একাদশীর ফল ও ইতিহাস জানতে চাইলে যে কাহিনী বলেছিলাম তা এখন তোমার কাছে বর্ননা করছি। তুমি এখন তা আমার কাছ থেকে শ্রবণ করো।
ষটতিলা একাদশীর ব্রত কথা
পুরাকালে মর্ত্যলোকে এক ব্রাহ্মণী বাস করত। সে প্রত্যহ ব্রত আচরণ ও দেবপূজাপরায়না ছিল। উপবাসক্রমে তার শরীর অত্যন্ত ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল। সেই মহাসতী ব্রাহ্মণী অন্যের কাছ থেকে দ্রব্যাদি গ্রহণ করে দেবতা, ব্রাহ্মণ ও কুমারীদের ভক্তিভরে দান করত। কিন্তু কখনও ভিক্ষুককে ভিক্ষাদান ও ব্রাহ্মণকে অন্নদান করেনি। এইভাবে বহুবছর অতিক্রান্ত হল। আমি চিন্তা করলাম কষ্টসাধ্য বিভিন্ন ব্রত করার ফলে ব্রাহ্মণীর শরীর শুকিয়ে যাচ্ছে। সে যথাযথভাবে বৈষ্ণবদের অর্চনও করেছে। কিন্তু তাদের পরিতৃপ্তির জন্য কখনও অন্নদান করেনি। তাই আমি একদিন এক কাপালিক রূপ ধারণ করে তামার পাত্র নিয়ে তার কাছে ভিক্ষা প্রার্থনা করলাম।
ব্রাহ্মণী বলল, হে ব্রাহ্মণ, তুমি কোথা থেকে এসেছ, কোথায় যাবে, তা আামাকে বলো।
আমি বললাম, হে সুন্দরী, আমাকে ভিক্ষা দাও। তখন সে ক্রুদ্ধ হয়ে আমার পাত্রে একটি মাটির ঢেলা নেক্ষেপ করল। তারপর আমি সেখান থেকে চলে গেলাম।
বহুকাল পরে সেই ব্রাহ্মণী ব্রতপ্রভাবে স্বশরীরে স্বর্গে গমন করল। মাটির ঢেলা দানের ফলে একটি মনোরম গৃহ সে প্রাপ্ত হল। কিন্তু- হে নারদ! সেখানে কোনো ধান ও চাল কিছুই ছিল না। গৃহশূন্য দেখে মহাক্রোধে সে আমার কাছে এসে বলল-আমি ব্রত, কৃচ্ছ্রসাধন ও উপবাসের মাধ্যমে নারায়ণের আরাধনা করেছি। এখন হে জনার্দন! আমার গৃহে কিছুই দেখছি না কেন?
হে নারদ! তখন আমি তাকে বললাম- তুমি নিজ গৃহে দরজা বন্ধ করে বসে থাকো। মর্ত্যলোকের মানবী স্বশরীরে স্বর্গে এসেছে শুনে দেবতাদের পত্নীরা তোমাকে দেখতে আসবে। কিন্তু তুমি দরজা খুলবে না। তুমি তাদের কাছে ষটতিলা ব্রতের পুণ্যফল প্রার্থনা করবে।তারা রাজি হলে দরজা খুলবে।
এরপর দেবপত্নীরা সেখানে এসে তার দর্শন প্রার্থনা করল।এক দেবপত্নী তার ষটতিলা ব্রতের পুণ্যফল প্রদানে রাজি হলে ব্রাহ্মণী দিব্যকান্তি বিশিষ্টা হল ও তার গৃহ ধনধান্যে ভরে গেল। দ্বার উদ্ঘাটন করলে দেবপত্নীরা তাকে দেখে বিস্মিত হলেন।
হে নারদ,অতিরিক্ত বিষয় বাসনা করা উচিত নয়। বিত্তশাঠ্যও অকর্তব্য। নিজ সাধ্যমত তিল,বস্ত্র ও অন্ন দান করবে। ষটতিলা ব্রতের প্রভাবে দারিদ্র্য, শারীরিক কষ্ট, দুর্ভাগ্য বিনষ্ট হয়। এই বিধি অনুসারে তিল দানে মানুষ অনায়াসে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়।
আশাকরি বন্ধুরা ব্রত কথাটি পড়ে আপনারা সম্বৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনদের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন অথবা আমাদের অমৃত কথাই ইউটিউব চ্যানেলটি তে ফলো করতে পারেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
নমস্কার, ধন্যবাদ।।
ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা